ইমদাদুল হক শেখ
রহমত, বরকত ও ক্ষমার মাস মাহে রমজান। এই মাসে সবাই একটি গুনাহমুক্ত পবিত্র জীবনযাপন করতে চায়। তবে এ ক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে অবশ্যই কোরআন, হাদিস, পূর্বসূরি ইসলামি পণ্ডিত ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কর্মপন্থা অনুসরণ করতে হবে। কারণ মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের পর তাঁরাই আমাদের জীবনাদর্শ। তাঁরা রমজান মাসকে কীভাবে মূল্যায়ন করতেন এবং কী কী আমল করতেন, তা নিচে তুলে ধরা হলো—
কোরআন তিলাওয়াত
মহানবী (সা.) রমজান মাসে অনেক বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) রমজান মাসে হজরত জিবরিল (আ.)-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং জিবরিল (আ.) থেকেও পূর্ণ কোরআন শুনতেন।’ (বুখারি: ৬) মহানবী (সা.)-এর এই আদর্শের অনুগামী হয়ে সালফে সালেহীন তথা পরবর্তী যুগের আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও ইসলামি চিন্তাবিদেরাও রমজানে বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন।
হাদিসের সাধনায় আজীবন নিমজ্জিত থাকা ইমাম বুখারিও (রহ.) রমজান এলে কোরআন তিলাওয়াতকে প্রধান ইবাদত বানিয়ে নিতেন। ইবনে সাইদ বলেন, ‘বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারি (রহ.) রমজানের দিনগুলোতে এক খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন এবং তারাবির পর (নামাজে) তিন রাতে এক খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা: ১২ / ৪৩৮)
ইমাম শাফিয়ি (রহ.)-এর নেশা ও পেশাই ছিল জ্ঞানচর্চা। এ কাজে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ; একনিষ্ঠ। ফিকহচর্চায় তুমুল ব্যস্ততার কারণে তিনি বিয়ে পর্যন্ত করেননি। সেই তুমুল ব্যস্ত মানুষটিও রমজান মাসে সবকিছু বাদ দিয়ে অসংখ্যবার কোরআন খতম করতেন। ইমাম রবি বলেন, ‘ইমাম শাফিয়ি (রহ.) রমজান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসে ৩০ খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন। আর রমজান মাসে নামাজের তিলাওয়াত ছাড়া ৬০ খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন।’ (সিফাতুস সফওয়াহ: ২ / ২৫৫)
রাত জেগে নামাজ আদায়
রমজান মাসের প্রধান ইবাদত দিনে রোজা রাখা এবং রাত জেগে নফল নামাজ আদায় করা। অনেক আলিম এই নফল নামাজকে তারাবি হিসেবে চিহ্নিত করেন আবার অনেকে তারাবি ছাড়াও অতিরিক্ত নফল নামাজের কথা বলেন, তাঁরা একে কিয়ামুল লাইল বলে থাকেন। মোটকথা, পূর্বসূরি আলিমগণ রমজানের রাতগুলো নামাজেই কাটিয়ে দিতেন।
নাফে (রহ.) বলেন, ‘প্রসিদ্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) রমজান মাসে রাতে প্রথমে নিজের কক্ষে নফল নামাজ শুরু করতেন। যখন সব মানুষ মসজিদ থেকে বের হয়ে যেত, তখন তিনি পানির একটা পাত্র নিয়ে মসজিদে চলে আসতেন। এরপর ফজরের নামাজ আদায়ের আগপর্যন্ত মসজিদ থেকে বের হতেন না।’ (বায়হাকি: ২ / ৪৯৪)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রহ.) বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে বলতে শুনেছি, ‘আমরা রমজান মাসে রাত জাগার প্রতি এত গভীরভাবে মনোনিবেশ করতাম, (সাহ্রির সময়) শেষ হওয়ার আশঙ্কায় সেবকেরা খাবার প্রস্তুতিতে তাড়াহুড়ো করত।’ (বায়হাকি: ৪ / ১৭৭)
দান-সদকা করা
ইসলামে দান-সদকা ও অন্যকে সহযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। রমজান মাসে দানের ফজিলত ও সওয়াব অনেক বেশি। পূর্বসূরি আলিমগণ রমজানে নিজেরা যেমন দান করতেন, অন্যকেও তেমন দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) থেকে বর্ণিত, ‘ইমাম শাফিয়ি (রহ.) বলেন, ‘আমি রমজান মাসে রোজাদারের অধিক দানশীলতা পছন্দ করি রাসুল (সা)-এর অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনের খাতিরে মানুষ সেদিকে (দানের দিকে) বেশি মুখাপেক্ষী হওয়ার কারণে।’ (লাতাইফুল মাআরিফ: ৩১৫)
ইমাম জাহাবি (রহ.) সিয়ার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমান (রহ.) রমজান মাসে প্রতিদিন সন্ধায় ৫০ জন লোককে ইফতার করাতেন এবং খাবার খাওয়াতেন। যখন ঈদের রাত আসত, তাদের সবাইকে নতুন কাপড় পরিধান করাতেন এবং প্রত্যেককে ১০০ দিরহাম উপঢৌকন হিসেবে দিতেন।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা: ৫ / ২৩৮)
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ
রহমত, বরকত ও ক্ষমার মাস মাহে রমজান। এই মাসে সবাই একটি গুনাহমুক্ত পবিত্র জীবনযাপন করতে চায়। তবে এ ক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে অবশ্যই কোরআন, হাদিস, পূর্বসূরি ইসলামি পণ্ডিত ও আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কর্মপন্থা অনুসরণ করতে হবে। কারণ মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের পর তাঁরাই আমাদের জীবনাদর্শ। তাঁরা রমজান মাসকে কীভাবে মূল্যায়ন করতেন এবং কী কী আমল করতেন, তা নিচে তুলে ধরা হলো—
কোরআন তিলাওয়াত
মহানবী (সা.) রমজান মাসে অনেক বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) রমজান মাসে হজরত জিবরিল (আ.)-কে পূর্ণ কোরআন শোনাতেন এবং জিবরিল (আ.) থেকেও পূর্ণ কোরআন শুনতেন।’ (বুখারি: ৬) মহানবী (সা.)-এর এই আদর্শের অনুগামী হয়ে সালফে সালেহীন তথা পরবর্তী যুগের আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও ইসলামি চিন্তাবিদেরাও রমজানে বেশি বেশি তিলাওয়াত করতেন।
হাদিসের সাধনায় আজীবন নিমজ্জিত থাকা ইমাম বুখারিও (রহ.) রমজান এলে কোরআন তিলাওয়াতকে প্রধান ইবাদত বানিয়ে নিতেন। ইবনে সাইদ বলেন, ‘বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাইল বুখারি (রহ.) রমজানের দিনগুলোতে এক খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন এবং তারাবির পর (নামাজে) তিন রাতে এক খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা: ১২ / ৪৩৮)
ইমাম শাফিয়ি (রহ.)-এর নেশা ও পেশাই ছিল জ্ঞানচর্চা। এ কাজে তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ; একনিষ্ঠ। ফিকহচর্চায় তুমুল ব্যস্ততার কারণে তিনি বিয়ে পর্যন্ত করেননি। সেই তুমুল ব্যস্ত মানুষটিও রমজান মাসে সবকিছু বাদ দিয়ে অসংখ্যবার কোরআন খতম করতেন। ইমাম রবি বলেন, ‘ইমাম শাফিয়ি (রহ.) রমজান মাস ছাড়া অন্যান্য মাসে ৩০ খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন। আর রমজান মাসে নামাজের তিলাওয়াত ছাড়া ৬০ খতম কোরআন তিলাওয়াত করতেন।’ (সিফাতুস সফওয়াহ: ২ / ২৫৫)
রাত জেগে নামাজ আদায়
রমজান মাসের প্রধান ইবাদত দিনে রোজা রাখা এবং রাত জেগে নফল নামাজ আদায় করা। অনেক আলিম এই নফল নামাজকে তারাবি হিসেবে চিহ্নিত করেন আবার অনেকে তারাবি ছাড়াও অতিরিক্ত নফল নামাজের কথা বলেন, তাঁরা একে কিয়ামুল লাইল বলে থাকেন। মোটকথা, পূর্বসূরি আলিমগণ রমজানের রাতগুলো নামাজেই কাটিয়ে দিতেন।
নাফে (রহ.) বলেন, ‘প্রসিদ্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) রমজান মাসে রাতে প্রথমে নিজের কক্ষে নফল নামাজ শুরু করতেন। যখন সব মানুষ মসজিদ থেকে বের হয়ে যেত, তখন তিনি পানির একটা পাত্র নিয়ে মসজিদে চলে আসতেন। এরপর ফজরের নামাজ আদায়ের আগপর্যন্ত মসজিদ থেকে বের হতেন না।’ (বায়হাকি: ২ / ৪৯৪)
অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আবু বকর (রহ.) বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে বলতে শুনেছি, ‘আমরা রমজান মাসে রাত জাগার প্রতি এত গভীরভাবে মনোনিবেশ করতাম, (সাহ্রির সময়) শেষ হওয়ার আশঙ্কায় সেবকেরা খাবার প্রস্তুতিতে তাড়াহুড়ো করত।’ (বায়হাকি: ৪ / ১৭৭)
দান-সদকা করা
ইসলামে দান-সদকা ও অন্যকে সহযোগিতার গুরুত্ব অপরিসীম। রমজান মাসে দানের ফজিলত ও সওয়াব অনেক বেশি। পূর্বসূরি আলিমগণ রমজানে নিজেরা যেমন দান করতেন, অন্যকেও তেমন দানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) থেকে বর্ণিত, ‘ইমাম শাফিয়ি (রহ.) বলেন, ‘আমি রমজান মাসে রোজাদারের অধিক দানশীলতা পছন্দ করি রাসুল (সা)-এর অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনের খাতিরে মানুষ সেদিকে (দানের দিকে) বেশি মুখাপেক্ষী হওয়ার কারণে।’ (লাতাইফুল মাআরিফ: ৩১৫)
ইমাম জাহাবি (রহ.) সিয়ার গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমান (রহ.) রমজান মাসে প্রতিদিন সন্ধায় ৫০ জন লোককে ইফতার করাতেন এবং খাবার খাওয়াতেন। যখন ঈদের রাত আসত, তাদের সবাইকে নতুন কাপড় পরিধান করাতেন এবং প্রত্যেককে ১০০ দিরহাম উপঢৌকন হিসেবে দিতেন।’ (সিয়ারু আলামিন নুবালা: ৫ / ২৩৮)
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, জামেয়াতুস সুন্নাহ, ঝিনাইদহ
জুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
১৪ ঘণ্টা আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
১৪ ঘণ্টা আগেবিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি মৌলিক অংশ। এটি ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি ও স্থিতি নিয়ে আসে। তবে বিয়ের আগে আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বিয়ে-পরবর্তী জীবনে দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিকে সক্ষম করে।
১৪ ঘণ্টা আগে