নিজের পছন্দের ওপর জোর দিন

গাজী মিজানুর রহমান
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ১৭
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৬: ৩৮

কোনো মানুষের সুচিন্তিত ও পরিকল্পিত ক্যারিয়ার ভাবনা ও ক্যারিয়ার পরিকল্পনা জীবনকে এনে দিতে পারে অনেক বড় সাফল্য আর খ্যাতি। তাই কোনো মানুষের যেমন ক্যারিয়ার নিয়ে যথাসময়ে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবে ক্যারিয়ারে ভালো করার জন্য সঠিক সময়ে যথাযথ পরিকল্পনা করাও প্রয়োজন।

ক্যারিয়ার কী?
‘ক্যারিয়ার’ বলতে বোঝায় জীবনের পথে অগ্রগতি বা অগ্রসরণ। অর্থাৎ, মানুষ যখন তার জীবনে ভালো অগ্রগতি সাধন করতে পারে, তখন সে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারে। আমরা সাধারণভাবে সেই সব কাজ করি, সেগুলো যেমন ক্যারিয়ার নয়; আবার কোনো চাকরি বা পেশাকেও ক্যারিয়ার বলা যায় না। বরং, ক্যারিয়ার বলতে সব ধরনের কাজ, চাকরি, পেশা বা জীবনের অভিজ্ঞতার সমন্বিত রূপকে বোঝায়, যা কোনো ব্যক্তিকে তার পেশাগত জীবনে সাফল্যমণ্ডিত করে। কারণ, ক্যারিয়ারের মূল উদ্দেশ্যই হলো নিজের দক্ষতা ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে জীবনের অগ্রগতি ও উন্নতি সাধন।

ক্যারিয়ার প্ল্যান কী?
আপনি আপনার ক্যারিয়ার-সংক্রান্ত যত পরিকল্পনা বা প্ল্যান করবেন, তার সবই ক্যারিয়ার প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, ক্যারিয়ার নিয়ে যে প্ল্যান, সেটাই ক্যারিয়ার প্ল্যান। আপনি আপনার জীবনের অগ্রগতি বা উৎকর্ষ সাধনের জন্য যে প্ল্যান করেন, সেটাই ক্যারিয়ার প্ল্যান। ক্যারিয়ার প্ল্যান দুই ধরনের হতে পারে। যথা—স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি ক্যারিয়ার সফলতা সম্পন্ন করতে পারলে দীর্ঘ মেয়াদে ক্যারিয়ারে ভালো করা যায়।
 
ক্যারিয়ার প্ল্যানের প্রয়োজনীয়তা কী?
পরিকল্পনা বা প্ল্যান ছাড়া কোনো কাজে যথাযথ সাফল্য পাওয়া যায় না বা যথাসময়ে যথাযথভাবে লক্ষ্যে পৌঁছা যায় না। আপনি যদি একটা সুন্দর বাড়ি বানাতে চান, তাহলে তারও প্ল্যান লাগবে। সেই ক্ষেত্রে বাড়ি তৈরির প্ল্যান যার যত সুন্দর, তার বাড়িও তত সুন্দর হবে। ঠিক একইভাবে একটি সুন্দর ক্যারিয়ার প্ল্যান আপনার ক্যারিয়ারকে সুন্দর ও মসৃণ করে তুলতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঠিক প্ল্যানটি সঠিক সময়ে করতে হবে।

ক্যারিয়ার প্ল্যান কখন করা উচিত?
আমাদের ক্যারিয়ার প্রকৃতপক্ষে সেই শৈশব থেকে শুরু হয়। প্রথমে আমাদের মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা কোনো নিকট আত্মীয় থেকে। এরপর প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে। তবে আমাদের ছোটবেলার ক্যারিয়ার প্ল্যানগুলো বাস্তবতার নিরিখে না হয়ে অবচেতন মনে কিংবা অন্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ঠিক করা হয়েছিল, তাই সেগুলোর দ্রুতই পরিবর্তন ঘটেছে। ধরুন, আপনি পড়েছেন মানবিক বিভাগে, হতে চেয়েছেন ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার। প্রকৃতপক্ষে মানবিক বিভাগে পড়াশোনা করে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া আদৌও সম্ভব নয়।
আমরা যখন ভালোভাবে বুঝতে শিখেছি, নিজের দক্ষতা ও ভালো লাগা জানতে শিখেছি, তখন আসলে সুপরিকল্পিতভাবে টেকসই ক্যারিয়ার প্ল্যান করা সম্ভব। অর্থাৎ, আপনি যখন ভালোভাবে নিজের দক্ষতা, যোগ্যতা ও ভালো লাগা সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারবেন, তখনই ক্যারিয়ার প্ল্যান করা উচিত। এ জন্যই এখন নবম-দশম শ্রেণির কারিকুলামে ‘ক্যারিয়ার শিক্ষা’ নামক একটি সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেন শিক্ষার্থী সেই সময় থেকে ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে পারে, পরিকল্পনা করতে পারে। তবে আমি মনে করি, উচ্চশিক্ষিতদের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট সময় উচ্চমাধ্যমিক তথা জীবনে। তখন দ্রুত পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের যোগ্যতা ভালোভাবে জেনে-বুঝে ক্যারিয়ারবিষয়ক যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। কারণ, আপনি কোন বিষয়ে বা কোন সেক্টরে উচ্চশিক্ষা নেবেন, তার ওপর ক্যারিয়ার নির্ভর করে। যেমন—কেউ যদি বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, তাহলে তাকে উচ্চশিক্ষা নিতে হবে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর এবং সে অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। ঠিক একইভাবে মানবিক বিভাগ থেকে কেউ যদি আইনজীবী হতে চান, তাকে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে হবে।

কীভাবে ক্যারিয়ার প্ল্যান করা উচিত?
আমি বলব, আপনি অন্যের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে বরং আপনার যেটা করতে ভালো লাগে কিংবা যেটায় আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা আছে, আপনি সেটা নিয়ে ক্যারিয়ার করার প্ল্যান করুন। 
ক্যারিয়ার বলতে কেবল বিসিএস ক্যাডার হওয়া, সরকারি চাকরিজীবী হওয়া কিংবা ব্যাংকার হওয়াকে বোঝায় না। ক্যারিয়ার হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং, সাংবাদিকতা, ক্রিকেট, ফুটবল, উদ্যোক্তা কিংবা ব্যবসা অথবা অন্য কিছু। অর্থাৎ যার যেটা ভালো লাগে। ক্যারিয়ার প্ল্যান করার ক্ষেত্রে আপনার নিজের পছন্দে জোর দিতে চেষ্টা করুন।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ের সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা উচিত
প্রথমত, আপনি যে সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন, সেটা আপনার ভালো লাগে কি না। দ্বিতীয়ত, আপনি যে বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইছেন, সেই সেক্টরে আপনার দক্ষতা বা যোগ্যতা আছে কি না? অথবা, ভবিষ্যতে আপনি সেই সেক্টরের জন্য দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন কি না। সর্বোপরি, সেই সেক্টরের সুযোগ-সুবিধা ও ভবিষ্যৎ কেমন। অর্থাৎ, ভবিষ্যতে সেখানে ভালো করার সম্ভাবনা কতটুকু।

ক্যারিয়ারে ভালো করার উপায়
ক্যারিয়ারে ভালো করার সবচেয়ে সহজ ও শক্তিশালী উপায় হচ্ছে নিজের দক্ষতা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করা এবং ইতিবাচক চিন্তা করা। কারণ, নেতিবাচক মানুষকে পিছিয়ে দেয় বহুগুণ। আপনি যে সেক্টরেই কাজ করবেন বা করছেন, সেই কাজকে ভালো লাগার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কারণ, আপনি যে সেক্টরে কাজ করছেন, সেই কাজ যদি আপনার ভালো না লাগে বা কাজ করতে বিরক্তি বোধ আসে, তাহলে সেই সেক্টরে আপনি কখনো ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না।

ভালো ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার সহকর্মী বা টিম মেম্বারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। তাদের প্রতি ভালো মনোভাব পোষণ করা এবং ভালো আচরণ করা।

ভালো ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ঘন ঘন চাকরি পরিবর্তন না করা। আপনি যদি কোথাও স্থির হতে না পারেন কিংবা ঘন ঘন চাকরি বা পেশা পরিবর্তন করেন, তাহলে সেখানে ক্যারিয়ারে সফল হওয়া কঠিন। তাই কোনো চাকরি বা পেশায় প্রবেশ করার আগে কয়েকবার ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে তারপর ঠিক করুন সিদ্ধান্ত। যেন কিছুদিন পরই সেই চাকরি বা পেশা পরিবর্তন করা না লাগে।

লেখক: ৩৫তম বিসিএস ক্যাডার, লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত