ইসলাম ডেস্ক
হজরত নুহ (আ.) ছিলেন মানবজাতির আদিপিতা হজরত আদম (আ.)–এর অষ্টম প্রজন্মের নবী ও রাসুল। হাদিসের ভাষ্য মতে, তিনিই পৃথিবীর প্রথম রাসুল তথা শরিয়তপ্রাপ্ত বার্তাবাহক। নুহ (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। প্রায় ১ হাজার বছর তিনি জাতিকে আল্লাহর পথে ডাকেন। তবে খুব অল্প মানুষই তাঁর আনীত শরিয়তে বিশ্বাস স্থাপন করে। অবশেষে আল্লাহ তাআলা সেই অবাধ্য জাতিকে এক প্রলয়ঙ্কর মহাপ্লাবনে ধ্বংস করে দেন। কেবল মুক্তি পায় মুষ্টিমেয় বিশ্বাসী মানুষেরা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা নুহ (আ.)-এর দাওয়াত প্রসঙ্গে এরশাদ করেন, ‘আমরা নুহকে তার কওমের কাছে পাঠালাম তাদের ওপরে মর্মান্তিক আজাব নাজিল হওয়ার আগেই তাদেরকে সতর্ক করার জন্য। নুহ তাদের বলল, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী। তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। তাতে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে, তখন তা এতটুকুও পিছানো হবে না। যদি তোমরা তা জানতে।’ (সুরা নুহ: ১-৪)
হজরত নুহ (আ.) তাদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। শিরক থেকে ফিরে এসে এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেন। তবে অল্প কিছু লোক ছাড়া কেউই তাঁর কথায় ইমান আনেনি। বরং বিভিন্নভাবে নুহ (আ.)-এর দাওয়াতি কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছে। তার অবাধ্য কওম ইমান আনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ৫টি আপত্তি জানায়। এর প্রতিটি আপত্তির জবাব নুহ (আ.) তাদের দিয়েছেন। তারপরও তারা তাঁর প্রতি ইমাম আনেনি। বরং তাঁকে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েনি।
কওমের ৫ আপত্তি ও জবাব
প্রথম আপত্তি ও জবাব: এরশাদ হয়েছে, তাঁর কওমের অবিশ্বাসীরা বলল, ‘এ লোক তো তোমাদের মতই মানুষ। আসলে সে তোমাদের ওপরে নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তো একজন ফেরেশতা পাঠাতে পারতেন। এ ছাড়া এ লোক যেসব কথা বলছে, তাতো আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছে কখনো শুনিনি। আসলে লোকটার মধ্যে পাগলামী রয়েছে কিংবা তার সাথে কোনো জিন রয়েছে। অতএব তোমরা এ ব্যক্তির দিকে ভ্রুক্ষেপ করো না। বরং কিছুদিন অপেক্ষা করো।’ (সুরা মুমিনুন: ২৪-২৫)
এ কথার জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘তোমরা কি এ বিষয়ে অবাক হচ্ছ যে, তোমাদের পালনকর্তার পয়গাম তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের মাধ্যমে তোমাদের কাছে এসেছে, যাতে সে তোমাদের ভীতি প্রদর্শন করে ও তার ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা আরাফ: ৬৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যদি আমরা কোনো ফেরেশতাকে রাসুল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের আকারেই হতো। কিন্তু এতেও তারা ওই সন্দেহই প্রকাশ করত, যা এখন করছে।’ (সুরা আনআম: ৯)
দ্বিতীয় আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, আপনার অনুসারীরা সমাজের গরিব ও নিচু জাতের। সুতরায় আপনি তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করুন। এর জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘আমি কোনো (গরিব) ইমানদার ব্যক্তিকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। তারা অবশ্যই তাদের পালনকর্তার দিদার লাভে ধন্য হবে। বরং আমি তোমাদেরই মূর্খ দেখছি। হে আমার কওম, আমি যদি ওসব লোকদের তাড়িয়ে দেই, তাহলে কে আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করবে? তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ (সুরা হুদ: ২৯-৩০)
তৃতীয় আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, আপনি জাতির নেতৃত্বস্থানীয় কেউ নন, সুতরাং কেন আমরা আপনার কথা মান্য করব? জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘তোমাদের দৃষ্টিতে যারা দীনহীন-অবাঞ্ছিত, তাদের আল্লাহ কোনো কল্যাণ দান করবেন না—এট আমি বলব না। তাদের মনের কথা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা হুদ: ৩১)
চতুর্থ আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, আপনার দাওয়াত আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রথাবিরোধী। সুতরাং আমরা তা মানব না। জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোনো পথভ্রষ্টতা নেই। বরং আমি বিশ্বপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল। আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দেই এবং সদুপদেশ দিয়ে থাকি। কেননা আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন বিষয় জানি, যা তোমরা জানো না।’ (সুরা আরাফ: ৬১-৬২)
পঞ্চম আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, মূলত আপনি ক্ষমতা চাচ্ছেন। জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘এ দাওয়াতের বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোনো ধনদৌলত বা কোনো বিনিময় কামনা করি না। আমার পুরস্কার তো কেবল বিশ্বপালকের কাছেই রয়েছে।’ (সুরা শুআরা: ১০৯)
চূড়ান্ত অবাধ্যতা ও নুহ (আ.)-এর বদদোয়া
নুহ (আ.) সাড়ে নয়শ বছরের দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। সুতরাং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তিনি দাওয়াত পৌঁছান। তবে কওমের লোকজন তাঁকে সবসময় নিবৃত করার চেষ্টা করে গেছে। তারা বলেছে, ‘হে নুহ, যদি আপনি বিরত না হন, তবে পাথর মেরে আপনার মস্তক চূর্ণ করে দেওয়া হবে।’ (সুরা শুআরা: ১১৬) তবে নুহ (আ.) হতাশ হননি। বরং কওমের নির্বুদ্ধিতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
তবে দীর্ঘ নয়শ বছর দাওয়াত দেওয়ার পর আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিলেন, ‘তোমার কওমের যারা ইতিমধ্যে ইমান এনেছে, তারা ছাড়া আর কেউ ইমান আনবে না। অতএব তুমি ওদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হইও না।’ (সুরা হুদ: ৩৬) তখন নুহ (আ.) ও আল্লাহর কাছে চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য দোয়া করেন এবং বলেন, ‘অতএব আপনি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনদের (ওদের হাত থেকে) মুক্ত করো।’ (সুরা শুআরা: ১১৮)
নৌকা তৈরি ও মহাপ্লাবন
এ বিষয়ে সুরা হুদের ৩৭ থেকে ৪৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। নুহ (আ.)-কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশনা মোতাবেক একটা নৌকা তৈরি করো এবং (স্বজাতির প্রতি দয়া পরবশ হয়ে) জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কোনো কথা বলো না। অবশ্যই ওরা ডুবে মরবে।’
এরপর নুহ নৌকা তৈরি শুরু করলেন। তাঁর কওমের নেতারা যখন পাশ দিয়ে যেত, তখন তারা তাঁকে বিদ্রুপ করত। নুহ তাদের বললেন, ‘তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে জেনে রেখো তোমরা যেমন আমাদের উপহাস করছ, আমরাও তেমনি তোমাদের উপহাস করছি। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে লাঞ্ছনাকর আজাব কাদের ওপরে আসে এবং কাদের ওপরে নেমে আসে চিরস্থায়ী গজব।’
পরের ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুলা উদ্বেলিত হয়ে উঠল, (অর্থাৎ রান্নার চুলা থেকে পানি উথলে উঠল), তখন আমি বললাম, সব ধরনের জোড়া প্রাণীর দুটি করে এবং যাদের ওপরে আগেই হুকুম নির্ধারিত হয়ে গেছে তাদের বাদ দিয়ে তোমার পরিবারবর্গ ও সব ইমানদারদের নৌকায় তুলে নাও।’
নুহ (আ.)-এর প্রতি ইমান আনা লোকজনকে নৌকায় আরোহন করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বললেন, ‘তোমরা এতে আরোহণ করো। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। নিশ্চয়ই আমার প্রভু অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’
এরপর নৌকাটি তাদের বহন করে নিয়ে চলল পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝ দিয়ে। অনেক দিন পর্যন্ত সেই মহাবন্যা স্থায়ী হলো। এক টানা অনেক দিন বৃষ্টি হলো। নুহ (আ.)-এর একজন পুত্র অবাধ্য ছিল, সেও বন্যার পানিতে ডুবে মরল। পৃথিবীর বুকে সেই নৌকায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন মানুষ ছাড়া কেউই আর বেঁচে রইল না। অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এলো, ‘হে পৃথিবী, তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হে প্লাবনের পানি, নেমে যাও)। হে আকাশ, ক্ষান্ত হও (অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ করো)।’
অবশেষে পানি কমল এবং আজাবের সময় শেষ হলো। নৌকা ভিড়ল জুদি পাহাড়ে। আদেশ এলো, ‘হে নুহ, এখন (নৌকা থেকে) অবতরণ করো আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি সহকারে তোমার ওপর এবং তোমার সঙ্গী দলগুলোর ওপর...।’
অন্য সুরায় এ আজাবের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে—‘তখন আমি খুলে দিলাম আকাশের দুয়ারসমূহ প্রবল বৃষ্টির মাধ্যমে। ভূমি থেকে প্রবাহিত করলাম নদীসমূহকে। এরপর উভয় পানি মিলিত হলো একটি পূর্ব নির্ধারিত কাজে (অর্থাৎ ডুবিয়ে মারার কাজে)। আমি নুহকে আরোহন করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত জলযানে। যা চলত আমার দৃষ্টির সম্মুখে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। ‘আমরা একে নিদর্শন হিসাবে রেখে দিয়েছি। অতএব কোনো চিন্তাশীল আছে কি?’ (সুরা কামার: ১১-১৫)
হজরত নুহ (আ.) ছিলেন মানবজাতির আদিপিতা হজরত আদম (আ.)–এর অষ্টম প্রজন্মের নবী ও রাসুল। হাদিসের ভাষ্য মতে, তিনিই পৃথিবীর প্রথম রাসুল তথা শরিয়তপ্রাপ্ত বার্তাবাহক। নুহ (আ.)-কে আল্লাহ তাআলা দীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। প্রায় ১ হাজার বছর তিনি জাতিকে আল্লাহর পথে ডাকেন। তবে খুব অল্প মানুষই তাঁর আনীত শরিয়তে বিশ্বাস স্থাপন করে। অবশেষে আল্লাহ তাআলা সেই অবাধ্য জাতিকে এক প্রলয়ঙ্কর মহাপ্লাবনে ধ্বংস করে দেন। কেবল মুক্তি পায় মুষ্টিমেয় বিশ্বাসী মানুষেরা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা নুহ (আ.)-এর দাওয়াত প্রসঙ্গে এরশাদ করেন, ‘আমরা নুহকে তার কওমের কাছে পাঠালাম তাদের ওপরে মর্মান্তিক আজাব নাজিল হওয়ার আগেই তাদেরকে সতর্ক করার জন্য। নুহ তাদের বলল, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী। তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো। তাতে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দেবেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহর নির্ধারিত সময় যখন এসে যাবে, তখন তা এতটুকুও পিছানো হবে না। যদি তোমরা তা জানতে।’ (সুরা নুহ: ১-৪)
হজরত নুহ (আ.) তাদের বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। শিরক থেকে ফিরে এসে এক আল্লাহর ইবাদতের দাওয়াত দেন। তবে অল্প কিছু লোক ছাড়া কেউই তাঁর কথায় ইমান আনেনি। বরং বিভিন্নভাবে নুহ (আ.)-এর দাওয়াতি কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছে। তার অবাধ্য কওম ইমান আনতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ৫টি আপত্তি জানায়। এর প্রতিটি আপত্তির জবাব নুহ (আ.) তাদের দিয়েছেন। তারপরও তারা তাঁর প্রতি ইমাম আনেনি। বরং তাঁকে ব্যঙ্গ করতেও ছাড়েনি।
কওমের ৫ আপত্তি ও জবাব
প্রথম আপত্তি ও জবাব: এরশাদ হয়েছে, তাঁর কওমের অবিশ্বাসীরা বলল, ‘এ লোক তো তোমাদের মতই মানুষ। আসলে সে তোমাদের ওপরে নেতৃত্ব করতে চায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তো একজন ফেরেশতা পাঠাতে পারতেন। এ ছাড়া এ লোক যেসব কথা বলছে, তাতো আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের কাছে কখনো শুনিনি। আসলে লোকটার মধ্যে পাগলামী রয়েছে কিংবা তার সাথে কোনো জিন রয়েছে। অতএব তোমরা এ ব্যক্তির দিকে ভ্রুক্ষেপ করো না। বরং কিছুদিন অপেক্ষা করো।’ (সুরা মুমিনুন: ২৪-২৫)
এ কথার জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘তোমরা কি এ বিষয়ে অবাক হচ্ছ যে, তোমাদের পালনকর্তার পয়গাম তোমাদের মধ্য থেকেই একজনের মাধ্যমে তোমাদের কাছে এসেছে, যাতে সে তোমাদের ভীতি প্রদর্শন করে ও তার ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (সুরা আরাফ: ৬৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যদি আমরা কোনো ফেরেশতাকে রাসুল করে পাঠাতাম, তবে সে মানুষের আকারেই হতো। কিন্তু এতেও তারা ওই সন্দেহই প্রকাশ করত, যা এখন করছে।’ (সুরা আনআম: ৯)
দ্বিতীয় আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, আপনার অনুসারীরা সমাজের গরিব ও নিচু জাতের। সুতরায় আপনি তাদের সঙ্গ পরিত্যাগ করুন। এর জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘আমি কোনো (গরিব) ইমানদার ব্যক্তিকে তাড়িয়ে দিতে পারি না। তারা অবশ্যই তাদের পালনকর্তার দিদার লাভে ধন্য হবে। বরং আমি তোমাদেরই মূর্খ দেখছি। হে আমার কওম, আমি যদি ওসব লোকদের তাড়িয়ে দেই, তাহলে কে আমাকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করবে? তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ (সুরা হুদ: ২৯-৩০)
তৃতীয় আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, আপনি জাতির নেতৃত্বস্থানীয় কেউ নন, সুতরাং কেন আমরা আপনার কথা মান্য করব? জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘তোমাদের দৃষ্টিতে যারা দীনহীন-অবাঞ্ছিত, তাদের আল্লাহ কোনো কল্যাণ দান করবেন না—এট আমি বলব না। তাদের মনের কথা আল্লাহ ভালো করেই জানেন। সুতরাং এমন কথা বললে আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।’ (সুরা হুদ: ৩১)
চতুর্থ আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, আপনার দাওয়াত আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রথাবিরোধী। সুতরাং আমরা তা মানব না। জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোনো পথভ্রষ্টতা নেই। বরং আমি বিশ্বপালকের পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল। আমি তোমাদের কাছে আমার প্রভুর বার্তা পৌঁছে দেই এবং সদুপদেশ দিয়ে থাকি। কেননা আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন বিষয় জানি, যা তোমরা জানো না।’ (সুরা আরাফ: ৬১-৬২)
পঞ্চম আপত্তি ও জবাব: তারা বলেছিল, মূলত আপনি ক্ষমতা চাচ্ছেন। জবাবে নুহ (আ.) বলেন, ‘এ দাওয়াতের বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কোনো ধনদৌলত বা কোনো বিনিময় কামনা করি না। আমার পুরস্কার তো কেবল বিশ্বপালকের কাছেই রয়েছে।’ (সুরা শুআরা: ১০৯)
চূড়ান্ত অবাধ্যতা ও নুহ (আ.)-এর বদদোয়া
নুহ (আ.) সাড়ে নয়শ বছরের দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। সুতরাং প্রজন্মের পর প্রজন্মের কাছে তিনি দাওয়াত পৌঁছান। তবে কওমের লোকজন তাঁকে সবসময় নিবৃত করার চেষ্টা করে গেছে। তারা বলেছে, ‘হে নুহ, যদি আপনি বিরত না হন, তবে পাথর মেরে আপনার মস্তক চূর্ণ করে দেওয়া হবে।’ (সুরা শুআরা: ১১৬) তবে নুহ (আ.) হতাশ হননি। বরং কওমের নির্বুদ্ধিতার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে গেছেন।
তবে দীর্ঘ নয়শ বছর দাওয়াত দেওয়ার পর আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিলেন, ‘তোমার কওমের যারা ইতিমধ্যে ইমান এনেছে, তারা ছাড়া আর কেউ ইমান আনবে না। অতএব তুমি ওদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হইও না।’ (সুরা হুদ: ৩৬) তখন নুহ (আ.) ও আল্লাহর কাছে চূড়ান্ত ফায়সালার জন্য দোয়া করেন এবং বলেন, ‘অতএব আপনি আমার ও তাদের মাঝে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দিন এবং আমাকে ও আমার সঙ্গী মুমিনদের (ওদের হাত থেকে) মুক্ত করো।’ (সুরা শুআরা: ১১৮)
নৌকা তৈরি ও মহাপ্লাবন
এ বিষয়ে সুরা হুদের ৩৭ থেকে ৪৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। নুহ (আ.)-কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তুমি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশনা মোতাবেক একটা নৌকা তৈরি করো এবং (স্বজাতির প্রতি দয়া পরবশ হয়ে) জালেমদের ব্যাপারে আমাকে কোনো কথা বলো না। অবশ্যই ওরা ডুবে মরবে।’
এরপর নুহ নৌকা তৈরি শুরু করলেন। তাঁর কওমের নেতারা যখন পাশ দিয়ে যেত, তখন তারা তাঁকে বিদ্রুপ করত। নুহ তাদের বললেন, ‘তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে জেনে রেখো তোমরা যেমন আমাদের উপহাস করছ, আমরাও তেমনি তোমাদের উপহাস করছি। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে লাঞ্ছনাকর আজাব কাদের ওপরে আসে এবং কাদের ওপরে নেমে আসে চিরস্থায়ী গজব।’
পরের ঘটনা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুলা উদ্বেলিত হয়ে উঠল, (অর্থাৎ রান্নার চুলা থেকে পানি উথলে উঠল), তখন আমি বললাম, সব ধরনের জোড়া প্রাণীর দুটি করে এবং যাদের ওপরে আগেই হুকুম নির্ধারিত হয়ে গেছে তাদের বাদ দিয়ে তোমার পরিবারবর্গ ও সব ইমানদারদের নৌকায় তুলে নাও।’
নুহ (আ.)-এর প্রতি ইমান আনা লোকজনকে নৌকায় আরোহন করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বললেন, ‘তোমরা এতে আরোহণ করো। আল্লাহর নামেই এর গতি ও স্থিতি। নিশ্চয়ই আমার প্রভু অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’
এরপর নৌকাটি তাদের বহন করে নিয়ে চলল পর্বতপ্রমাণ তরঙ্গমালার মাঝ দিয়ে। অনেক দিন পর্যন্ত সেই মহাবন্যা স্থায়ী হলো। এক টানা অনেক দিন বৃষ্টি হলো। নুহ (আ.)-এর একজন পুত্র অবাধ্য ছিল, সেও বন্যার পানিতে ডুবে মরল। পৃথিবীর বুকে সেই নৌকায় আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন মানুষ ছাড়া কেউই আর বেঁচে রইল না। অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এলো, ‘হে পৃথিবী, তোমার পানি গিলে ফেল (অর্থাৎ হে প্লাবনের পানি, নেমে যাও)। হে আকাশ, ক্ষান্ত হও (অর্থাৎ তোমার বিরামহীন বৃষ্টি বন্ধ করো)।’
অবশেষে পানি কমল এবং আজাবের সময় শেষ হলো। নৌকা ভিড়ল জুদি পাহাড়ে। আদেশ এলো, ‘হে নুহ, এখন (নৌকা থেকে) অবতরণ করো আমাদের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি সহকারে তোমার ওপর এবং তোমার সঙ্গী দলগুলোর ওপর...।’
অন্য সুরায় এ আজাবের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে—‘তখন আমি খুলে দিলাম আকাশের দুয়ারসমূহ প্রবল বৃষ্টির মাধ্যমে। ভূমি থেকে প্রবাহিত করলাম নদীসমূহকে। এরপর উভয় পানি মিলিত হলো একটি পূর্ব নির্ধারিত কাজে (অর্থাৎ ডুবিয়ে মারার কাজে)। আমি নুহকে আরোহন করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত জলযানে। যা চলত আমার দৃষ্টির সম্মুখে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল, যাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। ‘আমরা একে নিদর্শন হিসাবে রেখে দিয়েছি। অতএব কোনো চিন্তাশীল আছে কি?’ (সুরা কামার: ১১-১৫)
মুহাম্মদ বিন কাসিম (৬৯৫-৭১৫ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের এক বীর সেনানায়ক, যিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিন্ধু বিজয় করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তাঁর অসাধারণ সমর কৌশল, প্রজাস্বত্ব আচরণ ও ইসলামের প্রসার ঘটানোর জন্য তিনি প্রসিদ্ধ। তিনি শুধু একজন বিজয়ী সেনাপতিই ছিলেন না, বরং একজন বিচক্ষণ প্রশাসক, সুবিচারক
২ ঘণ্টা আগেসুরা কদর পবিত্র কোরআনের ৯৭তম সুরা। এতে পাঁচটি আয়াত ও একটি রুকু রয়েছে। সুরাটিতে থাকা কদর শব্দ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে। এই সুরার প্রথম আয়াতে কোরআনের মাহাত্ম্য ও মর্যাদার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমি এটি নাজিল করেছি মহিমান্বিত রাতে।’ (সুরা কদর: ০১)।
১২ ঘণ্টা আগেমিমার সিনান (১৪৮৯–১৫৮৮) ছিলেন উসমানীয় সাম্রাজ্যের স্থাপত্যশিল্পের এক রত্ন। তিনি উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রধান স্থপতি হিসেবে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই উসমানীয় স্থাপত্যশিল্প উৎকর্ষের চূড়া স্পর্শ করেছিল।
১ দিন আগেআমাদের কাছে রমজানের শুরুর দিকে ইবাদত-বন্দেগির যে গুরুত্ব থাকে, শেষের দিকে এসে সেই আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই হারিয়ে যায়। তবে কোরআন-হাদিস থেকে বোঝা যায়, রমজানের শুরুর দিনগুলো যত ফজিলতপূর্ণ, শেষের দিকের দিনগুলো তার চেয়ে অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ। বিশেষ করে রমজানের শেষ ১০ দিনের মর্যাদা বছরের যেকোনো সময়ের...
১ দিন আগে