অভিবাসী দ্বন্দ্বে শুল্ক আরোপের পাল্টাপাল্টি হুমকি যুক্তরাষ্ট্র-কলম্বিয়ার

অনলাইন ডেস্ক    
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৪৩
Thumbnail image
বাণিজ্য যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দুই দেশ। ছবি: এএফপি

অভিবাসী বহনকারী দুটি মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ কলম্বিয়ায় অবতরণ করতে দেননি দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির ওপর শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টও যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন বলে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন। আজ রোববার এক প্রতিবেদনে বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।

ট্রাম্প বলেন, কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা সব পণ্যের ওপর শুল্ক অবিলম্বে কার্যকর হবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে এই শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ করা হবে।

এই শুল্ক আরোপের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো পাল্টা শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ার ওপর শুল্ক আরোপ করলে তারাও পাল্টা ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন।

এর আগে পেত্রো জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা অভিবাসী বহনকারী দুটি মার্কিন সামরিক উড়োজাহাজ অবতরণ করতে দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নাগরিকদের বেসামরিক বিমানে গ্রহণ করব। তাদের অপরাধী হিসেবে দেখব না। অভিবাসীদের মর্যাদা ও সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠাতে হবে।’

বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানান, অভিবাসীদের নিয়ে দুটি সামরিক উড়োজাহাজ সান ডিয়েগো থেকে কলম্বিয়ায় নামার কথা ছিল তবে জটিলতার কারণে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়েছে।

কলম্বিয়ার এ অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে তাৎক্ষণিক ও কঠোর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বাতিল আরোপ করবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, কলম্বিয়া সরকারের সমর্থকদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রটেকশনের মাধ্যমে কলম্বিয়ার সব নাগরিক ও পণ্য পরিবহন কঠোরভাবে পরিদর্শন করা হবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এ তো কেবল শুরু। যুক্তরাষ্ট্রে জোরপূর্বক অপরাধীদের গ্রহণ ও প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে তাঁর প্রশাসন কলম্বিয়া সরকারকে আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করতে দেবে না।’

ট্রাম্পের হুমকির প্রতিক্রিয়ায় গুস্তাভো পেত্রো এক্সে এক পোস্টে বলেন, ‘আপনার নিষেধাজ্ঞাকে আমরা ভয় পাই না। কারণ কলম্বিয়া কেবল সৌন্দর্যের দেশ নয়, এটি পৃথিবীর হৃদয়ও।

পেত্রো আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত অভিবাসীদের সম্মানজনকভাবে ফেরত আনার জন্য তাঁরা প্রেসিডেন্টের বিমান সরবরাহ করতে প্রস্তুত।’

গুস্তাভো পেত্রো বলেন, কলম্বিয়ায় ১৫ হাজার ৬৬৬ জনেরও বেশি মার্কিন নাগরিক অবৈধভাবে অবস্থান করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতো করে তিনি অবৈধ মার্কিন অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর জন্য কখনোই অভিযান চালাবেন না। অবশ্য বিবিসি পেত্রোর এই বক্তব্য যাচাই করতে পারেনি।

গুস্তাভো পেত্রো অতীতেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন ও পরিবেশ নীতিগুলোর কড়া সমালোচনা করেছেন। এবার সেই সমালোচনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।

পেত্রো বলেন, ট্রাম্প তাঁর ‘লোভের’ কারণে মানব প্রজাতি ধ্বংস করে দেবেন। তাঁর অভিযোগ, ট্রাম্প কলম্বিয়ানদের ‘নিম্নমানের জাতি’ বলে মনে করেন।

বিবিসি বলছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্ভবত কলম্বিয়ার হুমকিকে তেমন গুরুত্ব দেবেন না। তবে এটি এমন একটি বিষয় যা অভিবাসন সমস্যার সমাধান করতে চাওয়া একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

ট্রাম্পের নিজস্ব উপপররাষ্ট্র সচিব হিসেবে মনোনীত ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ মনে করেন, অভিবাসনের এই প্রবাহ বন্ধে অন্যান্য দেশের সঙ্গে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক লক্ষ্য হওয়া উচিত।

প্রতি বছর হাজারো অভিবাসী দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়ে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাত্রা করে। এরা সাধারণত কলম্বিয়ার মধ্য দিয়ে যাত্রা করে, যেখানে অপরাধী চক্রগুলো এই প্রক্রিয়াকে সহজতর করে। সর্বশেষ এই পরিস্থিতি এই অভিবাসন প্রবাহ বন্ধ করা আরও কঠিন করে তুলবে।

ট্রাম্প প্রথম কর্মদিবসেই অভিবাসন নিয়ে একাধিক নির্বাহী আদেশে সই করেন। ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। জন্মগত নাগরিকত্ব অধিকার বাতিল করেছেন। অভিবাসীদের গণহারে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু করে দিয়েছে তাঁর প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানান, শুধুমাত্র বৃহস্পতিবার দিনেই ৫৩৮টি গ্রেপ্তার পরিচালিত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত