আবদুল আযীয কাসেমি
দরুদ শব্দটি মূলত ফারসি। এর আরবি শব্দটি হলো—সালাত ও সালাম। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠানো বা দরুদ শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এতে মূলত নবীজির জন্য রহমতের প্রার্থনা করা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যেন তাঁর রাসুলকে রহমতের চাদরে জড়িয়ে নেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি “সালাত” পাঠান। হে ইমানদারগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পাঠাও এবং পাঠাও অধিক পরিমাণে সালাম।’ (আল আহযাব: ৫৫)
মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ বা সালাত-সালাম পাঠানোর অর্থ দয়া ও অনুগ্রহের সঙ্গে নবীর প্রশংসা ও মর্যাদা জ্ঞাপন। সালাত প্রেরণকারীর অবস্থান হিসেবে সালাতের অর্থ উদ্দেশিত হবে। পুত্রের প্রতি পিতার যে ধরনের ভালোবাসা ও অনুগ্রহ হবে, পিতার প্রতি পুত্রের সে ধরনের হবে না। আর ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা ও অনুগ্রহের রূপ উল্লিখিত দুজন থেকেও ভিন্ন হবে। দরুদ ও সালাতের বিষয়টিও তেমন। উলামায়ে কেরাম বলেন, আল্লাহর সালাত হচ্ছে রহমত পাঠানো, ফেরেশতাদের সালাত হচ্ছে ইস্তিগফার করা, আর মুমিনদের সালাত হচ্ছে দোয়া করা।
হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠাবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশবার রহমত পঠাবেন।’ (মুসলিম)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শাহ আবদুল কাদির (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর নবীর জন্য এবং সেই সঙ্গে তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য রহমত নাজিলের দোয়া কবুল হয়। এতে তাঁর প্রতি তাঁর মর্যাদানুপাতিক রহমত বর্ষিত হয়। আর একবারের দোয়ার ফলে দোয়াকারীর প্রতি দশবার রহমত বর্ষিত হয়। এখন যার যত মন চায়, ততটুকু অর্জন করুক।’ (তাফসিরে উসমানি)
আল্লামা হালিমি (রহ.) বলেন, ‘নবীজির প্রতি দরুদ পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন এবং আমাদের ওপর নবীজির অধিকার পূর্ণ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।’
ইমাম ইযযুদ্দিন ইবনে আবদুস সালাম আরও যোগ করে বলেন, ‘নবীজির জন্য আমাদের দরুদ পাঠ তাঁর জন্য সুপারিশ করা নয়। কেননা আমাদের মতো লোকজন নবীজির মতো মহান ব্যক্তির জন্য কী-ইবা সুপারিশ করতে পারে। তবে আল্লাহ তাআলা আমাদের আদেশ দিয়েছেন, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তাঁর অনুগ্রহের বদলা দিতে। যদি আমরা এর বদলা দিতে অক্ষম হই, তবে যেন তাঁর জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে বদলা দেওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা যেহেতু আমাদের অক্ষমতার কথা জানেন, তাই তিনি নবীজির প্রতি দরুদ পাঠানোর নির্দেশ করেছেন।’
ইমাম ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, ‘দরুদ পাঠের উপকার তিনিই লাভ করেন, যিনি দরুদ পাঠান। কেননা দরুদ পাঠ থেকে বোঝা যায়, তাঁর আকিদা-বিশ্বাস শুদ্ধ, তাঁর নিয়ত একনিষ্ঠ এবং নবীজির প্রতি রয়েছে তাঁর ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ আনুগত্য।’ (ফাতহুল মুলহিম: ৩/ ৩৩৩)
নবীজির প্রতি আমরা দরুদ পড়ব না কেন? তিনি তো সমগ্র মানবতার জন্যই রহমত। উম্মতের প্রতি তাঁর দরদ-মায়া ছিল অপরিসীম। তাঁর মতো মহত্তম মানুষের আগমন পৃথিবীতে কখনো ঘটেনি এবং ঘটবেও না। পৃথিবীতে টিকে থাকা তাবৎ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন। মানুষকে বের করে এনেছেন মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোয়। প্রাণহীন প্রতিমাপূজা থেকে তিনি মানুষকে দেখিয়েছেন বিশুদ্ধ তাওহিদের পথ। তাঁর হাত ধরেই মূর্খতার যুগের মানুষগুলো পরিণত হয়েছিলেন সোনার মানুষে। তাঁরা শুধু নিজেরাই খাঁটি হননি; তাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ পেয়েছে পথের দিশা। এসবের পেছনের কারিগর তিনি। তাঁর নিরলস পরিশ্রম, আত্মত্যাগ ও কোরবানির ফলে আমরা দীনের পথে চলতে পারছি।
লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক
দরুদ শব্দটি মূলত ফারসি। এর আরবি শব্দটি হলো—সালাত ও সালাম। প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠানো বা দরুদ শরিফ পাঠ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। এতে মূলত নবীজির জন্য রহমতের প্রার্থনা করা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা যেন তাঁর রাসুলকে রহমতের চাদরে জড়িয়ে নেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি “সালাত” পাঠান। হে ইমানদারগণ, তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পাঠাও এবং পাঠাও অধিক পরিমাণে সালাম।’ (আল আহযাব: ৫৫)
মহানবী (সা.)-এর প্রতি দরুদ বা সালাত-সালাম পাঠানোর অর্থ দয়া ও অনুগ্রহের সঙ্গে নবীর প্রশংসা ও মর্যাদা জ্ঞাপন। সালাত প্রেরণকারীর অবস্থান হিসেবে সালাতের অর্থ উদ্দেশিত হবে। পুত্রের প্রতি পিতার যে ধরনের ভালোবাসা ও অনুগ্রহ হবে, পিতার প্রতি পুত্রের সে ধরনের হবে না। আর ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের ভালোবাসা ও অনুগ্রহের রূপ উল্লিখিত দুজন থেকেও ভিন্ন হবে। দরুদ ও সালাতের বিষয়টিও তেমন। উলামায়ে কেরাম বলেন, আল্লাহর সালাত হচ্ছে রহমত পাঠানো, ফেরেশতাদের সালাত হচ্ছে ইস্তিগফার করা, আর মুমিনদের সালাত হচ্ছে দোয়া করা।
হাদিস শরিফে এসেছে, মহানবী (সা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠাবে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতি দশবার রহমত পঠাবেন।’ (মুসলিম)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় শাহ আবদুল কাদির (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁর নবীর জন্য এবং সেই সঙ্গে তাঁর পরিবার-পরিজনের জন্য রহমত নাজিলের দোয়া কবুল হয়। এতে তাঁর প্রতি তাঁর মর্যাদানুপাতিক রহমত বর্ষিত হয়। আর একবারের দোয়ার ফলে দোয়াকারীর প্রতি দশবার রহমত বর্ষিত হয়। এখন যার যত মন চায়, ততটুকু অর্জন করুক।’ (তাফসিরে উসমানি)
আল্লামা হালিমি (রহ.) বলেন, ‘নবীজির প্রতি দরুদ পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়ন এবং আমাদের ওপর নবীজির অধিকার পূর্ণ করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা।’
ইমাম ইযযুদ্দিন ইবনে আবদুস সালাম আরও যোগ করে বলেন, ‘নবীজির জন্য আমাদের দরুদ পাঠ তাঁর জন্য সুপারিশ করা নয়। কেননা আমাদের মতো লোকজন নবীজির মতো মহান ব্যক্তির জন্য কী-ইবা সুপারিশ করতে পারে। তবে আল্লাহ তাআলা আমাদের আদেশ দিয়েছেন, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তাঁর অনুগ্রহের বদলা দিতে। যদি আমরা এর বদলা দিতে অক্ষম হই, তবে যেন তাঁর জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে বদলা দেওয়ার চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা যেহেতু আমাদের অক্ষমতার কথা জানেন, তাই তিনি নবীজির প্রতি দরুদ পাঠানোর নির্দেশ করেছেন।’
ইমাম ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, ‘দরুদ পাঠের উপকার তিনিই লাভ করেন, যিনি দরুদ পাঠান। কেননা দরুদ পাঠ থেকে বোঝা যায়, তাঁর আকিদা-বিশ্বাস শুদ্ধ, তাঁর নিয়ত একনিষ্ঠ এবং নবীজির প্রতি রয়েছে তাঁর ভালোবাসা ও অকুণ্ঠ আনুগত্য।’ (ফাতহুল মুলহিম: ৩/ ৩৩৩)
নবীজির প্রতি আমরা দরুদ পড়ব না কেন? তিনি তো সমগ্র মানবতার জন্যই রহমত। উম্মতের প্রতি তাঁর দরদ-মায়া ছিল অপরিসীম। তাঁর মতো মহত্তম মানুষের আগমন পৃথিবীতে কখনো ঘটেনি এবং ঘটবেও না। পৃথিবীতে টিকে থাকা তাবৎ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই করেছেন। মানুষকে বের করে এনেছেন মূর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোয়। প্রাণহীন প্রতিমাপূজা থেকে তিনি মানুষকে দেখিয়েছেন বিশুদ্ধ তাওহিদের পথ। তাঁর হাত ধরেই মূর্খতার যুগের মানুষগুলো পরিণত হয়েছিলেন সোনার মানুষে। তাঁরা শুধু নিজেরাই খাঁটি হননি; তাঁদের মাধ্যমে পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ পেয়েছে পথের দিশা। এসবের পেছনের কারিগর তিনি। তাঁর নিরলস পরিশ্রম, আত্মত্যাগ ও কোরবানির ফলে আমরা দীনের পথে চলতে পারছি।
লেখক: শিক্ষক ও হাদিস গবেষক
একজন মুমিনের জন্য তার জীবনকে ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক পরিচালিত করা এবং ইসলামে যা কিছু নিষিদ্ধ, তা ত্যাগ করা আবশ্যক। হাদিস শরিফে এটাকে উত্তম ধার্মিকতা আখ্যা দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন...
৭ ঘণ্টা আগেআসর শব্দের অর্থ সময়। পবিত্র কোরআনে আসর নামে একটি সুরা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আসর বা সময়ের শপথ করেছেন। মুসলিমরা দৈনন্দিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, তার তৃতীয় ওয়াক্তকে আসর নামে অভিহিত করা হয়। এ ছাড়াও পবিত্র কোরআনে এটিকে সালাত আল-ওসতা বা মধ্যবর্তী নামাজ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে।
১ দিন আগেজ্ঞানগর্ভ ও উপদেশে ভরা কোরআন জীবনের জন্য অপরিহার্য একটি গাইড বই। মানুষ কোথায় কখন কী করবে, কেন করবে, কীভাবে করবে—তা বলে দেওয়া হয়েছে কোরআনে। কোরআন তথা আল্লাহপ্রদত্ত আসমানি কিতাবের হিদায়াতের বাইরে কোনো সঠিক জীবনদর্শন নেই, কোনো ধর্মদর্শন নেই, কোনো মুক্তির পথ নেই। মানবজাতির সূচনালগ্নেই কথাটি জানিয়ে দেওয়া
২ দিন আগেএকজন মুমিনের কাছে রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। মহানবী (সা.) এ পবিত্র মাসকে বেশ গুরুত্ব দিতেন। অন্যান্য কাজকর্ম থেকে নিজেকে গুটিয়ে অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল হতেন। সাহাবিদের অভ্যাসও ছিল একই রকম। গুরুত্ব বিবেচনায় রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হতো বেশ আগে থেকেই। রজব মাসের চাঁদ দেখার পর থেকেই মহানবী (সা.) অধীর আগ
২ দিন আগে