আমিনুল ইসলাম নাবিল
প্রতিটি দেশেই এমন কিছু খাবার থাকে, যার সঙ্গে মিশে থাকে মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা। সময়ের সঙ্গে সেসব খাবার হয়ে ওঠে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে তেমনই একটি বিখ্যাত খাবার ‘প্লভ’ বা ‘পিলাফ’।
এটিকে উজবেকিস্তানের জাতীয় খাবার বলেন অনেকে। এই প্লভ মিশে আছে সেখানকার মানুষের আনন্দ–বেদনায়। কারও জন্ম কিংবা মৃত্যু, পারিবারিক উৎসব, বিয়েশাদি, বর্ষবরণ থেকে শুরু করে সব আয়োজনের সঙ্গে মিশে আছে এই খাবার। হজ থেকে ফেরার পর হাজির সম্মানার্থেও প্লভ রান্না করা হয়। ধনী–গরিব সবার বাড়িতে সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও প্লভ রান্না হয়।
চাল, সবজি, ছোলা, মাংস ও মসলার সমন্বয়ে এই খাবার প্রস্তুত করা হয়।
প্লভের ইতিহাস বেশ পুরোনো। এই খাবার নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়—গ্রিক বীর অ্যালেক্সজান্ডারের সময় থেকে এই খাবারের প্রচলন। মূলত মধ্য এশিয়ায় অভিযানের সময় সেনাদের চাঙা রাখতে তিনি এই খাবার তৈরির নির্দেশ দেন।
উজবেকিস্তানের ট্যুর গাইড ও ফুড হিস্ট্রি নিয়ে কাজ করা নিলুফার নুরিদ্দিনোভা বিবিসিকে বলেন, ‘প্লভের শুরু কবে থেকে এর কোনো অকাট্য তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে যতটুকু জানা যায়, নবম অথবা দশম শতাব্দীর দিকে এটি জনপ্রিয়তা পায়। এক হাজারেরও বেশি সময় ধরে ধান এই অঞ্চলে প্রধান শস্য। ফলে কৃষিপ্রধান দেশে প্লভ উচ্চ–ক্যালরি, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়।’
নিলুফার নুরিদ্দিনোভা আরও বলেন, ‘এটি খাবারের চেয়েও বেশি কিছু। এটি সামাজিক বন্ধন, বন্ধুত্ব এবং জাতিগত ঐক্য গড়তেও ভূমিকা রাখে।’
দেশটিতে এমন কথার প্রচলন আছে যে, যদি তুমি জানতে পারো তোমার আয়ু আর একদিন; তাহলে সেই দিনটি শুধু প্লভ খেয়ে পার করো। এ কথার মর্মার্থ হলো, সবকিছুর পরেও যেন সুখে মরতে পারো! প্লভ ছাড়া এখানে কল্পনাই করা যায় না—যোগ করেন নিলুফার নুরিদ্দিনোভা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে প্লভ।
ইউনেসকোর ওয়েবসাইটে বলা হয়, উজবেকিস্তানে একটি প্রচলিত প্রবাদ হয়ে গেছে যে—অতিথিরা কখনো কারও বাড়ি থেকে প্লভ না খেয়ে ফেরেন না। গ্রাম কিংবা শহরের সব জায়গাতেই প্লভ বেশ জনপ্রিয়। খাবার তৈরি ও একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া হয় বলে খাবারটি সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখে। এটি উজবেক সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে।
উজবেকিস্তানে প্লভের শতাধিক ধরনের রেসিপি রয়েছে। অঞ্চল ও ঋতুভেদে প্লভের রেসিপি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে রেসিপি ভিন্ন হলেও মূল উপাদান একই থাকে। যেমন—পানি, চাল, পেঁয়াজ, গাজর, মাংস, তেল ও লবণ।
উজবেকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লভ রেস্টুরেন্ট হলো—বেশ কোজোন; এটি সেন্ট্রাল এশিয়া প্লভ সেন্টার নামেও পরিচিত। রাজধানী তাশখন্দরের পাশেই ইউনুসাবাদে এটির অবস্থান। এই রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ হাজার মানুষ খেতে আসেন। নয়টি সুবিশাল চুলায় রান্না হয়। জ্বালানি ব্যবহার করা হয় কাঠ। প্রতিদিন রান্না শুরুর আগে রীতি অনুসারে সব স্টাফ মিলে দোয়া পড়েন। বাড়িতে সাধারণত নারীরা প্লভ রান্না করলেও রেস্টুরেন্টে যারা প্লভ রান্না করেন তাঁদের প্রায় সবাই পুরুষ, তাঁদের বলা হয় ‘ওশপাজ’।
বেশ কোজোন রেস্টুরেন্টের ওশপাজ (রাঁধুনি) ফায়জুল্লাহ সাগদিয়েভ বলেন, ‘রান্নায় ব্যাপক শারীরিক কসরত হয়। আমাদের সবচেয়ে বড় কাজানে (চুলা) ৩ টনের বেশি খাবার রান্না হয়।’
রান্নার সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয় জানিয়ে এই রাঁধুনি বলেন, ‘স্বাদ ভালো না হওয়ার কারণে যদি কোনো ক্রেতা প্লেটের প্লভ পুরোপুরি শেষ করতে না পারেন; তাহলে এটিকে চূড়ান্ত লজ্জাজনক হিসেবে মনে করা হয়। ওশপাজদের কাছে এর চেয়ে মৃত্যুই ভালো! আমাকে অবশ্য কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।’
উজবেকিস্তানে প্লভ এত জনপ্রিয়তার পেছনে আরও একটি চমকপ্রদ কারণ রয়েছে। এখানকার মানুষেরা প্লভকে ‘যৌনশক্তি বর্ধক’ বলে মনে করেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার পুরুষদের মধ্যে প্লভ খাওয়ার ধুম পড়ে। কেননা এখানে সন্তান ধারণের জন্য বৃহস্পতিবারকে পবিত্র দিন বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই এই দিনে প্লভের চাহিদা বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবারের জন্য রেস্টুরেন্টগুলোতে সবচেয়ে উন্নতমানের মাংস জমিয়ে রাখা হয়; যেন পুরুষেরা বেশি উপকৃত হন! কৌতুক প্রচলিত আছে—প্লভের আরেক অর্থ ‘ফোরপ্লে’। কাজানের (চুলা) নিচে যে তেল জমে, সেটিকে প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা মনে করে পান করা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্তান ধারণের ঐতিহ্য ইসলামি বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান ফায়জুল্লাহ সাগদিয়েভ। মনে করা হয়, হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর স্ত্রীরা এই দিনে সন্তানধারণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি চান আপনার সন্তান বুদ্ধিমান, ভদ্র, ইমানদার এবং ফেরেশতাদের দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হোক, তাহলে আপনার জন্য বৃহস্পতিবার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার আগে অবশ্যই এক প্লেট প্লভ খেতে হবে!’
উজবেক প্লভের রেসিপি
গরু ও ছাগলের মাংস প্রথমে লালচে করে ভেজে নেওয়া হয়। এরপর এতে যোগ করা হয় সাদা ও হলুদ গাজর, তেল, চাল, পানি ও মসলা। ফায়জুল্লাহ সাগদিয়েভ বলেন, তিনি লবণ, গোলমরিচ, হলুদ ও জিরা ব্যবহার করেন। ছোলা ও টক কিশমিশও দেওয়া হয়। চার ঘণ্টা ধরে অল্প আঁচে রান্না করা হয়।
ঘরে রান্নার জন্য সমরকন্দ স্টাইল প্লভ
উপকরণ—
* দুই কাপ রান্নার তেল (ওলিভ ওয়েল অথবা সান ফ্লাওয়ার)
* দুই পাউন্ড গরু/ভেড়া/ছাগলের কাঁধের মাংস (১ বর্গইঞ্চি মাপে কেটে নিতে হবে)
* একটি বড় পেঁয়াজ
* দুই–তিন পাউন্ড গাজর
* দুই পাউন্ড টার্কিস চাল
* জিরা পরিমাণ মতো
* গোলমরিচ পরিমাণ মতো
* লবণ স্বাদ মতো
* এক–দুটি রসুন
* এক কাপ ছোলা
* দুই টেবিল চামচ লাল উজবেক কিশমিশ (ঐচ্ছিক)
* দুই টেবিল চামচ শুকনো বারবেরি (ঐচ্ছিক)
* এক কেটলি ফুটানো পানি
প্রণালী
প্লভ রান্না করতে অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র দরকার; যেটিকে কাজান বলা হয়ে থাকে। আর লাগবে বড় চামচ; যেটিকে বলা হয় কাফগির।
আগে থেকেই গাজর কেটে ভেজে প্রস্তুত করে রাখুন। পাত্রে তেল গরম করুন। সেখানে টুকরা করা মাংস ছেড়ে দিন। লালচে না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। এরপর পেঁয়াজ যোগ করুন। মাংস ও পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে চুলার তাপ কিছুটা কমিয়ে ওপর দিয়ে গাজর ছড়িয়ে দিন। গাজরের ভেতর রসুন দিন। ছোলা, শুকনো বারবেরি, কিশমিশ যোগ করুন। এরপর দিন জিরা ও গোলমরিচ। এ সময় নাড়া যাবে না। নাড়লে গাজর গলে যেতে পারে।
সতর্কতার সঙ্গে চারপাশে পানি যোগ করতে থাকুন। খেয়াল রাখবেন যেন মসলাগুলোর ওপর না পড়ে। মাঝারি আঁচে সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর আগে থেকে ধুয়ে ও পানি ছাড়িয়ে রাখা চাল (আতপ) যোগ করুন। চালের ওপর স্বাদ মতো লবণ দিন। এরপর ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে সিদ্ধ করতে হবে। চাল সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত পাত্রটি ঢেকে রাখুন। এরপর নেড়ে চাল, মসলা ও গাজর মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষণ মৃদু আঁচে ঢেকে রাখার পর গরম গরম পরিবেশন করুন।
প্রতিটি দেশেই এমন কিছু খাবার থাকে, যার সঙ্গে মিশে থাকে মানুষের আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসা। সময়ের সঙ্গে সেসব খাবার হয়ে ওঠে জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মধ্য এশিয়ার দেশ উজবেকিস্তানে তেমনই একটি বিখ্যাত খাবার ‘প্লভ’ বা ‘পিলাফ’।
এটিকে উজবেকিস্তানের জাতীয় খাবার বলেন অনেকে। এই প্লভ মিশে আছে সেখানকার মানুষের আনন্দ–বেদনায়। কারও জন্ম কিংবা মৃত্যু, পারিবারিক উৎসব, বিয়েশাদি, বর্ষবরণ থেকে শুরু করে সব আয়োজনের সঙ্গে মিশে আছে এই খাবার। হজ থেকে ফেরার পর হাজির সম্মানার্থেও প্লভ রান্না করা হয়। ধনী–গরিব সবার বাড়িতে সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও প্লভ রান্না হয়।
চাল, সবজি, ছোলা, মাংস ও মসলার সমন্বয়ে এই খাবার প্রস্তুত করা হয়।
প্লভের ইতিহাস বেশ পুরোনো। এই খাবার নিয়ে বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়—গ্রিক বীর অ্যালেক্সজান্ডারের সময় থেকে এই খাবারের প্রচলন। মূলত মধ্য এশিয়ায় অভিযানের সময় সেনাদের চাঙা রাখতে তিনি এই খাবার তৈরির নির্দেশ দেন।
উজবেকিস্তানের ট্যুর গাইড ও ফুড হিস্ট্রি নিয়ে কাজ করা নিলুফার নুরিদ্দিনোভা বিবিসিকে বলেন, ‘প্লভের শুরু কবে থেকে এর কোনো অকাট্য তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে যতটুকু জানা যায়, নবম অথবা দশম শতাব্দীর দিকে এটি জনপ্রিয়তা পায়। এক হাজারেরও বেশি সময় ধরে ধান এই অঞ্চলে প্রধান শস্য। ফলে কৃষিপ্রধান দেশে প্লভ উচ্চ–ক্যালরি, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যায়।’
নিলুফার নুরিদ্দিনোভা আরও বলেন, ‘এটি খাবারের চেয়েও বেশি কিছু। এটি সামাজিক বন্ধন, বন্ধুত্ব এবং জাতিগত ঐক্য গড়তেও ভূমিকা রাখে।’
দেশটিতে এমন কথার প্রচলন আছে যে, যদি তুমি জানতে পারো তোমার আয়ু আর একদিন; তাহলে সেই দিনটি শুধু প্লভ খেয়ে পার করো। এ কথার মর্মার্থ হলো, সবকিছুর পরেও যেন সুখে মরতে পারো! প্লভ ছাড়া এখানে কল্পনাই করা যায় না—যোগ করেন নিলুফার নুরিদ্দিনোভা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে প্লভ।
ইউনেসকোর ওয়েবসাইটে বলা হয়, উজবেকিস্তানে একটি প্রচলিত প্রবাদ হয়ে গেছে যে—অতিথিরা কখনো কারও বাড়ি থেকে প্লভ না খেয়ে ফেরেন না। গ্রাম কিংবা শহরের সব জায়গাতেই প্লভ বেশ জনপ্রিয়। খাবার তৈরি ও একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাওয়া হয় বলে খাবারটি সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ব দৃঢ় করতে ভূমিকা রাখে। এটি উজবেক সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে।
উজবেকিস্তানে প্লভের শতাধিক ধরনের রেসিপি রয়েছে। অঞ্চল ও ঋতুভেদে প্লভের রেসিপি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে রেসিপি ভিন্ন হলেও মূল উপাদান একই থাকে। যেমন—পানি, চাল, পেঁয়াজ, গাজর, মাংস, তেল ও লবণ।
উজবেকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্লভ রেস্টুরেন্ট হলো—বেশ কোজোন; এটি সেন্ট্রাল এশিয়া প্লভ সেন্টার নামেও পরিচিত। রাজধানী তাশখন্দরের পাশেই ইউনুসাবাদে এটির অবস্থান। এই রেস্টুরেন্টে প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ হাজার মানুষ খেতে আসেন। নয়টি সুবিশাল চুলায় রান্না হয়। জ্বালানি ব্যবহার করা হয় কাঠ। প্রতিদিন রান্না শুরুর আগে রীতি অনুসারে সব স্টাফ মিলে দোয়া পড়েন। বাড়িতে সাধারণত নারীরা প্লভ রান্না করলেও রেস্টুরেন্টে যারা প্লভ রান্না করেন তাঁদের প্রায় সবাই পুরুষ, তাঁদের বলা হয় ‘ওশপাজ’।
বেশ কোজোন রেস্টুরেন্টের ওশপাজ (রাঁধুনি) ফায়জুল্লাহ সাগদিয়েভ বলেন, ‘রান্নায় ব্যাপক শারীরিক কসরত হয়। আমাদের সবচেয়ে বড় কাজানে (চুলা) ৩ টনের বেশি খাবার রান্না হয়।’
রান্নার সময় অনেক সতর্ক থাকতে হয় জানিয়ে এই রাঁধুনি বলেন, ‘স্বাদ ভালো না হওয়ার কারণে যদি কোনো ক্রেতা প্লেটের প্লভ পুরোপুরি শেষ করতে না পারেন; তাহলে এটিকে চূড়ান্ত লজ্জাজনক হিসেবে মনে করা হয়। ওশপাজদের কাছে এর চেয়ে মৃত্যুই ভালো! আমাকে অবশ্য কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।’
উজবেকিস্তানে প্লভ এত জনপ্রিয়তার পেছনে আরও একটি চমকপ্রদ কারণ রয়েছে। এখানকার মানুষেরা প্লভকে ‘যৌনশক্তি বর্ধক’ বলে মনে করেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার পুরুষদের মধ্যে প্লভ খাওয়ার ধুম পড়ে। কেননা এখানে সন্তান ধারণের জন্য বৃহস্পতিবারকে পবিত্র দিন বলে বিশ্বাস করা হয়। তাই এই দিনে প্লভের চাহিদা বেড়ে যায়। বৃহস্পতিবারের জন্য রেস্টুরেন্টগুলোতে সবচেয়ে উন্নতমানের মাংস জমিয়ে রাখা হয়; যেন পুরুষেরা বেশি উপকৃত হন! কৌতুক প্রচলিত আছে—প্লভের আরেক অর্থ ‘ফোরপ্লে’। কাজানের (চুলা) নিচে যে তেল জমে, সেটিকে প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা মনে করে পান করা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্তান ধারণের ঐতিহ্য ইসলামি বিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান ফায়জুল্লাহ সাগদিয়েভ। মনে করা হয়, হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর স্ত্রীরা এই দিনে সন্তানধারণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘যদি আপনি চান আপনার সন্তান বুদ্ধিমান, ভদ্র, ইমানদার এবং ফেরেশতাদের দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হোক, তাহলে আপনার জন্য বৃহস্পতিবার দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে তার আগে অবশ্যই এক প্লেট প্লভ খেতে হবে!’
উজবেক প্লভের রেসিপি
গরু ও ছাগলের মাংস প্রথমে লালচে করে ভেজে নেওয়া হয়। এরপর এতে যোগ করা হয় সাদা ও হলুদ গাজর, তেল, চাল, পানি ও মসলা। ফায়জুল্লাহ সাগদিয়েভ বলেন, তিনি লবণ, গোলমরিচ, হলুদ ও জিরা ব্যবহার করেন। ছোলা ও টক কিশমিশও দেওয়া হয়। চার ঘণ্টা ধরে অল্প আঁচে রান্না করা হয়।
ঘরে রান্নার জন্য সমরকন্দ স্টাইল প্লভ
উপকরণ—
* দুই কাপ রান্নার তেল (ওলিভ ওয়েল অথবা সান ফ্লাওয়ার)
* দুই পাউন্ড গরু/ভেড়া/ছাগলের কাঁধের মাংস (১ বর্গইঞ্চি মাপে কেটে নিতে হবে)
* একটি বড় পেঁয়াজ
* দুই–তিন পাউন্ড গাজর
* দুই পাউন্ড টার্কিস চাল
* জিরা পরিমাণ মতো
* গোলমরিচ পরিমাণ মতো
* লবণ স্বাদ মতো
* এক–দুটি রসুন
* এক কাপ ছোলা
* দুই টেবিল চামচ লাল উজবেক কিশমিশ (ঐচ্ছিক)
* দুই টেবিল চামচ শুকনো বারবেরি (ঐচ্ছিক)
* এক কেটলি ফুটানো পানি
প্রণালী
প্লভ রান্না করতে অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র দরকার; যেটিকে কাজান বলা হয়ে থাকে। আর লাগবে বড় চামচ; যেটিকে বলা হয় কাফগির।
আগে থেকেই গাজর কেটে ভেজে প্রস্তুত করে রাখুন। পাত্রে তেল গরম করুন। সেখানে টুকরা করা মাংস ছেড়ে দিন। লালচে না হওয়া পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। এরপর পেঁয়াজ যোগ করুন। মাংস ও পেঁয়াজ ভাজা হয়ে গেলে চুলার তাপ কিছুটা কমিয়ে ওপর দিয়ে গাজর ছড়িয়ে দিন। গাজরের ভেতর রসুন দিন। ছোলা, শুকনো বারবেরি, কিশমিশ যোগ করুন। এরপর দিন জিরা ও গোলমরিচ। এ সময় নাড়া যাবে না। নাড়লে গাজর গলে যেতে পারে।
সতর্কতার সঙ্গে চারপাশে পানি যোগ করতে থাকুন। খেয়াল রাখবেন যেন মসলাগুলোর ওপর না পড়ে। মাঝারি আঁচে সেদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর আগে থেকে ধুয়ে ও পানি ছাড়িয়ে রাখা চাল (আতপ) যোগ করুন। চালের ওপর স্বাদ মতো লবণ দিন। এরপর ঢেকে দিয়ে মৃদু আঁচে সিদ্ধ করতে হবে। চাল সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত পাত্রটি ঢেকে রাখুন। এরপর নেড়ে চাল, মসলা ও গাজর মিশিয়ে নিন। কিছুক্ষণ মৃদু আঁচে ঢেকে রাখার পর গরম গরম পরিবেশন করুন।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১৪ ঘণ্টা আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১৪ ঘণ্টা আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১৪ ঘণ্টা আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১৪ ঘণ্টা আগে