Ajker Patrika

আমলাদের সরকারি তথ্যভান্ডারে প্রবেশাধিকার স্থগিত করল মাস্কের বিভাগ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭: ২৮
সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সরকারি কর্মচারীদের ওপর কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সরকারি কর্মচারীদের ওপর কড়া পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমলাদের দেশটির সরকারি কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডারে প্রবেশাধিকার স্থগিত করা হয়েছে। ইলন মাস্কের নেতৃত্বে মার্কিন সরকারি মানবসম্পদ বিভাগ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা তাঁর সহযোগীরা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন বলে জানা গেছে।

বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, সরকারি মানবসম্পদ সংস্থায় ইলন মাস্কের সহযোগীরা সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষিত আছে এমন কয়েকটি কম্পিউটার সিস্টেমে আমলাদের প্রবেশাধিকার স্থগিত করেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি। এরপর থেকেই তিনি ব্যাপকভাবে সরকারি সংস্থাগুলোর সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিনি শত শত সরকারি কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন, প্রশাসনে তাঁর বিশ্বস্তদের নিয়োগ দিয়েছেন।

ট্রাম্প মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ককে মার্কিন ফেডারেল সরকারের ২২ লাখ কর্মীবাহিনী ছোট করার জন্য নিয়োগ করেছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পরই মাস্ক দ্রুত পদক্ষেপে ট্রাম্পের সমর্থকদের কর্মসংস্থানের জন্য অফিস অব পার্সোনেল ম্যানেজমেন্টে (ওপিএম) নিয়োগ দিয়েছেন। সূত্র দুটি জানিয়েছে, মাস্কের সহযোগীরা বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তা বা আমলার অ্যাকসেস কিছু বিভাগের তথ্য সিস্টেম থেকে বাতিল করা হয়েছে।

এই সিস্টেমগুলো একটির নাম ‘এন্টারপ্রাইজ হিউম্যান রিসোর্সেস ইন্টিগ্রেশন’। এই সিস্টেমে সরকারি কর্মচারীদের জন্ম তারিখ, সামাজিক সুরক্ষা নম্বর, কর্মমূল্যায়ন, বাড়ির ঠিকানা, বেতন গ্রেড এবং সেবার মেয়াদসহ আরও অনেক তথ্য রয়েছে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এর ফলে আমাদের পক্ষে এসব ডেটা সিস্টেমগুলোতে কী হচ্ছে তা জানা সম্ভব হবে না। এটি গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। কোনো তদারকি নেই। এর ফলে সাইবার সিকিউরিটি এবং হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বাড়ছে।’

এ সিদ্ধান্তের ফলে ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা এখনো সরকারি ইমেইল ব্যবহার করতে পারলেও ফেডারেল কর্মীবাহিনীর বিশাল ডেটাবেইসে আর প্রবেশ করতে পারছেন না। মাস্ক, ওপিএম বা এতে থাকা মাস্কের সহযোগীরা কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি হোয়াইট হাউসও এই বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোর্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসির অধ্যাপক ডন ময়নিহান বলেছেন, ‘ওপিএমে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কংগ্রেসের তদারকি সম্পর্কে উদ্বেগ তৈরি করেছে এবং ট্রাম্প ও মাস্ক কীভাবে ফেডারেল প্রশাসনকে দেখতে চান তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি মাস্কের অভ্যন্তরীণ টিমের বাইরে অন্য কারও জন্য তথ্য জানা আরও কঠিন করে তুলছে।’

মাস্কের প্রতিষ্ঠানে কাজ করা বর্তমান ও সাবেক কর্মচারীদের একটি দল গত ২০ জানুয়ারি ওপিএমে দায়িত্ব গ্রহণ করে। তাঁরা সংস্থার সদর দপ্তরের পঞ্চম তলায় সোফা বিছিয়ে কাজ করছে। সেখানে প্রবেশ করতে বিশেষক নিরাপত্তা ব্যাজ বা সহকারীর প্রয়োজন বলে জানান দপ্তরের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, এই সোফা বিছানোর উদ্দেশ্য ছিল যাতে দলটি রাত-দিন কাজ করতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এটি এক ধরনের শত্রুতাপূর্ণ অধিগ্রহণের মতো মনে হচ্ছে।’ আবার, আগে যেখানে কাঠখোট্টা ভাষায় সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হতো, সেখানে মাস্কের সহযোগীরা তুলনামূলক ব্যঙ্গাত্মক ও হাস্যকর শব্দ ব্যবহার করছেন। যেমন কয়েকজনের কাছে পাঠানো মেমোতে বলা হয়েছে, আপনারা পর্যাপ্ত ‘কেনাকাটার’ জন্য ছুটি নিন কিংবা, ‘স্বপ্নের গন্তব্যে’ যেতে চাকরি ছেড়ে দিন।

এদিকে, মাস্কের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া নতুন কর্মকর্তারা ওপিএমের প্রধান ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা ক্যাটি মালাগুকে তাঁর আগের অফিস থেকে সরিয়ে অন্য একটি তলায় নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া, মাস্কের সহযোগীদের আচরণের কারণে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় তথা ট্রেজারি বিল্ডিংয়েও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে এবং মার্কিন প্রশাসনে মাস্কের প্রভাবের ব্যাপকতা তুলে ধরছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের শীর্ষস্থানীয় আমলা ডেভিড লেব্রিক মাস্কের সহযোগীদের সঙ্গে বাদানুবাদের পর পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। মাস্কের সহযোগীরা সরকারি পেমেন্ট সিস্টেমের অ্যাকসেস চাওয়ার পর লেব্রিকের সঙ্গে বাদানুবাদ সৃষ্টি হয়।

ওপিএমের বর্তমানে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ব্রায়ান বিজেল্ডে। তিনি ২০০৩ সালে মাস্কের স্পেসএক্সে অ্যাভিওনিকস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দেন এবং পরে মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন। এই বিভাগের অন্তর্বর্তী প্রধান চার্লস ইজেল ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নিয়মিত মেমো পাঠাচ্ছেন কর্মীদের। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার তিনি একটি মেমো পাঠান। এতে ফেডারেল কর্মচারীদের আট মাসের বেতন নিয়ে স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ওপিএমের দায়িত্ব থাকা মাস্কের সহযোগীদের মধ্যে আরেকজন হলেন আমান্ডা স্কেলস। তিনি মাস্কের একটি কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা। তিনি বর্তমানে ওপিএমের প্রধান কর্মকর্তা। ২০-২১ জানুয়ারি ইজেল যেসব ফেডারেল কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার জন্য মেমো পাঠান তাদের স্কেলসের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এই বিভাগের আরেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হলেন রিকার্ডো বিয়াসিনি। তিনি টেসলায় প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং সর্বশেষ মাস্কের বোরিং কোম্পানির পরিচালক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত