পরামর্শ: যোগাযোগ-দক্ষতা বাড়াবেন যেভাবে

এম এম  মুজাহিদ উদ্দীন
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮: ৪৯
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫: ৩৮

বর্তমান সময়ে সফল হতে যেসব দক্ষতা সবচেয়ে বেশি জরুরি, তার অন্যতম হলো যোগাযোগে দক্ষতা। এ দক্ষতা ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে ছাত্রজীবন অথবা পেশাজীবন—সর্বত্রই অপরিহার্য। তাই ছাত্রজীবন থেকেই এ দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। যোগাযোগ-দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল নিয়ে লিখেছেন এম এম  মুজাহিদ উদ্দীন

যোগাযোগে দক্ষতা বাড়াতে হলে মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। সেমিনার, ওয়ার্কশপ, সিম্পোজিয়ামসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগাযোগেরও একটা সুযোগ থাকে। সেসব সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। মানুষের আচার-আচরণ, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। স্মার্ট ও রুচিশীল লোকদের অনুসরণ করতে পারেন। কীভাবে তারা হাসিমুখে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি কেমন হয় প্রভৃতি সম্পর্কে আপনার ভালো একটা ধারণা হবে। শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ভালো হওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা মানুষের সঙ্গে অনেক মেশেন, তারা সাধারণত যোগাযোগ-দক্ষতায় ভালো হয়। বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে কীভাবে যোগাযোগ করতে হয়, সে সম্পর্কে তাদের মনে স্পষ্ট একটা ধারণা গড়ে ওঠে। যারা মানুষের সঙ্গে মেশেন না, সাধারণত তাদের যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস কম থাকে। তাই আপনার উচিত, কথা বলার সময় আত্মবিশ্বাসী হওয়া। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বললে মানুষ শুনতে আগ্রহী হয় এবং কথা বিশ্বাস করে। 

জানতে হবে যোগাযোগের ভাষা
যোগাযোগে দক্ষ হতে হলে আপনাকে এর ভাষা জানতে হবে। যোগাযোগের বিভিন্ন ধরন আছে। একটা বাচনিক যোগাযোগ। যেটা কথা বলার মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। অন্যটা হলো অবাচনিক। অর্থাৎ আপনার শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ও ইশারার মাধ্যমে যে যোগাযোগ হয়। আপনাকে যোগাযোগে দক্ষ হতে হলে উভয় ধরনই শিখতে হবে। তা ছাড়া আপনাকে বিভিন্ন সময় লেখার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে অল্প কথায় গুছিয়ে সুন্দর করে লিখতে জানতে হবে। ফরমাল জায়গায় কীভাবে ই-মেইল পাঠাতে হয়, তা আপনি না জানলে আপনি যে উদ্দেশ্যে ই-মেইল পাঠিয়েছেন, সেটা পূরণ হবে না। বিভিন্ন রকম ভাষা শিখতে হবে। আপনি যদি ভিনদেশি ভাষাভাষী কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান, তাহলে আপনাকে সে দেশের ভাষা অথবা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজি জানতে হবে। তবেই আপনি ভিনদেশি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হবেন। এ জন্য যোগাযোগে দক্ষ হওয়ার জন্য সুন্দর করে কথা বলা, চমৎকার লেখা ও বলা এবং বিভিন্ন রকম ভাষা শেখাটা গুরুত্বপূর্ণ।

শিখতে হলে পড়তে হবে
কোনো কিছু শেখার জন্য বেশ ভালো একটি মাধ্যম হলো পড়া। জানতে হলে, শিখতে হলে পড়তে হবে। পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। যারা অনেক পড়াশোনা করেন, তাদের জ্ঞান বেশি হয়। তারা অনেক কিছু সম্পর্কে খোঁজখবর রাখেন। ফলে যোগাযোগ করার সময় তারা আত্মবিশ্বাস পান। কোনো বিষয়ে জানার ঘাটতি থাকলে সে বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া যায় না, ফলে সেখানে যোগাযোগ ব্যাহত হয়। আপনি যদি নিয়মিত পত্রিকার খেলাধুলার পাতা পড়েন, তাহলে আপনি খেলাধুলা সম্পর্কিত বিভিন্ন আড্ডা বা আলোচনায় স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিতে পারেন। আপনি যদি রাজনীতি সম্পর্কে পড়াশোনা ও জানাশোনা রাখেন, তাহলে আপনি রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা, টক শোতে অংশ নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। কেননা, আপনি জানেন। যোগাযোগে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে। যোগাযোগে দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে অনেক বই আছে। সেগুলোও পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া একাডেমিক, নন-একাডেমিক বই, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, পত্রিকা, সাময়িকীসহ নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। ইউটিউব থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার, বক্তৃতা প্রভৃতি দেখে সেটা অনুসরণ করেও আপনি যোগাযোগে দক্ষ হতে পারেন।

শুনতে হবে অন্যের কথা
অনেকেই আছেন, শুধু একনাগাড়ে কথা বলে যান। অন্যজনের কথা শোনেন না খেয়াল করে। কিংবা অন্যজনকে কথা বলতে দেন না। নিজেই সব বলেন। আপনি যদি এমনটা করেন, তাহলে কার্যকরী যোগাযোগ হবে না। বরং অপরপক্ষের মানুষ বিরক্ত হবে। তাই ভালো বক্তা হতে হলে আপনাকে প্রথমে একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে। অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। স্মার্ট মানুষেরা বলেন কম, শোনেন বেশি। এমন হতে পারে, অপরপক্ষ যা বলতে চাচ্ছে, তা মুখে না-ও বলতে পারে। অবাচনিক যোগাযোগ তথা আপনি তাদের কণ্ঠ, অভিব্যক্তি এবং শারীরিক ভাষা থেকে ধারণা পেতে পারেন। অনেক সময় চোখ-মুখ দেখেও বোঝা যায় যে আসলে তিনি কী বলতে বা বোঝাতে চাচ্ছেন। কথায় আছে, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’। তাই কারও সঙ্গে কথা বলার সময় তার চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। এতে তিনি বুঝতে পারবেন, আপনি তাঁর কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনছেন। ফলে তিনিও আপনার সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী হবেন। তাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। তবেই কার্যকরী যোগাযোগ হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত