Ajker Patrika

৮০ বছর পর প্রাণ ফিরেছে ফিলিস্তিনের যে মসজিদে

কাউসার লাবীব
৮০ বছর পর প্রাণ ফিরেছে ফিলিস্তিনের যে মসজিদে

১৯৪৫ সালের কথা। ফিলিস্তিনের অপরূপ গ্রাম ছিল সারাফান্দ। হাইফা ও আক্কা শহরের মধ্যবর্তী উপকূল এলাকায় অবস্থিত গ্রামটি দেখলে যে কারও মন ভরে যেত। এখানে বাসিন্দাদের প্রায় সবাই ছিল কৃষক। কৃষিকাজ করেই তাদের জীবন চলত। সাইট্রাস ফল, জলপাই এবং বিভিন্ন শস্য তারা চাষ করত। সবুজ করে তুলত চারপাশ।

এ ছাড়া গ্রামটির পাশে সমুদ্র থাকায় মাছ শিকার করেও কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহ করত। ওই সময় সারাফান্দের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৫২০ জন। তাদের সবাই মুসলমান। তাদের ইবাদতের জন্য সেখানে ছিল চমৎকার একটি মসজিদ। মুসল্লিদের পদচারণে মসজিদটি মুখর থাকত। পাঁচ ওয়াক্তে ভেসে আসত মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি।

আট দশক আগে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনেদের ওপর নেমে আসে নাকবা তথা মহাবিপর্যয়। বদলে যায় মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে ইহুদিদের জন্য বলপূর্বক একটি রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ইহুদি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সেনারা ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য হত্যা-লুট-অগ্নিসংযোগ শুরু করে। ধ্বংস করে গ্রামের পর গ্রাম। জ্বালিয়ে দেয় ঘরবাড়ি। সেই আগুনে ধ্বংস হয় সারাফান্দ গ্রামও। বিতাড়িত হন সেখানের বাসিন্দারা। বসতভিটা হারিয়ে তারা বরণ করে নেয় উদ্বাস্তুজীবন।

যুদ্ধের পর গ্রামটির বাসিন্দারা নিজ এলাকায় বারবার ফিরতে চাইলেও তাদের আর ফিরতে দেওয়া হয়নি। সেখানে ইহুদিরা গড়ে তোলে নাহশোলিম বসতি। পরে বসতিটির লোকজন ২০০০ সালের দিকে ভেঙে ফেলে সারাফান্দের মসজিদটি, যার ধ্বংসস্তূপ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া ফিলিস্তিনিদের শেষ স্মৃতি বহন করছে আজও।

মুছে ফেলার শত চেষ্টা সত্ত্বেও সেই পরিত্যক্ত মসজিদের ধ্বংসাবশেষে আবার প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে। ভাঙা দেয়ালের স্থাপনায় উচ্চারিত হচ্ছে আজানের ধ্বনি। সারাফান্দের পাশে অবস্থিত ফুরাইদিস ও জিসর আজ-জারকা গ্রামের কিছু বাসিন্দা কয়েক বছর ধরেই এই মসজিদে এসে জুমার নামাজ আদায় করা শুরু করেছেন। রমজান মাসে নিয়মিত তারাবির নামাজের আয়োজন করে মসজিদটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছেন; আবারও ইবাদতে সজীব করে তুলছেন।

এ ছাড়া রমজানের প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার মসজিদটিতে সম্মিলিত ইফতার মাহফিলের আয়োজন হচ্ছে। পাশাপাশি দুই ঈদের নামাজও এখানে অনুষ্ঠিত হবে।

দখলদার ইসরায়েলিরা জোরজবরদস্তি করে বসতি গড়ে সারাফান্দকে মুছে ফেলার চেষ্টা করলেও, মসজিদটি নাকবার সাক্ষ্য হিসেবে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াচ্ছে; ফিলিস্তিনিদের ঐতিহাসিক অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত