কে এম মাহমুদুল হক
জীবন সফল নাকি ব্যর্থ—এই হিসাব করাটাই আমার কাছে এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয় মনে হয়। কতগুলো প্রশ্ন এসে সামনে দাঁড়ায়। এই যেমন ধরুন জীবন সফল নাকি ব্যর্থ, এই হিসাব কেন করতে হবে? জীবনের লক্ষ্য অর্জন করাই কি সফলতা? এ রকম প্রশ্নের সারি হয়তো দীর্ঘতর হবে, সব প্রশ্নের উত্তর আপেক্ষিক বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে, কিংবা নিজের ইচ্ছামতো সংজ্ঞায়ন করে কাটাকুটি করা যেতে পারে। এত কিছুর পরও সমাজে নিজের ইচ্ছাই হোক আর পরের ইচ্ছাই হোক সফলতা-ব্যর্থতার অস্তিত্ব থেকেই যায়। নানা মাত্রিক ক্যাটাগরিতে, ক্রাইটেরিয়ায় সফলতার কথা আমরা শুনতে
পাই। যার যত নেটওয়ার্ক আছে, সে তত বেশি সফল; যার যত পাবলিকেশন আছে, সে তত বেশি সফল—এমন অনেক কথা আমরা হামেশাই শুনি।
যুক্তির মিশেলেই আমাদের জীবন
যেকোনো বিষয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। জ্ঞানকাণ্ডের একেবারে আদি থেকে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেই বিতর্ক চলমান। একদিকে প্লেটো, অন্যদিকে অ্যারিস্টটল। একদিকে অভিজ্ঞতাবাদ, অন্যদিকে যুক্তিবাদ। একদিকে ছুঁয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছা, অন্যদিকে ঐশ্বরিক ভালোবাসা বা ১৪ তলার ওপরে যে ফুলের বাগান, সেই ফুলের বাগানে বন্ধুর সঙ্গে ভাবের লেনাদেনা। কখনো কখনো এরা একে অপরের বাইনারি। তবে এক, অভিন্ন, বাইনারি, বিপরীত, পরিপূরক—যেভাবেই বলি না কেন, আমার কাছে মনে হয় কেবলই দুটি বহমান ধারা—শত বিতর্কের পরেও যাদের অস্তিত্ব রয়ে গেছে। ঠিক এই জায়গায় এসে আমি আমার লেখা একটি কবিতার সারাংশ এভাবে তুলে ধরতে চাই, ‘বীজগাণিতিক ধারায় এক্স-এর মান নির্ণয়ের জন্য আমরা যেমন ‘ধরি’ কিংবা ‘মনে করি’র মতো ভাবের লেনদেন দিয়ে শুরু করি, তখনই বুঝতে পারি, এই ভাব-যুক্তির মিশেলেই আমাদের জীবন।
কিছুটা বিষফল, কিছুটা নিষ্ফল
উচ্চশিক্ষার প্রসারে জেলায় জেলায় উঁচু উঁচু বিল্ডিং তৈরি করে তার কার্নিশে ছোট ছোট ঘাস লাগিয়ে যদি ভাবি অক্সিজেনের স্বল্পতা দূর হবে, সফল মানুষের কারখানা তৈরি হবে, তবে আমি বলব এগুলো বিষফল, এগুলো নিষ্ফল। হার্ভার্ড থেকে পড়ে এসে আপনি যদি বউ পেটান, দেওবন্দ থেকে পড়ে এসে যদি বোনের সম্পত্তি দখল করেন, কিংবা তালাক আর পরিবারপ্রথা ভেঙে দেওয়ার মাঝেই একমাত্র নারীমুক্তি চিন্তা করেন, তবে আমি বলব, এগুলো বিষফল, পৃথিবীর জন্য নিষ্ফল।
আমরা যা চাই, তা পাই না
আমার তো মনে হয় যে ক্লাসে আমি ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনা লিখেছি, ঠিক সেই মুহূর্তেই সফল হওয়ার পথে আমি বিচ্যুত হয়েছি। সেই মুহূর্ত থেকেই আমরা পুঁজিবাদী চিন্তা লালন করতে থাকি; চাকরির বাজার চিন্তা করি; কী হলে অনেক ‘টাকা ইনকাম’ করা যাবে—এসব চিন্তা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করি। এ ছাড়া খেয়াল করবেন, আমরা যারা ছোটবেলায় ‘এইম ইন লাইফ’ রচনা লিখেছি, কেউ আসলে সে অর্থে বড় হয়ে পুরোদস্তুর তা হয়ে উঠতে পারিনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা লিখেছি একটা, হয়েছি আরেকটা। এমনকি শুধু রচনা লেখাতেই সীমাবদ্ধ নয়, আমরা আদতেই যা হতে চেয়েছি, শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠতে পারিনি।
শেষ বলতে কিছু নেই
লক্ষ্য নির্ধারণ আসলে কতটুকু সফল মানুষ তৈরি করবে? এমনকি আমি এটাও বলি, মনে করি আমার জীবনের লক্ষ্য দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া। রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয় এবং আমি সেই ধাপগুলো ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করলাম এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে সর্বশেষ যে ধাপ রাষ্ট্রপতি, সেটি হয়ে গেলাম। এটি যদি একটি মই বা সিঁড়ি হয় তাহলে সর্বশেষ যে ধাপটি রয়েছে, আমি সেটিতে আসীন হলাম। প্রশ্ন হলো, যেদিন থেকে আমি সর্বশেষ ধাপে আসীন হলাম তার পরদিন থেকে আমার জীবনের আর কোনো লক্ষ্য নেই। কারণ আমি তো আমার লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছি। আমার জীবন কি এখানেই শেষ? এর পরের দিন থেকে আমি আসলে কী করব? ধরে নিলাম একটা নির্দিষ্ট বছর রাষ্ট্রপতি থাকলাম। তারপর কী হবে? আমার জীবন কী থেমে যাবে?
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
জীবন সফল নাকি ব্যর্থ—এই হিসাব করাটাই আমার কাছে এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয় মনে হয়। কতগুলো প্রশ্ন এসে সামনে দাঁড়ায়। এই যেমন ধরুন জীবন সফল নাকি ব্যর্থ, এই হিসাব কেন করতে হবে? জীবনের লক্ষ্য অর্জন করাই কি সফলতা? এ রকম প্রশ্নের সারি হয়তো দীর্ঘতর হবে, সব প্রশ্নের উত্তর আপেক্ষিক বলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে, কিংবা নিজের ইচ্ছামতো সংজ্ঞায়ন করে কাটাকুটি করা যেতে পারে। এত কিছুর পরও সমাজে নিজের ইচ্ছাই হোক আর পরের ইচ্ছাই হোক সফলতা-ব্যর্থতার অস্তিত্ব থেকেই যায়। নানা মাত্রিক ক্যাটাগরিতে, ক্রাইটেরিয়ায় সফলতার কথা আমরা শুনতে
পাই। যার যত নেটওয়ার্ক আছে, সে তত বেশি সফল; যার যত পাবলিকেশন আছে, সে তত বেশি সফল—এমন অনেক কথা আমরা হামেশাই শুনি।
যুক্তির মিশেলেই আমাদের জীবন
যেকোনো বিষয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। জ্ঞানকাণ্ডের একেবারে আদি থেকে যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে, সেই বিতর্ক চলমান। একদিকে প্লেটো, অন্যদিকে অ্যারিস্টটল। একদিকে অভিজ্ঞতাবাদ, অন্যদিকে যুক্তিবাদ। একদিকে ছুঁয়ে দেখার প্রবল ইচ্ছা, অন্যদিকে ঐশ্বরিক ভালোবাসা বা ১৪ তলার ওপরে যে ফুলের বাগান, সেই ফুলের বাগানে বন্ধুর সঙ্গে ভাবের লেনাদেনা। কখনো কখনো এরা একে অপরের বাইনারি। তবে এক, অভিন্ন, বাইনারি, বিপরীত, পরিপূরক—যেভাবেই বলি না কেন, আমার কাছে মনে হয় কেবলই দুটি বহমান ধারা—শত বিতর্কের পরেও যাদের অস্তিত্ব রয়ে গেছে। ঠিক এই জায়গায় এসে আমি আমার লেখা একটি কবিতার সারাংশ এভাবে তুলে ধরতে চাই, ‘বীজগাণিতিক ধারায় এক্স-এর মান নির্ণয়ের জন্য আমরা যেমন ‘ধরি’ কিংবা ‘মনে করি’র মতো ভাবের লেনদেন দিয়ে শুরু করি, তখনই বুঝতে পারি, এই ভাব-যুক্তির মিশেলেই আমাদের জীবন।
কিছুটা বিষফল, কিছুটা নিষ্ফল
উচ্চশিক্ষার প্রসারে জেলায় জেলায় উঁচু উঁচু বিল্ডিং তৈরি করে তার কার্নিশে ছোট ছোট ঘাস লাগিয়ে যদি ভাবি অক্সিজেনের স্বল্পতা দূর হবে, সফল মানুষের কারখানা তৈরি হবে, তবে আমি বলব এগুলো বিষফল, এগুলো নিষ্ফল। হার্ভার্ড থেকে পড়ে এসে আপনি যদি বউ পেটান, দেওবন্দ থেকে পড়ে এসে যদি বোনের সম্পত্তি দখল করেন, কিংবা তালাক আর পরিবারপ্রথা ভেঙে দেওয়ার মাঝেই একমাত্র নারীমুক্তি চিন্তা করেন, তবে আমি বলব, এগুলো বিষফল, পৃথিবীর জন্য নিষ্ফল।
আমরা যা চাই, তা পাই না
আমার তো মনে হয় যে ক্লাসে আমি ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনা লিখেছি, ঠিক সেই মুহূর্তেই সফল হওয়ার পথে আমি বিচ্যুত হয়েছি। সেই মুহূর্ত থেকেই আমরা পুঁজিবাদী চিন্তা লালন করতে থাকি; চাকরির বাজার চিন্তা করি; কী হলে অনেক ‘টাকা ইনকাম’ করা যাবে—এসব চিন্তা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করি। এ ছাড়া খেয়াল করবেন, আমরা যারা ছোটবেলায় ‘এইম ইন লাইফ’ রচনা লিখেছি, কেউ আসলে সে অর্থে বড় হয়ে পুরোদস্তুর তা হয়ে উঠতে পারিনি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা লিখেছি একটা, হয়েছি আরেকটা। এমনকি শুধু রচনা লেখাতেই সীমাবদ্ধ নয়, আমরা আদতেই যা হতে চেয়েছি, শেষ পর্যন্ত তা হয়ে উঠতে পারিনি।
শেষ বলতে কিছু নেই
লক্ষ্য নির্ধারণ আসলে কতটুকু সফল মানুষ তৈরি করবে? এমনকি আমি এটাও বলি, মনে করি আমার জীবনের লক্ষ্য দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়া। রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য কতগুলো ধাপ অতিক্রম করতে হয় এবং আমি সেই ধাপগুলো ক্রমান্বয়ে অতিক্রম করলাম এবং শেষ পর্যন্ত গিয়ে সর্বশেষ যে ধাপ রাষ্ট্রপতি, সেটি হয়ে গেলাম। এটি যদি একটি মই বা সিঁড়ি হয় তাহলে সর্বশেষ যে ধাপটি রয়েছে, আমি সেটিতে আসীন হলাম। প্রশ্ন হলো, যেদিন থেকে আমি সর্বশেষ ধাপে আসীন হলাম তার পরদিন থেকে আমার জীবনের আর কোনো লক্ষ্য নেই। কারণ আমি তো আমার লক্ষ্য অর্জন করে ফেলেছি। আমার জীবন কি এখানেই শেষ? এর পরের দিন থেকে আমি আসলে কী করব? ধরে নিলাম একটা নির্দিষ্ট বছর রাষ্ট্রপতি থাকলাম। তারপর কী হবে? আমার জীবন কী থেমে যাবে?
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডে (ডেসকো) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শূন্য পদে জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। আগ্রহী প্রার্থীরা প্রতিষ্ঠানটির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।
১৩ ঘণ্টা আগেমৎস্য অধিদপ্তরের ৮টি পদে ৫৮০ জন প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা সময়সূচি প্রকাশিত হয়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর থেকে এ পরীক্ষা শুরু হবে। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক (প্রশাসন) এস এম রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ১৫ ধরনের শূন্য পদে ৬০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে। গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) থেকে আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেমাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ৮৬টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি। হিসাবরক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারীসহ বিভিন্ন পদে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের শেষ তারিখ: ৫ ডিসেম্বর ২০২৪।
২ দিন আগে