Ajker Patrika

আমানতকারীদের স্বার্থই ব্যাংকের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত

ফারুক মেহেদী
আমানতকারীদের স্বার্থই ব্যাংকের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত

ব্যাংকের এখন অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত? প্ল্যানিংটা কীভাবে করবে? করোনায় ব্যাংকের মুনাফা বাড়ল কীভাবে? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এবিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নুরুল আমিন।সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক মেহেদী

আজকের পত্রিকা: করোনার এ পর্যায়ে ব্যাংকগুলোর এখন কী ধরনের ব্যাংকিং করা দরকার?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: করোনার যে সবই খারাপ তা নয়; এর কিছু শিক্ষাগত দিকও আছে। আমরা ব্যাংকগুলোকে চলার জন্য যেসব আইনকানুনের কথা বলি, তার মধ্যে একটা জিনিসেরই অভাব থাকে, তা হলো বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান। অনেকেই স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান করে। কিন্তু এসব স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানের অনেক সময় অ্যাকশন প্ল্যান থাকে না। আমি পরিকল্পনা করলাম, কিন্তু কোনো অ্যাকশন নেই। এ জন্য অনেক সময় স্ট্যাটেজিক প্ল্যান থাকলেও অ্যাকশন প্ল্যানের অভাব থাকে। 

আজকের পত্রিকা: এ ধরনের প্ল্যান কীভাবে করবে ব্যাংকগুলো?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: নানান রকম উত্থান-পতন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্যসৃষ্ট যেকোনো সমস্যা বা সংকটে ব্যবসাটা কীভাবে কন্টিনিউড বা চলমান রাখা হবে, সেই প্ল্যানিং করতে হয়। ব্যাংকিং তো একটা বিজনেস। ব্যাংকগুলোকে কমার্শিয়াল বিবেচনা করলে দেখা যাবে সেখানে বাণিজ্য আছে, আবার লাভও আছে। লাভ না হলে ব্যবসা চলবে কীভাবে? তাই আমি মনে করি করোনাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মকানুন, গাইডলাইন মেনে চলার পাশাপাশি সুশাসনের জন্য আরেকটু নজরদারি করা এবং একটি বিজনেস কন্টিনিউটি প্ল্যান বলবৎ করতে পারলে কোনো দুর্যোগেও ব্যাংক টিকে থাকবে।

আজকের পত্রিকা: এখন ব্যাংকগুলোর অগ্রাধিকার কী হওয়া উচিত?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: সরকারের এক ধরনের অগ্রাধিকার আছে। মানুষের জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্য ঠিক রাখা। তারপর নিয়ন্ত্রকের একটি প্ল্যানিং থাকে। আমি মনে করি ব্যাংকগুলোর অগ্রাধিকার তাদের চলমান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। ঋণ, প্রশাসন আর আমনতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ। কারণ, বিজনেস যেমন আক্রান্ত হয়েছে, আমানতকারীরাও আক্রান্ত হয়েছে। তারা ব্যবসায়ী ও কর্মীদের যেমন দেখবে তেমনি আমানতকারীদেরও দেখতে হবে। 

আজকের পত্রিকা: আপনি হলে কী করতেন?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: আমি যদি ম্যানুফ্যাকচারার হতাম, তাহলে বলতাম যে আমার উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান ঠিক আছে কি না। উৎপাদকের মূল লক্ষ্য হলো উৎপাদন হোক, বিক্রি না হলেও যাতে কর্মসংস্থান ঠিক থাকে। মোটকথা অর্থনীতির জন্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জীবন ও জীবিকা এবং বেকারত্ব থেকে জাতিকে রক্ষা করা। আর ব্যাংকের অগ্রাধিকার হচ্ছে, যে খাতে যে প্রয়োজন অনিচ্ছাকৃত খেলাপিদের সাহায্য করে তাদের সঠিক পথে রাখা, আর সরকার যেসব প্রণোদনা দিয়েছে সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। করোনাকালে ব্যাংক সুদের হার, খেলাপি ও তারল্য ঠিক রাখায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব সুবিধা পেয়েছে, এগুলো যখন তুলে নেওয়ার পরও যাতে তারা দক্ষতার সঙ্গে তা মোকাবিলা করতে পারে সেটা দেখতে হবে। 

আজকের পত্রিকা: ব্যাংকের কাছে মানুষ আসবে, নাকি ব্যাংক যাবে মানুষের কাছে?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: কিছু মানুষ অ্যাকাউন্টভিত্তিক ব্যাংকিং করে। আরেকটি হলো ব্যাংকিং। এখন এজেন্ট ব্যাংকিং, সাব ব্রাঞ্চ–এগুলো হলো যুগোপযোগী ব্যাংকিং। অনেক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং বা সাব ব্রাঞ্চ করেছে, কেউ কৃষি উপশাখা করেছে। সুতরাং ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের ক্ষেত্রে আরও এগিয়ে যেতে হবে। আর যারা ব্যাংকের বাইরে আছে তাদেরকে ব্যাংকিংয়ে নিয়ে আসা। সবাইকে আসেন আসেন বললে হবে না। তাঁদের চাহিদার অ্যাসেসমেন্ট করতে হবে, অভয় দিতে হবে। 

আজকের পত্রিকা: করোনাকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পেরেছে ব্যাংক?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: করোনা আসার প্রথম দিকেই সরকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এ সময়ে তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলো শেষ হয়ে যাবে বলে আতঙ্ক ছিল। কিন্তু সরকারের ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার সহায়তা তাদের সাহস জুগিয়েছে। আমার খুশি লাগছে এই ভেবে যে প্রণোদনা ব্যাংকনির্ভর হওয়ায় দুর্নীতি, অনিয়ম অনেক কমে গেছে। এতে হিসাবটা ছিল স্বচ্ছ। আর দ্বিতীয় হলো ব্যাংকগুলোকে তারল্য সরবরাহ করে তাদেরকে স্বস্তিতে রাখা হয়েছে। 

আজকের পত্রিকা: করোনায় কি ব্যাংকগুলোর লাভ হলো?
মোহাম্মদ নুরুল আমিন: তাদের যে খুব ক্ষতি হয়েছে তা নয়; তাদের সুদের হার যখন ৯ শতাংশে এসেছে, এটা সরকার ভর্তুকি দিয়ে ৮-৯ শতাংশেই রেখেছে। ফলে ব্যাংকগুলোর উপকার হয়েছে। আরেকটি দিক হলো, যত ভয় ছিল মুনাফা নিয়ে সেটা কিন্তু হয়নি। সবগুলো ব্যাংক ভালো মুনাফা করেছে। ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কারণ হলো তাদের কাছে যে বেশি টাকা ছিল, সেটা তারা বিভিন্ন খাতে খাটিয়েছে। বিশেষ করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। এর আগে এ খাত থেকে ব্যাংকগুলোর এত মুনাফা আসেনি। এখানে খুব ভালো একটা সুবিধা তারা পেয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম থেকে খ্রিষ্টান হওয়া ইরানি নারী এখন পানামার জঙ্গলে

ঢাবি ছাত্রীকে যৌন হেনস্তাকারীর পক্ষে নামা ‘তৌহিদী জনতার’ আড়ালে এরা কারা

বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা হলেই মেয়াদ শেষ নতুন পরিচালনা কমিটির

এনসিপিকে চাঁদা দিচ্ছেন ধনীরা, ক্রাউডফান্ডিং করেও অর্থ সংগ্রহ করা হবে: নাহিদ ইসলাম

ভ্যানিটি ব্যাগ ধরে টান, সন্তানসহ ছিটকে পড়তেই তরুণীর গালে ছুরিকাঘাত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত