এম এম মুজাহিদ উদ্দীন
গালিব আফসারী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ
হয়েছেন। তাঁর চাকরি পাওয়ার গল্প শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যে নতুন একটা জগতে ঢুকে পড়েছিলাম, তার রেশ কাটতে আমার অনার্সের চারটা বছরই লেগে গেছে। এই চার বছরে চাকরির প্রস্তুতি তো দূরের কথা, একাডেমিক পড়াই সেভাবে পড়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরই শুরু হলো দেশের সাড়া জাগানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আন্দোলন। ছোট ছিলাম, আবেগ ছিল বেশি, নিজের অধিকারের প্রতি দাবিটাও জোর দিয়ে জানাচ্ছিলাম হল আন্দোলনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আন্দোলনে। বন্ধুসভা, আড্ডা, ঘোরাঘুরি করতে করতে কীভাবে চারটা বছর চলে গেল বুঝতেই পারিনি।
৪১তম বিসিএসের সার্কুলার হয় আমার অনার্সের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর। বন্ধু শিপন, সজীব ও আমি অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে আবেদন করে বিসিএস পরীক্ষায় বসি। তখনো বিসিএস নিয়ে অতটা ভাবতাম না, প্রস্তুতির তো প্রশ্নই আসে না। এরপর অনার্সের পরীক্ষা শেষ হলো। আর শুরু হলো কোভিড-১৯, ঢাকার মেস ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেলাম। পরিবারের সঙ্গে প্রথম কয়েক মাস ভালোই কাটল। খাওয়াদাওয়া, ঘুরে বেড়ানো, ‘নো টেনশন’ অবস্থা। কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে বোধোদয় হলো। আমার বাবা গরিব কৃষক, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করেন। ছোটবেলা থেকে তাঁকে দেখে আসছি, আমার সুখের জন্য ক্লান্তিহীন খেটে চলেছেন। এত বড় হয়ে গেছি, অথচ বাবার দুঃখের ভার একটুও কমাতে পারিনি, কোনো ভাবনাও নেই যেন আমার। নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছিল।
ভাবলাম, অনার্স তো শেষ, এবার কিছু তো করতে হয়। করোনার জন্য সব সার্কুলার, নিয়োগ বন্ধ, ভার্সিটি বন্ধ। তাহলে বাড়িতে বসে না থেকে চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকি। ৪১তম বিসিএসে আবেদন করা আছে, যেকোনো সময় পরীক্ষা হয়ে যেতে পারে ভেবে কোমর বেঁধে নেমে পড়লাম। রাত-দিন পড়তে শুরু করলাম। তখন আমার জগৎজুড়ে শুধু বিসিএসের পড়া। গণিতে দুর্বল ছিলাম, তাই প্রতিদিন গণিতের জন্য প্রায় তিন ঘণ্টা বরাদ্দ করলাম, ইংরেজির জন্য আরও দুই ঘণ্টা। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য আলাদা নোট খাতায় গুরুত্বপূর্ণ ও যে বিষয়গুলো কম মনে থাকছে, সেগুলো নোট করে পড়ছিলাম। পরীক্ষার আগের ওই কয়েক মাস বাড়িতেই প্রস্তুতি নিতে থাকলাম।রোনার কারণে বাইরে যাওয়া লাগত না, তাই দিন-রাত শুধু পড়তাম। এরপর করোনার মধ্যেই হুট করে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি হয়ে গেল। পাসও করে গেলাম। এবার লিখিত পরীক্ষার ১১০০ নম্বরের বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার পালা। সময় পেলাম খুব কম। মাত্র চার মাসের মতো। এই অল্প সময়েই সব ছেড়ে শুধু প্রস্তুতিতে সময় দিতে থাকি। লিখিতের সময় স্নাতকোত্তরের পরীক্ষারও তারিখ হয়। আমি স্নাতকোত্তর করলাম না। এই সময় স্নাতকোত্তর করলে লিখিততে নম্বর কম পেতে পারি ভেবে এ পরীক্ষা বাদ দিলাম। সে জন্য অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে, কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। স্নাতকোত্তর পরেও করতে পারব, কিন্তু এই সুযোগ আবার পাব কি না, কে জানে—এমন ভাবনাই ভেবেছিলাম।
লিখিত পরীক্ষা দিলাম ভালোভাবেই। পাস করে গেলাম বোথ ক্যাডারে। এবার ভাইভার পালা। ভাইভার জন্য কী পড়ব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই শুরুতে ‘ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি’ বইটার শরণাপন্ন হলাম। বইটি আমায় খুব সাহায্য করেছে। ভাইভার জন্য সময় পেলাম চার মাসের মতো। ইংরেজি স্পিকিংয়ে দুর্বল আমি, এই সময়ে কিছুটা ঝালিয়ে নিলাম। ভাইভা দিলাম অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক স্যারের বোর্ডে। ভাইভাও ভালো হলো। আশা করছিলাম ভালো কিছুর জন্যই।
চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দিন ফল প্রকাশের তালিকায় নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা খুঁজে পেয়ে যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম, তা কোনো ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। প্রথম খবরটা আব্বাকে ফোন করে জানালাম, খবর শুনে তিনি খুশিতে যে কান্না করছিলেন, তা আমি ফোনের এ প্রান্তে থেকেও বুঝছিলাম। বলতে ইচ্ছা করছিল— ‘আব্বা, তোমার আর মাঠে কাজ করতে হবে না, তোমার ছেলে চাকরি পেয়েছে। বিসিএস ক্যাডার হয়েছে, তোমার কষ্টের দিন শেষ।’ কিন্তু আব্বার খুশিতে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম, কিছুই বলতে পারিনি।
গালিব আফসারী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। ৪১তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ
হয়েছেন। তাঁর চাকরি পাওয়ার গল্প শুনেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দীন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যে নতুন একটা জগতে ঢুকে পড়েছিলাম, তার রেশ কাটতে আমার অনার্সের চারটা বছরই লেগে গেছে। এই চার বছরে চাকরির প্রস্তুতি তো দূরের কথা, একাডেমিক পড়াই সেভাবে পড়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরই শুরু হলো দেশের সাড়া জাগানো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আন্দোলন। ছোট ছিলাম, আবেগ ছিল বেশি, নিজের অধিকারের প্রতি দাবিটাও জোর দিয়ে জানাচ্ছিলাম হল আন্দোলনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য আন্দোলনে। বন্ধুসভা, আড্ডা, ঘোরাঘুরি করতে করতে কীভাবে চারটা বছর চলে গেল বুঝতেই পারিনি।
৪১তম বিসিএসের সার্কুলার হয় আমার অনার্সের শেষ সেমিস্টারের পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর। বন্ধু শিপন, সজীব ও আমি অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে আবেদন করে বিসিএস পরীক্ষায় বসি। তখনো বিসিএস নিয়ে অতটা ভাবতাম না, প্রস্তুতির তো প্রশ্নই আসে না। এরপর অনার্সের পরীক্ষা শেষ হলো। আর শুরু হলো কোভিড-১৯, ঢাকার মেস ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেলাম। পরিবারের সঙ্গে প্রথম কয়েক মাস ভালোই কাটল। খাওয়াদাওয়া, ঘুরে বেড়ানো, ‘নো টেনশন’ অবস্থা। কিন্তু একটা সময়ে গিয়ে বোধোদয় হলো। আমার বাবা গরিব কৃষক, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে কাজ করেন। ছোটবেলা থেকে তাঁকে দেখে আসছি, আমার সুখের জন্য ক্লান্তিহীন খেটে চলেছেন। এত বড় হয়ে গেছি, অথচ বাবার দুঃখের ভার একটুও কমাতে পারিনি, কোনো ভাবনাও নেই যেন আমার। নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছিল।
ভাবলাম, অনার্স তো শেষ, এবার কিছু তো করতে হয়। করোনার জন্য সব সার্কুলার, নিয়োগ বন্ধ, ভার্সিটি বন্ধ। তাহলে বাড়িতে বসে না থেকে চাকরির প্রস্তুতি নিতে থাকি। ৪১তম বিসিএসে আবেদন করা আছে, যেকোনো সময় পরীক্ষা হয়ে যেতে পারে ভেবে কোমর বেঁধে নেমে পড়লাম। রাত-দিন পড়তে শুরু করলাম। তখন আমার জগৎজুড়ে শুধু বিসিএসের পড়া। গণিতে দুর্বল ছিলাম, তাই প্রতিদিন গণিতের জন্য প্রায় তিন ঘণ্টা বরাদ্দ করলাম, ইংরেজির জন্য আরও দুই ঘণ্টা। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য আলাদা নোট খাতায় গুরুত্বপূর্ণ ও যে বিষয়গুলো কম মনে থাকছে, সেগুলো নোট করে পড়ছিলাম। পরীক্ষার আগের ওই কয়েক মাস বাড়িতেই প্রস্তুতি নিতে থাকলাম।রোনার কারণে বাইরে যাওয়া লাগত না, তাই দিন-রাত শুধু পড়তাম। এরপর করোনার মধ্যেই হুট করে ৪১তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি হয়ে গেল। পাসও করে গেলাম। এবার লিখিত পরীক্ষার ১১০০ নম্বরের বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার পালা। সময় পেলাম খুব কম। মাত্র চার মাসের মতো। এই অল্প সময়েই সব ছেড়ে শুধু প্রস্তুতিতে সময় দিতে থাকি। লিখিতের সময় স্নাতকোত্তরের পরীক্ষারও তারিখ হয়। আমি স্নাতকোত্তর করলাম না। এই সময় স্নাতকোত্তর করলে লিখিততে নম্বর কম পেতে পারি ভেবে এ পরীক্ষা বাদ দিলাম। সে জন্য অনেকের অনেক কথা শুনতে হয়েছে, কিন্তু আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম। স্নাতকোত্তর পরেও করতে পারব, কিন্তু এই সুযোগ আবার পাব কি না, কে জানে—এমন ভাবনাই ভেবেছিলাম।
লিখিত পরীক্ষা দিলাম ভালোভাবেই। পাস করে গেলাম বোথ ক্যাডারে। এবার ভাইভার পালা। ভাইভার জন্য কী পড়ব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তাই শুরুতে ‘ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি’ বইটার শরণাপন্ন হলাম। বইটি আমায় খুব সাহায্য করেছে। ভাইভার জন্য সময় পেলাম চার মাসের মতো। ইংরেজি স্পিকিংয়ে দুর্বল আমি, এই সময়ে কিছুটা ঝালিয়ে নিলাম। ভাইভা দিলাম অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক স্যারের বোর্ডে। ভাইভাও ভালো হলো। আশা করছিলাম ভালো কিছুর জন্যই।
চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দিন ফল প্রকাশের তালিকায় নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটা খুঁজে পেয়ে যে কী পরিমাণ খুশি হয়েছিলাম, তা কোনো ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়। প্রথম খবরটা আব্বাকে ফোন করে জানালাম, খবর শুনে তিনি খুশিতে যে কান্না করছিলেন, তা আমি ফোনের এ প্রান্তে থেকেও বুঝছিলাম। বলতে ইচ্ছা করছিল— ‘আব্বা, তোমার আর মাঠে কাজ করতে হবে না, তোমার ছেলে চাকরি পেয়েছে। বিসিএস ক্যাডার হয়েছে, তোমার কষ্টের দিন শেষ।’ কিন্তু আব্বার খুশিতে আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম, কিছুই বলতে পারিনি।
মৎস্য অধিদপ্তরের ৮টি পদে ৫৮০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা সময়সূচি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে এ পরীক্ষা শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (প্রশাসন) এস এম রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ ধরনের শূন্য পদে ৬০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) থেকে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
৩ ঘণ্টা আগেমাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ৮৬টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। হিসাবরক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ তারিখ: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
২ দিন আগেসাভারে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। হাসপাতালটিতে ইমারজেন্সি অ্যান্ড ক্যাজুয়ালটি সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ৯ ধরনের পদে মোট ১৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
২ দিন আগে