মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি
আবদুল আযীয কাসেমি
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি নামটি গভীর মানবতাবোধ, আধ্যাত্মিকতা ও খোদাপ্রেমের প্রতীক। ১৩ শতকের এই মহান কবি ও সুফি দার্শনিক কাব্য ও দার্শনিক চিন্তাধারার মাধ্যমে তাঁর সময়েই নয়, আজও বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলেছেন। তাঁর জীবন, শিক্ষা ও সাহিত্য গভীরতর আধ্যাত্মিকতার পথ দেখিয়েছে; যা আজও মানুষের জীবন আলোকিত করছে।
মাওলানা রুমি ১২০৭ সালে আফগানিস্তানের বালখে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মোগলদের আক্রমণের কারণে পরিবারসহ বালখ ত্যাগ করেন এবং একাধিক স্থান ভ্রমণ শেষে তুরস্কের কোনিয়া শহরে স্থায়ী হন। বাবা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন একজন ধর্মতাত্ত্বিক। তাঁর কাছেই রুমি প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। সমকালীন বড় আলেম ও ধর্মবেত্তাদের কাছে পাঠ গ্রহণ শেষে রুমি হয়ে ওঠেন যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানতাপস।
রুমির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে শামস তাবরিজি নামক এক রহস্যময় সুফি সাধকের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন রুমির গুরু। রুমি তখনো আধ্যাত্মিক জগতের বাস্তবতার সন্ধান পাননি। শামসের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব, নিবিড় পরিচয় এবং আধ্যাত্মিক ভাব বিনিময় রুমিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও আধ্যাত্মিক গভীরতার পথ দেখায়।
রুমির সাহিত্যকর্ম মানবাত্মার অন্তর্নিহিত ভালোবাসা এবং পরম সত্তা তথা মহান আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের আহ্বান জানায়। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা ‘মসনবি-এ-মানবি’ বা আধ্যাত্মিক দন্ত্যকথা, যা প্রায় ২৫ হাজার দ্বিপদী পঙ্ক্তি নিয়ে গঠিত। এই মহাকাব্যকে ‘পারস্য ভাষার কোরআন’ বলা হয়। এর প্রতিটি পঙ্ক্তি আধ্যাত্মিকতার গভীর সত্য, ভালোবাসা ও আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভি উর্দু ভাষায় এর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা লেখেন, যা বাংলায় অনুবাদ করেন শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও মসনবির একটি বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
পৃথিবীতে এমন প্রেম নেই, যা আত্মাকে জাগ্রত করে না/ প্রেম হৃদয়কে ভেঙে খাঁটি সোনায় পরিণত করে। —মাওলানা রুমি
রুমির আরেকটি উল্লেখযোগ্য রচনা হলো ‘দিওয়ান-এ শামস-এ-তাবরিজি’, যা তাঁর গজলের সংকলন। এ বইয়ের গজলগুলোতে শামস তাবরিজির প্রতি রুমির গভীর ভালোবাসা ও আধ্যাত্মিক উৎসাহের প্রকাশ ঘটে।
ভালোবাসাই রুমির কবিতার কেন্দ্রবিন্দু। তবে এই ভালোবাসা শুধু মানসিক বা দৈহিক নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিক উচ্চতায় পৌঁছানোর মাধ্যম। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভালোবাসা এমন এক শক্তি, যা মানুষকে স্রষ্টার কাছাকাছি নিয়ে যায়। রুমি লেখেন, ‘পৃথিবীতে এমন প্রেম নেই, যা আত্মাকে জাগ্রত করে না/ প্রেম হৃদয়কে ভেঙে খাঁটি সোনায় পরিণত করে।’
মাওলানা রুমি তাঁর সময়ের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক ছিলেন। অন্তর্জগতে লুকিয়ে থাকা নানা ব্যাধিকে শুদ্ধ করে একটি পরিশুদ্ধ আত্মা গঠনে তিনি জোর দিয়েছিলেন। বিশেষত হিংসা, অহংকার ও পরশ্রীকাতরতামুক্ত হৃদয়জগৎ নির্মাণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, পবিত্র কোরআনের ভাষায় যাকে ‘কলবে সালিম’ বা ‘স্থির আত্মা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুর পরও মাওলানার কর্মের প্রভাব অটুট রয়েছে। তাঁর শিক্ষাগুলো সুফি-সাধনা এবং মৌলবি তরিকায় প্রবাহিত হয়েছে। আজও তাঁর কবিতা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে পাঠকের মনে আধ্যাত্মিকতার প্রদীপ প্রজ্বালিত করছে। তিনি আমাদের দিয়েছেন ভালোবাসার বার্তা। বলতে চেয়েছেন, খোদার ভালোবাসাই সবকিছুর মূল। তাঁর লেখাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যেকোনো বিভাজন বা বিদ্বেষ ছাড়িয়ে আমরা সবাই এক বৃহৎ ঐক্যের অংশ। তাই তাঁর শিক্ষা-দর্শন আজও আগের মতো প্রাসঙ্গিক এবং মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে রয়েছে।
লেখক: শিক্ষক
মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি নামটি গভীর মানবতাবোধ, আধ্যাত্মিকতা ও খোদাপ্রেমের প্রতীক। ১৩ শতকের এই মহান কবি ও সুফি দার্শনিক কাব্য ও দার্শনিক চিন্তাধারার মাধ্যমে তাঁর সময়েই নয়, আজও বিশ্বের কোটি মানুষের হৃদয়ে প্রভাব ফেলেছেন। তাঁর জীবন, শিক্ষা ও সাহিত্য গভীরতর আধ্যাত্মিকতার পথ দেখিয়েছে; যা আজও মানুষের জীবন আলোকিত করছে।
মাওলানা রুমি ১২০৭ সালে আফগানিস্তানের বালখে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে মোগলদের আক্রমণের কারণে পরিবারসহ বালখ ত্যাগ করেন এবং একাধিক স্থান ভ্রমণ শেষে তুরস্কের কোনিয়া শহরে স্থায়ী হন। বাবা বাহাউদ্দিন ওয়ালাদ ছিলেন একজন ধর্মতাত্ত্বিক। তাঁর কাছেই রুমি প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করেন। সমকালীন বড় আলেম ও ধর্মবেত্তাদের কাছে পাঠ গ্রহণ শেষে রুমি হয়ে ওঠেন যুগশ্রেষ্ঠ জ্ঞানতাপস।
রুমির জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে শামস তাবরিজি নামক এক রহস্যময় সুফি সাধকের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে। তিনি ছিলেন রুমির গুরু। রুমি তখনো আধ্যাত্মিক জগতের বাস্তবতার সন্ধান পাননি। শামসের সঙ্গে তাঁর গভীর বন্ধুত্ব, নিবিড় পরিচয় এবং আধ্যাত্মিক ভাব বিনিময় রুমিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও আধ্যাত্মিক গভীরতার পথ দেখায়।
রুমির সাহিত্যকর্ম মানবাত্মার অন্তর্নিহিত ভালোবাসা এবং পরম সত্তা তথা মহান আল্লাহর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের আহ্বান জানায়। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত রচনা ‘মসনবি-এ-মানবি’ বা আধ্যাত্মিক দন্ত্যকথা, যা প্রায় ২৫ হাজার দ্বিপদী পঙ্ক্তি নিয়ে গঠিত। এই মহাকাব্যকে ‘পারস্য ভাষার কোরআন’ বলা হয়। এর প্রতিটি পঙ্ক্তি আধ্যাত্মিকতার গভীর সত্য, ভালোবাসা ও আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত করে। উপমহাদেশের বিখ্যাত আলেম মাওলানা আশরাফ আলী থানভি উর্দু ভাষায় এর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা লেখেন, যা বাংলায় অনুবাদ করেন শায়খুল হাদিস মাওলানা আজিজুল হক। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও মসনবির একটি বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
পৃথিবীতে এমন প্রেম নেই, যা আত্মাকে জাগ্রত করে না/ প্রেম হৃদয়কে ভেঙে খাঁটি সোনায় পরিণত করে। —মাওলানা রুমি
রুমির আরেকটি উল্লেখযোগ্য রচনা হলো ‘দিওয়ান-এ শামস-এ-তাবরিজি’, যা তাঁর গজলের সংকলন। এ বইয়ের গজলগুলোতে শামস তাবরিজির প্রতি রুমির গভীর ভালোবাসা ও আধ্যাত্মিক উৎসাহের প্রকাশ ঘটে।
ভালোবাসাই রুমির কবিতার কেন্দ্রবিন্দু। তবে এই ভালোবাসা শুধু মানসিক বা দৈহিক নয়, বরং এটি আধ্যাত্মিক উচ্চতায় পৌঁছানোর মাধ্যম। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভালোবাসা এমন এক শক্তি, যা মানুষকে স্রষ্টার কাছাকাছি নিয়ে যায়। রুমি লেখেন, ‘পৃথিবীতে এমন প্রেম নেই, যা আত্মাকে জাগ্রত করে না/ প্রেম হৃদয়কে ভেঙে খাঁটি সোনায় পরিণত করে।’
মাওলানা রুমি তাঁর সময়ের আধ্যাত্মিক ও সামাজিক পরিবর্তনের অগ্রনায়ক ছিলেন। অন্তর্জগতে লুকিয়ে থাকা নানা ব্যাধিকে শুদ্ধ করে একটি পরিশুদ্ধ আত্মা গঠনে তিনি জোর দিয়েছিলেন। বিশেষত হিংসা, অহংকার ও পরশ্রীকাতরতামুক্ত হৃদয়জগৎ নির্মাণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন, পবিত্র কোরআনের ভাষায় যাকে ‘কলবে সালিম’ বা ‘স্থির আত্মা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
মৃত্যুর পরও মাওলানার কর্মের প্রভাব অটুট রয়েছে। তাঁর শিক্ষাগুলো সুফি-সাধনা এবং মৌলবি তরিকায় প্রবাহিত হয়েছে। আজও তাঁর কবিতা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে পাঠকের মনে আধ্যাত্মিকতার প্রদীপ প্রজ্বালিত করছে। তিনি আমাদের দিয়েছেন ভালোবাসার বার্তা। বলতে চেয়েছেন, খোদার ভালোবাসাই সবকিছুর মূল। তাঁর লেখাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যেকোনো বিভাজন বা বিদ্বেষ ছাড়িয়ে আমরা সবাই এক বৃহৎ ঐক্যের অংশ। তাই তাঁর শিক্ষা-দর্শন আজও আগের মতো প্রাসঙ্গিক এবং মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে রয়েছে।
লেখক: শিক্ষক
হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আগে যত নবী-রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন, সবার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ইসলামের মৌলিক আকিদার অন্তর্ভুক্ত। হজরত ঈসা (আ.) ছিলেন বনি ইসরাইলের সর্বশেষ নবী ও কিতাবধারী রাসুল। পবিত্র কোরআনের ১৫টি সুরার ৯৮টি আয়াতে তাঁর জীবনের নানা দিক আলোকপাত করা হয়েছে।
২০ ঘণ্টা আগেইসলামের সব বিধানই নবী (সা.) সাহাবিদের সামনে বর্ণনা করতেন। তবে মাঝেমধ্যে কোনো কোনো সাহাবিকে এককভাবে ডেকে বিশেষ কিছু নসিহত করতেন। তেমনই একদিন হজরত আলী (রা.)-কে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নসিহত করলেন। নাসায়ির হাদিসে এসেছে, তিনি আলী (রা.)-কে তিনটি কাজে দেরি না করার নির্দেশ দেন।
২ দিন আগেহিংসা মানুষের চরিত্রের মন্দ দিক। এটি সমাজকে বিষিয়ে তোলে। পরিবার, সমাজ থেকে নিয়ে সর্বত্র ঘৃণা ও হানাহানির জন্য দায়ী এই হিংসা। তাই এটি পরিহার করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। পরকালে হিংসুকদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। কোরআন-হাদিসে হিংসা পরিহারের ফজিলতের কথাও বর্ণিত হয়েছে।
৩ দিন আগেদূরে কোথাও সফরে গেলে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া মহানবী (সা.)-এর সুন্নত। বিভিন্ন সফরে তিনি স্ত্রীদের মধ্য থেকে একজনকে সঙ্গে নিতেন। হজ-ওমরাহসহ বিভিন্ন যুদ্ধেও স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন বলে একাধিক হাদিস থেকে জানা যায়।
৪ দিন আগে