বিসিএসকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাইলে

Thumbnail image

নিঃসন্দেহে সিভিল সার্ভিস সরকারের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। এর জন্য দরকার দক্ষ ও কৌশলী জনবল। পাবলিক সার্ভিস কমিশন সেই পদগুলোতে উপযুক্ত লোক বাছাই করে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে থাকে। বিসিএস নিয়ে যত উন্মাদনা থাকুক না কেন, দিন শেষে এটা একটা চাকরি। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আপনি বাধ্য। প্রতিটি ক্যাডারেরই রয়েছে আলাদা আলাদা ভূমিকা ও কর্মপদ্ধতি। এ জন্য বিসিএসকে পেশা হিসেবে টার্গেট করার আগে কিছু বিষয় ভেবে নেওয়া দরকার। 
 
দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া
বিসিএস একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ৪১তম বিসিএসে সার্কুলার প্রকাশ হয়েছিল ২০১৯ সালের শেষের দিকে। ভেরিফিকেশন শেষে নিয়োগ পেতে ৪ বছর পার হয়ে যাবে। আপনাকে ভাবতে হবে সব বিষয় বিবেচনা করে, এত সময় আপনি বিনিয়োগ করতে পারবেন কি না। 

নিজের SWOT অ্যানালাইসিস করা
নিজের Strengths, Weaknesses, Opportunities ও Threats (Challenges) সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। বিসিএস পরীক্ষা এমন নয় যে আপনি টানা এক বছর পড়ে ক্যাডার হয়ে যাবেন। এখানে প্রিলিমিনারি থেকে ভাইভা পর্যন্ত যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়, তা দুই বছর পড়লেই অর্জন হয়ে যায় না। এখানে সারা জীবনে আপনার যে অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, দক্ষতা অর্জিত হয়েছে তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে হয়। কমিউনিকেশন স্কিল (বাংলা, ইংরেজি), মানসিক দক্ষতা, উপস্থিত বুদ্ধি, সমস্যা সমাধানে কৌশলী হওয়া, ধৈর্য, পরিশ্রম, লেগে থাকার অভ্যাস, পুরো সময় প্রো-অ্যাকটিভ মনোভাব রাখা, সংযম, সময়ানুবর্তিতা, ইনটিগ্রিটি টাইপের যোগ্যতাই আপনাকে ক্যাডার হওয়ার জন্য উপযুক্ত করে তুলবে। এখন আপনি এখানে কোন পর্যায়ে রয়েছেন, কতটুকু গ্যাপ, গ্যাপ কাভার জন্য সময় ও সুযোগ আপনার আছে কি না, তা ভাবতে হবে। যদি মনে হয় আপনার টার্গেটেড সময়ে সেটা কাভার করা যৌক্তিকভাবে সম্ভব 
নয়, তবে আপনার এদিকে নাআসাই ভালো। 

সবাই চাকরি পাবেন না
বিসিএসে আসনসংখ্যা নির্দিষ্ট। কাজেই সবাই চাকরি পাবে না। শুধু যারা নিজেকে ক্যাডার হওয়ার জন্য যোগ্য করে তুলতে পারবে, তারাই হবে। কারণ, সফল হওয়ার জন্য আগে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হয়, তারপর সফলতা ধরা দেয়। যেমন সাকিব আল হাসান জাতীয় দলে খেলার জন্য আগে নিজেকে যোগ্য করেছেন, তারপরে জাতীয় দলে চান্স পেয়েছেন। বিষয়টা এমন নয়, তিনি আগে চান্স পেয়েছেন, তার পরে শিখেছেন। বিসিএস ছাড়াও দেশে আরও অনেক ভালো চাকরি রয়েছে।

প্রস্তুতি শুরুর সময়
অনেকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্নাতক তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষ থেকেই প্রস্তুতি শুরু করতে। আমি এটার ঘোর বিরোধী। আমার অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়, একাডেমিক লাইফের অভিজ্ঞতা, এনগেজমেন্ট, লিডারশিপ, সাংগঠনিক গুণাবলি, প্রেজেন্টেশন, টিমম্যানশিপসহ অন্যান্য এক্সট্রা কারিকুলার বিষয় আপনাকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস জোগাবে। ভালো সিজিপিএ অন্যদের থেকে আপনাকে এগিয়ে রাখবে। কারণ, ভালো সিজিপিএ আপনার ধৈর্য, পরিশ্রম, একাগ্রতা, জানার আগ্রহ, সিনসিয়ারিটির সাক্ষ্য বহন করে। আমার মনে হয়, অনার্স শেষ করার পর পুরোদমে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা উচিত। তবে এর মাঝে নিয়মিত পত্রিকা পড়া, ইংরেজি বলার চর্চা, পছন্দের যেকোনো বিষয়ে পড়ার অভ্যাস করা যেতে পারে। আর যাদের গণিতে দুর্বলতা আছে, তারা নিয়মিত ৩০ মিনিট করে চর্চা করতে পারেন। 

তাই বিসিএসকে টার্গেট করার আগে এই বিষয়গুলো বিবেচনা না করলে মাঝপথে আপনি খেই হারিয়ে ফেলতে পারেন, হতাশ হয়ে যেতে পারেন, যেটা আপনার বিসিএস ছাড়াও অন্য চাকরির ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ জন্য প্রস্তুতি শুরু করার আগে সচেতনভাবে 
প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। 

গ্রন্থনা: মো. আশিকুর রহমান

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত