ক্যারিয়ার পরামর্শ: বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্যাশ অফিসার পদে পরীক্ষার প্রস্তুতি

আনিসুল ইসলাম নাঈম
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩, ০৯: ৩২
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৩, ১১: ১৭

বিপুলসংখ্যক পদে দ্রুততম সময়ে নিয়োগ ও সহজ শর্তে ন্যূনতম আবেদন ফির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। এ জন্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছে ব্যাংকে চাকরি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরির সুযোগ হতে পারে ‘ক্যাশ অফিসার’ পদে নিয়োগ পাওয়ার মাধ্যমে। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যাশ বিভাগের কার্যাবলিতে রয়েছে বৈচিত্র্য। ২১ জুলাই ‘ক্যাশ অফিসার’ পদের প্রথম ধাপ প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই পদে পরীক্ষার প্রস্তুতি ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিয়ে আজকের আয়োজন।

তিন ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষা হয়ে থাকে। প্রথম ধাপে প্রিলিমিনারি বহুনির্বাচনী প্রশ্ন থাকে ১০০ নম্বরের। সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়াদের সুযোগ দেওয়া হয় দ্বিতীয় ধাপের ২০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায়। সব শেষে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মোট ২২৫ নম্বরে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া প্রার্থীদের সুপারিশ করা হয়। পূর্বে নম্বর বণ্টন ও সিলেবাস নিয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও বিগত পাঁচটি পরীক্ষায় নতুন সিলেবাস ও নম্বর বণ্টনে পরীক্ষা হচ্ছে।

ইংরেজি প্রস্তুতি
ইংরেজি অংশে ২৫টি প্রশ্নের সিংহভাগ আসে Synonyms, Antonyms, Meaning, One word Substitutions, Idioms and Phrases, Appropriate Preposition অংশ থেকে। স্মৃতিনির্ভর এই প্রশ্নগুলোতে ভালো করতে প্রয়োজন নিয়মিত অনুশীলন। প্রতিদিন ২০টি করে আত্মস্থ করার পর সপ্তাহান্তে ছয় দিনের পড়া রিভাইস দিলে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। অন্যদিকে Sentence correction, Fill in the blanks ও Pin point error অংশের জন্য প্রয়োজন ইংরেজি গ্রামারের বিভিন্ন নিয়ম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। এ ছাড়া Analogy ও Odd man Outসহ কিছু প্রশ্নের জন্য ইংরেজির পাশাপাশি মানসিক দক্ষতায় ভালো দখল থাকা জরুরি।

বাংলা প্রস্তুতি
বাংলা অংশে ২৫টি প্রশ্নের গড়ে ৮টি প্রশ্ন আসে সাহিত্য অংশ থেকে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের প্রস্তুতির জন্য বিগত প্রশ্ন সমাধানই যথেষ্ট হতে পারে। আধুনিক যুগে জোর দিতে হবে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনভিত্তিক সাহিত্য, পত্রিকা ও সাময়িকী, উপাধি ও ছদ্মনাম এবং বিভিন্ন কালজয়ী সাহিত্যকর্মের ওপর। এ ছাড়া বাংলা ব্যাকরণ অংশের ১৭ নম্বরের প্রস্তুতির জন্য মুনীর চৌধুরী রচিত বাংলা ব্যাকরণের বোর্ড বইটি ভালোভাবে শেষ করতে হবে। বাগধারা, প্রবাদ-প্রবচন, এক কথায় প্রকাশের জন্য বাজারের যেকোনো বই পড়া যেতে পারে।

এহসানুল হক মাহিনগণিত প্রস্তুতি
কোয়ান্টিটিভ বা সোজা বাংলায় গণিত থেকে নতুন পদ্ধতিতে পূর্বের তুলনায় নম্বর কমিয়ে ২০টি প্রশ্ন দেওয়া হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট কোনো বিভাগের এই অংশে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ একদমই কমে গেছে। প্রশ্ন ইংরেজি মাধ্যমে হওয়ার কারণে পরীক্ষার্থীরা বোর্ডের ইংরেজি ভার্সনের গণিত বইগুলো থেকে গণিতের ইংরেজি টার্মগুলো শিখে নিতে পারেন। যেহেতু প্রতি প্রশ্নে গড়ে ৩৬ সেকেন্ড সময় পাওয়া যায়, সেহেতু ম্যাথ দ্রুত করার দক্ষতা দিয়ে অন্যদের থেকে নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারেন। Number System, Average, Percentage, Interest, Profit Loss, Equation and Inequality, Set Theory, Mensuration ইত্যাদি অধ্যায় থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। আরও ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে চাইলে HCF & LCM, Permutation, Combination, Logarithm, Indices, Probability অধ্যায় দেখতে পারেন।

সাধারণ জ্ঞান প্রস্তুতি
সাধারণ জ্ঞান বরাবরই ব্যাংক পরীক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অংশের ২০টি প্রশ্নের বেশির ভাগ আসে সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, অর্জন, পদক পুরস্কার, রিপোর্ট সমীক্ষা, বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, চুক্তি ও পদক্ষেপ ইত্যাদি থেকে। পাশাপাশি ভৌগোলিক তথ্য, পরিবেশ, জাতীয় বিষয়াবলি, উচ্চতম, দীর্ঘতম, বৃহত্তম, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, বিখ্যাত চলচ্চিত্র, খেলাধুলা, বৈজ্ঞানিক পরিমাপক যন্ত্রাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। এই অংশের সাধারণ জ্ঞান অনেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মতো হয়ে থাকে। বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সাধারণ জ্ঞানের তুলনায় প্রশ্ন অনেকাংশেই ভিন্ন।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রস্তুতি
তথ্যপ্রযুক্তি অংশের ১০ নম্বরের জন্য মাইক্রোসফট অফিস, সংক্ষিপ্ত নামের পূর্ণরূপ, বাংলাদেশের ফিনটেক, পেমেন্ট সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, ভাইরাস ও সিকিউরিটি, ডেটাবেইস ম্যানেজমেন্ট এবং ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস, হার্ডওয়ার, সফটওয়ার, মাইক্রোসফট অফিস সম্পর্কে জানতে হবে। হাতে কলমে কম্পিউটার চালনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকলে বেশ ভালো নম্বর তোলা সম্ভব। 

গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ
প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ভালো করতে চাইলে নিচের কৌশলগুলো অনুশীলন করা যেতে পারে-

  • যেহেতু তিন-চতুর্থাংশ প্রশ্নই ইংরেজিতে হয়, তাই দ্রুত পঠন অভ্যাস না থাকলে স্বল্প সময়ে উত্তর করা অসম্ভব। দ্রুত পঠন অভ্যাসের জন্য ইংরেজি ছোট গল্প ও ইংরেজি পত্রিকা পড়া উচিত।
  • সিলেবাসের মোট ২০ শতাংশ অংশই আপনার ৮০ শতাংশ প্রশ্ন কমন ফেলার জন্য যথেষ্ট। সেই ২০ শতাংশ জায়গা যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি চিহ্নিত করতে পারবেন, চাকরির এই দৌড়ে আপনি ততক্ষণ পিছিয়ে থাকবেন। ভালো প্রস্তুতির জন্য প্রশ্ন অ্যানালাইসিস করে প্রথমে কী পড়ব, কতটুকু পড়ব, সেটা নির্দিষ্ট করে নেওয়া জরুরি।
  • সরাসরি মুখস্থ করলে তথ্যগুলো মস্তিষ্কে জায়গা যেমন নষ্ট হয়, তেমনি কর্পূরের মতো কদিন পর উড়ে যায়। তাই দীর্ঘ মেয়াদে প্রস্তুতির জন্য জোর করে মুখস্থ করার চেষ্টা না করে প্রচুর মৌলিক বই রিডিং পড়ার অভ্যাস থাকা উচিত।
  • প্রচুর পড়াশোনা করেও পরীক্ষার হলে আশানুরূপ ফল না পাওয়ার কারণ পর্যাপ্ত রিভাইস না করা। দুর্বলতার জায়গাগুলো নোট করে পরীক্ষার আগে রিভাইস করলে ভালো ফল আসে।
  • আপনাদের সবচেয়ে বড় ভুল পর্যাপ্ত অনুশীলন ও মডেল টেস্ট না দেওয়া। আপনার প্রস্তুতি ভালো নেওয়াটা শেষ কথা নয়। জব পেতে হলে একজন ভালো শিক্ষার্থীর তুলনায় ভালো পরীক্ষার্থী হওয়া খুব জরুরি।
  • যত বেশি মডেল টেস্ট দেবেন, তত বেশি আপনার ভুলত্রুটি কমিয়ে জব পরীক্ষায় ভালো আউটপুট দিতে পারবেন। ব্যাক ক্যালকুলেশন ও মেথড অব এলিমিনেশনের মতো কৌশল আত্মস্থ করলে প্রস্তুতির তুলনায় ভালো নম্বর ওঠানো সম্ভব।

এহসানুল হক মাহিন, সহকারী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক (সুপারিশপ্রাপ্ত) মেধাক্রম-১৩

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত