গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
তাসনুভা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বেশ কয়েক বছর কাজ করেও তিনি তাঁর ন্যায্য পাওনা পাচ্ছিলেন না। ভেবেছিলেন এটাই তাঁর জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ। কিন্তু দিন যত যাচ্ছিল, তাঁর মধ্যে ততই হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম হচ্ছিল। একদিকে অপ্রাপ্তি, অন্যদিকে ক্রমবর্ধিত চাহিদা—এ দুই মিলে তাঁকে ক্লান্ত করে তোলে। মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপ্রাপ্তি ও উচ্চ আকাঙ্ক্ষাই তাঁর অসুস্থতার কারণ। একপর্যায়ে পছন্দের সেই চাকরি ছেড়ে দেন তাসনুভা। যোগ দেন অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে তিনি চাহিদামতো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু পছন্দের কাজ ছেড়ে আসাটা একটা অস্বস্তি হয়ে রয়েছে এখনো।
এমন বাস্তবতায় কিন্তু তাসনুভার একার বাস নয়। ‘জেনারেশন জেড’ হিসেবে পরিচিত তরুণ কর্মীদের অনেকেরই বাস্তবতা এমন। তারা চায় একটি মানসম্মত কর্মসংস্থান, যেখানে থাকবে কর্মজীবনের ভারসাম্য, ন্যায্য বেতন ও মানসম্মত কর্মপরিবেশ। এর কোনোটি তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে কর্মক্ষেত্র বদলের দিকে এগিয়ে যান তাঁরা। চাকরি সম্পর্কিত মার্কিন ওয়েবসাইট ক্যারিয়ার বিল্ডার্স ২০২২ সালে এ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। তারা বলছে, সামগ্রিকভাবে নতুন প্রজন্মের কর্মীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো উচ্চ বেতন। যারা এখনো চাকরিতে প্রবেশ করেনি, তাদেরও অগ্রাধিকার তালিকায় এটিই রয়েছে।
কথা হলো এই জেনারেশন জেড আসলে কারা? যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, তাদের বর্তমান প্রজন্মের চাকরিপ্রার্থী বলা হচ্ছে। একসঙ্গে এদের বলা হয় জেনারেশন জেড। ক্যারিয়ার বিল্ডার্স পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যায়, এই প্রজন্মের কর্মীরা বয়স্ক কর্মীদের অলসতা, সময়ের অপচয়, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা দেখে কর্মক্ষেত্র থেকে আরও বেশি বেতন দাবি করছেন। শুধু তাই নয়, কর্মপরিবেশ নিয়েও তাঁরা বেশ খুঁতখুঁতে। এ ছাড়া নিজেদের জন্য সময় রাখতে চান তাঁরা। পুরো সময় কর্মক্ষেত্রে দিয়ে দেওয়াটা তাঁরা অপছন্দ করেন।
জেনারেশন জেডের এই দাবিগুলো মিলেনিয়ালস জেনারেশনেরও পছন্দের তালিকায় ছিল। মিলেনিয়ালস বলতে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্ম হওয়া প্রজন্মকে বোঝানো হয়। সহস্রাব্দ প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় উচ্চ বেতন, মানসম্মত কর্মপরিবেশ, অবকাশ ইত্যাদি থাকলেও তারা এ বিষয়গুলোতে সেভাবে জোর দেয়নি, যতটা দিচ্ছে এখনকার জেনারেশন জেড।
জেনারেশন জেডের এই চাহিদাপত্র দেখে মনে হতে পারে, কর্মক্ষেত্রর কাছ থেকে তারা কাজের তুলনায় বেশি দাবি করছে। কিন্তু এই ধারণা ধোপে টেকে না, যখন জানা যায়, এই প্রজন্মই সঠিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ শ্রম দিতে প্রস্তুত। কোনো প্রতিষ্ঠান বা নিয়োগকর্তা তাদের চাহিদা পূরণ করলে তাদের জন্য তারা সর্বোচ্চটুকু দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর অন্যথা হলে চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত তারা বেশ দ্রুত নেয়। অর্থাৎ, অপ্রাপ্তিকে প্রাপ্তিতে পরিণত করতে প্রতিষ্ঠানকে তারা বেশি সময় দিতে রাজি নয়।
এটা সত্য যে এই প্রজন্ম আর্থিক দিক থেকে বেশ উচ্চাভিলাষী। এ বিষয়ে আরেক মার্কিন নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম রিপলম্যাচ ২০২০ সালে বিভিন্ন কলেজ থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে সমীক্ষা করে। সেখানে প্রার্থীরা বলেছে, চাকরির অফারগুলো মূল্যায়নের সময় তারা অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেয়।
সহস্রাব্দ প্রজন্মের তুলনায় জেনারেশন জেড বেশ কিছু জায়গায় আলাদা। পেশাদার পরিষেবা নেটওয়ার্ক পিডব্লিউসি ২০১১ সালে বিশ্বব্যাপী সমীক্ষা চালায়। সেখানে দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশকারী মিলেনিয়ালস জেনারেশন আর্থিক পুরস্কারের চেয়ে ক্যারিয়ারের অগ্রগতি এবং ব্যক্তিগত বিকাশকে বেশি মূল্য দেয়। তারা এমন প্রতিষ্ঠানের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয়েছিল, যারা তাদের পছন্দের জায়গায় পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।
এ বিষয়ে ক্যারিয়ার বিল্ডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুসান আর্থার বিবিসিকে বলেছেন, ‘বেতন বা মজুরি এখন সবচেয়ে বেশি ফোকাসে আছে। জেনারেশন জেডের কর্মীবাহিনী এমন এক অর্থনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করছে, যা আগের চেয়ে খুব আলাদা। এই সময়ে তরুণ কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পরপরই ভীষণ চাপের মধ্যে থাকে। বিশেষত আর্থিকভাবে তাদের বেশ লড়াই করতে হয়। কারণ, তাদের এমন এক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় থাকতে হয়, যেখানে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি প্রতিনিয়তই তাদের বেতনকে ছাড়িয়ে যায়।’
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি প্রায় সবার জন্যই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে। সময়ের সঙ্গে এটি আরও তীব্র হচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্তমানের রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষত, ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের বাজার ব্যবস্থায় পড়া প্রভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এ অবস্থায় জেনারেশন জেড তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আগের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। কারণ তাদের সামনে রয়েছে কর্মক্ষেত্রের অনিশ্চয়তার প্রমাণ। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেশন জেডের অনেকেই তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ বা পরিবারের কোনো সদস্যকে মহামারির সময়ে চাকরি হারাতে বা তাদের বেতন কাটা পড়তে দেখেছেন।
লন্ডনভিত্তিক মনোবিজ্ঞানী এবং কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা বিষয়ক পরামর্শদাতা এলিজাবেথ মিশেল বিবিসিকে বলেন, ‘এই প্রজন্ম পুরোনো প্রজন্মকে একাধিক মন্দার মধ্য দিয়ে যেতে এবং বিপুল পরিমাণ ঋণের চাপে শেষ হয়ে যেতে দেখেছে। জেনারেশন জেড এসব দেখে ভেবে নিয়েছে যে, এটা তার জন্য নয়। এমন অনিশ্চয়তায় তারা পড়তে রাজি নয়।’
তবে শুধু বেতন হলেই যে জেনারেশন জেড বর্তে যায়, এমন নয়। তারা চায়, কর্মক্ষেত্র তাদের জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করবে না। মানসিক শান্তি, নিরাপত্তা ইত্যাদিকে তারা কর্মক্ষেত্রের অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে মনে করে। একই সঙ্গে নিজের পছন্দের ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়তে তারা সর্বোচ্চটুকু দিতে চায়। এ সম্পর্কিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মজীবনের ভারসাম্য, মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধা, বৈচিত্র্য, ভালো কর্মপরিবেশ তাদের চাহিদার ওপরের দিকেই আছে।
কর্মক্ষেত্র বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ সংস্থা ট্যালেন্টএলএমএস ২০২২ সালে জেনারেশন জেডের ওপর একটি গবেষণা করে। গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো পরিবেশ চান এই প্রজন্মের ৮২ শতাংশ কর্মী। আর কোম্পানির বৈচিত্র্য, ইক্যুয়িটি ও অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ৭৭ শতাংশ কর্মী। এগুলো না পেলে চাকরি ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছে ৭৪ শতাংশ কর্মী। অসন্তোষজনক বেতনের পর কর্মজীবনে ভারসাম্যের অভাবই এই ৭৪ শতাংশের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার এক নম্বর কারণ।
মিলেনিয়ালস জেনারেশনও ভালো কর্মপরিবেশ ও কাজের বাইরে বেশি সময় চেয়েছিল। কিন্তু তারা ভালো কোম্পানিগুলোর জন্য ছাড় দিতে রাজি ছিল। কাজের জন্য মর্যাদাপূর্ণ স্থানই তাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছিল। ২০০৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, যেসব প্রতিষ্ঠান সহস্রাব্দ প্রজন্মের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে, সেগুলো ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ কর্মী। কিন্তু ২০১১ সালে এসে দেখা গেল এই সংখ্যা ৫৬ শতাংশে নেমে আসে।
এটি অবশ্য একটি নিয়মিত বিষয়ই। সাধারণত চাকরির বাজারে নতুন প্রবেশ করা প্রজন্ম নিজের উচ্চাশাকে সবার আগে স্থান দেয়। তরুণ বয়সে একের পর এক চাকরি বদল নিয়মিত ঘটনাই। সময়ের সঙ্গে একেকটি প্রজন্মের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা কমে আসে। ভোক্তা আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ব্যাংকরেটের ২০২১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জেড প্রজন্মের ৭৭ শতাংশ কর্মী নতুন চাকরির সন্ধান করছে। একই পর্যায়ে ২০১১ সালে মিলেনিয়ালস প্রজন্মের ৩৮ শতাংশ সুযোগের সন্ধান করছিলেন। অবশ্য চাকরির বাজারে প্রবেশের পর এখনো যথেষ্ট সময় পার করেনি জেনারেশন জেড।
কথা হলো চাকরি ছেড়ে দিয়ে, বা নতুন কোনো কর্মক্ষেত্রের দিকে যারা যাত্রা করছেন, তাঁরা কি আগের চেয়ে ভালো মজুরি পাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস দেখেছে, যারা চাকরিতে আছেন, তাদের চেয়ে যারা ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁরা উচ্চ মজুরি পাচ্ছেন।
নতুন প্রজন্মের এই উচ্চাভিলাষ বা ক্যারিয়ার নিয়ে এই সচেতনতাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যাথলিন গারসন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘একটি ডিজিটাল বিশ্বে জন্ম নিয়ে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, পরিবেশ আন্দোলন ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি নতুন আবিষ্কৃত কাজের ক্ষেত্র নিয়ে বেশ সচেতন। এদিকে নিয়োগকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে আস্থা ও আনুগত্য হ্রাস পেয়েছে। জেনারেশন জেড এই নিরাপত্তাহীনতাকেই হাতিয়ার করেছে। আসলে নিয়োগকর্তারা আধুনিক জীবনের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এটা সত্য যে, জেনারেশন জেড বড় অস্থির সময়ে কাজে যোগ দিচ্ছে। তারা নিজের পছন্দের কাজের জন্য উপযুক্ত মজুরি, সম্মান ও কাজের বাইরে অবসর চায়।’
কিন্তু শ্রমবাজারের পরিস্থিতি এর অনুকূলে পুরোপুরি নেই বলে উল্লেখ করেছেন গারসন। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। জেনারেশন জেডের ওপরও তিনি আস্থাশীল। তিনি বলছেন, এই প্রজন্মকে খুব অল্পে হতাশ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে আশাবাদী। আশাবাদী এই প্রজন্ম ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের অনুঘটক হবে বলেও মনে করেন তিনি।
একইভাবে আশাবাদী তরুণ ব্রিটিশ উদ্যোক্তা বেথ কেনেডিও। সপ্তাহে চার দিন কাজ ও বাকি তিন দিন ছুটি দিতে আগ্রহী কেনেডি এ প্রজন্মকে চিন্তাশীল, সহানুভূতিশীল ও পরিশ্রমী বলে মনে করেন। এই প্রজন্ম প্রতিষ্ঠানের কোনো নীতি বা আচরণের সঙ্গে একমত না হলে সরাসরি সেই বিষয় তুলে ধরেন জানিয়ে কেনেডি বলেন, ‘জেনারেশন জেডের চাহিদা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে কিছু বদল এনেছি। সাফল্যও এসেছে।’
জেনারেশন জেড কাজকে অর্থবহ করে তুলতে চায়। এই প্রজন্ম চায়, তাদের সব চাওয়া প্রতিষ্ঠান মেনে নিক, আর তারা বিনিময়ে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করবে। কাজের পর যেন তারা নিজেকে সময় দিতে পারে, তেমন নিশ্চয়তাও তারা চায়।
তাসনুভা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বেশ কয়েক বছর কাজ করেও তিনি তাঁর ন্যায্য পাওনা পাচ্ছিলেন না। ভেবেছিলেন এটাই তাঁর জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ। কিন্তু দিন যত যাচ্ছিল, তাঁর মধ্যে ততই হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম হচ্ছিল। একদিকে অপ্রাপ্তি, অন্যদিকে ক্রমবর্ধিত চাহিদা—এ দুই মিলে তাঁকে ক্লান্ত করে তোলে। মানসিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েন। অপ্রাপ্তি ও উচ্চ আকাঙ্ক্ষাই তাঁর অসুস্থতার কারণ। একপর্যায়ে পছন্দের সেই চাকরি ছেড়ে দেন তাসনুভা। যোগ দেন অন্য একটি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে তিনি চাহিদামতো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু পছন্দের কাজ ছেড়ে আসাটা একটা অস্বস্তি হয়ে রয়েছে এখনো।
এমন বাস্তবতায় কিন্তু তাসনুভার একার বাস নয়। ‘জেনারেশন জেড’ হিসেবে পরিচিত তরুণ কর্মীদের অনেকেরই বাস্তবতা এমন। তারা চায় একটি মানসম্মত কর্মসংস্থান, যেখানে থাকবে কর্মজীবনের ভারসাম্য, ন্যায্য বেতন ও মানসম্মত কর্মপরিবেশ। এর কোনোটি তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে কর্মক্ষেত্র বদলের দিকে এগিয়ে যান তাঁরা। চাকরি সম্পর্কিত মার্কিন ওয়েবসাইট ক্যারিয়ার বিল্ডার্স ২০২২ সালে এ নিয়ে একটি সমীক্ষা চালায়। তারা বলছে, সামগ্রিকভাবে নতুন প্রজন্মের কর্মীদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো উচ্চ বেতন। যারা এখনো চাকরিতে প্রবেশ করেনি, তাদেরও অগ্রাধিকার তালিকায় এটিই রয়েছে।
কথা হলো এই জেনারেশন জেড আসলে কারা? যাদের জন্ম ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে, তাদের বর্তমান প্রজন্মের চাকরিপ্রার্থী বলা হচ্ছে। একসঙ্গে এদের বলা হয় জেনারেশন জেড। ক্যারিয়ার বিল্ডার্স পরিচালিত সমীক্ষার ফলাফল থেকে দেখা যায়, এই প্রজন্মের কর্মীরা বয়স্ক কর্মীদের অলসতা, সময়ের অপচয়, অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা দেখে কর্মক্ষেত্র থেকে আরও বেশি বেতন দাবি করছেন। শুধু তাই নয়, কর্মপরিবেশ নিয়েও তাঁরা বেশ খুঁতখুঁতে। এ ছাড়া নিজেদের জন্য সময় রাখতে চান তাঁরা। পুরো সময় কর্মক্ষেত্রে দিয়ে দেওয়াটা তাঁরা অপছন্দ করেন।
জেনারেশন জেডের এই দাবিগুলো মিলেনিয়ালস জেনারেশনেরও পছন্দের তালিকায় ছিল। মিলেনিয়ালস বলতে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্ম হওয়া প্রজন্মকে বোঝানো হয়। সহস্রাব্দ প্রজন্মের পছন্দের তালিকায় উচ্চ বেতন, মানসম্মত কর্মপরিবেশ, অবকাশ ইত্যাদি থাকলেও তারা এ বিষয়গুলোতে সেভাবে জোর দেয়নি, যতটা দিচ্ছে এখনকার জেনারেশন জেড।
জেনারেশন জেডের এই চাহিদাপত্র দেখে মনে হতে পারে, কর্মক্ষেত্রর কাছ থেকে তারা কাজের তুলনায় বেশি দাবি করছে। কিন্তু এই ধারণা ধোপে টেকে না, যখন জানা যায়, এই প্রজন্মই সঠিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ শ্রম দিতে প্রস্তুত। কোনো প্রতিষ্ঠান বা নিয়োগকর্তা তাদের চাহিদা পূরণ করলে তাদের জন্য তারা সর্বোচ্চটুকু দিতে প্রস্তুত। কিন্তু এর অন্যথা হলে চাকরি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত তারা বেশ দ্রুত নেয়। অর্থাৎ, অপ্রাপ্তিকে প্রাপ্তিতে পরিণত করতে প্রতিষ্ঠানকে তারা বেশি সময় দিতে রাজি নয়।
এটা সত্য যে এই প্রজন্ম আর্থিক দিক থেকে বেশ উচ্চাভিলাষী। এ বিষয়ে আরেক মার্কিন নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম রিপলম্যাচ ২০২০ সালে বিভিন্ন কলেজ থেকে পাস করা চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে সমীক্ষা করে। সেখানে প্রার্থীরা বলেছে, চাকরির অফারগুলো মূল্যায়নের সময় তারা অর্থনৈতিক বিষয়ের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেয়।
সহস্রাব্দ প্রজন্মের তুলনায় জেনারেশন জেড বেশ কিছু জায়গায় আলাদা। পেশাদার পরিষেবা নেটওয়ার্ক পিডব্লিউসি ২০১১ সালে বিশ্বব্যাপী সমীক্ষা চালায়। সেখানে দেখা যায়, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশকারী মিলেনিয়ালস জেনারেশন আর্থিক পুরস্কারের চেয়ে ক্যারিয়ারের অগ্রগতি এবং ব্যক্তিগত বিকাশকে বেশি মূল্য দেয়। তারা এমন প্রতিষ্ঠানের প্রতিই বেশি আকৃষ্ট হয়েছিল, যারা তাদের পছন্দের জায়গায় পৌঁছাতে সাহায্য করতে পারে।
এ বিষয়ে ক্যারিয়ার বিল্ডার্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুসান আর্থার বিবিসিকে বলেছেন, ‘বেতন বা মজুরি এখন সবচেয়ে বেশি ফোকাসে আছে। জেনারেশন জেডের কর্মীবাহিনী এমন এক অর্থনৈতিক পরিসরে প্রবেশ করছে, যা আগের চেয়ে খুব আলাদা। এই সময়ে তরুণ কর্মীরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পরপরই ভীষণ চাপের মধ্যে থাকে। বিশেষত আর্থিকভাবে তাদের বেশ লড়াই করতে হয়। কারণ, তাদের এমন এক অর্থনৈতিক বাস্তবতায় থাকতে হয়, যেখানে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি প্রতিনিয়তই তাদের বেতনকে ছাড়িয়ে যায়।’
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি প্রায় সবার জন্যই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে। সময়ের সঙ্গে এটি আরও তীব্র হচ্ছে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্তমানের রাজনৈতিক অস্থিরতা। বিশেষত, ইউক্রেন সংকটকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের বাজার ব্যবস্থায় পড়া প্রভাব ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এ অবস্থায় জেনারেশন জেড তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আগের চেয়ে বেশি রক্ষণশীল হয়ে উঠেছে। কারণ তাদের সামনে রয়েছে কর্মক্ষেত্রের অনিশ্চয়তার প্রমাণ। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেশন জেডের অনেকেই তাদের বয়োজ্যেষ্ঠ বা পরিবারের কোনো সদস্যকে মহামারির সময়ে চাকরি হারাতে বা তাদের বেতন কাটা পড়তে দেখেছেন।
লন্ডনভিত্তিক মনোবিজ্ঞানী এবং কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা বিষয়ক পরামর্শদাতা এলিজাবেথ মিশেল বিবিসিকে বলেন, ‘এই প্রজন্ম পুরোনো প্রজন্মকে একাধিক মন্দার মধ্য দিয়ে যেতে এবং বিপুল পরিমাণ ঋণের চাপে শেষ হয়ে যেতে দেখেছে। জেনারেশন জেড এসব দেখে ভেবে নিয়েছে যে, এটা তার জন্য নয়। এমন অনিশ্চয়তায় তারা পড়তে রাজি নয়।’
তবে শুধু বেতন হলেই যে জেনারেশন জেড বর্তে যায়, এমন নয়। তারা চায়, কর্মক্ষেত্র তাদের জীবনের ভারসাম্য নষ্ট করবে না। মানসিক শান্তি, নিরাপত্তা ইত্যাদিকে তারা কর্মক্ষেত্রের অবিচ্ছেদ্য উপাদান হিসেবে মনে করে। একই সঙ্গে নিজের পছন্দের ক্ষেত্রেই ক্যারিয়ার গড়তে তারা সর্বোচ্চটুকু দিতে চায়। এ সম্পর্কিত বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মজীবনের ভারসাম্য, মানসিক স্বাস্থ্য সুবিধা, বৈচিত্র্য, ভালো কর্মপরিবেশ তাদের চাহিদার ওপরের দিকেই আছে।
কর্মক্ষেত্র বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ সংস্থা ট্যালেন্টএলএমএস ২০২২ সালে জেনারেশন জেডের ওপর একটি গবেষণা করে। গবেষণায় দেখা যায়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো পরিবেশ চান এই প্রজন্মের ৮২ শতাংশ কর্মী। আর কোম্পানির বৈচিত্র্য, ইক্যুয়িটি ও অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ৭৭ শতাংশ কর্মী। এগুলো না পেলে চাকরি ছেড়ে দেবে বলে জানিয়েছে ৭৪ শতাংশ কর্মী। অসন্তোষজনক বেতনের পর কর্মজীবনে ভারসাম্যের অভাবই এই ৭৪ শতাংশের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার এক নম্বর কারণ।
মিলেনিয়ালস জেনারেশনও ভালো কর্মপরিবেশ ও কাজের বাইরে বেশি সময় চেয়েছিল। কিন্তু তারা ভালো কোম্পানিগুলোর জন্য ছাড় দিতে রাজি ছিল। কাজের জন্য মর্যাদাপূর্ণ স্থানই তাদের কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছিল। ২০০৮ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, যেসব প্রতিষ্ঠান সহস্রাব্দ প্রজন্মের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে, সেগুলো ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ কর্মী। কিন্তু ২০১১ সালে এসে দেখা গেল এই সংখ্যা ৫৬ শতাংশে নেমে আসে।
এটি অবশ্য একটি নিয়মিত বিষয়ই। সাধারণত চাকরির বাজারে নতুন প্রবেশ করা প্রজন্ম নিজের উচ্চাশাকে সবার আগে স্থান দেয়। তরুণ বয়সে একের পর এক চাকরি বদল নিয়মিত ঘটনাই। সময়ের সঙ্গে একেকটি প্রজন্মের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা কমে আসে। ভোক্তা আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ব্যাংকরেটের ২০২১ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জেড প্রজন্মের ৭৭ শতাংশ কর্মী নতুন চাকরির সন্ধান করছে। একই পর্যায়ে ২০১১ সালে মিলেনিয়ালস প্রজন্মের ৩৮ শতাংশ সুযোগের সন্ধান করছিলেন। অবশ্য চাকরির বাজারে প্রবেশের পর এখনো যথেষ্ট সময় পার করেনি জেনারেশন জেড।
কথা হলো চাকরি ছেড়ে দিয়ে, বা নতুন কোনো কর্মক্ষেত্রের দিকে যারা যাত্রা করছেন, তাঁরা কি আগের চেয়ে ভালো মজুরি পাচ্ছেন? এ প্রশ্নের উত্তরটি বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকস দেখেছে, যারা চাকরিতে আছেন, তাদের চেয়ে যারা ছেড়ে দিয়েছেন, তাঁরা উচ্চ মজুরি পাচ্ছেন।
নতুন প্রজন্মের এই উচ্চাভিলাষ বা ক্যারিয়ার নিয়ে এই সচেতনতাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ক্যাথলিন গারসন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘একটি ডিজিটাল বিশ্বে জন্ম নিয়ে তারা সামাজিক ন্যায়বিচার, পরিবেশ আন্দোলন ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি নতুন আবিষ্কৃত কাজের ক্ষেত্র নিয়ে বেশ সচেতন। এদিকে নিয়োগকর্তা ও কর্মীদের মধ্যে আস্থা ও আনুগত্য হ্রাস পেয়েছে। জেনারেশন জেড এই নিরাপত্তাহীনতাকেই হাতিয়ার করেছে। আসলে নিয়োগকর্তারা আধুনিক জীবনের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এটা সত্য যে, জেনারেশন জেড বড় অস্থির সময়ে কাজে যোগ দিচ্ছে। তারা নিজের পছন্দের কাজের জন্য উপযুক্ত মজুরি, সম্মান ও কাজের বাইরে অবসর চায়।’
কিন্তু শ্রমবাজারের পরিস্থিতি এর অনুকূলে পুরোপুরি নেই বলে উল্লেখ করেছেন গারসন। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। জেনারেশন জেডের ওপরও তিনি আস্থাশীল। তিনি বলছেন, এই প্রজন্মকে খুব অল্পে হতাশ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে আশাবাদী। আশাবাদী এই প্রজন্ম ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের অনুঘটক হবে বলেও মনে করেন তিনি।
একইভাবে আশাবাদী তরুণ ব্রিটিশ উদ্যোক্তা বেথ কেনেডিও। সপ্তাহে চার দিন কাজ ও বাকি তিন দিন ছুটি দিতে আগ্রহী কেনেডি এ প্রজন্মকে চিন্তাশীল, সহানুভূতিশীল ও পরিশ্রমী বলে মনে করেন। এই প্রজন্ম প্রতিষ্ঠানের কোনো নীতি বা আচরণের সঙ্গে একমত না হলে সরাসরি সেই বিষয় তুলে ধরেন জানিয়ে কেনেডি বলেন, ‘জেনারেশন জেডের চাহিদা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে কিছু বদল এনেছি। সাফল্যও এসেছে।’
জেনারেশন জেড কাজকে অর্থবহ করে তুলতে চায়। এই প্রজন্ম চায়, তাদের সব চাওয়া প্রতিষ্ঠান মেনে নিক, আর তারা বিনিময়ে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করবে। কাজের পর যেন তারা নিজেকে সময় দিতে পারে, তেমন নিশ্চয়তাও তারা চায়।
জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির ১টি শূন্য পদে ২ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। রোববার (২৪ নভেম্বর) প্রতিষ্ঠানটির এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়।
৫ ঘণ্টা আগেকানাডিয়ান হাইকমিশনে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির দুই ধরনের শূন্য পদে ২ জন কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের জন্য নিয়মিত বেতনের বাইরেও নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।
১০ ঘণ্টা আগেইউনাইটেড ন্যাশন্স ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামে (ডব্লিউএফপি) জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির একটি শূন্য ২ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রতিষ্ঠানটির কক্সবাজার অফিসে নিয়োগ পাবেন।
১ দিন আগেঅর্থ বিভাগের আওতাধীন জাতীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন তহবিলের (এনএইচআরডিএফ) চার পদে অনুষ্ঠিত লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির জিএম (প্রশাসন ও ফাইন্যান্স) মোহাম্মদ জহিরুল কাইউম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
১ দিন আগে