জার্মানির ডাড স্কলারশিপ পেলেন হাসানাহ্

আনিসুল ইসলাম নাঈম
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০৯: ০৯

নাটোরের সন্তান উস ওয়াতুন হাসানাহ্। অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে। পরে তিনি স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ার কোয়ালিটি, সলিড ওয়েস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট ওয়াটার (ওয়েস্ট) মাস্টার্স প্রোগ্রামে ইপোস-ডাড স্কলারশিপ নিয়ে জার্মানি পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর বৃত্তি অর্জনের খুঁটিনাটি তথ্য শুনেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

স্কলারশিপ পাওয়ার অনুভূতি 
প্রথমে আমাকে ইমেইলে ২০ মিনিটের একটি অনলাইন ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল। তবে সেই ইন্টারভিউ স্থায়ী হয়েছিল ৫০ মিনিট পর্যন্ত। ইন্টারভিউয়ের সময় প্রাথমিকভাবে বৃত্তির জন্য শর্টলিস্টে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছিল। পরে ই-মেইলের মাধ্যমে চূড়ান্ত ফলাফল জানায়। ইন্টারভিউতে ডাডের একজন সমন্বয়কারী ও মাস্টার্স প্রোগ্রামের সমন্বয়কারী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া ইরাসমাস-মুন্ডুস প্রোগ্রাম এবং সুইডিশ ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ ফর গ্লোবাল প্রফেশনালস প্রোগ্রাম দ্বারাও ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছিল। প্রায় তিন মাস পরে আমি ডাড (ওয়েস্ট প্রোগ্রাম), ইরাসমাস-মুন্ডুস এবং সুইডিশ ইনস্টিটিউট স্কলারশিপ ফর গ্লোবাল প্রফেশনালস প্রোগ্রামে লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার পেয়েছি। এই বৃত্তিগুলোর মধ্যে ডাডকে বেছে নেওয়া বিশাল সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ এগুলো ইউরোপের সেরা বৃত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। তিন বছর বয়সী একটি সন্তানকে রেখে বিদেশে স্থায়ী হওয়াটাও বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল। তাই নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং জার্মানিতে চাকরির সুযোগের কারণে ডাডকে বেছে নিয়েছি। 

স্কলারশিপ পাওয়ার পেছনে
বিদেশে পড়াশোনা করতে পরিবার থেকে সব সময় সাপোর্ট পেয়েছি। ছোটবেলা থেকেই মা আমাকে পড়াশোনা ও কর্মজীবনকে সব সময় আগে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলতেন। ব্যাচেলর প্রোগ্রামে ইন্টার্নশিপ চলাকালীন আমি চাকরিতে যোগ দিই। চাকরিতে যোগ দেওয়ার এক বছর পরে মাস্টার্সের জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলাম। স্নাতক জীবন থেকে সব সময় বিভিন্ন গবেষণা কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। মাস্টার্সের পর গবেষণা বিভাগে নামীদামি একটি জুতা কোম্পানিতে কাজ শুরু করি। এরপর আমি লেদার রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর-এ রিসার্চ ফেলো হিসেবে যোগদান করি। এর মধ্যে বিভিন্ন গবেষণা-সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছি। আমি আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছি এবং ২০২৩ সালে ELSEVIER-এর সঙ্গে দুটি বইয়ের অধ্যায় লিখেছি। আমাকে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মমিনুল ইসলাম স্যারকে ধন্যবাদ জানাই। পুরো যাত্রায় আমার স্বামী প্রকৌশলী মো. শাহাবুল আলম শাকিল ও মা সব সময় অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন। নইলে আমার সন্তানকে বাংলাদেশে রেখে জার্মানিতে স্বপ্নের পেছনে ছুটে যাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে যেত। 

অধ্যয়নের বিষয়
জার্মানির ডাড স্কলারশিপে মেডিসিন, ইঞ্জিনিয়ারিং, আর্ট, মিউজিক, স্পোর্টস, গণিত, ন্যাচারাল সায়েন্স, আইন, অর্থনীতি, সোশ্যাল সায়েন্স, কালচারাল স্টাডিজ, ল্যাঙ্গুয়েজ, ভেটেরিনারি মেডিসিন, কৃষি, ফরেস্ট্রি, পুষ্টিবিজ্ঞান; এসব ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যয়ন করার সুযোগ রয়েছে। 

আবেদনের যোগ্যতা 
ডাডের মাস্টার্স স্কলারশিপে আবেদনের জন্য মূলত চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং কমপক্ষে দুই বছরের প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রার্থীর ব্যাচেলর ডিগ্রি সার্টিফিকেট ছয় বছরের বেশি পুরোনো হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রোগ্রাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভর্তির যোগ্যতা ভিন্ন হতে পারে। একাডেমিক রেজাল্ট, রিসার্চ পাবলিকেশন, মোটিভেশনাল লেটার–স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

পড়াশোনার পর জার্মানিতে চাকরি 
ডাড স্কলারশিপ পেলে প্রোগ্রাম অনুসারে মাসিক ৯৩৪ থেকে ১ হাজার ২০০ ইউরো শিক্ষা ভাতা, এককালীন গবেষণা ভাতা, ভ্রমণ ব্যয় এবং স্বাস্থ্যবিমা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিবারের সদস্যদের জন্য মাসিক ভাতা ও রেন্ট সাবসিডিও পাওয়া যায়। ডাড প্রধানত তাদের দেশে অর্জিত জ্ঞান প্রয়োগ করার জন্য পড়াশোনার পরে দেশে ফিরে যেতে উৎসাহিত করে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। উপযুক্ত যোগ্যতা এবং ভাষার দক্ষতা নিয়ে পড়াশোনা করার পর জার্মানিতে চাকরি পাওয়াও সম্ভব। জার্মানিতে ভালো বেতনের চাকরি পেতে B1 পর্যন্ত জার্মান ভাষার দক্ষতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই নতুনদের জার্মান ভাষার দক্ষতা এবং কাজের অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। 

আবেদনের প্রক্রিয়া
স্কলারশিপে আবেদনের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন ডাড অ্যাপ্লিকেশন ফরম। সব একাডেমিক সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট, মোটিভেশনাল লেটার, ইউরোপাস ফরম্যাটের সিভি, ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট, রিকমেন্ডেশন লেটার ও আইইএলটিএস বা টোফেল সার্টিফিকেট। সাধারণত ডাডের বিভিন্ন স্কলারশিপ ও প্রোগ্রামের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়ে থাকে। আবেদন করার জন্য ডাডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের ‘স্কলারশিপ ডেটাবেইস’ থেকে স্কলারশিপ টাইপ ও প্রোগ্রাম অনুযায়ী প্রোগ্রাম ব্রোশিয়ার সংগ্রহ করা যায়। যেখানে প্রোগ্রাম অনুযায়ী আবেদন প্রক্রিয়া, ডেডলাইন ও প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দেওয়া থাকে। 

নতুনদের জন্য পরামর্শ 
ডাড স্কলারশিপের জন্য পেশাগত অভিজ্ঞতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই স্নাতকের পর সময় নষ্ট না করে বিষয়-সংক্রান্ত পেশাগত ক্ষেত্রে কাজ শুরু করা উচিত। অনেকে পেশা ও গবেষণাকে দুটি ভিন্ন দিক হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু ডাড স্কলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে উভয়ই খুবই কার্যকর। তাই লেখাপড়া বা কাজের পাশাপাশি নিজের আগ্রহের গবেষণামূলক কাজে অংশগ্রহণ সাফল্য বয়ে আনবে। আমি গবেষণা দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে আমার বৃত্তি পেয়েছি। কারণ, আমি একজন রিসার্চ ফেলো হিসেবে বিসিএসআইআর-এ কাজ করেছি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত