কেন পড়বেন সামাজিক বিজ্ঞান

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৩৯
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২৪, ০৯: ৪৫

উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে লক্ষ্য থাকে মূলত সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদভুক্ত বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি শেষ করা। তবে বিজ্ঞান বা বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনা করেও পরে অনেকে সামাজিক বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মূলত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে বহুল প্রায়োগিক গুরুত্বের জন্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর এ বিশেষ কদর। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব, উচ্চশিক্ষায় সুযোগ ও ক্যারিয়ার সম্পর্কে আলোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান হোসেন ভূইয়া

মো. ইমরান হোসেন ভূইয়াসামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে সমাজবিজ্ঞান, নৃবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও অর্থনীতির মতো প্রথাগত ও ঐতিহ্যবাহী বিষয়, তেমনি আন্তর্জাতিক চাহিদা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রয়েছে লোক-প্রশাসন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো চ্যালেঞ্জিং সব বিষয়। পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক চাহিদা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, পপুলেশন সায়েন্সেস, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স, জাপানিজ স্টাডিজ, যোগাযোগ বৈকল্য, টেলিভিশন ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি এবং প্রিন্টিং ও পাবলিকেশন স্টাডিজ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ। 

পড়ার সুযোগ
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সামাজিক বিজ্ঞানের কোনো একটি বিষয় নিয়ে পড়তে পারেন। এ ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জন্য অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষায় উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক বিভাগ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা সরাসরি অংশ নিতে পারেন। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেধাক্রম অনুযায়ী পছন্দের বিষয় নির্বাচন করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা, আবার ক্ষেত্রবিশেষে শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগসংবলিত ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে; সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে ভর্তি হওয়া যায়। 

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ
অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়নের নানা দিক নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতে উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি প্রোগ্রামে বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনা করার জন্য সুযোগ রয়েছে। বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর পর বিশ্বব্যাপী সামাজিক বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি করার জন্য রাষ্ট্রীয় ও প্রাতিষ্ঠানিক বৃত্তির সুযোগ সবচেয়ে বেশি। সামাজিক বিজ্ঞানের অর্থনীতি ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা পরে অর্থনীতির বিভিন্ন শাখা যেমন পরিবেশ অর্থনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, শ্রম অর্থনীতি, স্বাস্থ্য অর্থনীতি, কৃষি অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি ও পাবলিক পলিসি বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তুলনামূলক বেশি পেয়ে থাকেন। তবে সব সামাজিক বিজ্ঞান স্নাতকেরাই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, রাজনীতি, রাজনৈতিক অর্থনীতি, পাবলিক পলিসি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা, জেন্ডার ও উন্নয়ন, মিডিয়া স্টাডিজ, গণযোগাযোগ, প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা, ফিল্ম স্টাডিজ ও ক্রিমিনোলজির মতো বিষয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। 

চাকরি ও ক্যারিয়ার
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম ও দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সংস্থায় কাজের জন্য প্রয়োগ করা হয়। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উচ্চতর ডিগ্রি ও প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা থাকা সাপেক্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত বিষয়ের স্নাতকেরা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। তা ছাড়া গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা, টেলিভিশন ও ফিল্মের মতো বিশেষায়িত বিষয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিজ্ঞানের অন্যান্য স্নাতকেরাও আধুনিক মিডিয়া খাতগুলোতে কাজ করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসে যেকোনো খাতে ক্যারিয়ার গড়ার উদ্দেশ্যে সামাজিক বিজ্ঞানের স্নাতকদের তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগের দক্ষতা থাকা বেশ জরুরি। তাই বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা এবং ইংরেজি বা ফরাসি ভাষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি ভাষায় যোগাযোগের দক্ষতা থাকা সাপেক্ষে চাকরিক্ষেত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা সরকারি-বেসরকারি, দেশি-বিদেশি নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও গবেষণার সুযোগ পেয়ে থাকেন। 

অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত