ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার

ক্যারিয়ার ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৮: ৩৫

দেশের সম্প্রচার সাংবাদিকতা এবং সিনেমাবিষয়ক অধ্যয়নে নতুন এক মাত্রা যুক্ত করতে টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগটির যাত্রা শুরু হয়। ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগটি প্রথম চালু হয়। একসময় টেলিভিশন সাংবাদিকতায় দক্ষ জনবল এবং সিনেমা নিয়ে তেমন পড়াশোনার সুযোগ ছিল না। সেই সীমাবদ্ধতা মোকাবিলার জন্য বিভাগটির কার্যক্রম চালু হয়। এ বিভাগের পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক এস এম ইমরান হোসেন

পড়ার যোগ্যতা কী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে। টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মে এসএসসি এবং এইচএসসি উভয় মিলে জিপিএ ৮.০০ এবং সব বিষয়ে জিপিএ ৩.৫০-এর ওপর থাকতে হবে। এ ছাড়া ২ বছর মেয়াদি এমএসএস কোর্সে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সিজিপিএ সর্বনিম্ন ৩.০০ থাকলে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যাবে। মাস্টার্সে রেগুলার শিক্ষার্থীর বাইরে সিট ফাঁকা থাকলে পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনার্সে পড়ুয়া হতে হবে।

কোথায় পড়াশোনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি নামে বিভাগ রয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া নামে বিভাগ চালু রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন নামে বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট রয়েছে। এখানে ফিল্ম ও ফটোগ্রাফির ওপর দু-এক

বছরের ডিপ্লোমা রয়েছে। পাশাপাশি ফটোগ্রাফির ওপর অনার্স চালু রয়েছে।

যেসব কোর্স পড়ানো হয়

বিভাগটিতে অনার্সে ৪ বছরে রয়েছে মোট ৮টি সেমিস্টার এবং ৩২টি কোর্স। মাস্টার্সে দুটি সেমিস্টার ও ৮টি কোর্স রয়েছে। বিষয়টিতে পড়ার জন্য বাংলা এবং ইংরেজির দক্ষতার দিকে নজর দেওয়া হয়। শুরুতেই শিক্ষার্থীদের ভাষাগত দক্ষতায় উন্নতি করা হয়। অডিও ভিজ্যুয়ালের গ্রামার শেখানো হয়। মিডিয়া ও ফিল্ম স্টাডিজের বিভিন্ন থিওরি, ক্যামেরার কাজের জন্য সিনেমাটোগ্রাফি, সাউন্ডের জন্য সাউন্ড ডিজাইন শেখানো হয়। টেলিভিশন প্রোগ্রাম প্রোডাকশন নামে একটি কোর্স রয়েছে।

বইয়ের পাশাপাশি হাতে-কলমে শিক্ষা

কোর্সটিতে অর্ধেক থিওরেটিক্যালি এবং অর্ধেক প্র্যাকটিক্যালি পড়ানো হয়। টেলিভিশনে কাজ করতে হলে স্টুডিও প্রয়োজন। স্টুডিওর মধ্যে অবকাঠামো, লাইট, ক্যামেরা, অ্যানিমেশন ল্যাব দরকার। বিগত এক যুগে ঢাবি বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের সহযোগিতায় পরিপূর্ণ একটি টেলিভিশন স্টুডিও তৈরি করতে পেরেছি। এখানে ছেলেমেয়েরা টেলিভিশনের সব রকমের কাজ শিখে থাকেন। ডিপার্টমেন্টে প্রোগ্রামগুলো শিক্ষার্থী অ্যাসাইনমেন্ট হিসেবে করেন।

গ্র্যাজুয়েটদের প্রয়োজনীয়তা

দেশের টেলিভিশনগুলোতে প্রতিদিন অনেক প্রোগ্রাম ও নিউজ যায়। সে পরিমাণ দক্ষ জনবল কি আমাদের আছে? একসময় তো টেলিভিশনে পড়ার কোনো সাবজেক্ট ছিল না। তাহলে রিপোর্টিং, টেলিভিশন স্টুডিওতে কাজ করার বিষয়গুলো কীভাবে শিখবে? আগে লোকজন কাজ করতে করতে এসব শিখত। কিন্তু এটি একই সঙ্গে প্রায়োগিক ও পর্যবেক্ষণ করার জায়গা। এখন পর্যন্ত ৮০ জন শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হয়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে কাজ করছেন। তবে এতসংখ্যক টেলিভিশনের জন্য অনেক লোকবল প্রয়োজন।

গ্র্যাজুয়েটদের পেশায় সংশ্লিষ্ট কাজ

ঢাবিতে এক যুগে অনার্স এবং মাস্টার্সের পাঁচটি ব্যাচ বের হয়েছে। পাশাপাশি মাস্টার্সের আটটি। এখান থেকে বের হয়ে একটা অংশ বিভিন্ন টেলিভিশন স্টেশনে যোগদান করেছেন। কিছু শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়াশোনায় পাড়ি জমিয়েছেন। কেউ কেউ পাবলিক ও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করছেন। কেউ কেউ গণমাধ্যমে কাজ করছেন। আরেকটা অংশ শর্টফিল্ম ও সিনেমা তৈরিতে অংশগ্রহণ করছেন। সোসাইটিতে অল্প হলেও তাঁরা অবদান রাখতে শুরু করেছেন।

চাকরি বা কাজের সুযোগ

প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী টেলিভিশনে কাজ করছেন। অনেকেই ফিল্ম মেকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও এডিটর, ফটোগ্রাফার ও ক্যামেরাপারসন হিসেবে কাজের সুযোগ রয়েছে। তাঁরা অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন। তা ছাড়া পাবলিক রিলেশন অফিসার, কমিউনিকেশন অফিসার হয়ে কাজ করবেন। বর্তমানে মিডিয়া হাউসগুলোতে ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার হিসেবে টিম করা হচ্ছে। টিমগুলো শিক্ষার্থীদের হাত ধরে শুরু হয়েছে এবং তাঁরা কাজ করছেন।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ নেই। তবে বিভাগটি থেকে প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী বাইরে পড়াশোনা করছেন। তাঁদের একটা বড় অংশ ইউরোপ ও আমেরিকায় আছেন। যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। প্রতি মাসেই দু-একজন করে স্কলারশিপে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় যাচ্ছেন। ইউরোপিয়ান স্কলারশিপ, ইরাসমাস মুন্ডাস ও ডাড স্কলারশিপ রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল হিসেবে চিন্তা করলে আমাদের ইক্যুইপমেন্টের অনেক ঘাটতি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে শেখার আগ্রহ থেকে শিক্ষার্থীরা বিদেশে মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়াশোনায় যাচ্ছেন। পাশাপাশি সে দেশের ফিল্ম, মিডিয়া স্টাডিজ সেক্টরে ভূমিকা রাখছেন।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত