অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
বাবা মানে আশ্রয়, বাবা মানে প্রশ্রয়
বাবা মানে বিশাল বটগাছ
অস্থির দ্রোহকালের এক টুকরো ছাদ…
এ বছর আন্তর্জাতিক বাবা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘বাবারা একই সঙ্গে পরিবার ও পৃথিবীকে বদলে দেয়’। একটি পরিবারকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে একজন বাবার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই ভূমিকা আর্থিক সচ্ছলতা, নিরাপত্তা, সন্তানের ভবিষ্যৎ, স্থায়ী নিবাস– সবকিছুকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। ফলে বাবাদের মানসিক চাপ একটু বেশি থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে স্থায়ীভাবে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া বিরূপ পরিবেশ ও দিনের পর দিন একই পরিস্থিতির মধ্য় দিয়ে যাওয়া, খাওয়াদাওয়া ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে সঠিকভাবে নজর না দেওয়া—এসব কারণে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়াসহ আরও নানা অনিরাময়যোগ্য় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলা বাহুল্য, এখন ষাটোর্ধ্ব প্রায় সব বাবাই এসব রোগে আক্রান্ত।
বয়স যখন উল্টোপথে হাঁটে
সন্তানদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে, দিন যত যাবে, সম্পর্কে ভূমিকার রূপান্তর তত দ্রুত হবে। আমি বাবার ভূমিকায় এবং বাবা আমার ছোটবেলার ভূমিকায় পৌঁছে যাবেন। কিছু কিছু সময় বাবারা অপত্যস্নেহের বশবর্তী হয়ে মনে করেন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কিছু বোঝে না। এ রকম সময় বাবাকে বোঝানোর থেকে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নেওয়া জরুরি। সেটা উভয়ের সম্পর্কের জন্য ভালো। সন্তান নায়ক হয়ে বাবাকে বেশি বুদ্ধি দিচ্ছে, এই ভাবনার কালো মেঘ সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে না। বাবাকে কোনো কিছু করার জন্য জোর করার আগে মনে রাখতে হবে, এই মানুষটি দোর্দণ্ড প্রতাপে সংসার চালিয়েছেন আপনার জন্মের আগে থেকে। কাজেই ‘তুমি এখন কিছু বোঝো না’ কথাগুলো সন্তানের কাছ থেকে শোনা তাঁর জন্য অপমানজনক।
মনে রাখতে হবে, ৫০, ৬০, ৭০, ৮০ বছর তিনি পার করেছেন। কাজেই এখন চাপ দেবেন না। তিনি হয়তো কষ্ট পেলেও বলবেন না। কারণ বার্ধক্য মানুষকে অসহায় করে তোলে। বাবা কী বলেন, সেটা মন দিয়ে শুনুন। সেটা ১০ মিনিট হতে পারে। বিরক্ত হবেন না। তিনি নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন কি না এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন কি না, এই খেয়াল রাখাটা খুব জরুরি। কারণ অসুস্থ হলে আপনাকেই টানতে হবে। আপনার বাবা কোন কোন জায়গায় তাঁর আচরণ বদলাবেন না, সেটা আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না। সেই জায়গাগুলো গ্রহণ করুন। বিতর্কে জড়াবেন না।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, চিন্তা, মনোযোগ ও ভাষা প্রকাশে সমস্যা হওয়া, ব্যক্তিত্ব ও মেজাজের পরিবর্তন ঘটা ইত্যাদি একটা বয়সের পর কমবেশি সব
বাবারই হয়। এই পরিবর্তনগুলো সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে কী করে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ এই সদস্যদের মানসিক চাপ কমানো যায়, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
সম্পর্কে তারল্য থাক
বার্ধক্যে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। বাবা অনেক কিছু ভুল করতে পারেন। ভুলেও যেতে পারেন। বারবার একই কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন। তাঁর সঙ্গে কঠিন আচরণ করার আগে মনে রাখবেন, আপনারও সামনে বার্ধক্য অপেক্ষা করছে। আপনি আপনার বাবার সঙ্গে যেমন ব্যবহার করছেন, আপনার অজান্তে আপনার সন্তান সেটাই শিখছে। আপনি আজকে যে ব্যবহার সন্তান হিসেবে আপনার বাবার সঙ্গে করছেন, ভবিষ্যতে নিজেই সেটা নিজ সন্তানের কাছ থেকে ফেরত পাবেন। এক দিনে অনেক দামি কিছু দেওয়ার থেকে প্রতিদিন বাবার ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই যত্নগুলো বাবাদের মনকে তৃপ্ত করে।
চাহিদা বুঝতে হবে
বাবার চাহিদাটা শারীরিক নাকি মানসিক নাকি সামাজিক নাকি আধ্যাত্মিক, সেটা চিহ্নিত করুন প্রথমে। এবার সেটা কীভাবে মেটানো যায়, আশপাশে সে উপায় আছে কি নেই, সেটা খেয়াল করা জরুরি। প্রয়োজনে অন্য কারও সহায়তা নিন। কারণ আপনি নিজেও ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন। বাবার যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয়, সেই সমস্যার সমাধানে বাবাকেও যুক্ত করুন।
বাবা পারবেন না বলে তাঁকে আলাদা করে ফেলবেন না। তাহলে তিনি নিজেকে প্রয়োজনীয় মনে করবেন। আমাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এই করোনা-পরবর্তী সময়ে থাকবে। কাজেই সে বিষয় বাবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় আসতেই পারেন সমস্যা সমাধানের সূত্র খুঁজতে।
বাবাদের রাখুন নিজের সন্তানের সঙ্গে
বাবাকে আপনার সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করবেন না। দুই প্রজন্মের মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক তৈরি করায় কোনো ভুল করবেন না। আপনি আপনার বাবার সঙ্গে কেমন আচরণ করেন তার ওপর নির্ভর করবে আপনার সন্তান তার দাদা বা নানার সঙ্গে কেমন আচরণ করবে। মনে রাখা জরুরি, এই মানুষটি ছিলেন বলেই আজকে আপনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত। সেই মানুষগুলো সৌভাগ্যবান, যাঁদের বাবা এখনো বেঁচে আছেন।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
বাবা মানে আশ্রয়, বাবা মানে প্রশ্রয়
বাবা মানে বিশাল বটগাছ
অস্থির দ্রোহকালের এক টুকরো ছাদ…
এ বছর আন্তর্জাতিক বাবা দিবসের প্রতিপাদ্য হলো, ‘বাবারা একই সঙ্গে পরিবার ও পৃথিবীকে বদলে দেয়’। একটি পরিবারকে ধরে রাখার ক্ষেত্রে একজন বাবার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এই ভূমিকা আর্থিক সচ্ছলতা, নিরাপত্তা, সন্তানের ভবিষ্যৎ, স্থায়ী নিবাস– সবকিছুকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। ফলে বাবাদের মানসিক চাপ একটু বেশি থাকে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে স্থায়ীভাবে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। অতিরিক্ত রাগ, উত্তেজনা, ভীতি এবং মানসিক চাপের কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া বিরূপ পরিবেশ ও দিনের পর দিন একই পরিস্থিতির মধ্য় দিয়ে যাওয়া, খাওয়াদাওয়া ও জীবনযাপন পদ্ধতিতে সঠিকভাবে নজর না দেওয়া—এসব কারণে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক, ডিমেনশিয়াসহ আরও নানা অনিরাময়যোগ্য় রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বলা বাহুল্য, এখন ষাটোর্ধ্ব প্রায় সব বাবাই এসব রোগে আক্রান্ত।
বয়স যখন উল্টোপথে হাঁটে
সন্তানদের প্রথমেই মনে রাখতে হবে, দিন যত যাবে, সম্পর্কে ভূমিকার রূপান্তর তত দ্রুত হবে। আমি বাবার ভূমিকায় এবং বাবা আমার ছোটবেলার ভূমিকায় পৌঁছে যাবেন। কিছু কিছু সময় বাবারা অপত্যস্নেহের বশবর্তী হয়ে মনে করেন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান কিছু বোঝে না। এ রকম সময় বাবাকে বোঝানোর থেকে কাউন্সেলিংয়ের সাহায্য নেওয়া জরুরি। সেটা উভয়ের সম্পর্কের জন্য ভালো। সন্তান নায়ক হয়ে বাবাকে বেশি বুদ্ধি দিচ্ছে, এই ভাবনার কালো মেঘ সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে না। বাবাকে কোনো কিছু করার জন্য জোর করার আগে মনে রাখতে হবে, এই মানুষটি দোর্দণ্ড প্রতাপে সংসার চালিয়েছেন আপনার জন্মের আগে থেকে। কাজেই ‘তুমি এখন কিছু বোঝো না’ কথাগুলো সন্তানের কাছ থেকে শোনা তাঁর জন্য অপমানজনক।
মনে রাখতে হবে, ৫০, ৬০, ৭০, ৮০ বছর তিনি পার করেছেন। কাজেই এখন চাপ দেবেন না। তিনি হয়তো কষ্ট পেলেও বলবেন না। কারণ বার্ধক্য মানুষকে অসহায় করে তোলে। বাবা কী বলেন, সেটা মন দিয়ে শুনুন। সেটা ১০ মিনিট হতে পারে। বিরক্ত হবেন না। তিনি নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন কি না এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে আছেন কি না, এই খেয়াল রাখাটা খুব জরুরি। কারণ অসুস্থ হলে আপনাকেই টানতে হবে। আপনার বাবা কোন কোন জায়গায় তাঁর আচরণ বদলাবেন না, সেটা আপনার থেকে ভালো কেউ জানে না। সেই জায়গাগুলো গ্রহণ করুন। বিতর্কে জড়াবেন না।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, চিন্তা, মনোযোগ ও ভাষা প্রকাশে সমস্যা হওয়া, ব্যক্তিত্ব ও মেজাজের পরিবর্তন ঘটা ইত্যাদি একটা বয়সের পর কমবেশি সব
বাবারই হয়। এই পরিবর্তনগুলো সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে কী করে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ এই সদস্যদের মানসিক চাপ কমানো যায়, সেদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।
সম্পর্কে তারল্য থাক
বার্ধক্যে মানুষ শিশুর মতো হয়ে যায়। বাবা অনেক কিছু ভুল করতে পারেন। ভুলেও যেতে পারেন। বারবার একই কথা জিজ্ঞেস করতে পারেন। তাঁর সঙ্গে কঠিন আচরণ করার আগে মনে রাখবেন, আপনারও সামনে বার্ধক্য অপেক্ষা করছে। আপনি আপনার বাবার সঙ্গে যেমন ব্যবহার করছেন, আপনার অজান্তে আপনার সন্তান সেটাই শিখছে। আপনি আজকে যে ব্যবহার সন্তান হিসেবে আপনার বাবার সঙ্গে করছেন, ভবিষ্যতে নিজেই সেটা নিজ সন্তানের কাছ থেকে ফেরত পাবেন। এক দিনে অনেক দামি কিছু দেওয়ার থেকে প্রতিদিন বাবার ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই যত্নগুলো বাবাদের মনকে তৃপ্ত করে।
চাহিদা বুঝতে হবে
বাবার চাহিদাটা শারীরিক নাকি মানসিক নাকি সামাজিক নাকি আধ্যাত্মিক, সেটা চিহ্নিত করুন প্রথমে। এবার সেটা কীভাবে মেটানো যায়, আশপাশে সে উপায় আছে কি নেই, সেটা খেয়াল করা জরুরি। প্রয়োজনে অন্য কারও সহায়তা নিন। কারণ আপনি নিজেও ক্লান্ত হয়ে যেতে পারেন। বাবার যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয়, সেই সমস্যার সমাধানে বাবাকেও যুক্ত করুন।
বাবা পারবেন না বলে তাঁকে আলাদা করে ফেলবেন না। তাহলে তিনি নিজেকে প্রয়োজনীয় মনে করবেন। আমাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এই করোনা-পরবর্তী সময়ে থাকবে। কাজেই সে বিষয় বাবার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনায় আসতেই পারেন সমস্যা সমাধানের সূত্র খুঁজতে।
বাবাদের রাখুন নিজের সন্তানের সঙ্গে
বাবাকে আপনার সন্তানদের কাছ থেকে আলাদা করবেন না। দুই প্রজন্মের মানুষের মধ্যকার সম্পর্ক তৈরি করায় কোনো ভুল করবেন না। আপনি আপনার বাবার সঙ্গে কেমন আচরণ করেন তার ওপর নির্ভর করবে আপনার সন্তান তার দাদা বা নানার সঙ্গে কেমন আচরণ করবে। মনে রাখা জরুরি, এই মানুষটি ছিলেন বলেই আজকে আপনি সমাজে প্রতিষ্ঠিত। সেই মানুষগুলো সৌভাগ্যবান, যাঁদের বাবা এখনো বেঁচে আছেন।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে