বিদ্যুৎকেন্দ্র ও পরিকল্পিত শিল্প এলাকায় গ্যাস দেওয়াই লক্ষ্য

মুহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন
প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২২, ১১: ২৪
আপডেট : ০৪ জুন ২০২২, ১৬: ২১

আজকের পত্রিকা: গ্যাসের চাহিদা ও জোগান বিবেচনা করে আপনাদের প্রতিষ্ঠান কি প্রত্যাশিত গ্যাস সরবরাহ করতে পারছে? 
শঙ্কর মজুমদার: বাখরাবাদের আওতাধীন এলাকায় প্রতিদিনের গ্যাসের চাহিদা হচ্ছে ৫৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি)। গ্যাসের সরবরাহ ২৮০-৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার তুলনায় আমরা প্রায় ২৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট কম গ্যাস সরবরাহ করছি। এলএনজির আমদানি কম এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে প্রত্যাশিত গ্যাস উৎপাদন করতে না পারায় গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আমরা গ্যাস সরবরাহ করতে পারি না। নিজস্ব উৎস থেকে আমাদের দেশে গ্যাসের উৎপাদন অনেক কমে এসেছে। ফলে আমরা প্রত্যাশিত গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। 

আজকের পত্রিকা: কুমিল্লা মহানগর, ইপিজেড ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহের অগ্রগতি কেমন? 
শঙ্কর মজুমদার: কুমিল্লা ইপিজেড এলাকায় আমরা গ্যাস সরবরাহের কোনো ঘাটতি রাখি না। ইপিজেড ও বিসিক এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে আমরা খুবই সচেতন। এই শিল্প এলাকাগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। ইপিজেডে আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য হিজলা থেকে একটা ডেডিকেটেড লাইন বসিয়েছি। 

আজকের পত্রিকা: আপনার এলাকায় যে ১৪টা বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে, এর সবগুলো গ্যাসচালিত। এর ব্যবস্থাপনা কীভাবে করা হয়? 
শঙ্কর মজুমদার: আমাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে ১৪টা, তার মধ্যে সরকারি ৯টা এবং বেসরকারি ৫টা। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সবগুলোই গ্যাসচালিত। বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য গ্যাসের চাহিদা হচ্ছে ৪০২ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পুরোনো হওয়ার কারণে পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারে না। প্ল্যান্টগুলো পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে গেলে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চাহিদাও কম। আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী ১৫০-১৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দিচ্ছি। বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় আমরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করে থাকি। এ জন্য আমরা সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস রেশনিং করছি। 

আজকের পত্রিকা: নোয়াখালীর কবিরহাট ও বসুরহাট পৌরসভায় গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার জন্য সম্প্রতি মানববন্ধন হয়েছে। আপনাদেরও একটা প্রকল্প ছিল এই এলাকাগুলোতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার জন্য। কতটুকু এগিয়েছে ওই প্রকল্প? 
শঙ্কর মজুমদার: নোয়াখালীর কবিরহাট ও বসুরহাট পৌরসভায় আবাসিক খাতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার এই প্রকল্প বেশ পুরোনো। পেট্রোবাংলা ও মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, একটা জরিপ করে ওই এলাকাগুলোতে আবাসিক খাতে গ্যাসের সংযোগ দিলে কী পরিমাণ গ্যাস দরকার হয় তা দেখার জন্য। জরিপে দেখা গেছে .৭৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দরকার। জরিপের প্রতিবেদন আমরা পেট্রোবাংলায় পাঠিয়েছি। এখনো কোনো উত্তর পাই নাই। আবাসিক খাতে গ্যাসের সংযোগ না দেওয়ার জন্য সরকারের একটা সিদ্ধান্ত আছে। এর জন্য আমরা নোয়াখালীর কবিরহাট ও বসুরহাট পৌরসভায় আবাসিক খাতে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সরকারের একটা পলিসি হচ্ছে, পরিকল্পিত শিল্প এলাকা যেমন—ইপিজেড, বেপজা ও বিসিকের বাইরে গড়ে ওঠা শিল্পকারখানায় গ্যাস না দেওয়া। কবিরহাট ও বসুরহাট এলাকায় কিছু ছোট ছোট শিল্পকারখানা গড়ে উঠলেও পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে থাকার কারণে সেখানে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। 

আজকের পত্রিকা: কুমিল্লা মহানগর, ইপিজেড ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহের জন্য যে রিং মেইন পাইপলাইন নির্মাণ হচ্ছে, তার অগ্রগতি জানতে চাই। 
শঙ্কর মজুমদার: রিং মেইন পাইপলাইন নির্মাণকাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ। এ কাজটা আমরা প্রকল্প মেয়াদের মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারব। তবে সমস্যা হচ্ছে, আমরা প্রকল্পটি শেষ করলেও সরকার আবাসিক খাতে কোনো গ্যাস দেবে না। তখন এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ কী হবে? প্রকল্পের কাজ চলমান থাকলেও একটু ডিমেতালে চলছে। আমরা যেহেতু গ্যাস দিতে পারব না, আমার মতামত হচ্ছে, প্রকল্পটিতে আর বিনিয়োগ না করাই ভালো। 

আজকের পত্রিকা: অভিযোগ আছে, বাখরাবাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে অবৈধ সংযোগগুলো দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে আপনি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন? 
শঙ্কর মজুমদার: আমি আসার আগে কী হয়েছে তা বলতে পারব না। আমি আসার পর গ্যাসের এই অবৈধ সংযোগ নির্মূল করাই ছিল প্রথম চ্যালেঞ্জ। যেভাবেই হোক, আমাকে অবৈধ সংযোগ নির্মূল করতেই হবে। অবৈধ সংযোগ দেওয়ার অভিযোগে আমরা এখন পর্যন্ত আটজনকে অপসারণ করেছি। অপসারিত আটজনই হচ্ছেন কর্মচারী। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত