বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ: সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞানে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

শাহ বিলিয়া জুলফিকার
প্রকাশ : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৪৮
আপডেট : ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২: ৫১

দেশের সুনীল অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার লক্ষ্যে সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টিতে ভর্তির যোগ্যতা, উচ্চশিক্ষা, চাকরির সুযোগসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের প্রভাষক তাশরিফ মাহমুদ মিনহাজ

সমুদ্রসীমার সম্পদ আহরণসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিজস্ব জনবল যেন পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে এবং এর জন্য যে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রয়োজন, তা পূরণে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ’, প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি দেশের প্রথম মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সম্ভাবনা ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান বা মেরিন ফিশারিজ।

বিভাগের জয়যাত্রা
সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের টেকসই ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের সুনীল অর্থনীতিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সাল থেকে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের কার্যক্রম চালু করা হয়। বাংলাদেশে একমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বর্তমানে এই বিভাগে স্নাতক পর্যায়ে চারটি ব্যাচে ১৩৮ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এবং পঞ্চম ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বর্তমানে বিভাগের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তিনটি আধুনিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। 

ভর্তির যোগ্যতা
এই বিভাগটি শুধু বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য। বিজ্ঞান শাখা থেকে মাধ্যমিক/সমমান এবং উচ্চমাধ্যমিক/সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৪-সহ উত্তীর্ণ হতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক/সমমানের পরীক্ষায় ইংরেজি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত—এ চারটি বিষয়ের মধ্যে যেকোনো দুটিতে ‘এ’ গ্রেড থাকতে হবে। অন্য বিষয়ে ন্যূনতম ‘বি’ গ্রেড থাকতে হবে। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ও-লেভেলে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ ন্যূনতম পাঁচটি বিষয়ে কৃতকার্য হতে হবে। ২-এর বেশি বিষয়ে ‘সি’ গ্রেড আবেদনকারীর অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ লেভেলে গণিত, রসায়ন, পদার্থবিজ্ঞানসহ ন্যূনতম তিনটি বিষয়ে কৃতকার্য হতে হবে। একের অধিক ‘সি’ গ্রেড আবেদনকারীর অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। এরপর মেরিন ফিশারিজের জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। 

পঠন-পাঠন
বিভাগের নাম মেরিন ফিশারিজ অ্যান্ড অ্যাকুয়াকালচার হলেও বর্তমানে এই বিভাগ থেকে বিএসসি (অনার্স) ইন মেরিন ফিশারিজ প্রোগ্রাম চলমান রয়েছে। ওই প্রোগ্রামটি ১৫০ ক্রেডিটসংবলিত আন্তর্জাতিক মানসম্মত সিলেবাস অনুযায়ী পরিচালিত হয়, যার বেশির ভাগই সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ কেন্দ্রিক, তবে অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদ নিয়ে প্রয়োজনীয় কোর্সগুলো এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রোগ্রামটিতে সামুদ্রিক ও অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদের পরিচিতি, জীববৈচিত্র্য, সার্বিক ব্যবস্থাপনা, আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, কৌলিতত্ত্ব বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম প্রজনন, গভীর সমুদ্র ও উপকূলে চাষ ব্যবস্থাপনা এবং মৌলিক কিছু বিষয়বস্তুসহ সর্বমোট ৪৫টি তত্ত্বীয় ও ২১টি ব্যবহারিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা চার বছরে সর্বমোট আট সেমিস্টারে বিন্যস্ত। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে প্রত্যেক শিক্ষার্থী বাধ্যতামূলকভাবে চতুর্থ বর্ষে রিসার্চ প্রজেক্ট এবং ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করবেন, যা দেশের অভ্যন্তরে অথবা বিদেশেও সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে।

গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা
এই বিভাগের হাত ধরে ইতিমধ্যে অপার সম্ভাবনাময় সমুদ্রসম্পদকে কাজে লাগিয়ে সুনীল অর্থনীতিকে অগ্রগামী করার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণা ক্ষেত্রগুলো উন্মোচিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের বৈচিত্র্য, বাস্তুসংস্থান, গতিবিদ্যা, মাইগ্রেশন, আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, মার্কেট চেইন, গভীর সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে চাষ, কৃত্রিম প্রজনন, রোগ নিরূপণ ও ব্যবস্থাপনা, জিনতত্ত্ব, কৌলিতত্ত্ব, মৎস্য সম্পদের ওপর ন্যানো প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং স্যাটেলাইট টুলসের ব্যবহার, মেরিটাইম স্পেশাল প্ল্যানিং, উপকূলীয় অঞ্চলের সার্বিক ব্যবস্থাপনাসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিভাগে ২০২৪-২৫ সেশন থেকে স্নাতকোত্তর এবং ভবিষ্যতে পিএইচডি ডিগ্রি চালু করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে।

চাকরির সুযোগ
এই বিভাগে অধ্যয়নরত স্নাতক পর্যায়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে স্নাতক সম্পন্ন করবেন। বর্তমানে বিসিএস ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে মৎস্য কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও খামার ব্যবস্থাপকসহ নানা পদে কাজের সুযোগ রয়েছে। তা ছাড়া বর্তমানে মৎস্যপণ্য উৎপাদনে দেশ অনেক সমৃদ্ধ হওয়ায় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত পোনা উৎপাদন, মৎস্যপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, খাদ্য উৎপাদন, রোগ ব্যবস্থাপনা এবং বিপণন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। 

অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত