জাহীদ রেজা নূর ও রাশেদ নিজাম
টানা তিনবারের মতো মেয়র পদে জয়লাভের জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
সেলিনা হায়াৎ আইভী: এটা আমার জনমানুষের জয়। নারায়ণগঞ্জবাসীর জয়।
নির্বাচনের আগে আপনার নানা বক্তব্যে অনেক আশঙ্কা শুনেছি। চিরচেনা হাসিমুখও কম দেখেছি। আপনি জটিল পরিস্থিতিতে ছিলেন?
আইভী: আমি মানসিকভাবে একটু আপসেট ছিলাম। কারণ আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন অজানা দেশে। (গত ২৫ জুলাই মারা যান তাঁর মা মমতাজ বেগম।) আমি যখন বাড়ি থেকে বের হতাম, আমার মায়ের কথাই বেশি মনে হতো। তাই প্রচারের প্রথম দিকে আমি একদমই স্বাভাবিক হতে পারিনি। আর প্রথম দিকে একটু অসুস্থও ছিলাম, ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত ছিলাম। পরে আমি স্বকীয়তায় ফিরেছি।
আর চাপ তো একটু ছিল, ছিল নানামুখী ষড়যন্ত্র। এগুলো আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমার মায়ের শূন্যতাই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। এখনো আমি উদ্যাপন করতে পারছি না। কারণ আমার মা আমাকে সব সময় সাহস দিতেন। গত তিনটা নির্বাচনে মা আমার শক্তি ছিলেন।
দ্বিতীয়বারের মতো নৌকা প্রতীকে লড়লেন। বারবার বলেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী আপনার সঙ্গেই থাকবে। আসলে প্রতীক জিতেছে না ব্যক্তি আইভী—কী মনে হয়?
আইভী: নৌকা থাকা না-থাকা নিয়ে কিছু বলব না। কারণ আমি এবারই প্রথম নির্বাচন করছি না নৌকা নিয়ে। ২০১৬ সালেও করেছি। তখনো মানুষ নৌকাকে ভোট দিয়েছে, আইভীকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু এবার নৌকা থাকার পরও আমার বিরোধীপক্ষ খুবই কৌশলগত কারণে ধানের শীষ না নিয়ে হাতি নিয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের সংমিশ্রণ করে, ষড়যন্ত্র করে ফল অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার সাধারণ মানুষ আমাকে চেনে, নৌকাকে চেনে। সুতরাং আইভী ও নৌকা একাকার ছিল। নাসিকের মানুষ নৌকার ওপর, আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। এখানে আইভী বা নৌকা আলাদা কিছু না, এক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার ওপর যে আস্থা রেখেছেন...
আইভী: অবশ্যই, অবশ্যই। উনি জানতেন শেখ হাসিনার আইভী পারবে নারায়ণগঞ্জর মানুষের মন জয় করতে। আইভীকে তারা বিমুখ করবে না, নৌকাকে জেতাবে।
আপনাদের পরিবার নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক আগ্রহ থাকে। যদি কিছু বলতেন, কে কোথায় কী করছেন।
আইভী: আমার বাবার কথা তো সবাই জানে। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মেয়র ছিলেন। ১৯৮৪ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগপর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। মা গৃহিণী ছিলেন। শেখ হাসিনা বলতে অজ্ঞান ছিলেন তিনি। পরিবারে আছি দুই ভাই, তিন বোন। আমি সবার বড়। সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশোনা করেছি। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে আমি ১৯৯৫ সালে নিউজিল্যান্ডে যাই অভিবাসী হয়ে। আমার ছোট বোন লাকী (লাকী ফারজানা) তার পরিবারসহ সেখানে থাকে। আমার ইমিডিয়েট ছোটটা মিনু (মিনু আহম্মেদ), নারায়ণগঞ্জেই থাকে। ওর স্বামী আব্দুল কাদির জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সভাপতি। আমার ছোট দুই ভাই আলী রেজা রিপন, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি। ব্যবসা করে। ওর সঙ্গেই আমি থাকি। সবচেয়ে ছোট ভাইটা আলী রেজা উজ্জ্বল মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। কয়েকটা স্কুল পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। আমরা তিন ভাইবোন আব্বার বাড়িতে একসঙ্গেই থাকি।
আপনার নিজের পরিবার...
আইভী: ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর বিয়ে করি আমরা। স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ। শ্বশুরবাড়ি রাজবাড়ীতে। এখন আমার স্বামী ও দুই বাচ্চা নিউজিল্যান্ডে থাকে। সেতু নামে আমার স্বামীকে অকল্যান্ডে সবাই চেনে। আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে কাজী সাদমান হায়াৎ সীমান্ত অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। ছোট ছেলে কাজী সারজিল হায়াৎ অনন্ত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।
একটু অন্য প্রসঙ্গ, শামীম ওসমানের বাড়ির চারপাশেই সব বিএনপি-সমর্থক কাউন্সিলর, যাঁদের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এ বিষয়ে কী বলবেন?
আইভী: বিষয়টি এবার না, আগেই নোটিশ করা হয়েছে। কেউ সুপরিকল্পিতভাবেই ওখানে আমাদের (আওয়ামী লীগের) নেতাদের দাঁড়াতে দেয়নি, নেতৃত্বও গড়ে উঠতে দেয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মানুষ আগে দলীয় প্রতীক দেখত না। নৌকা না ধানের শীষ। যে দাঁড়াত, শ্রম দিত। এলাকার মানুষের কাজ আসত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রার্থীকেই মানুষ পছন্দ করত। পারিবারিক পরিচয় দেখত। ইদানীং মানুষ ওখান থেকে সরে এসেছে। অনেকেই এখন অন্যভাবে নির্বাচন করে। পেশিশক্তিও ফুটে উঠছে। সবকিছু মিলিয়ে চার-পাঁচটা ওয়ার্ডে যারাই নির্বাচন করেছে, তারা আগে থেকেই ওখানে ছিল। কিন্তু আমার দলের নেতৃত্ব ওখানে কৌশলে গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি।
টানা ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এবার ভোটের অনুপাতে কম ভোট পেয়েছেন। কীভাবে দেখছেন?
আইভী: আসলে ইভিএম সকাল থেকেই স্লো ছিল। ওই দিন সকালেই বলেছি, এ জন্য ভোটাররা কম ভোট দিতে পেরেছে। দিন শেষে মোট শতাংশে যার প্রভাব পড়েছে। আমার ধারণা ছিল লক্ষাধিক ভোটে জিতব।
ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগ, জেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেন?
আইভী: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নাসিক নির্বাচনের সময় এখানে এসেছিলেন। তাঁরা দেখেছেন, দলের একজন বড় ভাইয়ের নির্দেশে অনেকেই আমার বিপক্ষে বলব না, নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। বিভিন্ন কারণে কমিটিগুলো অকার্যকর ছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল, এ কারণে হয়তো ভেঙেছে। সামনে হয়তো আরও সক্রিয়, দেশপ্রেমিক, দলপ্রেমিক লোকজন নিয়ে কমিটি হবে। যারা খাঁটি আওয়ামী লীগার, শেখ হাসিনার রাজনীতি বিশ্বাস করেন, তাঁরাই কমিটিতে থাকবেন বলে শুনেছি।
আপনার শহরে ফুটপাতের বড় অংশজুড়ে হকার বসে। এই সমস্যা নিরসনে কী ব্যবস্থা নেবেন? ২০১৮ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল এ নিয়ে। কোনো সমাধান হয়নি।
আইভী: পারাটা একটু কঠিন হয়ে গিয়েছে। কারণ হকারদের পুনর্বাসন করে রাখা যাচ্ছে না। বাবা ১৯৮২ সালে হকার্স মার্কেট করেছিলেন। তখন এত লোক ছিল না। ওই হকাররাও দোকান বিক্রি করে রাস্তায় চলে এসেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে আমরা যৌথভাবে হকার্স মার্কেট করে তাদের পুনর্বাসন করি। পরে আরও ৬০০ হকারকে পুনর্বাসন করি। কিন্তু তারা সবাই দোকান অন্যের কাছে বিক্রি করে বা ভাড়া দিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এখন ফুটপাতে থাকা হকারের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩ হাজার হবে। বঙ্গবন্ধু সড়ক তো দখল করে আছেই, শহরের আনাচকানাচের সব রাস্তা তাদের দখলে। প্রশাসন যদি সহযোগিতা না করে, মেয়রের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই হকার সমস্যার সমাধান সম্ভব না। বিশেষ করে পুলিশের সাহায্য ছাড়া একেবারেই সম্ভব না।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু সিগনেচার কাজ আছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল। আপনার কি সে রকম কিছু আছে, যে জন্য নারায়ণগঞ্জবাসী আপনাকে মনে রাখবে?
আইভী: নারায়ণগঞ্জবাসী শুধু কাজের জন্য আমাকে মনে রাখবে না। কাজ বললে, ১০ তলা নগরভবন, যেটা দেখলে নারায়ণগঞ্জবাসী বলবে, এই ভবনটি আইভী করে দিয়েছিল। শেখ রাসেল পার্ক—শহরে তো হাঁটার জায়গা ছিল না। একটা বস্তি ছিল, সব সময় মাদকের ব্যবসা হতো। সেই মাদকের ব্যবসা গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে একটা বড় লেক হয়েছে। ড্রেনেজ সিস্টেমের জন্যও আইভীকে মনে রাখতে হবে। আমরা কদম রসুল ব্রিজ করছি। ব্রিজটি কি বলবে না, এ কাজটি কে করেছে? কিন্তু যে জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখবে বলে আমি আশা করি, সেটা হলো, দানবের বিরুদ্ধে মানবের জয়। এটি আমি নারায়ণগঞ্জ শহরে করে দেখিয়েছি। দানব যত শক্তিশালী হোক না কেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমি বলব, এই শহরের মানুষ অনেক সাহসী। জিম্মি অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে এ শহরের মানুষ সাহস করে কথা বলে। সাহসী হওয়ার জন্য তাদের জাগাতে হয় মাঝে মাঝে, সেই জাগরণটা কি আইভী দেয়নি? দিয়েছে। সে জন্যই আইভীকে মানুষ মনে রাখবে বলে মনে করি।
ঢাকার পর অন্যতম আলোচিত শহর নারায়ণগঞ্জ। এখন পর্যন্ত এখানকার মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি।
আইভী: আমাকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জের গুরুত্ব, অবস্থানের কথা বললে নাসিকের মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া উচিত...
আইভী: না না, এ ব্যাপারে আমার কোনো মাথাব্যথাই নেই। আমাকে কী দিল, কী দিল না, সেটা বিবেচ্য নয়। আমি একজন সাধারণ মানুষ, সাধারণই থাকতে চাই।
সংসদে যাওয়ার কখনো কোনো ইচ্ছে হয়েছে?
আইভী: আপাতত সে রকম কোনো ইচ্ছা আমার নেই।
আপনার বাড়ি নিয়ে মাঝে সংবাদ বেরিয়েছিল। বলা হয়েছিল, আপনার প্রাসাদসম বাড়ি...
আইভী: বাড়ি তো আপনারা আজ দেখলেন। এটা কি বিশাল কোনো প্রাসাদ? এটা দাদার ভিটা। বাবা এখানে থেকে গেছেন। আমার জন্ম এই ঘরটাতেই, যেখানে আপনারা বসে আছেন। যেহেতু পুরোনো আমলের বাড়িঘর, বড় বড় ঘরই ছিল, সেগুলো একটু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সেটা অনেক আগের, প্রায় ষাট-সত্তর বছর আগে। সেই গুলোকে আমরা সরিয়ে ভাইবোনেরা মিলে আব্বার তিনটা জায়গা বিক্রি করে এবং নানার কাছ থেকে মা কিছু টাকা পেয়েছিল, তা দিয়ে বাড়িটা করা হয়েছে। এই বাড়ির মালিক আমি না, আমার দুই ভাই। আর আমি আমার বাবার কাছ থেকে যে সম্পত্তি পেয়েছিলাম ১২ শতাংশ, সেটাও আমি একটা মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছি।
ডাক্তার তো আপনি। মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে গেলে কখনো কাউকে অসুস্থ দেখলে সেই বিদ্যা কি কাজে লাগান?
আইভী: হ্যাঁ। আগে একটু বেশি লাগাতাম, এখন অনেক কিছু ভুলে যাচ্ছি তো দিন দিন। কিন্তু এ রকম অনেক হয়েছে। কোথাও গিয়েছি লোকজন এসে বলত আমাকে একটু দেখে দেন না। জ্বর বা ব্লাড প্রেশারটা মেপে দেন। এমন প্রেসক্রিপশন অনেক দিয়েছি। ইদানীং কম দিই। অনেক কিছু ভুলে গেছি।
নিজেকে তৃপ্ত মনে হয়?
আইভী: একদম পরিপূর্ণ। যা চেয়েছি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এত বেশি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি, বিশ্বাস পেয়েছি। তারপরও আমি তো মানুষ, ফেরেশতা না। মানুষের ভুল হতে পারে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আইভী: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
টানা তিনবারের মতো মেয়র পদে জয়লাভের জন্য আপনাকে অভিনন্দন।
সেলিনা হায়াৎ আইভী: এটা আমার জনমানুষের জয়। নারায়ণগঞ্জবাসীর জয়।
নির্বাচনের আগে আপনার নানা বক্তব্যে অনেক আশঙ্কা শুনেছি। চিরচেনা হাসিমুখও কম দেখেছি। আপনি জটিল পরিস্থিতিতে ছিলেন?
আইভী: আমি মানসিকভাবে একটু আপসেট ছিলাম। কারণ আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন অজানা দেশে। (গত ২৫ জুলাই মারা যান তাঁর মা মমতাজ বেগম।) আমি যখন বাড়ি থেকে বের হতাম, আমার মায়ের কথাই বেশি মনে হতো। তাই প্রচারের প্রথম দিকে আমি একদমই স্বাভাবিক হতে পারিনি। আর প্রথম দিকে একটু অসুস্থও ছিলাম, ঠান্ডা, কাশিতে আক্রান্ত ছিলাম। পরে আমি স্বকীয়তায় ফিরেছি।
আর চাপ তো একটু ছিল, ছিল নানামুখী ষড়যন্ত্র। এগুলো আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি। আমার মায়ের শূন্যতাই আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিল। এখনো আমি উদ্যাপন করতে পারছি না। কারণ আমার মা আমাকে সব সময় সাহস দিতেন। গত তিনটা নির্বাচনে মা আমার শক্তি ছিলেন।
দ্বিতীয়বারের মতো নৌকা প্রতীকে লড়লেন। বারবার বলেছেন, নারায়ণগঞ্জবাসী আপনার সঙ্গেই থাকবে। আসলে প্রতীক জিতেছে না ব্যক্তি আইভী—কী মনে হয়?
আইভী: নৌকা থাকা না-থাকা নিয়ে কিছু বলব না। কারণ আমি এবারই প্রথম নির্বাচন করছি না নৌকা নিয়ে। ২০১৬ সালেও করেছি। তখনো মানুষ নৌকাকে ভোট দিয়েছে, আইভীকে ভোট দিয়েছে। কিন্তু এবার নৌকা থাকার পরও আমার বিরোধীপক্ষ খুবই কৌশলগত কারণে ধানের শীষ না নিয়ে হাতি নিয়েছে। এখানে বিভিন্ন ধরনের সংমিশ্রণ করে, ষড়যন্ত্র করে ফল অন্য দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমার সাধারণ মানুষ আমাকে চেনে, নৌকাকে চেনে। সুতরাং আইভী ও নৌকা একাকার ছিল। নাসিকের মানুষ নৌকার ওপর, আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছে। এখানে আইভী বা নৌকা আলাদা কিছু না, এক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনার ওপর যে আস্থা রেখেছেন...
আইভী: অবশ্যই, অবশ্যই। উনি জানতেন শেখ হাসিনার আইভী পারবে নারায়ণগঞ্জর মানুষের মন জয় করতে। আইভীকে তারা বিমুখ করবে না, নৌকাকে জেতাবে।
আপনাদের পরিবার নিয়ে সাধারণ মানুষের অনেক আগ্রহ থাকে। যদি কিছু বলতেন, কে কোথায় কী করছেন।
আইভী: আমার বাবার কথা তো সবাই জানে। নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মেয়র ছিলেন। ১৯৮৪ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগপর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। মা গৃহিণী ছিলেন। শেখ হাসিনা বলতে অজ্ঞান ছিলেন তিনি। পরিবারে আছি দুই ভাই, তিন বোন। আমি সবার বড়। সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়াশোনা করেছি। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে আমি ১৯৯৫ সালে নিউজিল্যান্ডে যাই অভিবাসী হয়ে। আমার ছোট বোন লাকী (লাকী ফারজানা) তার পরিবারসহ সেখানে থাকে। আমার ইমিডিয়েট ছোটটা মিনু (মিনু আহম্মেদ), নারায়ণগঞ্জেই থাকে। ওর স্বামী আব্দুল কাদির জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও যুবলীগের সভাপতি। আমার ছোট দুই ভাই আলী রেজা রিপন, জেলা যুবলীগের সহসভাপতি। ব্যবসা করে। ওর সঙ্গেই আমি থাকি। সবচেয়ে ছোট ভাইটা আলী রেজা উজ্জ্বল মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। কয়েকটা স্কুল পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। আমরা তিন ভাইবোন আব্বার বাড়িতে একসঙ্গেই থাকি।
আপনার নিজের পরিবার...
আইভী: ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর বিয়ে করি আমরা। স্বামী কাজী আহসান হায়াৎ। শ্বশুরবাড়ি রাজবাড়ীতে। এখন আমার স্বামী ও দুই বাচ্চা নিউজিল্যান্ডে থাকে। সেতু নামে আমার স্বামীকে অকল্যান্ডে সবাই চেনে। আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে কাজী সাদমান হায়াৎ সীমান্ত অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। ছোট ছেলে কাজী সারজিল হায়াৎ অনন্ত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে।
একটু অন্য প্রসঙ্গ, শামীম ওসমানের বাড়ির চারপাশেই সব বিএনপি-সমর্থক কাউন্সিলর, যাঁদের শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। এ বিষয়ে কী বলবেন?
আইভী: বিষয়টি এবার না, আগেই নোটিশ করা হয়েছে। কেউ সুপরিকল্পিতভাবেই ওখানে আমাদের (আওয়ামী লীগের) নেতাদের দাঁড়াতে দেয়নি, নেতৃত্বও গড়ে উঠতে দেয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মানুষ আগে দলীয় প্রতীক দেখত না। নৌকা না ধানের শীষ। যে দাঁড়াত, শ্রম দিত। এলাকার মানুষের কাজ আসত, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন প্রার্থীকেই মানুষ পছন্দ করত। পারিবারিক পরিচয় দেখত। ইদানীং মানুষ ওখান থেকে সরে এসেছে। অনেকেই এখন অন্যভাবে নির্বাচন করে। পেশিশক্তিও ফুটে উঠছে। সবকিছু মিলিয়ে চার-পাঁচটা ওয়ার্ডে যারাই নির্বাচন করেছে, তারা আগে থেকেই ওখানে ছিল। কিন্তু আমার দলের নেতৃত্ব ওখানে কৌশলে গড়ে উঠতে দেওয়া হয়নি।
টানা ক্ষমতায় থাকলে জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। এবার ভোটের অনুপাতে কম ভোট পেয়েছেন। কীভাবে দেখছেন?
আইভী: আসলে ইভিএম সকাল থেকেই স্লো ছিল। ওই দিন সকালেই বলেছি, এ জন্য ভোটাররা কম ভোট দিতে পেরেছে। দিন শেষে মোট শতাংশে যার প্রভাব পড়েছে। আমার ধারণা ছিল লক্ষাধিক ভোটে জিতব।
ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রলীগ, জেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কেন?
আইভী: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নাসিক নির্বাচনের সময় এখানে এসেছিলেন। তাঁরা দেখেছেন, দলের একজন বড় ভাইয়ের নির্দেশে অনেকেই আমার বিপক্ষে বলব না, নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন। বিভিন্ন কারণে কমিটিগুলো অকার্যকর ছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল, এ কারণে হয়তো ভেঙেছে। সামনে হয়তো আরও সক্রিয়, দেশপ্রেমিক, দলপ্রেমিক লোকজন নিয়ে কমিটি হবে। যারা খাঁটি আওয়ামী লীগার, শেখ হাসিনার রাজনীতি বিশ্বাস করেন, তাঁরাই কমিটিতে থাকবেন বলে শুনেছি।
আপনার শহরে ফুটপাতের বড় অংশজুড়ে হকার বসে। এই সমস্যা নিরসনে কী ব্যবস্থা নেবেন? ২০১৮ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছিল এ নিয়ে। কোনো সমাধান হয়নি।
আইভী: পারাটা একটু কঠিন হয়ে গিয়েছে। কারণ হকারদের পুনর্বাসন করে রাখা যাচ্ছে না। বাবা ১৯৮২ সালে হকার্স মার্কেট করেছিলেন। তখন এত লোক ছিল না। ওই হকাররাও দোকান বিক্রি করে রাস্তায় চলে এসেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে আমরা যৌথভাবে হকার্স মার্কেট করে তাদের পুনর্বাসন করি। পরে আরও ৬০০ হকারকে পুনর্বাসন করি। কিন্তু তারা সবাই দোকান অন্যের কাছে বিক্রি করে বা ভাড়া দিয়ে রাস্তায় চলে আসে। এখন ফুটপাতে থাকা হকারের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩ হাজার হবে। বঙ্গবন্ধু সড়ক তো দখল করে আছেই, শহরের আনাচকানাচের সব রাস্তা তাদের দখলে। প্রশাসন যদি সহযোগিতা না করে, মেয়রের পক্ষে কোনো অবস্থাতেই হকার সমস্যার সমাধান সম্ভব না। বিশেষ করে পুলিশের সাহায্য ছাড়া একেবারেই সম্ভব না।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বেশ কিছু সিগনেচার কাজ আছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল। আপনার কি সে রকম কিছু আছে, যে জন্য নারায়ণগঞ্জবাসী আপনাকে মনে রাখবে?
আইভী: নারায়ণগঞ্জবাসী শুধু কাজের জন্য আমাকে মনে রাখবে না। কাজ বললে, ১০ তলা নগরভবন, যেটা দেখলে নারায়ণগঞ্জবাসী বলবে, এই ভবনটি আইভী করে দিয়েছিল। শেখ রাসেল পার্ক—শহরে তো হাঁটার জায়গা ছিল না। একটা বস্তি ছিল, সব সময় মাদকের ব্যবসা হতো। সেই মাদকের ব্যবসা গুঁড়িয়ে দিয়ে সেখানে একটা বড় লেক হয়েছে। ড্রেনেজ সিস্টেমের জন্যও আইভীকে মনে রাখতে হবে। আমরা কদম রসুল ব্রিজ করছি। ব্রিজটি কি বলবে না, এ কাজটি কে করেছে? কিন্তু যে জন্য মানুষ আমাকে মনে রাখবে বলে আমি আশা করি, সেটা হলো, দানবের বিরুদ্ধে মানবের জয়। এটি আমি নারায়ণগঞ্জ শহরে করে দেখিয়েছি। দানব যত শক্তিশালী হোক না কেন, ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমি বলব, এই শহরের মানুষ অনেক সাহসী। জিম্মি অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে এ শহরের মানুষ সাহস করে কথা বলে। সাহসী হওয়ার জন্য তাদের জাগাতে হয় মাঝে মাঝে, সেই জাগরণটা কি আইভী দেয়নি? দিয়েছে। সে জন্যই আইভীকে মানুষ মনে রাখবে বলে মনে করি।
ঢাকার পর অন্যতম আলোচিত শহর নারায়ণগঞ্জ। এখন পর্যন্ত এখানকার মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি।
আইভী: আমাকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জের গুরুত্ব, অবস্থানের কথা বললে নাসিকের মেয়রকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া উচিত...
আইভী: না না, এ ব্যাপারে আমার কোনো মাথাব্যথাই নেই। আমাকে কী দিল, কী দিল না, সেটা বিবেচ্য নয়। আমি একজন সাধারণ মানুষ, সাধারণই থাকতে চাই।
সংসদে যাওয়ার কখনো কোনো ইচ্ছে হয়েছে?
আইভী: আপাতত সে রকম কোনো ইচ্ছা আমার নেই।
আপনার বাড়ি নিয়ে মাঝে সংবাদ বেরিয়েছিল। বলা হয়েছিল, আপনার প্রাসাদসম বাড়ি...
আইভী: বাড়ি তো আপনারা আজ দেখলেন। এটা কি বিশাল কোনো প্রাসাদ? এটা দাদার ভিটা। বাবা এখানে থেকে গেছেন। আমার জন্ম এই ঘরটাতেই, যেখানে আপনারা বসে আছেন। যেহেতু পুরোনো আমলের বাড়িঘর, বড় বড় ঘরই ছিল, সেগুলো একটু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, সেটা অনেক আগের, প্রায় ষাট-সত্তর বছর আগে। সেই গুলোকে আমরা সরিয়ে ভাইবোনেরা মিলে আব্বার তিনটা জায়গা বিক্রি করে এবং নানার কাছ থেকে মা কিছু টাকা পেয়েছিল, তা দিয়ে বাড়িটা করা হয়েছে। এই বাড়ির মালিক আমি না, আমার দুই ভাই। আর আমি আমার বাবার কাছ থেকে যে সম্পত্তি পেয়েছিলাম ১২ শতাংশ, সেটাও আমি একটা মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছি।
ডাক্তার তো আপনি। মেয়রের দায়িত্ব পালন করতে গেলে কখনো কাউকে অসুস্থ দেখলে সেই বিদ্যা কি কাজে লাগান?
আইভী: হ্যাঁ। আগে একটু বেশি লাগাতাম, এখন অনেক কিছু ভুলে যাচ্ছি তো দিন দিন। কিন্তু এ রকম অনেক হয়েছে। কোথাও গিয়েছি লোকজন এসে বলত আমাকে একটু দেখে দেন না। জ্বর বা ব্লাড প্রেশারটা মেপে দেন। এমন প্রেসক্রিপশন অনেক দিয়েছি। ইদানীং কম দিই। অনেক কিছু ভুলে গেছি।
নিজেকে তৃপ্ত মনে হয়?
আইভী: একদম পরিপূর্ণ। যা চেয়েছি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। এত বেশি মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি, বিশ্বাস পেয়েছি। তারপরও আমি তো মানুষ, ফেরেশতা না। মানুষের ভুল হতে পারে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আইভী: আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪