Ajker Patrika

সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন হামলার পরিণতি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা, ইরানের হুঁশিয়ারি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭: ১৯
সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন হামলার পরিণতি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা, ইরানের হুঁশিয়ারি

ইরাক ও সিরিয়ায় একের পর এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলাকে ‘কৌশলগত ভুল’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ইরান। এই হামলা আঞ্চলিক উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো ফল বয়ে আনবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে দেশটি।  

গত শুক্রবার সিরিয়া সীমান্তের কাছে মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে তিন সেনাসদস্যকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই অঞ্চলের ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। 

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ইঙ্গ-মার্কিন জোটও গতকাল শনিবারও ইয়েমেনের হুতি লক্ষ্যবস্তুতে নতুন করে হামলা চালিয়েছে। 

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ইরাক ও সিরিয়ায় হামলা ওই অঞ্চলে উত্তেজনা ও অস্থিতিশীলতা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো ফল বয়ে আনবে না। এর আগে ইরাক বলেছিল, মার্কিন পাল্টা হামলা ওই অঞ্চলের জন্য ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ বয়ে আনবে। 

ইরাকের কর্মকর্তারা বলছেন, হামলায় বেসামরিক নাগরিকসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। 

ইরাকের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র বলেন, এই হামলা তার দেশের (ইরাক) সার্বভৌমত্বের ‘লঙ্ঘন’ এবং এটি ‘ইরাক এবং এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব ফেলবে’। 

এদিকে সিরিয়া বলেছে, সিরিয়ার ভূখণ্ডে মার্কিন ‘দখলদারি’ অব্যাহত থাকতে পারে না।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরাক ও সিরিয়ায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) কুদস বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে আসা দূরপাল্লার বোমারু বিমানসহ বেশ কয়েকটি মার্কিন যুদ্ধবিমান এ হামলায় অংশ নেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়ার চারটি স্থানে এবং ইরাকের তিনটি স্থানে মোট ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানের ভূখণ্ডে কোনো ধরনের হামলা করা হয়নি। 

ইরাক ও সিরিয়ায় গত শুক্রবারের মার্কিন হামলার পর থেকে মার্কিন বাহিনীর ওপর একটি হামলা হয়েছে বলে সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা। সিরিয়ার মিশন সাপোর্ট সাইট ইউফ্রেটিসে অবস্থিত মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে রকেট হামলা চালানো হলেও এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, মার্কিন হামলা অব্যাহত থাকবে এবং হামলার স্থান আমরা বেছে নেব। তবে তিনি আরও বলেন, তাঁর দেশ মধ্যপ্রাচ্য বা বিশ্বের অন্য কোথাও সংঘাত চায় না।  

সিরিয়া সীমান্তের কাছে জর্ডানের এক মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পর এ হামলা চালানো হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স ইন ইরাক এই হামলার জন্য দায়ী। ড্রোনটি ইরানের তৈরি এবং রাশিয়াকে সরবরাহ করা ড্রোনগুলোর মতোই বলে জানান তাঁরা।  

একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত এই সংগঠনকে আইআরজিসি অস্ত্র, অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পেছনে কোনো ধরনের ভূমিকা থাকার কথা অস্বীকার করে ইরান বলেছে, তারা ‘প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সঙ্গে জড়িত নয়’।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মৈত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে মার্কিন হামলা ‘ইহুদিবাদী সরকারের লক্ষ্যপূরণের ব্যবস্থামাত্র’। 

জাতিসংঘে নিযুক্ত মস্কোর কূটনীতিক দিমিত্রি পোলিয়ানস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেছেন, সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন হামলায় সৃষ্ট শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকির বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘জরুরি’ বৈঠক ডেকেছে রাশিয়া। 

নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়াও ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হয়ে উঠেছে। 

গত সপ্তাহে জর্ডান হামলায় নিহত উইলিয়াম রিভার্স (৪৬), কেনেডি স্যান্ডার্স (২৪) এবং ব্রেওনা মোফেটের (২৩) প্রত্যাবাসন অনুষ্ঠানে বাইডেন যোগ দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালায়। এ ড্রোন হামলায় ৪০ জনের বেশি সেনা আহত হয়েছে। 

মার্কিন রিপাবলিকানরা পাল্টা হামলায় বিলম্ব নিয়ে সমালোচনা করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা হামলার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছে। কিছু পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিলম্বের কারণে ইরান কর্মী সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে সম্ভাব্য বৃহত্তর দ্বন্দ্ব এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত