Ajker Patrika

সরকারি চাকরিজীবীদের নিয়ে মাস্কের পোস্ট, ছাঁটাই আতঙ্ক

আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪: ৫২
ইলন মাস্ক। ছবি: এএফপি
ইলন মাস্ক। ছবি: এএফপি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই ঘনিষ্ঠ মিত্র ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে সরকারি কর্মদক্ষতা বিভাগের নেতৃত্বে আনার ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প । সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বিবেক রামাস্বামীর সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করবেন মাস্ক। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গঠন করবেন মাস্ক ও বিবেক। দীর্ঘদিন ধরেই এ দায়িত্ব পালনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন ইলন মাস্ক। এবার তিনি এক্সে কয়েক জন সরকারি চাকরিজীবীর নাম প্রকাশ করলেন যাদের তিনি ছাঁটাই করতে চান।

ট্রাম্প মাস্ক ও রামাস্বামীকে দায়িত্ব দেওয়ার পর অনেক সরকারি কর্মচারী বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁরা চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। এই নাম প্রকাশ তাঁদের এ আশঙ্কার পালে হাওয়া লাগাল।

মাস্ক একটি এক্স অ্যাকাউন্টের পোস্ট রিপোস্ট করেন। সেখানে জলবায়ু সম্পর্কিত কিছু সরকারি পদে কর্মরত ব্যক্তিদের নাম ও পদবির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়েছিল। মাস্কের রিপোস্টের পর পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। তাঁদের চাকরিকে ‘ভুয়া চাকরি’ আখ্যায়িত করা হয়। লাখো মানুষ পোস্টে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। ওই তালিকায় থাকা এক নারী তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অ্যাকাউন্ট মুছে দিতে বাধ্য হন।

মাস্ক যে অ্যাকাউন্টের পোস্ট রিপোস্ট করেছিলেন, তার নাম—ডেটাহ্যাজার্ড, হ্যান্ডেল ফেন্টাসিল। পরিচয় হিসেবে লেখা, অসংগঠিত থিংক ট্যাংক। যারা সরকারি দক্ষতা, নাগরিক অধিকার, ভুক্তভোগীর আইনি সহায়তার বিষয়ে কাজ করে থাকে।

ডেটাহ্যাজার্ডের ওই পোস্টে লেখা ছিল—‘আমি মনে করি না, ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনে “ডিরেক্টর অব ক্লাইমেট ডাইভার্সিফিকেশন’ পদে একজন কর্মচারী নিয়োগের জন্য মার্কিন করদাতাদের অর্থ প্রদান করা উচিত।’ পোস্টের সঙ্গে ছবিতে একজন কর্মচারীর নাম, পদবি ও কর্মস্থল দেওয়া ছিল।’

গত বছর নিজেকে ‘সুপার প্রো ক্লাইমেট’ হিসেবে উল্লেখ করা মাস্ক ডেটাহ্যাজার্ডের পোস্টটি পুনরায় শেয়ার করে মন্তব্য করেন, ‘প্রচুর ভুয়া চাকরি।’ এই পোস্টটি তিন কোটি ৩০ লাখের বেশি ভিউ পায় এবং নেতিবাচক মন্তব্যের ঝড় ওঠে। কেউ কেউ একে জালিয়াতির চাকরি বলে আখ্যা দিয়েছে। অন্যরা মাস্কের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ থেকে এ ধরনের চাকরি বাদ দেওয়ার কথা বলেন।

ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশন (ডিএফসি) জানায়, তারা কোনো কর্মকর্তার পদ বা চাকরিজনিত এসব বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে ইচ্ছুক নয়। ডিএফসি নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রভাবের সম্মুখীন হওয়া অঞ্চলে জলবায়ু প্রশমন, স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজনের জন্য বিনিয়োগ সমর্থন করে।

মাস্ক একইভাবে মার্কিন শক্তি দপ্তরের লোন প্রোগ্রাম অফিসে কর্মরত প্রধান জলবায়ু কর্মকর্তাকে (চিফ ক্লাইমেট অফিসার) উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেন। এই অফিস নতুন শক্তি প্রযুক্তিগুলোর জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা পূরণে সাহায্য করে। ২০১০ সালে টেসলা মোটরসকে ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার অনুদান দিয়েছিল, যার ফলে মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ির কোম্পানি টেসলা ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকেল) শিল্পের শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে যায়। এই অফিসে কর্মরত প্রধান জলবায়ু কর্মকর্তা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মিলে ‘পরিবেশবান্ধব শক্তির প্রতিবন্ধকতাগুলো কমাতে ও সহায়তা করতে’ কাজ করে।

হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস (এইচএইচএস) বিভাগে পরিবেশ ন্যায্যতা ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী এক নারী মাস্কের রোষানলে পড়েছেন। বাইডেন প্রশাসনের আমলে ২০২২ সালে এইচএইচএস জনস্বাস্থ্য দূষণ ও অন্যান্য পরিবেশগত বিপদ থেকে রক্ষা করতে কাজ করে।

হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট (এইচইউডি) বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ পরামর্শকও মাস্কের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। এই পদে কর্মরত অ্যালেক্সিস পেলোসি যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সাবেক স্পিকার ও প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট ন্যান্সি পেলোসির ভাই বা বোনের মেয়ে। ডেটাহ্যাজার্ডের এক্স পোস্টে বলা হয়, ক্লাইমেট অ্যাডভাইজর বা জলবায়ু পরামর্শক পদে কাজ করার জন্য তাঁকে ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৪৮ ডলার বেতন দেওয়া উচিত নয়। মাস্ক সেই পোস্টটি শেয়ার করে লেখেন, ‘সম্ভবত তাঁর পরামর্শটি অসাধারণ।’ এরপর দুটি হাসির ইমোজি দেন।

সিএনএনের প্রতিবেদনে জানা যায়, এ ধরনের কাজ মাস্ক এর আগেও করেছেন। মাস্কের চোখে যাঁরা ভুল বা পথের অন্তরায়, তাঁরা প্রায়ই তাঁর রোষানলে পড়েন। সাবেক এক সরকারি চাকরিজীবী মাস্কের রোষানলে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, আমার পরিস্থিতি অনেকটা এমনই ছিল।

জর্জ মেসন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক মেরি কামিংস। এই আমেরিকান প্রকৌশলী যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে প্রথম মহিলা ফাইটার পাইলটদের মধ্যে একজন ছিলেন। ন্যাশনাল হাইওয়ে ট্রাফিক সেফটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এনএইচটিএসএ) জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা হিসেবে কর্মরত থাকাকালে টেসলার অটোপাইলট সিস্টেম নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন এবং সেটা যথাযথ নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছিলেন। এরপরই মাস্কের চক্ষুশূলে পরিণত হন তিনি। মেরির ওপর মাস্ক ও তাঁর অনুসারীদের ব্যক্তিগত আক্রমণের মাত্রা তীব্র হতে থাকে। তাঁকে মৃত্যুর হুমকি ও অন্যান্য ধরনের আক্রমণের শিকার হতে হয়।

কামিংস নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাকরি ও স্থান পরিবর্তনে বাধ্য হন। তিনি বলেন, ‘এটি মাস্কের একটি পদ্ধতি—মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য যাতে তাঁরা নিজ থেকেই চাকরি ছেড়ে দেয়। এর মাধ্যমে অন্যদের প্রতি বার্তা দেওয়া হয় ইউ আর নেক্সট অর্থাৎ তোমারও এই অবস্থা হতে পারে।’

তবে ডেটাহ্যাজার্ডের পোস্টে যাঁদের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা সরাসরি জনগণের সঙ্গে কাজ করেন না। কিছু সরকারি চাকরিজীবী সিএনএনকে জানান, মাস্ক যেভাবে গোপনে আমলাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য বানাচ্ছেন, তাঁরা আতঙ্কিত। তাঁদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হতে পারে। এমনকি তাঁদের ওপর সরাসরি হামলা হতে পারে বলে ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।

অনেক কর্মী বলেন, সঠিকভাবে যাচাই বাছাই না করে মাস্কের ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে প্রশাসনে যে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন মাস্ক, তার ফলে তাঁদের অনেকেরই চাকরি চলে যাবে। আমেরিকান ফেডারেশন অব গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের (এএফজিই) সভাপতি এভারেট কেলি বলেন, তথ্য প্রকাশের এই কৌশলগুলো সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা হচ্ছে। এটি তাঁদের ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে, যেন মানুষ কথা বলতে ভয় পায়। ২৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর মধ্যে ৮ লাখেরও বেশি কর্মচারী এএফজির সদস্য।

কেলি আরও বলেন, মাস্ক নিজে সরকারি প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হয়েছেন। যেখানে ফেডারেল কন্ট্রাক্টর—যাঁরা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে কাজ করেন, তাঁদের জন্য বছরে ৭৫ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়, যা সিভিলিয়ান ফেডারেল কর্মচারীদের জন্য খরচের তুলনায় অনেক বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক সরকারি চাকরিজীবীদের পেছনে ২০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়।

মাস্কের নজরে পড়া সরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে সিএনএন। যাঁদের পাওয়া গেছে তাঁরা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। ব্যবহারকারীদের নেতিবাচক মন্তব্যের প্রভাবে তাদের মধ্যকার এক নারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এক্সের কাছে ইমেইল পাঠানো হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিও কোনো সাড়া দেয়নি।

এ বিষয়ে সাইবার হয়রানির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে সিএনএন। কিন্তু অনেকেই মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন। তাঁরা মাস্কের ‘লক্ষ্যবস্তু’ হতে চান না। একজন বলেন, যা ঘটেছে তা অবিশ্বাস্য এবং এটি ভীতিপ্রদ প্রভাব ফেলেছে। আরেকজন বলেন, তাঁরা মাস্কের পোস্টগুলো দেখে অবাক হননি। এগুলো ‘সাইবার হ্যারাসমেন্টের ক্ল্যাসিক প্যাটার্ন’।

সরকারি কর্ম বিভাগে মাস্কের সহকর্মী রামাস্বামী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘বেশির ভাগ সরকারি চাকরিজীবী ভালো মানুষ। তাঁদের সঙ্গে শ্রদ্ধা রেখে আচরণ করা উচিত, তবে আসল সমস্যা হলো আমলাতন্ত্র। আমাদের প্রতিপক্ষ কোনো বিশেষ ব্যক্তি নয়, আমাদের প্রতিপক্ষ হলো আমলাতন্ত্র।’

এদিকে এক ফলো-আপ পোস্টে ফেন্টাসিল অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়, ‘কাউকে কেবলমাত্র তাঁর উচ্চপদস্থ সরকারি পদে থাকার জন্য হয়রানি করা উচিত নয়—সেই পদের অস্তিত্ব থাকা উচিত না হলেও। তবে জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা তো সাধারণ কর্মচারী নন। আমাদের জানার অধিকার আছে, কে আমাদের সরকার পরিচালনা করছে এবং তারা কী করছে।’

এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মাস্কের রোষানলে পড়া কামিংস বলেন, ‘কাউকে না কাউকে তো কথা বলতে হবে। এ বিষয়ে তিনি (মাস্ক) সফল হোন, তা চাইব না আমি।’

এর আগে গত অক্টোবরে এক সমাবেশে মাস্ক বলেছিলেন, তিনি মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত কমানো সম্ভব। বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মীসংখ্যা হ্রাসের কথাও বলেন তিনি। অন্যদিকে, রামাস্বামী শিক্ষা বিভাগ, পরমাণু নিয়ন্ত্রণ কমিশন, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগ ও এফবিআইয়ের মতো বিভাগ বন্ধ করার প্রস্তাব রেখেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ট্রাম্পকে তরুণদের ‘রোল মডেল’ বললেন এক সময়ের ঘোর বিরোধী নিকি মিনাজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত
‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনের মঞ্চে নিকি মিনাজ। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় রক্ষণশীল সংগঠন টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ আয়োজিত ‘আমেরিকাফেস্ট’ সম্মেলনে হঠাৎ উপস্থিত হয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের প্রশংসা করেছেন মার্কিন র‍্যাপ তারকা নিকি মিনাজ। রোববার (২১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে তিনি তরুণ পুরুষদের জন্য ট্রাম্প ও ভ্যান্সকে ‘রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করেন। মিনাজের এই মন্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) ‘ফরচুন’ জানিয়েছে, এই সম্মেলনটি প্রয়াত রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণে আয়োজন করা হয়। মঞ্চে নিকি মিনাজের সাক্ষাৎকার নেন চার্লি কার্কের স্ত্রী ও বর্তমানে টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ-এর নেতৃত্বে থাকা অ্যারিকা কার্ক। আলোচনায় ট্রাম্পের প্রতি নতুন সমর্থনের কথা জানান মিনাজ—যদিও অতীতে তিনি ট্রাম্পের কঠোর সমালোচক ছিলেন। পাশাপাশি তিনি নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের ওপর সহিংসতারও নিন্দা জানান।

মিনাজ ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট গভর্নর গ্যাভিন নিউসমকে কটাক্ষ করে ট্রাম্পের দেওয়া ‘নিউ-স্কাম’ নামটি ব্যবহার করেন। বর্তমান প্রশাসনের প্রশংসা করে তিনি বলেন—বর্তমান প্রশাসনে হৃদয় ও আত্মা আছে এবং ট্রাম্প ও ভ্যান্স দুজনই এমন নেতা, যাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ সহজে নিজেদের মিল খুঁজে পায়।

এদিকে মঞ্চে এক অস্বস্তিকর মুহূর্ত তৈরি হয়, যখন ভ্যান্সের রাজনৈতিক দক্ষতার প্রশংসা করতে গিয়ে মিনাজ তাঁকে ‘অ্যাসাসিন’ বলে ফেলেন। কথাটি বলার পরই তিনি থেমে যান এবং পরিস্থিতি কিছুটা বিব্রতকর হয়ে ওঠে। চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ায় শব্দটি উপস্থিত অনেকের মনে আঘাত দেয়।

সম্প্রতি মিনাজ ট্রাম্পের ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টান নির্যাতন সংক্রান্ত একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন, যেখানে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়। এ নিয়ে তিনি জাতিসংঘে মার্কিন মিশনে আয়োজিত এক প্যানেল আলোচনাতেও অংশ নেন।

নিজের পরিবর্তিত অবস্থান নিয়ে মিনাজ বলেন, ‘মত বদলানো দোষের নয়—মনের কথা বলাই এখন সবচেয়ে বড় অপরাধ হয়ে গেছে।’ বিনোদন জগৎ থেকে সমালোচনার প্রসঙ্গে জানান, তিনি এসব নিয়ে ভাবেন না। একসময় ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির তীব্র বিরোধিতা করা এই শিল্পী এখন প্রকাশ্যেই বলছেন, তাঁর মত বদলানো ঠিকই আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
হাদিল আল ঘেরবাওয়ির কোলে ছেলে জাওয়াদ। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

‘এই বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারব না’—বলছিলেন হাদিল আল ঘেরবাওয়ি। ২৬ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি নারী গাজা যুদ্ধে চরম ক্ষুধা, ভয় আর অনিশ্চয়তার মধ্যেই দুটি গর্ভধারণ ও দুবার সন্তান জন্ম দিয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর সময় হাদিল সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ হওয়ায় তিনি নিয়মিত ডাক্তার দেখাতেন, আলট্রাসাউন্ড করাতেন এবং ভিটামিন নিতেন। গাজা সিটির পূর্বাংশে ইসরায়েল সীমান্তের কাছে বসবাস করায় যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিনই তিনি গাজার পশ্চিম অংশে বসবাস করা বাবা-মায়ের বাড়িতে চলে যান। হাদিল ভেবেছিলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি আবার স্বামীর বাড়িতে ফিরে যাবেন। কিন্তু এরপর পরিবারটি অন্তত ১৩ বার বাস্তুচ্যুত হয় এবং স্বামীর বাড়িটিও একদিন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৩ সালের অক্টোবর মাসেই গাজা সিটিতে একটি আবাসিক ভবনে বড় ধরনের হামলার কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন হাদিল। তাঁর কাছে এটিকে একটি ভূমিকম্প মনে হয়েছিল। পরে আশ্রয় নেন আল-শিফা হাসপাতালে। সেখানে অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীর ভিড় এত বেশি ছিল যে, বাথরুম ব্যবহার করাও প্রায় অসম্ভব ছিল। সেদিনের দৃশ্য আজও তাড়া করে ফেরে হাদিলকে। স্তূপ করে রাখা লাশ, ড্রামে রাখা খণ্ড-বিখণ্ড অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর তীব্র গন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমি গর্ভবতী ছিলাম, সহ্য করতে পারিনি।’

অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে—নিরাপত্তার আশায় এবার তিনি ও তাঁর স্বামী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে যান এবং চিকিৎসকদের কাছে আগেভাগেই সন্তান প্রসবের অনুরোধ করেন। হাদিল যখন সন্তান প্রসব করছিলেন, তখন হাসপাতালটির পাশের ভবনেই হামলা হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশৃঙ্খল এই পরিস্থিতিতে সন্তান বদলে যাওয়ার আতঙ্কও গ্রাস করেছিল হাদিলকে। তবে আতঙ্কের মধ্যেই শেষ পর্যন্ত তিনি ছেলে জাওয়াদের জন্ম দেন।

নবজাতক নিয়ে হাদিলকে ৩০ জনের সঙ্গে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছিল। সেই সময়টিতে সেলাইয়ের তীব্র ব্যথার মধ্যেও তিনি কোনো ওষুধ পাননি; রাতের পর রাত চুপচাপ এই ব্যথা সহ্য করেছেন। তাঁর ধারণা, প্রসবের পর তিনি বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়েছিলেন।

কয়েক মাস পর তাঁরা একটি তাঁবুতে ওঠেন। বালু, পোকামাকড় আর প্রচণ্ড ঠান্ডায় একের পর এক নবজাতকের মৃত্যুর খবরে সারাক্ষণ আচ্ছন্ন হয়ে থাকতেন হাদিল। রাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বারবার জেগে উঠতেন। জাওয়াদের বয়স ৯ মাস হলে আবারও গর্ভবতী হন তিনি। হাদিল বলেন, ‘তাঁবুতে থেকে আরেকটি সন্তান—ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম।’

চলতি বছরের জানুয়ারিতে সাময়িক যুদ্ধবিরতির খবর কিছুটা আশা জাগিয়েছিল তাঁদের। সেই আশা থেকেই ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা নিজেদের বাড়িতে ফিরে যান। কিন্তু ছয় সপ্তাহ পরই ভেঙে যায় যুদ্ধবিরতি। পেটে সন্তান নিয়ে আবারও পালাতে হয় হাদিলকে। পালানোর পর তাঁদের বাড়িটিও ধ্বংস হয়ে যায়। যুদ্ধের মধ্যে দ্বিতীয় গর্ভধারণ হাদিলের জন্য ছিল সবচেয়ে কঠিন। এই সন্তান পেটে রাখার ৯ মাসই তাঁর যুদ্ধের মধ্যে কেটেছে। এমনও দিন গেছে, সারা দিন শুধু একটি শসা খেয়ে কাটিয়েছেন। আর কোথাও এক মুঠো খাবার পেলে নিজের ভাগটুকু তিনি ছেলে জাওয়াদকে দিতেন।

দ্বিতীয়বার প্রসবের সময়ও তিনি বাবা-মায়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। কারণ ওই বাড়ি থেকে কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নবজাতক সুরক্ষার জন্য ইনকিউবেটর ছিল। এক রাতে প্রসবব্যথা শুরু হলে, লিফট না থাকায় পাঁচ তলা থেকে হেঁটেই নামতে হয় হাদিলকে। পরে তিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন এবং ওই হাসপাতালে দ্বিতীয় ছেলে ফারেসের জন্ম দেন। জন্মের সময় ফারেসের ওজন ছিল মাত্র ২ কেজি।

এবারে অ্যানেসথেসিয়া ছাড়াই সেলাই দেওয়া হয় হাদিলকে। আর অন্যকে সুযোগ করে দিতে কিছুক্ষণের মধ্যেই বিছানা খালি করে তাঁকে চেয়ারে বসে থাকতে হয়। ফারেসের জন্মের পাঁচ ঘণ্টা পর, চরম ক্লান্তি ও ব্যথা নিয়ে তিনি আবার পাঁচ তলা সিঁড়ি বেয়ে বাবা-মায়ের ঘরে ফেরেন। এই যুদ্ধ, তাঁর শরীর ও মনে রেখে গেছে এমন ক্ষত—যা ভুলবার নয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স
বাশার আল-আসাদের পতনের পর খালি হয়ে গিয়েছিল হোমসের এই কারাগারটি। ছবি: রয়টার্স

বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ার মানুষ ভেবেছিল—দেশটির কুখ্যাত কারাগার অধ্যায়ের অবসান ঘটেছে। বিদ্রোহীরা জেলখানার দরজা ভেঙে বন্দীদের মুক্ত করেছিল, পরিবারের লোকেরা ছুটে গিয়েছিল নিখোঁজ স্বজনদের খোঁজে। কিন্তু এক বছর না পেরোতেই সেই কারাগারগুলো আবার ভরে উঠছে। এবার নতুন সরকারের অধীনেই সিরিয়ায় আবারও ফিরে এসেছে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ।

রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গত এক বছরে অন্তত ৮২৯ জন নিরাপত্তাজনিত কারণে আটক হয়েছেন। প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আটক ব্যক্তিদের বড় অংশই কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ বা আদালতের আদেশ ছাড়াই বন্দী রয়েছেন।

সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রকাশিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় প্রথম দফার গ্রেপ্তার শুরু হয়েছিল বিদ্রোহীদের বিজয়ের পরপরই। সে সময় মূলত আসাদের আমলের সেনা সদস্য ও কর্মকর্তাদের আটক করা হয়েছিল। পরে শীতের শেষ দিকে উপকূলীয় অঞ্চলে সহিংসতার জের ধরে আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত মানুষ গ্রেপ্তার হন। বসন্ত ও গ্রীষ্মে দ্রুজ অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলেও ব্যাপক ধরপাকড় চলে। একই সঙ্গে সুন্নি, খ্রিষ্টান ও শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনও ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ বা আসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অস্পষ্ট অভিযোগে আটক হন।

রয়টার্স জানিয়েছে, আসাদ আমলের অন্তত ২৮টি কারাগার ও আটক কেন্দ্র আবার সক্রিয় হয়েছে। এগুলোর অনেকগুলোই অতীতে নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল। যদিও বর্তমান সরকার বলছে, অপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনে এসব কেন্দ্র ব্যবহার করা হচ্ছে এবং অনেক বন্দীকে ইতিমধ্যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তবে কোনো নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তারা প্রকাশ করেনি।

সাক্ষাৎকারে সাবেক বন্দী ও স্বজনেরা জানিয়েছেন, আটক কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গাদাগাদি করে বন্দী রাখা, খাবার ও চিকিৎসার অভাব, ত্বকের রোগ এবং নিয়মিত মারধরের অভিযোগ রয়েছে। অন্তত ১১ জন বন্দী কারা হেফাজতে মারা গেছেন বলে নথিভুক্ত করেছে রয়টার্স। এদের মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর পরিবার জানতই না—দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তারা বিষয়টি জানতে পারে।

চাঁদাবাজিও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ১৪টি পরিবার জানিয়েছে, স্বজনকে মুক্তির বিনিময়ে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৯০ হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। অর্থ পরিশোধের পরও অনেকেই মুক্তি পাননি।

এদিকে সরকার স্বীকার করেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের সময় কিছু ‘ফাঁকফোকর’ তৈরি হয়েছে এবং কিছু নিরাপত্তা সদস্য নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে। তাদের দাবি, চাঁদাবাজি ও সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ১৫৯ জন নিরাপত্তা সদস্যকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ব্যাপক আটক ও গুমের অভিযোগ নতুন সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরও আসাদের পতনের পর ‘বিচারবহির্ভূত হত্যা ও নির্বিচার আটক’-এর তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে।

আসাদের শাসনামলের মতো নির্মম নির্যাতন না হলেও, পুরোনো কারাগার ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন সিরিয়ার নতুন ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করছে। মানবাধিকারকর্মীদের ভাষায়, ‘শাসক বদলেছে, কিন্তু কারাগারের ছায়া এখনো কাটেনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মস্কোতে গাড়িবোমা হামলায় রুশ জেনারেল সারভারভ নিহত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে এক ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় এক জেনারেল নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে এ ঘটনা ঘটে বলে রুশ কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রাশিয়ার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটির বরাতে জানিয়েছে, নিহত ব্যক্তির নাম লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফানিল সারভারভ (৫৬)। তিনি রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল ট্রেনিং বিভাগের প্রধান ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ স্থানীয় সময় সকালে মস্কোর দক্ষিণাঞ্চলের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের পার্কিং লটে এই বিস্ফোরণ ঘটে। জেনারেল সারভারভের গাড়ির নিচে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরক ডিভাইস পেতে রাখা হয়েছিল। গাড়িটি চালু করার পরপরই সেটির বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে গুরুতর আহত অবস্থায় সারভারভকে হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, একটি সাদা রঙের গাড়ি বিস্ফোরণে দুমড়েমুচড়ে গেছে এবং সেটির যন্ত্রাংশ উড়ে গিয়ে পাশে থাকা অন্য যানবাহনের ওপর পড়েছে।

রুশ ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি এ ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিক তদন্তে রুশ কর্মকর্তাদের ধারণা, এই হামলার নেপথ্যে ইউক্রেনীয় গোয়েন্দা সংস্থার হাত থাকতে পারে। তবে ইউক্রেন এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, জেনারেল সারভারভের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তা জানানো হয়েছে।

৫৬ বছর বয়সী ফানিল সারভারভ রুশ সামরিক বাহিনীর অত্যন্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ছিলেন। রুশ গণমাধ্যমের তথ্যমতে, ফানিল সারভারভ নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০ সালের শুরুতে তিনি ওসেটিয়ান-ইঙ্গুশ সংঘাত ও চেচেন যুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন। ২০১৫-১৬ সালে সিরিয়ায় রুশ সামরিক অভিযানেও তিনি নেতৃত্ব দেন।

২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে মস্কোতে হাইপ্রোফাইল ব্যক্তিদের ওপর বেশ কয়েকটি বড় হামলার ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র আলেকজান্ডার দুগিনের কন্যা দারিয়া দুগিনা গাড়িবোমা হামলায় নিহত হন।

চলতি বছরের এপ্রিলে জেনারেল ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ও ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল ইগর কিরিলভও একই ধরনের হামলায় প্রাণ হারান।

নীতিগত কারণে ইউক্রেন সাধারণত এ ধরনের হামলার দায় স্বীকার করে না। তবে গত বছর জেনারেল কিরিলভ নিহতের ঘটনায় ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিল বিবিসির একটি সূত্র।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত