বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতি: গণিত ও বিজ্ঞানে প্রচুর অনুশীলন দরকার

ইসরাত জাহান জ্যোতি
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২২, ১১: ৩৯

কুড়িগ্রামের মেয়ে ইসরাত জাহান জ্যোতি। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৪তম বিজেএস (বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস) পরীক্ষায় প্রথমবার অংশগ্রহণ করেই তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন। ১৫তম বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীদের জন্য ইসরাত জাহান জ্যোতির অভিজ্ঞতার আলোকে থাকছে প্রস্তুতি পরামর্শ নিয়ে আলোচনা।

জুডিশিয়ারির সিলেবাস
এখানে প্রিলিতে ১০০টি প্রশ্ন থাকে। সাধারণত ৬০টি প্রশ্ন ল পার্ট থেকে আর বাকি ৪০টি জেনারেল অংশ থেকে আসে। ল-এর জন্য বেয়ার অ্যাক্ট এবং আইন পাঠ বা সহজ পাঠ যেকোনো একটা যথেষ্ট। আর জেনারেলের জন্য বিসিএস একটা ডাইজেস্ট সেটা হতে পারে প্রিসেপটর্স বা আ্যসিওরেন্স, যার যেটা ভালো লাগে। লিখিততে ওই একই পরামর্শ থাকবে। বেয়ার অ্যাক্টের সঙ্গে আমরা অনার্সে যে বইগুলো পড়তাম, সেগুলো পড়তে হবে জেনারেলের জন্য একসেট বিসিএসের বই। যদিও সিলেবাস পুরোটা মেলে না কিন্তু বাজারে শুধু বিজেএসের জন্য ভালো মানের স্বয়ংসম্পূর্ণ বই নেই। তাই এগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয়। 

নতুনদের জন্য পরামর্শ
প্রথম কাজ হলো ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাস নামিয়ে মনোযোগ দিয়ে পড়ে ফেলা। এর পরের কাজ হলো বিগত সালের প্রশ্নগুলো বিশ্লেষণ করা। এতে অনেকখানি ধারণা চলে আসে কী কী পড়তে হবে। এরপর নিজের মতো করে সবকিছু সাজিয়ে শুরু করতে হবে পড়াশোনা। 

জটিল বিষয়ে ভালো করার উপায়
এটা আসলে প্রত্যেক ব্যক্তির শক্তিমত্তা ও দুর্বলতার ওপর নির্ভর করে। নির্দিষ্টভাবে কোনো একটা বিষয়কে সহজ বা কঠিন বলা যায় না। তবে আমি দেখেছি জুডিশিয়ারির বেশির ভাগ প্রার্থী জেনারেল পার্ট নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন; বিশেষ করে ম্যাথ আর বিজ্ঞান নিয়ে। এই দুর্বলতার একটাই সমাধান প্রচুর অনুশীলন। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

পত্রিকা পড়ার অভ্যাস
নিয়মিত পত্রিকা পড়ার অভ্যাস করতে হবে; বিশেষ করে সম্পাদকীয় ও আন্তর্জাতিক পাতা অংশটুকু। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস থাকলে প্রিলিতে সাধারণ জ্ঞানে সুবিধা পাওয়া যায়। লিখিত পরীক্ষার সময়ও বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে প্রস্তুতি নিতে বেগ পেতে হয় না।

জুডিশিয়ারিতে ভালো করতে হলে
যারা রানিং স্টুডেন্ট, তাদের বলব নবীনদের মধ্য থেকে নিয়োগ যেকোনো জবে সব সময়ই বেশি হয়। শিক্ষাজীবনের সময় নষ্ট না করে দিনে বাড়তি দুই-তিন ঘণ্টা পড়ে জুডিশিয়ারিতে ভালো করা সম্ভব। কারণ পরীক্ষায় যা আসে তা বেশির ভাগ চেনা। একাডেমিক লাইফে এগুলোই পড়া। শুধু একটু রিভাইস করে নিতে হবে। 

মডেল টেস্ট দিয়ে প্রস্তুতি যাচাই
পরীক্ষার আগে কিছু মডেল টেস্ট বের হয়। এর মধ্য থেকে যেকোনো একটা কিনে বাসায় বসে পরীক্ষা দেওয়া যেতে পারে। এতে বৃত্ত ভরাটের প্র্যাকটিসও যেমন হয়, টাইম ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারটাও আয়ত্তে চলে আসে। তবে এসব পরীক্ষায় কম পেলেও হা-হুতাশের কিছু নেই আবার বেশি পেলে উচ্ছ্বাসের কিছু নেই। অনেকে মডেল টেস্টে খারাপ করে হতাশ হয়ে পড়ে। হতাশ হওয়া যাবে না। এটার নম্বর দেখে আপনি আপনার দুর্বল পয়েন্ট বের করে সেটাতে ফোকাস করবেন।

পরীক্ষার হল-সম্পর্কিত পরামর্শ 
বেশি চাপ নেওয়া যাবে না। চিন্তামুক্ত হয়ে প্রস্তুতি নেওয়া এবং পরীক্ষা দেওয়াটা অনেক বেশি জরুরি। মনে রাখবেন রিজিক সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার হাতে। তবে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখা যাবে না। আপনার পাওনা আপনি একদিন অবশ্যই পাবেন। পরীক্ষা দিয়ে এসে উত্তর মেলাতে যাবেন না। লিখিততে এ কাজটা কোনোভাবেই করা যাবে না। এতে পরের পরীক্ষায় ইমপ্যাক্ট পড়ে। এ সময় শারীরিক সুস্থতা অনেক বেশি জরুরি। অনেকে টেনশনে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। অসুস্থ হয়ে যায় শারীরিক ও মানসিকভাবে। এমনটা করা যাবে না। 

পরীক্ষার হলে করণীয়
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টাইম ম্যানেজমেন্ট। ঘড়ি কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ থাকে। আবার কপাল মন্দ হলে কেন্দ্রের ঘড়িও নষ্ট থাকে অনেক সময়। তাই টাইমের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। অনেক শিক্ষার্থী ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শুধু টাইম ম্যানেজমেন্টের কারণে ঝরে পড়ে। নেগেটিভ মার্কিংয়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। যেসব বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই শুধু আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে সেগুলো দাগানো উচিত নয়। এমন ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। পরীক্ষার আগের রাতে ভালো ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। বেশি রাত না জেগে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিত। 

অনুলিখন: মোছা. জেলি খাতুন

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত