ডা. অপূর্ব চৌধুরী
ভালোবাসা একটি আবেগ। প্রেম মানে মনের কিছু জটিলতা। আধুনিক বিজ্ঞান এবং নিউরোবায়োলজিতে এই আবেগ অনুভূতি জানতে গিয়ে প্রেম বা ভালোবাসা হয়ে উঠেছে বড় একটি গবেষণা।
জীবনের দিকে তাকালে এককভাবে বলতে হয়, ভালোবাসা একটি সর্বজনীন অভিজ্ঞতা। এটি না থাকলে হয়তো প্রাণে বেঁচে থাকতে কোন অসুবিধা হয় না। তবে জীবনে আনন্দ এবং সুখ পেতে ভালোবাসা একটি উৎস, একটি অন্যতম প্রেরণা। ভালোবাসা একটি শক্তি, কখনো কখনো ভালোবাসা হয়ে ওঠে একটি আরাধনা।
সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো আমাদের মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে, তা জানতে গিয়ে নিউরোবায়োলজিস্টরা প্রেমের অধ্যয়ন এবং গবেষণায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। ভালোবাসার বিজ্ঞান নিয়ে কাজের সেই শুরু। প্রত্যেকই কমবেশি যার যার মনে এগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানি। তবে এটি মস্তিষ্কের কোন নির্দিষ্ট স্নায়ুপথে তৈরি হয়ে ভালোবাসায় প্রক্রিয়াজাত হয়, সেটি এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়।
প্রেম এককভাবে আলাদা একটি আবেগ নয়। বরং এই আবেগটি কখনো কখনো এতটাই জটিল যে, সেটি সুখ-আনন্দ-স্মৃতি এমনসব অনেকগুলো আবেগের সঙ্গে সম্পর্কিত। কেবল সম্পর্কিতই নয়, কখনো কখনো এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত যে, সেই ঘটন এবং অঘটনের ওপরই নির্ভর করছে প্রেমের অনুরণন।
আবেগ হলো আমাদের একটি মানসিক অবস্থা, যা নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা বা অভিজ্ঞতা থেকে শুরু হয়। পরে সেগুলো শরীরের বিভিন্ন কাজ, পরিবর্তন এবং প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলতে থাকে। তাই প্রেমের মতো আবেগীয় অনুভূতিটিও ব্যতিক্রম নয়। এটিও মস্তিষ্কের একটি স্নায়ু নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের পরিবর্তনের সঙ্গে চলতে থাকে। এই ‘যে কোনো কিছু’র সঙ্গে একটি মানসিক সংযোগ, এটিই ভালোবাসা। আর এই মানসিক সংযোগ তৈরি করে যে রসায়ন সেটিই ভালোবাসার বিজ্ঞান।
ভালোবাসা মানে দুটো মানুষের সম্পর্ক, একটি অনুভবের সম্পর্ক। কিন্তু শরীর-মন কী করে বুঝে এই ভালোবাসা!
অনুভব মানেই শরীরের রসায়ন। আর এই রসায়ন নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক।
ভালোবাসা যদি দুটো মনের অনুভবের খেলা হয় তার মানে ভালোবাসা আসলে দুটো মস্তকের খেলা। ভালোবাসায় ঘটে দুটো মস্তিষ্কের মেলা।
আমরা যখন প্রেমে পড়ি, তখন আমাদের মস্তিষ্কে একটি রাসায়নিক উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হতে থাকে। নাম ডোপামিন। বিজ্ঞানীরা এই উপাদানটিকে আনন্দ এবং পুরস্কারের একটি রাসায়নিক উপাদান মনে করেন। এটি যত বেশি বের হয়, ততই আমরা উচ্ছ্বাস এবং সুখের অনুভব বেশি মাত্রায় ফিল করতে থাকি। আবার এটি সুখের উল্লাস দিতে গিয়ে যে মুক্তির পথ তৈরি করে, এক সময়ে সেটি আসক্তিরও জন্ম দিতে পারে।
প্রেমে পড়লে ডোপামিনের পাশাপাশি মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নামক আরেকটি রাসায়নিক উপাদান বের হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই রাসায়নিক উপাদানটি আমাদের বিশ্বাস এবং কারও সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার যে অনুভূতি সেটিকে প্রভাবিত করার একটি রাসায়নিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। সামাজিকভাবে পরস্পরের সঙ্গে ভালো বন্ধন তৈরি করতে অক্সিটোসিনের ভূমিকা আছে।
কেউ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন সবটা জেনে ভালোবাসে না। সব জানেও না, জানা সম্ভবও হয় না। প্রথমে মনের একটি ভালো লাগার সঙ্গে অন্যের মিলে যায়। মন তখন একটি আশার আনন্দে থাকে এবং আশা করে যে আরও অনেক কিছুই সামনে ভালো লাগবে। আশা ও অপেক্ষার এই আনন্দটুকু ভালোবাসা, সবটা জেনে যৌক্তিক বিচারে ভালোবাসা নয়।
প্রেম অন্য অনেকগুলো আবেগের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রেম আবার নিজেই যেমন এককভাবে একটি আবেগ, ঠিক তেমনি এটি একই সঙ্গে অন্য আরও কিছু আবেগকেও সক্রিয় করে। যেমন প্রেমে পড়লে আমাদের মধ্যে ঈর্ষা, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মতো আরও কিছু আবেগ জেগে উঠতে পারে। মনে করার কারণ নেই যে, এই আবেগগুলো সব সময় নেতিবাচক। বরং প্রেমে পড়লে এই নেতিবাচক আবেগগুলো সম্পর্ককে অনেক সময় স্বাভাবিক রাখে।
ভালোবাসতে কোনো যোগ্যতা লাগে না। ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। তবে দুটো শর্ত লাগে। ভালো লাগা ও আন্তরিকতা। ভালো লাগা দেখতে পায়, আন্তরিকতা অনুভব করে।
অনেকেই মনে করে, প্রেম মানে কেবলমাত্র রোমান্টিক সম্পর্ক। প্রেমের এই সম্পর্ক কেবল প্রেমময় আরেকটি মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই প্রেম হতে পারে বন্ধুর সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে, একটি পোষা প্রাণীর সঙ্গে, কোনো বস্তুর সঙ্গে। এমনকি যারা ঈশ্বর বিশ্বাস করেন, সেই ঈশ্বরের সঙ্গেও প্রেম হতে পারে।
প্রেম এখানেই থেমে থাকলে ভালো হতো। প্রেমের আবেগ এতটাই উত্তুঙ্গ হয়ে ওঠে যে অনেক সময় সেটি আমাদের নিজেদেরও চালিত করে। আমরা হয়ে উঠি আত্ম-প্রেমী একেকজন মানুষ।
প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইন ডে এলে এই প্রেম বা ভালোবাসার বিষয়টি আমাদের সামনে চলে আসে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে। আমাদের ভালোবাসার অনুভূতি মনে করিয়ে দেয়। নিজের অনুভূতির সঙ্গে আপন অনুভূতিকে মুখোমুখি দাঁড় করায়।
নিজেরা ভালোবাসি আর না বাসি, আমরা এটিকে একটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদ্যাপন করি। পৃথিবী ব্যাপী মানুষ এটি সেভাবেই উদ্যাপন করে। হোক তিনি বয়সে তরুণ কিংবা জীবনের পড়ন্ত বেলার কেউ।
দিবস হিসেবে ভ্যালেন্টাইন ডে এর উৎপত্তির অনেক গল্প প্রচলিত আছে। প্রাচীন রোমে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি লোপারক্যালিয়া নামে একটি উৎসব পালিত হতো। উৎসবটি পালন করা হতো প্রেম এবং মানব প্রজননের উর্বরতা যাতে আসে, তার আশীর্বাদ কামনায়। উৎসব দুটিকে ঘিরে সেই উপহার বিনিময় করা হতো। পরবর্তীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক এক খ্রিষ্টান যাজক, যিনি প্রেম, ভালোবাসা এবং তার প্রতি সমবেদনাকে অনেক বেশি প্রচার করতেন, তাঁর স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত করে উৎসবটি পালিত হওয়া শুরু করে।
ভালোবাসা আর পরস্পরের প্রতি স্নেহ প্রকাশের প্রতীক হয়ে এখন বিশ্বব্যাপী এটি পালিত হয়। ফুল, চকলেট, কার্ড, উপহার, রোমান্টিক ডিনার, মোমবাতি কিংবা এমন সবকিছুর রোমান্টিক গেটওয়েতে ঢুকে ভালোবাসার অনুভবটিকে একে অপরের মধ্যে উপভোগ করার এ পর্বটি প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে।
আমাদের মস্তিষ্ক হলো আবেগের কেন্দ্র। বিশেষ করে আমাদের মধ্য–মস্তিষ্ক। এটি আমাদের মস্তিষ্কের ৭০ ভাগ কাজের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রায় ১৭ ধরনের আবেগ কাজ করে সেখানে। তাই দেখা যায়, প্রেমে পড়লে প্রেমের প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল মস্তিষ্কের বিভিন্ন সেন্টার সক্রিয় হয়ে ওঠে অনেক। চুম্বন থেকে স্পর্শ, আবেগের রসায়নে সিক্ত হতে মন আনচান করে। ডোপামিন ও অক্সিটোসিনের সঙ্গে সেরোটোনিন এবং নর এপিনিফ্রিন নামক আরও কিছু রাসায়নিক উপাদান প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে বেশি নিঃসৃত হয়। আলিঙ্গন থেকে আনন্দ, আনন্দ থেকে পুরস্কার, পুরস্কার থেকে রোমান্টিক সম্পর্ক এবং রোমান্টিক সম্পর্ক থেকে দীর্ঘমেয়াদি একটি সম্পর্কের স্বপ্ন, প্রেম এভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের চেইন রি-অ্যাকশনের মধ্য দিয়ে আবেগেরও একটি কেল্লা তৈরি করে।
ভালোবাসায় কাজ করে এমন দশটি রাসায়নিক উপাদান হলো, এড্রেনালিন, নর–এড্রেনালিন, ডোপামিন, টেস্টোস্টেরোন, ইস্ট্রোজেন, অক্সিটোসিন, এন্ডোরফিন, ভেসোপ্রেসিন, ফিনাইলেথাইলামিন, সেরোটোনিন।
ভালোবাসা একটি উত্তেজনা। কিসের উত্তেজনা! ওপরে বলা রাসায়নিকগুলোর উত্তেজনা। ভালোবাসা মানে অজানা উল্লাস, মনের পুলক, অনিশ্চিত শঙ্কা, কখনো ভয়, কখনো উত্তেজনা, কখনো শিহরণ, কখনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা। ভালোবাসা একটি সাবকনসাস ফিলিংস। এটি পুরোপুরি কনসাস নয়, আবার পুরো আনকনসাসও নয়। এটি মাঝামাঝি একটি উত্তাপ।
আমরা যখন ছোট থেকে বড় হতে থাকি আমাদের শরীর শুরুতে ভয় ও অনিশ্চয়তায় বাড়তে থাকে। অজানা কৌতূহল আর প্রশ্ন থাকে। জীবনের প্রথম ভালোবাসাটি গড়ে ওঠে বাবা-মা-পরিবার এই চক্রে। তৈরি হয় উত্তর ও আস্থা। ধীরে ধীরে এই ভালোবাসা আমাদের রসায়নকে স্থিতি দেয়। আমাদের ভয় ও অনিশ্চয়তা কমায়। সময়ে শরীর বড় হয়। আমাদের রসায়নে অনেক পরিবর্তন হয়। সে রসায়ন আমাদের মধ্যে ভিন্ন রকম ভালোবাসা তৈরি করে। চেনা পরিবারের গণ্ডি ছেড়ে আমরা ভিন্ন একটি মানুষের মাঝে খুঁজি ভালোবাসা। সে ভালোবাসা দিয়ে কেউ আমরা আরেকটি ঘর বাঁধি, কেউ বাঁধি না।
আজ পৃথিবী হোক ভালোবাসায়।
লেখক: চিকিৎসক, কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক, লন্ডন
ভালোবাসা একটি আবেগ। প্রেম মানে মনের কিছু জটিলতা। আধুনিক বিজ্ঞান এবং নিউরোবায়োলজিতে এই আবেগ অনুভূতি জানতে গিয়ে প্রেম বা ভালোবাসা হয়ে উঠেছে বড় একটি গবেষণা।
জীবনের দিকে তাকালে এককভাবে বলতে হয়, ভালোবাসা একটি সর্বজনীন অভিজ্ঞতা। এটি না থাকলে হয়তো প্রাণে বেঁচে থাকতে কোন অসুবিধা হয় না। তবে জীবনে আনন্দ এবং সুখ পেতে ভালোবাসা একটি উৎস, একটি অন্যতম প্রেরণা। ভালোবাসা একটি শক্তি, কখনো কখনো ভালোবাসা হয়ে ওঠে একটি আরাধনা।
সুখ-দুঃখের অনুভূতিগুলো আমাদের মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে, তা জানতে গিয়ে নিউরোবায়োলজিস্টরা প্রেমের অধ্যয়ন এবং গবেষণায় আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। ভালোবাসার বিজ্ঞান নিয়ে কাজের সেই শুরু। প্রত্যেকই কমবেশি যার যার মনে এগুলোর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানি। তবে এটি মস্তিষ্কের কোন নির্দিষ্ট স্নায়ুপথে তৈরি হয়ে ভালোবাসায় প্রক্রিয়াজাত হয়, সেটি এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট নয়।
প্রেম এককভাবে আলাদা একটি আবেগ নয়। বরং এই আবেগটি কখনো কখনো এতটাই জটিল যে, সেটি সুখ-আনন্দ-স্মৃতি এমনসব অনেকগুলো আবেগের সঙ্গে সম্পর্কিত। কেবল সম্পর্কিতই নয়, কখনো কখনো এতটাই ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত যে, সেই ঘটন এবং অঘটনের ওপরই নির্ভর করছে প্রেমের অনুরণন।
আবেগ হলো আমাদের একটি মানসিক অবস্থা, যা নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা বা অভিজ্ঞতা থেকে শুরু হয়। পরে সেগুলো শরীরের বিভিন্ন কাজ, পরিবর্তন এবং প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে চলতে থাকে। তাই প্রেমের মতো আবেগীয় অনুভূতিটিও ব্যতিক্রম নয়। এটিও মস্তিষ্কের একটি স্নায়ু নেটওয়ার্ক এবং বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের পরিবর্তনের সঙ্গে চলতে থাকে। এই ‘যে কোনো কিছু’র সঙ্গে একটি মানসিক সংযোগ, এটিই ভালোবাসা। আর এই মানসিক সংযোগ তৈরি করে যে রসায়ন সেটিই ভালোবাসার বিজ্ঞান।
ভালোবাসা মানে দুটো মানুষের সম্পর্ক, একটি অনুভবের সম্পর্ক। কিন্তু শরীর-মন কী করে বুঝে এই ভালোবাসা!
অনুভব মানেই শরীরের রসায়ন। আর এই রসায়ন নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্ক।
ভালোবাসা যদি দুটো মনের অনুভবের খেলা হয় তার মানে ভালোবাসা আসলে দুটো মস্তকের খেলা। ভালোবাসায় ঘটে দুটো মস্তিষ্কের মেলা।
আমরা যখন প্রেমে পড়ি, তখন আমাদের মস্তিষ্কে একটি রাসায়নিক উপাদান অনেক বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হতে থাকে। নাম ডোপামিন। বিজ্ঞানীরা এই উপাদানটিকে আনন্দ এবং পুরস্কারের একটি রাসায়নিক উপাদান মনে করেন। এটি যত বেশি বের হয়, ততই আমরা উচ্ছ্বাস এবং সুখের অনুভব বেশি মাত্রায় ফিল করতে থাকি। আবার এটি সুখের উল্লাস দিতে গিয়ে যে মুক্তির পথ তৈরি করে, এক সময়ে সেটি আসক্তিরও জন্ম দিতে পারে।
প্রেমে পড়লে ডোপামিনের পাশাপাশি মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন নামক আরেকটি রাসায়নিক উপাদান বের হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এই রাসায়নিক উপাদানটি আমাদের বিশ্বাস এবং কারও সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার যে অনুভূতি সেটিকে প্রভাবিত করার একটি রাসায়নিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। সামাজিকভাবে পরস্পরের সঙ্গে ভালো বন্ধন তৈরি করতে অক্সিটোসিনের ভূমিকা আছে।
কেউ যখন কাউকে ভালোবাসে তখন সবটা জেনে ভালোবাসে না। সব জানেও না, জানা সম্ভবও হয় না। প্রথমে মনের একটি ভালো লাগার সঙ্গে অন্যের মিলে যায়। মন তখন একটি আশার আনন্দে থাকে এবং আশা করে যে আরও অনেক কিছুই সামনে ভালো লাগবে। আশা ও অপেক্ষার এই আনন্দটুকু ভালোবাসা, সবটা জেনে যৌক্তিক বিচারে ভালোবাসা নয়।
প্রেম অন্য অনেকগুলো আবেগের সঙ্গে সংযুক্ত। প্রেম আবার নিজেই যেমন এককভাবে একটি আবেগ, ঠিক তেমনি এটি একই সঙ্গে অন্য আরও কিছু আবেগকেও সক্রিয় করে। যেমন প্রেমে পড়লে আমাদের মধ্যে ঈর্ষা, উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতার মতো আরও কিছু আবেগ জেগে উঠতে পারে। মনে করার কারণ নেই যে, এই আবেগগুলো সব সময় নেতিবাচক। বরং প্রেমে পড়লে এই নেতিবাচক আবেগগুলো সম্পর্ককে অনেক সময় স্বাভাবিক রাখে।
ভালোবাসতে কোনো যোগ্যতা লাগে না। ভালোবাসাই সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। তবে দুটো শর্ত লাগে। ভালো লাগা ও আন্তরিকতা। ভালো লাগা দেখতে পায়, আন্তরিকতা অনুভব করে।
অনেকেই মনে করে, প্রেম মানে কেবলমাত্র রোমান্টিক সম্পর্ক। প্রেমের এই সম্পর্ক কেবল প্রেমময় আরেকটি মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এই প্রেম হতে পারে বন্ধুর সঙ্গে, পরিবারের সঙ্গে, একটি পোষা প্রাণীর সঙ্গে, কোনো বস্তুর সঙ্গে। এমনকি যারা ঈশ্বর বিশ্বাস করেন, সেই ঈশ্বরের সঙ্গেও প্রেম হতে পারে।
প্রেম এখানেই থেমে থাকলে ভালো হতো। প্রেমের আবেগ এতটাই উত্তুঙ্গ হয়ে ওঠে যে অনেক সময় সেটি আমাদের নিজেদেরও চালিত করে। আমরা হয়ে উঠি আত্ম-প্রেমী একেকজন মানুষ।
প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইন ডে এলে এই প্রেম বা ভালোবাসার বিষয়টি আমাদের সামনে চলে আসে খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে। আমাদের ভালোবাসার অনুভূতি মনে করিয়ে দেয়। নিজের অনুভূতির সঙ্গে আপন অনুভূতিকে মুখোমুখি দাঁড় করায়।
নিজেরা ভালোবাসি আর না বাসি, আমরা এটিকে একটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে উদ্যাপন করি। পৃথিবী ব্যাপী মানুষ এটি সেভাবেই উদ্যাপন করে। হোক তিনি বয়সে তরুণ কিংবা জীবনের পড়ন্ত বেলার কেউ।
দিবস হিসেবে ভ্যালেন্টাইন ডে এর উৎপত্তির অনেক গল্প প্রচলিত আছে। প্রাচীন রোমে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি লোপারক্যালিয়া নামে একটি উৎসব পালিত হতো। উৎসবটি পালন করা হতো প্রেম এবং মানব প্রজননের উর্বরতা যাতে আসে, তার আশীর্বাদ কামনায়। উৎসব দুটিকে ঘিরে সেই উপহার বিনিময় করা হতো। পরবর্তীতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক এক খ্রিষ্টান যাজক, যিনি প্রেম, ভালোবাসা এবং তার প্রতি সমবেদনাকে অনেক বেশি প্রচার করতেন, তাঁর স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত করে উৎসবটি পালিত হওয়া শুরু করে।
ভালোবাসা আর পরস্পরের প্রতি স্নেহ প্রকাশের প্রতীক হয়ে এখন বিশ্বব্যাপী এটি পালিত হয়। ফুল, চকলেট, কার্ড, উপহার, রোমান্টিক ডিনার, মোমবাতি কিংবা এমন সবকিছুর রোমান্টিক গেটওয়েতে ঢুকে ভালোবাসার অনুভবটিকে একে অপরের মধ্যে উপভোগ করার এ পর্বটি প্রতি বছর ঘুরে ঘুরে আসে।
আমাদের মস্তিষ্ক হলো আবেগের কেন্দ্র। বিশেষ করে আমাদের মধ্য–মস্তিষ্ক। এটি আমাদের মস্তিষ্কের ৭০ ভাগ কাজের জন্য দায়ী। বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, প্রায় ১৭ ধরনের আবেগ কাজ করে সেখানে। তাই দেখা যায়, প্রেমে পড়লে প্রেমের প্রক্রিয়াজাত অঞ্চল মস্তিষ্কের বিভিন্ন সেন্টার সক্রিয় হয়ে ওঠে অনেক। চুম্বন থেকে স্পর্শ, আবেগের রসায়নে সিক্ত হতে মন আনচান করে। ডোপামিন ও অক্সিটোসিনের সঙ্গে সেরোটোনিন এবং নর এপিনিফ্রিন নামক আরও কিছু রাসায়নিক উপাদান প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে বেশি নিঃসৃত হয়। আলিঙ্গন থেকে আনন্দ, আনন্দ থেকে পুরস্কার, পুরস্কার থেকে রোমান্টিক সম্পর্ক এবং রোমান্টিক সম্পর্ক থেকে দীর্ঘমেয়াদি একটি সম্পর্কের স্বপ্ন, প্রেম এভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের চেইন রি-অ্যাকশনের মধ্য দিয়ে আবেগেরও একটি কেল্লা তৈরি করে।
ভালোবাসায় কাজ করে এমন দশটি রাসায়নিক উপাদান হলো, এড্রেনালিন, নর–এড্রেনালিন, ডোপামিন, টেস্টোস্টেরোন, ইস্ট্রোজেন, অক্সিটোসিন, এন্ডোরফিন, ভেসোপ্রেসিন, ফিনাইলেথাইলামিন, সেরোটোনিন।
ভালোবাসা একটি উত্তেজনা। কিসের উত্তেজনা! ওপরে বলা রাসায়নিকগুলোর উত্তেজনা। ভালোবাসা মানে অজানা উল্লাস, মনের পুলক, অনিশ্চিত শঙ্কা, কখনো ভয়, কখনো উত্তেজনা, কখনো শিহরণ, কখনো জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা। ভালোবাসা একটি সাবকনসাস ফিলিংস। এটি পুরোপুরি কনসাস নয়, আবার পুরো আনকনসাসও নয়। এটি মাঝামাঝি একটি উত্তাপ।
আমরা যখন ছোট থেকে বড় হতে থাকি আমাদের শরীর শুরুতে ভয় ও অনিশ্চয়তায় বাড়তে থাকে। অজানা কৌতূহল আর প্রশ্ন থাকে। জীবনের প্রথম ভালোবাসাটি গড়ে ওঠে বাবা-মা-পরিবার এই চক্রে। তৈরি হয় উত্তর ও আস্থা। ধীরে ধীরে এই ভালোবাসা আমাদের রসায়নকে স্থিতি দেয়। আমাদের ভয় ও অনিশ্চয়তা কমায়। সময়ে শরীর বড় হয়। আমাদের রসায়নে অনেক পরিবর্তন হয়। সে রসায়ন আমাদের মধ্যে ভিন্ন রকম ভালোবাসা তৈরি করে। চেনা পরিবারের গণ্ডি ছেড়ে আমরা ভিন্ন একটি মানুষের মাঝে খুঁজি ভালোবাসা। সে ভালোবাসা দিয়ে কেউ আমরা আরেকটি ঘর বাঁধি, কেউ বাঁধি না।
আজ পৃথিবী হোক ভালোবাসায়।
লেখক: চিকিৎসক, কথাসাহিত্যিক ও বিজ্ঞান লেখক, লন্ডন
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে