জামাল খাসোগির স্ত্রীকে আশ্রয় দিল যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯: ৪৮
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০: ৩৬

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর খুন হওয়া সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির স্ত্রী হানান এলাতর।

২০১৮ সালের অক্টোবরে খুন হন জামাল খাসোগি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের ধারণা, এই হত্যার পেছনে সৌদি আরবের যোগসাজশ রয়েছে। নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত খাসোগির স্ত্রী হানান এলাতর ২০২০ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখেছে, গত ২৮ নভেম্বর হানান এলাতরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় মঞ্জুর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা জয়ী হয়েছি। তারা জামালের জীবন কেড়ে নিয়েছে, আমার জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু আমরা জয়ী হয়েছি।’

হানান এলাতর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করার তিন বছরেরও বেশি সময় হয়ে গেছে। এ সময়টাতে তিনি বলে গেছেন, জন্মস্থান মিসরে ফিরলে তাঁর জীবন হুমকির মুখে পড়বে। পাশাপাশি, যে সংযুক্ত আরব আমিরাতে তিনি জীবনের ২৫ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন, সেখানে ফিরে গেলেও তাঁর জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না।

হানান এলাতরের আইনজীবী রান্দা ফাহমি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন হানান এলাতর। চাকরি ছেড়ে এখন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাস করছেন। ২০২১ সালে হানান এলাতর যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অনুমতি পান। এখন তাঁর একটি চাকরি এবং থাকার জন্য একটি অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে।

রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার ঘটনাকে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া বলেছেন ফাহমি। তবে দীর্ঘ সময় লাগলেও রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন মঞ্জুর হওয়ায় জো বাইডেন প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন হানান এলাতর।

রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তির প্রক্রিয়ায় গত মার্চ মাসে মার্কিন অভিবাসন বিভাগের কাছে সাক্ষাৎকার দেন হানান এলাতর। এরপর ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সাড়া পাবেন বলে আশা করেছিলেন হানান এলাতর এবং রান্দা ফাহমি। কিন্তু পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে তার চেয়েও বেশি সময় লেগেছে। ফাহমির ধারণা, আবেদন প্রক্রিয়াটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।

জামাল খাসোগির জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিতে এই রাজনীতি আশ্রয়কে কাজে লাগানোর কথা বলেছেন হানান এলাতর এবং তাঁর আইনজীবী। জামাল খাসোগির মৃত্যুর জন্য সৌদি আরবের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন তাঁরা। সে সঙ্গে, তুর্কি সরকারের কাছ থেকে খাসোগির ইলেকট্রনিক ডিভাইস পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন।

সৌদি আরবের শাসকগোষ্ঠীর তীব্র সমালোচক ছিলেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে এ নিয়ে কলাম লিখতেন। সৌদি নাগরিক খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর কিছু কাগজ সংগ্রহ করতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। সেখানেই খুন হন খাসোগি। তাঁর মরদেহ টুকরো করে গুম করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা তখন বলেছিলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাঁদের সন্দেহ, সৌদি যুবরাজের নির্দেশেই জামাল খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে।

এরপর অবশ্য খাসোগি হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলা থেকে সৌদি যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমানকে দায়মুক্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। 
খাসোগি হত্যার দায়ে সৌদির একটি আদালত দেশটির পাঁচজন নাগরিককে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে তাঁদের সাজা কমিয়ে ২০ বছরের কারাদণ্ড করা হয়। তবে যুবরাজ বিন সালমান এ হত্যায় তাঁর সম্পৃক্ততার কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত