ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় খুন হন ৪ মার্কিন প্রেসিডেন্ট, অল্পের জন্য বেঁচে যান যাঁরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৪, ১৯: ৫২
Thumbnail image

পেনসিলভানিয়ায় নির্বাচনী সভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় কানে গুলি খেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সময় শনিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর ওপর হামলা বা গুলি চালানোর ঘটনা এটাই প্রথম নয়। 

এখন পর্যন্ত চার চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। চলুন তবে মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপির সূত্রে হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাচেষ্টার শিকার কয়েকজন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর পরিচয় জেনে নেওয়া যাক।

আব্রাহাম লিংকনআব্রাহাম লিংকন, ১৬তম প্রেসিডেন্ট
হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন। ১৮৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল জন উইকস বুথ নামের এক ব্যক্তি গুলি করেন তাঁকে। একটি কমেডি নাটকের বিশেষ মঞ্চায়ন দেখতে তখন স্ত্রীসহ ওয়াশিংটনের ফোর্ড থিয়েটারে গিয়েছিলেন লিংকন। মাথার পেছনে গুলিবিদ্ধ আব্রাহাম লিংকন মারা যান পরদিন। কালোদের অধিকারের বিষয়ে তাঁর সমর্থন ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মূলে।

লিংকনের জায়গায় প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন। এদিকে ভার্জিনিয়ার একটি আস্তাবলে লুকিয়ে থাকা উইকস বুথকে গুলি করে মারা হয় ১৮৬৫ সালের ২৬ এপ্রিল।জেমস গারফিল্ডজেমস গারফিল্ড, ২০তম প্রেসিডেন্ট
হত্যাকাণ্ডের শিকার দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড। মাত্র ছয় মাস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন তিনি। ১৮৮১ সালের ২ জুলাই ওয়াশিংটনের একটি রেল স্টেশনে হাঁটছিলেন তিনি। নিউ ইংল্যান্ডের একটি ট্রেন ধরার কথা ছিল তাঁর। এ সময়ই চার্লস গুইতো নামের এক ব্যক্তি গুলি করেন তাঁকে।

টেলিফোনের উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল শুধু গারফিল্ডের জন্য নকশা করা একটি যন্ত্র ব্যবহার করে তাঁর বুকে ঢোকা গুলিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। তবে সফল হননি। 

মারাত্মকভাবে আহত প্রেসিডেন্ট কয়েক সপ্তাহ হোয়াইট হাউসে মুমূর্ষু অবস্থায় শুয়ে ছিলেন। সেপ্টেম্বরে নিউজার্সিতে নিয়ে যাওয়ার পর মারা যান তিনি।

হোয়াইট হাউসে গারফিল্ডের জায়গা নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট চেস্টার আর্থার। চার্লস গুইতো বিচারে দোষী প্রমাণিত হন এবং ১৮৮২ সালের জুনে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

উইলিয়াম ম্যাককিনলেউইলিয়াম ম্যাককিনলে, ২৫তম প্রেসিডেন্ট
নিউইয়র্কের বাফেলোয় একটি বক্তৃতা দেওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হন ম্যাককিনলে। তারিখটা ছিল ১৯০১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। জনগণের সঙ্গে হাত মেলানোর সময় একেবারে কাছ থেকে তাঁর বুকে দুটি গুলি করেন এক ব্যক্তি। চিকিৎসকেরা আশা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে ক্ষতের চারপাশে পচন ধরে যায়। 

১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মারা যান ম্যাককিনলে। দ্বিতীয় মেয়াদের মাত্র ছয় মাস কাটাতে পেরেছিলেন তিনি। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট থিয়োডর রুজভেল্ট।

লিয়ন অব চলগোস নামের ২৮ বছর বয়স্ক ডেট্রয়টের এক বাসিন্দা গুলি করার কথা শিকার করেন। বিচারে দোষ প্রমাণিত হওয়ার পর ১৯০১ সালের ২৯ অক্টোবর বৈদ্যুতিক চেয়ারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় তাঁর।

জন এফ কেনেডিজন এফ কেনেডি, ৩৫তম প্রেসিডেন্ট
লুকিয়ে থাকা এক গুপ্তঘাতক শক্তিশালী রাইফেলের সাহায্যে গুলি করে জন এফ কেনেডিকে, ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে। স্ত্রী জ্যাকুলিনসহ ডালাসে গিয়েছিলেন তখন কেনেডি। ডালাস শহরের কেন্দ্রস্থলে ডিলি প্লাজার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় গুলি করা হয় গাড়িবহরে। কেনেডিকে দ্রুত পার্কল্যান্ড মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অল্প সময় পরে সেখানে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন। 

গুপ্তহত্যার কয়েক ঘণ্টা পর হত্যাকারী লি হার্ভে অসওয়াল্ডকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুই দিন পর পুলিশ সদরদপ্তর থেকে কাউন্টি জেলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন ডালাসের একটি নাইট ক্লাবের মালিক জ্যাক রাবি গুলি করেন তাঁকে। এতেই মৃত্যু হয় অসওয়াল্ডের।

জেরাল্ড ফোর্ড। ছবি: সংগৃহীতজেরাল্ড ফোর্ড, ৩৮তম প্রেসিডেন্ট
১৯৭৫ সালে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দুবার হত্যার চেষ্টা করা হয় ফোর্ডকে। তবে প্রতিবারই অক্ষত থেকে যান তিনি।

প্রথমবার সেকরামেন্তোতে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন ফোর্ড। এ সময় রাস্তার লোকজন ঠেলে এগিয়ে এসে লিনেট্টে ফ্রমি নামের একজন আধা স্বয়ংক্রিয় একটি পিস্তল তাক করেন ফোর্ডের দিকে। কিন্তু ট্রিগার চাপলেও গুলি বের হয়নি। ফ্রমি দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০০৯ সালে মুক্তি পান।

১৭ দিন পর সান ফ্রান্সিসকোর এক হোটেলের বাইরে সারা জেন মুর নামের এক নারী ফোর্ডকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। কিন্তু লক্ষ্যচ্যুত হয় গুলি। দ্বিতীয় গুলি করার চেষ্টা করার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি মুরের হাত ধরে ফেলেন।

দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০০৭ সালে মুক্তি পান মুর।

রোনাল্ড রিগ্যান। ছবি: সংগৃহীতরোনাল্ড রিগ্যান, ৪০তম প্রেসিডেন্ট
রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি বক্তৃতা দিয়ে গাড়িবহরের দিকে এগোচ্ছিলেন। এ সময় উপস্থিত জনতার মধ্যে থাকা জন হিঙ্কলে জুনিয়র তাঁকে গুলি করেন। 

রিগ্যান ১৯৮১ সালের মার্চের এই গুলির ঘটনায় সুস্থ হয়ে ওঠেন। তার প্রেস সচিব জেমস ব্র্যাডিসহ আরও তিনজন এ সময় গুলিবিদ্ধ হন। ব্র্যাডি এ ঘটনায় আংশিকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

হিঙ্কলিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে রিগ্যানকে গুলি করার জন্য মানসিক অসুস্থতাকে জুরিরা কারণ হিসেবে বিবেচনা করলে একটি মানসিক হাসপাতালে বন্দী অবস্থায় চিকিৎসা দেওয়া হতে থাকে। ২০২২ সালে ‘নিজের বা অন্যদের জন্য আর বিপজ্জনক নয়’ বলে একজন বিচারক রায় দিলে ছাড়া পান হিঙ্কলি।

জর্জ ডব্লিউ বুশ। ছবি: সংগৃহীতজর্জ ডব্লিউ বুশ, ৪৩তম প্রেসিডেন্ট
২০০৫ সালে জর্জিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিখাইল সাকাশভিলির সঙ্গে দেশটির রাজধানী তবিলিসিতে একটি শোভাযাত্রায় অংশ নেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। এ সময় তাঁর দিকে একটি হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।

কাপড়ে মোড়ানো গ্রেনেডটি প্রায় ১০০ ফুট দূরে পড়ার সময় দুজনেই বুলেটপ্রুফ ব্যারিয়ারের পেছনে ছিলেন। গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি এবং কেউ আহত হয়নি।

এ ঘটনায় ভ্লাদিমির আরুতিউনিয়ান নামে এক ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

রবার্ট এফ কেনেডি। ছবি: সংগৃহীতরবার্ট এফ কেনেডি, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি হোটেলে যখন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, তখন রবার্ট এফ কেনেডি ডেমোক্রেটিক রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন চাইছিলেন। ১৯৬৮ সালের ক্যালিফোর্নিয়া প্রাইমারিতে তাঁর বিজয়ী বক্তৃতা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন।

কেনেডি ছিলেন নিউ ইয়র্কের একজন সিনেটর এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাই। এ ঘটনার পাঁচ বছর আগে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি  হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

সিরহান সিরহান নামে এক ব্যক্তি হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তাঁর শাস্তি কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়। গত বছর মুক্তির জন্য তাঁর সর্বশেষ আবেদন প্রত্যাখ্যান করার পরে সিরহান কারাগারেই রয়ে গেছেন।

জর্জ সি ওয়ালেস। ছবি: সংগৃহীতজর্জ সি ওয়ালেস, প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী
ওয়ালেস ১৯৭২ সালে মেরিল্যান্ডে প্রচারাভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ হন। ওই সময় ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন চাইছিলেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে কোমর থেকে তাঁর শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যায়।

আলাবামার গভর্নর ছিলেন ওয়ালেস।

আর্থার ব্রেমারকে গুলি করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কারাভোগ শেষে ২০০৭ সালে মুক্তি পান তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর হামলা সম্পর্কিত আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত