ইসলাম ডেস্ক
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি সালমান ফারসি (রা.)-এর জবানিতেই তাঁর ইসলাম গ্রহণের বিস্ময়কর অভিযাত্রার ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। পারস্য থেকে বিভিন্ন দেশ, জনপদ ও ধর্মগুরুদের কাছে হেদায়াতের খোঁজ করতে করতে কীভাবে মদিনায় এসে পৌঁছালেন, সেই গল্প একনাগাড়ে বলে গেছেন তিনি। সেই গল্পের শেষাংশের বর্ণনা অনুযায়ী, কয়েকজন খ্রিষ্টান পাদ্রির কথা শুনে সালমান ফারসি মদিনায় আসেন।
সালমান ফারসির মদিনায় আগমন
দীর্ঘ হাদিসের শেষে সালমান ফারসি (রা.) কীভাবে মদিনায় এলেন তা বর্ণনা করে বলেন, ‘এরপর আমার পাশ দিয়ে কালব গোত্রের একটি বাণিজ্যিক কাফেলা যাচ্ছিল। আমি তাদের বললাম, তোমরা আমাকে আরবে নিয়ে চল। (বিনিময়ে) আমি তোমাদের এই গাভি ও বকরিগুলো দিয়ে দেব। তারা বলল, ঠিক আছে। এরপর আমি তাদের সেগুলো দিয়ে দিলাম আর তারা আমাকে নিয়ে চলল। যখন তারা আমাকে নিয়ে ওয়াদিউল কুরায় পৌঁছাল, তখন আমাকে অত্যাচার করল এবং দাস হিসেবে এক ইহুদির কাছে বিক্রি করে দিল। ফলে আমি সেই ইহুদির কাছে থাকতে বাধ্য হলাম এবং তার খেজুরগাছ দেখাশোনা করতে লাগলাম।’
হজরত সালমান আরও বলেন, ‘এরপর আমার মনিবের চাচাতো ভাই, যে মদিনায় থাকত, আমাকে কিনে মদিনায় নিয়ে গেল। আল্লাহর কসম, মদিনা দেখামাত্রই আমার বন্ধুর (পাদ্রি) বর্ণনামতো আমি তা চিনে ফেললাম। আমি এখানে অবস্থান করতে লাগলাম।’
মহানবী (সা.)-এর সন্ধান
সালমান ফারসি (রা.)-এর বর্ণনাটি এমন—এরপর ইসলামের নবী হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.)কে পৃথিবীতে পাঠানো হলো। তিনি মক্কায় যত দিন থাকার থাকলেন। আমি গোলামির জীবনে ব্যস্ত থাকায় তাঁর কোনো খবর পেলাম না। এরপর একদিন তিনি মদিনায় হিজরত করলেন। আল্লাহর কসম, আমি আমার মালিকের খেজুরগাছের মাথায় কাজ করছিলাম। আর আমার মনিব বসে ছিলেন। এমন সময় তাঁর চাচাতো ভাই এলেন এবং বললেন, ‘হে অমুক, আল্লাহ বনী কায়লাদের (মদিনাবাসী) ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম, তারা কুবায় মক্কা থেকে আজকে আগত এক ব্যক্তির কাছে সমবেত হয়েছে। তারা তাকে নবী বলে ধারণা করছে।’
এ কথা শুনে আমার দেহে কম্পন শুরু হয়ে গেল। একপর্যায়ে আমি ধারণা করলাম, আমি আমার মনিবের ওপর পড়ে যাব। এরপর আমি খেজুরগাছ থেকে নেমে এলাম এবং তাঁর চাচাতো ভাইকে বলতে লাগলাম, আপনি কী বলছিলেন? আপনি কী বলছিলেন? এ কথা শুনে আমার মনিব চটে গেলেন এবং আমাকে খুব জোরে আঘাত করলেন এবং বললেন, ‘এ ব্যাপারে তোমার নাক গলাতে হবে না। তুমি তোমার কাজে যাও।’ আমি বললাম, কিছুই না। আমি শুধু তিনি যা বলেছেন, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছি।
মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আমার কাছে কিছু সম্পদ ছিল, যা আমি সঞ্চয় করে রেখেছিলাম। যখন সন্ধ্যা হলো, তখন আমি তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি কুবায় ছিলেন। তাঁকে বললাম, আমরা জানতে পেরেছি, আপনি একজন সৎ ব্যক্তি। আপনার সঙ্গে আপনার দরিদ্র সাথিরা রয়েছেন। এগুলো (সারা জীবনের সঞ্চিত সম্পদ) আমার পক্ষ থেকে সদকা করছি। এগুলোর ব্যাপারে আপনারাই অধিক হকদার বলে আমি মনে করি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাথিদের বললেন, ‘তোমরা খাও।’ নবী (সা.) নিজে হাত সংযত করলেন এবং কিছুই খেলেন না।
নবী হওয়ার প্রমাণ পেলেন
সালমান ফারসি বলেন, আমি ধরে নিলাম, এটি (নবী হওয়ার) প্রথম আলামত। এরপর আমি তাঁর কাছ থেকে চলে এলাম এবং আরও কিছু পণ্য সঞ্চয় করলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় চলে এলেন। এরপর আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, আমি আপনাকে সদকার সম্পদ খেতে দেখিনি আর এগুলো আপনার জন্য হাদিয়া, যা দিয়ে আপনার মেহমানদারি করছি। এবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এগুলো থেকে খেলেন এবং সাহাবিদের আদেশ করলে তাঁরাও তাঁর সঙ্গে আহার করলেন।
এবার বুঝতে পারলাম, এটি হলো (নবী হওয়ার) দ্বিতীয় আলামত। এরপর ‘বাকিউল গারকাদ নামক স্থানে আমি নবী (সা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি এক সাহাবির জানাজার পেছন-পেছন যাচ্ছিলেন। তাঁর পরিধানে দুটি চাদর ছিল। তিনি তাঁর সাথিদের সঙ্গে বসা ছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। এরপর আমি তাঁর পিঠের দিকে ঘুরে দেখতে লাগলাম। যেন আমার বন্ধুর (খ্রিষ্টান পাদ্রি) বর্ণনা মোতাবেক নবুওয়াতের মোহরটি দেখতে পাই।
যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে দেখলেন যে আমি তাঁর পেছনে পেছনে ঘুরছি, তখন তিনি বুঝতে পারলেন, আমি কোনো কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছি, যা আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে। তখন তিনি পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেললেন। আমি মোহর দেখতে পেলাম এবং তাঁকে চিনতে পারলাম (যে ইনিই নবী)। আমি তাঁর ওপর ঝুঁকে পড়লাম এবং তাকে চুমু দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।
এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘এদিকে এসো।’ আমি এলাম এবং তাঁর কাছে আমার (অতীতের) সব ঘটনা বর্ণনা করলাম (যা হাদিসের শুরুর অংশে বিবৃত হয়েছে)। এ ঘটনা সাহাবিদেরও শোনাতে চাইলেন রাসুল (সা.)। এরপর আমি আবার দাসত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফলে বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি।
৩০০ খেজুরগাছ রোপণ
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে সালমান, তুমি (তোমার মালিকের সঙ্গে দাসত্ব মুক্তির ব্যাপারে) চুক্তি করো।’ আমি তাঁর সঙ্গে ৩০০ খেজুরগাছের চারা ফলদায়ক হওয়া পর্যন্ত গর্তে পানি দেওয়া এবং চল্লিশ উকিয়া আদায় করার বিনিময়ে চুক্তি করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইকে সাহায্য করো।’
সাহাবিরা আমাকে খেজুরগাছ (চারা) দিয়ে সাহায্য করলেন। এক ব্যক্তি ৩০টি চারা দিলেন, আরেকজন ২০টি। অন্যজন ১৫টি, আরেকজন ১০টি চারা দিলেন। অর্থাৎ, প্রত্যেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করলেন। একপর্যায়ে আমার ৩০০ চারা হয়ে গেল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে সালমান, তুমি যাও এবং এগুলো রোপণ করার জন্য গর্ত খনন করো। যখন শেষ করবে, তখন আমার কাছে আসবে। আমি নিজ হাতে তা রোপণ করব।’
আমি গর্ত খনন করলাম। এ কাজে সাহাবিরা আমাকে সাহায্য করলেন। যখন আমি কাজ শেষ করলাম, তখন তাঁর কাছে গিয়ে সেই সংবাদ দিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার সঙ্গে বাগানের দিকে চললেন। আমরা তাঁকে গাছের চারা দেওয়া শুরু করলাম আর তিনি নিজ হাতে তা রোপণ করতে লাগলেন। ওই সত্তার কসম, যাঁর হাতে সালমানের প্রাণ! ওই চারাগুলোর একটিও মারা যায়নি। আমি গাছের চুক্তি পূর্ণ করেছি।
৪০ উকিয়া স্বর্ণ যেভাবে আদায় করেন
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, বাকি ছিল ৪০ উকিয়া স্বর্ণের চুক্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোনো এক যুদ্ধের গনিমত থেকে মুরগির ডিমের সমান স্বর্ণের একটি টুকরা এল। তিনি বললেন, ‘সালমান তার চুক্তির ব্যাপারে কী করেছে?’ এরপর আমাকে ডাকা হলো। নবী (সা.) বললেন, ‘সালমান এটি নাও এবং তোমার যে ঋণ আছে, তা আদায় করো।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার ওপর যে ঋণ আছে, এটি কীভাবে তার বরাবর হবে?’ তিনি বললেন, ‘এটা নাও। কারণ আল্লাহ তাআলা এটি দিয়েই তোমার ঋণ আদায় করে দেবেন।’ আমি তা নিলাম এবং মাপলাম। ওই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে সালমানের প্রাণ! তা চল্লিশ উকিয়া হলো। আমি মনিবের চুক্তি পূর্ণভাবে আদায় করলাম এবং মুক্তি লাভ করলাম। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে খন্দক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম। তারপর তাঁর সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধেই আমি অনুপস্থিত থাকিনি।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ: ২৩৭৮৮; সিলসিলা সহিহাহ: ৮৯৪
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেছেন। তাতে তিনি সালমান ফারসি (রা.)-এর জবানিতেই তাঁর ইসলাম গ্রহণের বিস্ময়কর অভিযাত্রার ঘটনা সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। পারস্য থেকে বিভিন্ন দেশ, জনপদ ও ধর্মগুরুদের কাছে হেদায়াতের খোঁজ করতে করতে কীভাবে মদিনায় এসে পৌঁছালেন, সেই গল্প একনাগাড়ে বলে গেছেন তিনি। সেই গল্পের শেষাংশের বর্ণনা অনুযায়ী, কয়েকজন খ্রিষ্টান পাদ্রির কথা শুনে সালমান ফারসি মদিনায় আসেন।
সালমান ফারসির মদিনায় আগমন
দীর্ঘ হাদিসের শেষে সালমান ফারসি (রা.) কীভাবে মদিনায় এলেন তা বর্ণনা করে বলেন, ‘এরপর আমার পাশ দিয়ে কালব গোত্রের একটি বাণিজ্যিক কাফেলা যাচ্ছিল। আমি তাদের বললাম, তোমরা আমাকে আরবে নিয়ে চল। (বিনিময়ে) আমি তোমাদের এই গাভি ও বকরিগুলো দিয়ে দেব। তারা বলল, ঠিক আছে। এরপর আমি তাদের সেগুলো দিয়ে দিলাম আর তারা আমাকে নিয়ে চলল। যখন তারা আমাকে নিয়ে ওয়াদিউল কুরায় পৌঁছাল, তখন আমাকে অত্যাচার করল এবং দাস হিসেবে এক ইহুদির কাছে বিক্রি করে দিল। ফলে আমি সেই ইহুদির কাছে থাকতে বাধ্য হলাম এবং তার খেজুরগাছ দেখাশোনা করতে লাগলাম।’
হজরত সালমান আরও বলেন, ‘এরপর আমার মনিবের চাচাতো ভাই, যে মদিনায় থাকত, আমাকে কিনে মদিনায় নিয়ে গেল। আল্লাহর কসম, মদিনা দেখামাত্রই আমার বন্ধুর (পাদ্রি) বর্ণনামতো আমি তা চিনে ফেললাম। আমি এখানে অবস্থান করতে লাগলাম।’
মহানবী (সা.)-এর সন্ধান
সালমান ফারসি (রা.)-এর বর্ণনাটি এমন—এরপর ইসলামের নবী হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.)কে পৃথিবীতে পাঠানো হলো। তিনি মক্কায় যত দিন থাকার থাকলেন। আমি গোলামির জীবনে ব্যস্ত থাকায় তাঁর কোনো খবর পেলাম না। এরপর একদিন তিনি মদিনায় হিজরত করলেন। আল্লাহর কসম, আমি আমার মালিকের খেজুরগাছের মাথায় কাজ করছিলাম। আর আমার মনিব বসে ছিলেন। এমন সময় তাঁর চাচাতো ভাই এলেন এবং বললেন, ‘হে অমুক, আল্লাহ বনী কায়লাদের (মদিনাবাসী) ধ্বংস করুন। আল্লাহর কসম, তারা কুবায় মক্কা থেকে আজকে আগত এক ব্যক্তির কাছে সমবেত হয়েছে। তারা তাকে নবী বলে ধারণা করছে।’
এ কথা শুনে আমার দেহে কম্পন শুরু হয়ে গেল। একপর্যায়ে আমি ধারণা করলাম, আমি আমার মনিবের ওপর পড়ে যাব। এরপর আমি খেজুরগাছ থেকে নেমে এলাম এবং তাঁর চাচাতো ভাইকে বলতে লাগলাম, আপনি কী বলছিলেন? আপনি কী বলছিলেন? এ কথা শুনে আমার মনিব চটে গেলেন এবং আমাকে খুব জোরে আঘাত করলেন এবং বললেন, ‘এ ব্যাপারে তোমার নাক গলাতে হবে না। তুমি তোমার কাজে যাও।’ আমি বললাম, কিছুই না। আমি শুধু তিনি যা বলেছেন, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চাইছি।
মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, আমার কাছে কিছু সম্পদ ছিল, যা আমি সঞ্চয় করে রেখেছিলাম। যখন সন্ধ্যা হলো, তখন আমি তা নিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি কুবায় ছিলেন। তাঁকে বললাম, আমরা জানতে পেরেছি, আপনি একজন সৎ ব্যক্তি। আপনার সঙ্গে আপনার দরিদ্র সাথিরা রয়েছেন। এগুলো (সারা জীবনের সঞ্চিত সম্পদ) আমার পক্ষ থেকে সদকা করছি। এগুলোর ব্যাপারে আপনারাই অধিক হকদার বলে আমি মনে করি। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাথিদের বললেন, ‘তোমরা খাও।’ নবী (সা.) নিজে হাত সংযত করলেন এবং কিছুই খেলেন না।
নবী হওয়ার প্রমাণ পেলেন
সালমান ফারসি বলেন, আমি ধরে নিলাম, এটি (নবী হওয়ার) প্রথম আলামত। এরপর আমি তাঁর কাছ থেকে চলে এলাম এবং আরও কিছু পণ্য সঞ্চয় করলাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় চলে এলেন। এরপর আমি তাঁর কাছে গেলাম এবং বললাম, আমি আপনাকে সদকার সম্পদ খেতে দেখিনি আর এগুলো আপনার জন্য হাদিয়া, যা দিয়ে আপনার মেহমানদারি করছি। এবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এগুলো থেকে খেলেন এবং সাহাবিদের আদেশ করলে তাঁরাও তাঁর সঙ্গে আহার করলেন।
এবার বুঝতে পারলাম, এটি হলো (নবী হওয়ার) দ্বিতীয় আলামত। এরপর ‘বাকিউল গারকাদ নামক স্থানে আমি নবী (সা.)-এর কাছে এলাম। তখন তিনি এক সাহাবির জানাজার পেছন-পেছন যাচ্ছিলেন। তাঁর পরিধানে দুটি চাদর ছিল। তিনি তাঁর সাথিদের সঙ্গে বসা ছিলেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। এরপর আমি তাঁর পিঠের দিকে ঘুরে দেখতে লাগলাম। যেন আমার বন্ধুর (খ্রিষ্টান পাদ্রি) বর্ণনা মোতাবেক নবুওয়াতের মোহরটি দেখতে পাই।
যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে দেখলেন যে আমি তাঁর পেছনে পেছনে ঘুরছি, তখন তিনি বুঝতে পারলেন, আমি কোনো কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছি, যা আমার কাছে বর্ণনা করা হয়েছে। তখন তিনি পিঠ থেকে চাদর সরিয়ে ফেললেন। আমি মোহর দেখতে পেলাম এবং তাঁকে চিনতে পারলাম (যে ইনিই নবী)। আমি তাঁর ওপর ঝুঁকে পড়লাম এবং তাকে চুমু দিয়ে কাঁদতে লাগলাম।
এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘এদিকে এসো।’ আমি এলাম এবং তাঁর কাছে আমার (অতীতের) সব ঘটনা বর্ণনা করলাম (যা হাদিসের শুরুর অংশে বিবৃত হয়েছে)। এ ঘটনা সাহাবিদেরও শোনাতে চাইলেন রাসুল (সা.)। এরপর আমি আবার দাসত্বে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ফলে বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি।
৩০০ খেজুরগাছ রোপণ
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে সালমান, তুমি (তোমার মালিকের সঙ্গে দাসত্ব মুক্তির ব্যাপারে) চুক্তি করো।’ আমি তাঁর সঙ্গে ৩০০ খেজুরগাছের চারা ফলদায়ক হওয়া পর্যন্ত গর্তে পানি দেওয়া এবং চল্লিশ উকিয়া আদায় করার বিনিময়ে চুক্তি করলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইকে সাহায্য করো।’
সাহাবিরা আমাকে খেজুরগাছ (চারা) দিয়ে সাহায্য করলেন। এক ব্যক্তি ৩০টি চারা দিলেন, আরেকজন ২০টি। অন্যজন ১৫টি, আরেকজন ১০টি চারা দিলেন। অর্থাৎ, প্রত্যেকেই সামর্থ্য অনুযায়ী আমাকে সাহায্য করলেন। একপর্যায়ে আমার ৩০০ চারা হয়ে গেল। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ‘হে সালমান, তুমি যাও এবং এগুলো রোপণ করার জন্য গর্ত খনন করো। যখন শেষ করবে, তখন আমার কাছে আসবে। আমি নিজ হাতে তা রোপণ করব।’
আমি গর্ত খনন করলাম। এ কাজে সাহাবিরা আমাকে সাহায্য করলেন। যখন আমি কাজ শেষ করলাম, তখন তাঁর কাছে গিয়ে সেই সংবাদ দিলাম। এরপর রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার সঙ্গে বাগানের দিকে চললেন। আমরা তাঁকে গাছের চারা দেওয়া শুরু করলাম আর তিনি নিজ হাতে তা রোপণ করতে লাগলেন। ওই সত্তার কসম, যাঁর হাতে সালমানের প্রাণ! ওই চারাগুলোর একটিও মারা যায়নি। আমি গাছের চুক্তি পূর্ণ করেছি।
৪০ উকিয়া স্বর্ণ যেভাবে আদায় করেন
সালমান ফারসি (রা.) বলেন, বাকি ছিল ৪০ উকিয়া স্বর্ণের চুক্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কোনো এক যুদ্ধের গনিমত থেকে মুরগির ডিমের সমান স্বর্ণের একটি টুকরা এল। তিনি বললেন, ‘সালমান তার চুক্তির ব্যাপারে কী করেছে?’ এরপর আমাকে ডাকা হলো। নবী (সা.) বললেন, ‘সালমান এটি নাও এবং তোমার যে ঋণ আছে, তা আদায় করো।’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার ওপর যে ঋণ আছে, এটি কীভাবে তার বরাবর হবে?’ তিনি বললেন, ‘এটা নাও। কারণ আল্লাহ তাআলা এটি দিয়েই তোমার ঋণ আদায় করে দেবেন।’ আমি তা নিলাম এবং মাপলাম। ওই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে সালমানের প্রাণ! তা চল্লিশ উকিয়া হলো। আমি মনিবের চুক্তি পূর্ণভাবে আদায় করলাম এবং মুক্তি লাভ করলাম। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে খন্দক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলাম। তারপর তাঁর সঙ্গে আর কোনো যুদ্ধেই আমি অনুপস্থিত থাকিনি।
সূত্র: মুসনাদে আহমাদ: ২৩৭৮৮; সিলসিলা সহিহাহ: ৮৯৪
ভ্রমণের সময় নামাজের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে ইসলাম। কোনো ব্যক্তি নিজের আবাসস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরের কোনো গন্তব্যে ভ্রমণের নিয়তে বের হয়ে তাঁর এলাকা পেরিয়ে গেলেই শরিয়তের দৃষ্টিতে সে মুসাফির হয়ে যায়। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)
১৩ ঘণ্টা আগেজুবাইদা বিনতে জাফর ইবনে মানসুর পঞ্চম আব্বাসি খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী ও জাফর ইবনুল মানসুরের কন্যা। তাঁর মা ছিলেন আল-খায়জুরানের বড় বোন সালসাল ইবনে আত্তা। জুবাইদার আসল নাম আমাতুল আজিজ। দাদা আল-মানসুর তাঁকে আদর করে জুবাইদা (ছোট মাখনের টুকরা) নামে ডাকতেন এবং এ নামেই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।
১ দিন আগেকুয়েতে অনুষ্ঠিত ১৩তম আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন বাংলাদেশের হাফেজ আনাস মাহফুজ। বিশ্বের ৭৪টি দেশের প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে দেশের জন্য এ গৌরব বয়ে আনেন তিনি।
২ দিন আগে