সাড়া দিয়েছে মহাকাশযান, সূর্যের সবচেয়ে কাছে যাওয়ার নতুন ইতিহাস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০: ২১
Thumbnail image
ছবি: নাসা

নাসার পাঠানো ‘পার্কার সোলার প্রোব’ মহাকাশযানটি সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌঁছানোর এবং তা সফলভাবে অতিক্রম করার মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

শুক্রবার বিবিসি জানিয়েছে, মহাকাশযানটি কয়েক দিন ধরে যোগাযোগহীন থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে (গ্রিনিচ সময় শুক্রবার ভোর ৫টা) একটি সংকেত পাঠিয়েছে। এই সংকেতের জন্যই পৃথিবীতে রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষায় ছিলেন নাসার বিজ্ঞানীরা। কারণ সূর্যের কাছাকাছি থাকা অবস্থায় পার্কার সোলার প্রোবকে উচ্চ তাপমাত্রা এবং ভয়াবহ বিকিরণ সহ্য করতে হয়েছে।

নাসা জানিয়েছে, মহাকাশযানটি নিরাপদ আছে এবং স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে। পৃথিবীর পাঠানো কোনো মহাকাশযান হিসেবে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা অবস্থায় এটি সূর্য থেকে মাত্র ৩৮ লাখ মাইল দূরে ছিল।

এই দূরত্বের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাসার নিকোলা ফক্স বলেছেন, ‘আমরা সূর্য থেকে নয় কোটি ৩০ লাখ মাইল দূরে আছি। যদি আমি সূর্য এবং পৃথিবীকে এক মিটার দূরত্বে রাখি, তবে পার্কার সোলার প্রোব সূর্য থেকে মাত্র চার সেন্টিমিটার দূরে। তাই এটি সত্যিই খুব কাছাকাছি।’

বিবিসি জানিয়েছে, মহাকাশযানটি ক্রিসমাস ইভে সূর্যের বাইরের আবহমণ্ডলে প্রবেশ করে। এ সময় এটি প্রচণ্ড তাপমাত্রা এবং তীব্র রশ্মির মুখোমুখি হয়, যা সূর্যের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান বাড়ানোর জন্য একটি বড় পদক্ষেপ।

নাসা জানায়, এই নিকটবর্তী পর্যবেক্ষণ বিজ্ঞানীদের সূর্যের অঞ্চলগুলোর গরম হওয়ার প্রক্রিয়া, সৌর বায়ুর উৎপত্তি এবং দ্রুতগতির কণার গতি বোঝার সুযোগ দেবে।

২০১৮ সালে পৃথিবী থেকে সূর্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছিল পার্কার সোলার প্রোব। ইতিমধ্যে এটি ২১ বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে। কিন্তু ক্রিসমাস ইভের এই সফরটি ছিল সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি যাওয়ার নতুন রেকর্ড।

সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে মহাকাশযানটি প্রায় ৯৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করেছে। আর এটিকে বিকিরণ থেকে সুরক্ষিত রেখেছে এর ১১.৫ সেন্টিমিটার পুরু কার্বন-কম্পোজিট ঢাল।

পার্কার প্রোব দ্রুতগতিতে সূর্যের দিকে এগিয়েছে, এর গতি ছিল ঘণ্টায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল। এই গতিতে লন্ডন থেকে নিউ ইয়র্কে যেতে মাত্র ৩০ সেকেন্ড সময় লাগবে।

এই মিশনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সূর্যের করোনার উষ্ণতা রহস্য উদ্‌ঘাটন করা। ড. জেনিফার মিলার্ড ব্যাখ্যা করেন, ‘সূর্যের পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এর করোনার তাপমাত্রা লাখ লাখ ডিগ্রি। কেন এমনটি হচ্ছে তা আমরা এখনো জানি না।’

মিশনটি বিজ্ঞানীদের সূর্য থেকে নির্গত সৌর বায়ুর গঠন এবং প্রভাব বোঝারও সুযোগ দেবে। সৌর বায়ু পৃথিবীর চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে মিলে অরোরা বা মেরুপ্রভা সৃষ্টি করে। তবে এটি বিপর্যয়ও ঘটাতে পারে, যেমন বিদ্যুৎ গ্রিড, ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

নাসার বিজ্ঞানীরা পার্কার প্রোবের কাছ থেকে সংকেত পাওয়ার জন্য ক্রিসমাসের সময় খুব উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন। ড. ফক্স বলেন, ‘আমরা এটি কঠিন পরিস্থিতির জন্য তৈরি করেছি। এটি একটি অত্যন্ত মজবুত মহাকাশযান।’

বলা হচ্ছে, এই মিশনের সফলতা শুধু নাসার নয়, বরং পুরো পৃথিবীর। এটি সূর্যের কার্যক্রম সম্পর্কে নতুন তথ্য এনে দিতে পারে, যা পৃথিবীতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত