ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
সময়ের ধারাবাহিকতায় আরও একটি বছর ফুরিয়ে নতুন বছরের অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। বিগত বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে অনেকের অনেক রকম প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ইমানি চেতনা মুমিনকে ইমানবান্ধব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করে। কারণ মানবজীবনে সঠিক পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিকল্পনার আলোকেই সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। জীবনকে মূল্যায়ন করতে যথাসময়ে ইমানবান্ধব পরিকল্পনা জরুরি।
ভালো কাজের পরিকল্পনা
‘দ্বীন মানেই নসিহত বা কল্যাণকামিতা।’ (মুসলিম: ২০৫)। কাজেই ইমানদারকে হতে হবে কল্যাণকর কাজের পরিকল্পনাকারী। যেমন ধর্মীয় বিষয় শিক্ষাদান, অন্যের প্রয়োজন পূরণ করা, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা না করা, জুলুম-অত্যাচার ও অনাচার পরিহার করা এবং সব কাজে সেবার মানসিকতা জাগ্রত করার পরিকল্পনা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ ভালো-মন্দ চিহ্নিত করে রেখেছেন।
যে ব্যক্তি ভালো কাজের পরিকল্পনা করে, কিন্তু তা করেনি, আল্লাহ তার জন্য একটি পূর্ণ নেকি লেখেন। আর যদি ভালো কাজের পরিকল্পনা করার পর তা বাস্তবায়ন করে, তাহলে আল্লাহ তাকে এই একটি ভালো কাজের জন্য ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ, বরং বহুগুণ পর্যন্ত ভালো কাজ হিসেবে লেখেন।’ (বুখারি: ৬১২৬; মুসলিম: ৩৫৫)
আল্লাহর ওপর ভরসা
বুদ্ধি-পরামর্শ করে কোনো বিষয়ে পরিকল্পনা করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে এগিয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহই উত্তম কর্ম সম্পাদনকারী। তিনি চাইলেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)কে সম্বোধন করে আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো, এরপর তুমি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর ভরসা করবে; যারা ভরসা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান: ১৫৯)
অভিজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ
সবাই সব বিষয়ে অভিজ্ঞ হয় না। যারা যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ নিতে হবে। ইমানবান্ধব পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে হক্কানি আলিমদের অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ভুলের সম্ভাবনা কমে যায় এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ হয়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা না জানো, তাহলে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস করো।’ (সুরা নাহল: ৪৩)
ভুল শুধরে নতুন পরিকল্পনা
নতুন বছর এলে বিগত বছরের পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। অতীতের ভুল সংশোধন করে এবং পাপের জন্য মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে নতুন বছরে নির্ভুল ও পাপমুক্ত জীবন কাটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে। পরকালে আল্লাহর সামনে হিসাবনিকাশের মুখোমুখি হওয়ার আগেই পৃথিবীতে জীবনের হিসাবনিকাশ করে নিতে হবে। ওমর (রা.) বলতেন, ‘তোমরা (পৃথিবীতে) নিজেদের হিসাব করে নাও, (পরকালে) তোমাদের হিসাব নেওয়ার আগে।’ (তিরমিজি: ২৪৫৯)
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ
সময় কখনো এক রকম যায় না। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আগানো উচিত। ইউসুফ (আ.) মিসরের খাদ্যভান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘ইউসুফ বলল, তোমরা সাত বছর লাগাতার চাষাবাদ করবে, এরপর তোমরা যে শস্য কাটবে, তার মধ্য থেকে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে, বাকিগুলো শিষসমেত সংরক্ষণ করবে। এরপর সাতটি কঠিন বছর আসবে। এই সাত বছর, যা আগে সঞ্চয় করে রাখবে, লোকে তা খাবে; কেবল সামান্য কিছু যা তোমরা (বীজ হিসেবে) সংরক্ষণ করবে, তা ছাড়া।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৮)
সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই পরিকল্পনা করতে হবে। জীবনভাবনায় স্মরণ রাখতে হবে, একেকটি বছর জীবনকে আরও সংকীর্ণ করছে এবং মৃত্যুর কাছাকাছি করছে। তাই বিগত বছরের পর্যালোচনা এবং নতুন বছরের ইমানবান্ধব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করাই হোক নতুন বছরের আগমনী বার্তা।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সময়ের ধারাবাহিকতায় আরও একটি বছর ফুরিয়ে নতুন বছরের অপেক্ষায় বিশ্ববাসী। বিগত বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে অনেকের অনেক রকম প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ইমানি চেতনা মুমিনকে ইমানবান্ধব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে অনুপ্রাণিত করে। কারণ মানবজীবনে সঠিক পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিকল্পনার আলোকেই সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। জীবনকে মূল্যায়ন করতে যথাসময়ে ইমানবান্ধব পরিকল্পনা জরুরি।
ভালো কাজের পরিকল্পনা
‘দ্বীন মানেই নসিহত বা কল্যাণকামিতা।’ (মুসলিম: ২০৫)। কাজেই ইমানদারকে হতে হবে কল্যাণকর কাজের পরিকল্পনাকারী। যেমন ধর্মীয় বিষয় শিক্ষাদান, অন্যের প্রয়োজন পূরণ করা, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা না করা, জুলুম-অত্যাচার ও অনাচার পরিহার করা এবং সব কাজে সেবার মানসিকতা জাগ্রত করার পরিকল্পনা করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ ভালো-মন্দ চিহ্নিত করে রেখেছেন।
যে ব্যক্তি ভালো কাজের পরিকল্পনা করে, কিন্তু তা করেনি, আল্লাহ তার জন্য একটি পূর্ণ নেকি লেখেন। আর যদি ভালো কাজের পরিকল্পনা করার পর তা বাস্তবায়ন করে, তাহলে আল্লাহ তাকে এই একটি ভালো কাজের জন্য ১০ গুণ থেকে ৭০০ গুণ, বরং বহুগুণ পর্যন্ত ভালো কাজ হিসেবে লেখেন।’ (বুখারি: ৬১২৬; মুসলিম: ৩৫৫)
আল্লাহর ওপর ভরসা
বুদ্ধি-পরামর্শ করে কোনো বিষয়ে পরিকল্পনা করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে এগিয়ে যেতে হবে। মহান আল্লাহই উত্তম কর্ম সম্পাদনকারী। তিনি চাইলেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)কে সম্বোধন করে আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজে-কর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো, এরপর তুমি কোনো সংকল্প করলে আল্লাহর ওপর ভরসা করবে; যারা ভরসা করে, আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল ইমরান: ১৫৯)
অভিজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ
সবাই সব বিষয়ে অভিজ্ঞ হয় না। যারা যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, সে বিষয়ে তাদের পরামর্শ নিতে হবে। ইমানবান্ধব পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে হক্কানি আলিমদের অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শ নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ভুলের সম্ভাবনা কমে যায় এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সহজ হয়। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা না জানো, তাহলে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস করো।’ (সুরা নাহল: ৪৩)
ভুল শুধরে নতুন পরিকল্পনা
নতুন বছর এলে বিগত বছরের পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। অতীতের ভুল সংশোধন করে এবং পাপের জন্য মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে নতুন বছরে নির্ভুল ও পাপমুক্ত জীবন কাটানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করতে হবে। পরকালে আল্লাহর সামনে হিসাবনিকাশের মুখোমুখি হওয়ার আগেই পৃথিবীতে জীবনের হিসাবনিকাশ করে নিতে হবে। ওমর (রা.) বলতেন, ‘তোমরা (পৃথিবীতে) নিজেদের হিসাব করে নাও, (পরকালে) তোমাদের হিসাব নেওয়ার আগে।’ (তিরমিজি: ২৪৫৯)
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ
সময় কখনো এক রকম যায় না। তাই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে আগানো উচিত। ইউসুফ (আ.) মিসরের খাদ্যভান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহ বলেন, ‘ইউসুফ বলল, তোমরা সাত বছর লাগাতার চাষাবাদ করবে, এরপর তোমরা যে শস্য কাটবে, তার মধ্য থেকে যে সামান্য পরিমাণ তোমরা খাবে, বাকিগুলো শিষসমেত সংরক্ষণ করবে। এরপর সাতটি কঠিন বছর আসবে। এই সাত বছর, যা আগে সঞ্চয় করে রাখবে, লোকে তা খাবে; কেবল সামান্য কিছু যা তোমরা (বীজ হিসেবে) সংরক্ষণ করবে, তা ছাড়া।’ (সুরা ইউসুফ: ৪৮)
সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই পরিকল্পনা করতে হবে। জীবনভাবনায় স্মরণ রাখতে হবে, একেকটি বছর জীবনকে আরও সংকীর্ণ করছে এবং মৃত্যুর কাছাকাছি করছে। তাই বিগত বছরের পর্যালোচনা এবং নতুন বছরের ইমানবান্ধব কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করাই হোক নতুন বছরের আগমনী বার্তা।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
পূর্ণ ধৈর্য ধারণ করে ইসলামের মহত্ত তুলে ধরার বিকল্প নেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যাদের ওপরে কোনো বিপদ এলে তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং তাঁর দিকেই আমরা ফিরে যাব।
৬ ঘণ্টা আগেদুনিয়ার সফরের শেষ গন্তব্য মৃত্যু। মৃত্যু এক অপ্রিয় সত্য, যা সুনিশ্চিত অনিবার্য ও অবশ্যম্ভাবী। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রতিটি প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮৫)
১ দিন আগেএকজন মুমিনের জন্য তার জীবনকে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত করা এবং ইসলামে যা কিছু নিষিদ্ধ, তা ত্যাগ করা আবশ্যক। হাদিস শরিফে এটাকে উত্তম ধার্মিকতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন...
২ দিন আগেআসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
৩ দিন আগে