মৃত্তিকা পণ্ডিত

এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে। ইতিহাসের নানা বাঁক ঘুরে একসময় মানুষ পা রাখল আধুনিক যুগে। এ এক বিরাট উত্তরণ। কিন্তু এই যুগের শুরুর সাথে এখনকার পার্থক্য বিস্তর। এই যুগেও এমন কিছু আবিষ্কার আছে, যা মানুষকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকটা। ওয়ার্ল্ড এক্সপোর গত ১৭০ বছরের ইতিহাসে বাঁকবদল এনে দেওয়া এমন বেশ কিছু আবিষ্কারের কথা তুলে এনেছে সিএনএন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড এক্সপোর ইতিহাসে আলোড়ন তোলা নানা আবিষ্কার ও পণ্য এবং পরে মানুষের ইতিহাস বদলে দেওয়ায় এসবের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। আজ থেকে ১৭০ বছর আগে ১৮৫১ সালে লন্ডনে আয়োজিত হয় লন্ডন’স গ্রেট এক্সিবিশন। তারপর থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর এমন আয়োজন হচ্ছে একেকবার একেক দেশে। এবার যেমন এমন মেলা বসেছে দুবাইয়ে, যা গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয়েছি। এই বিশ্বমেলাগুলোর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী পরিচিত হয়েছে এমন সব পণ্য ও ধারণার সঙ্গে, যা ছাড়া এখন একটি দিনও হয়তো কল্পনা করা সম্ভব নয়। অথচ সত্য হচ্ছে, এসব পণ্য ছাড়াও মানুষ একসময় চলেছে। যেমন ১৯৭০ সালের আগে আজকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা মোবাইল ফোন বস্তুটি ছিল না। আর ১৯০১ সালের আগে ছিল না কোনো এক্স–রে মেশিন।
লন্ডনে ১৮৫১ সালে যে গ্রেট এক্সিবিশনের আয়োজন হয়েছিল তা–ই ক্রমে ওয়াল্ড এক্সপোতে রূপ নিয়েছে। খাঁটি বাংলায় বিশ্বমেলা। এই মেলায় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। এর মধ্যে কিছু কিছু এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে, মানুষের জীবনধারাই বদলে দেয় এগুলো। ওয়ার্ল্ড এক্সপোয় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরিবহন থেকে শুরু করে চারুকলা কিংবা বাণিজ্যসহ সবকিছুতেই এক রকম বিপ্লব এনে দিয়েছে।
সর্বশেষ ওয়াল্ড এক্সপো আয়োজিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই), যা মধ্যপ্রাচ্যে হওয়া প্রথম এমন কোনো ইভেন্ট। সর্বশেষ এই এক্সপোয় কী এল, তার হিসাব নেওয়ার আগে দেখা যাক এই আয়োজনের ১৭০ বছরে বিশ্ব কী পেল।
ক্রিস্ট্রাল প্যালেস
ক্রিস্টাল প্যালেস ছিল ১৮৫১ সালের বৃহত্তম কাচের ভবন। এর প্রদর্শন ছিল ১৮৫১ সালে লন্ডনের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। ৬০ লাখেরও বেশি লোক লন্ডনের হাইড পার্কে এই সংরক্ষণাগারটিতে গিয়েছিলেন।
ক্রিস্টাল প্যালেস মডিউলার নির্মাণ ও আজকের কাচের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল।
সিঙ্গার সেলাই মেশিন
সাধারণ মানুষের ব্যবহারবান্ধব সেলাই মেশিন তৈরি হয় ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। এই আবিস্কারের পর টেক্সটাইল শিল্প অভাবিতভাবে এগিয়ে যায়। ঘটনাটি বেশ মজার। বর্তমান যে হাতে চালানো সেলাই মেশিন দেখা যায়, তার শুরুটা হয়েছিল আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। চেনা গেল? হ্যাঁ, সিঙ্গার মেশিন। এখন যা একটি ব্র্যান্ড, তার শুরুটা মূলত এই আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। ১৮৫১ সালে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে সিঙ্গারকে ডাকা হয় একটি সেলাই মেশিন মেরামতের জন্য। সেই মিশেনটির নকশাকার ছিলেন লিরো ও ব্লোজেট। পুরো বিষয়টি দেখেশুনে সিঙ্গার বুঝলেন নকশায় বড় ধরনের গলদ রয়েছে। নিজেই করে ফেললেন নতুন নকশা, যা বিশ্বের সেলাইয়ের ইতিহাসটিই বদলে দিল। তারপর পেটেন্ট নিয়ে ঝামেলা শেষে পরের প্যারিস এক্সপোয় তুললেন মেশিনটি। ব্যাস, হয়ে গেল। সেই থেকে চলছে হাতে চালিত সেলাই মেশিনের চাকা।
প্লাস্টিক
পরিবেশের কথা উঠলেই প্লাস্টিকের বদনাম। কিন্তু ভাবুন আজকের একটি প্লাস্টিকবিহীন দিন। ভাবুন এই পদার্থটি না থাকলে কত দামে কী কী কিনতে হতো আপনাকে। কৃত্রিম প্লাস্টিকের যাত্রা শুরু ১৮৬২ সালে। একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বলবার সুযোগ নেই অবশ্য। যেমন সুযোগ নেই সুনিশ্চিত করে এর আবিষ্কারকের নামটি বলার। মোটাদাগে ১৮৬০ ও ৭০–এর দশকে প্রথম কৃত্রিম প্লাস্টিক সেলুলয়েডের আবিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের জন ওয়েসলি হ্যাট বা ইংরেজ উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার পার্কসকে কৃত্রিম প্লাস্টিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ১৮৬২ সাল তবে কেন? হ্যাঁ ওই বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে পার্কস নিয়ে এলেন নিজের তৈরি পার্কেসাইন। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হলো বলা যায় আজকের গণ উৎপাদনের ধারণার। একই নামে পার্কস একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেও তা টেকেনি। কিন্তু বহাল তবিয়তে টিকে আছে তাঁর আনা প্লাস্টিকের ধারণা।
ওয়াশিং মেশিন
রিচার্ড ল্যানসডেল ১৮৬২ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে যখন তাঁর ওয়াশিং মেশিনটি উপস্থাপন করেছিলেন, তখন তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে উত্তরসূরীদের পারিবারিক জীবনে এ ঘূর্ণায়মান যন্ত্রটি কতটা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। ওই মেশিনটি অবশ্য হাতে মানুষকেই চালাতে হতো। কিন্তু ২০ শতকের ইলেকট্রিক ওয়াশিং মেশিনের ভিতটি গড়ে দিয়েছিলেন ল্যানসডেলই। তাই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটি হাতে তুলে নেওয়ার আগে অন্তত একবার ল্যানসডেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিন।
ইঞ্জিন
অন্তর্দহ ইঞ্জিন। ১৮৬০ সালে বেলজিয়ামের উদ্ভাবক এতিয়েঁ লেনোয়াঁ যখন বাস্প ইঞ্জিনের বদলে অন্য কোনো জ্বালানিতে চলতে সক্ষম এই ইঞ্জিনের খোঁজ দিলেন, তখন হয়তো তিনি নিজেও জানতেন না কতটা বদলের খোঁজ দিলেন তিনি। সে সময় যে দুই ধাপের (টু–স্ট্রোক) ইঞ্জিন তিনি নিয়ে এলেন, তার কর্মদক্ষতা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু এত কম দক্ষতাও এর জনপ্রিয়তার পথে বাধা হতে পারেনি। দু বছর পর আয়োজিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে তিনি তুললেন এটি। তারপর ইতিহাস।
টেলিফোন
ফিলাডেলফিয়ায় ১৮৭৬ সালে অনুষ্ঠিত মেলার বড় চমক ছিল টেলিফোন। স্কটিশ উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এক্সপোতে এই যন্ত্রের প্রদর্শন করেছিলেন। এর দুটি প্রান্ত ছিল—ট্রান্সমিটার ও রিসিভার। যখন কেউ ট্রান্সমিটারে কথা বলত, তখন শব্দটির কম্পনগুলি বৈদ্যুতিন প্রবাহে রূপান্তরিত হয়ে তারের মাধ্যমে রিসিভারে যেত। ফলে এক পাশে কথা বললে অন্য পাশে তা শোনা যেত। টেলিফোনের আবিষ্কার আমাদের জীবনের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দিয়েছে। কে জানত এই প্রদর্শনের প্রায় শত বছর পর এমনই আরেক যোগাযোগ যন্ত্র হাজির হবে অন্য দেশে আয়োজিত কোনো মেলায়, যা পুরো যোগাযোগের ধারণাটিকেই খোলনলচে বদলে দেবে।
বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ ছাড়া একটা দিনও কি এখন কল্পনা করা যায়। কিন্তু মানুষের ইতিহাসে বিদ্যুতের গল্প তো এই সেদিনের। থমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন, যার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল। এডিসন ও ওয়েস্টিংহাউস তাঁদের সিস্টেম এক্সপোতে ১৮৯৩ সালে সফলভাবে শিকাগোকে এর ব্যবহার শুরু করেন, যা আমাদের জীবন আমূল বদলে দিল।
আধুনিক গাড়ি
টয়োটা প্রাইসের প্রায় এক শতাব্দী আগে এবং টেসলা প্রতিষ্ঠার ১০৩ বছর আগে লুডভিগ লোহনার ও ফার্ডিনান্ড পোরশে তাঁদের বৈদ্যুতিক মোটরচালিত গাড়ি নিয়ে ১৯০০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে এসেছিলেন, যা পৃথিবীর গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আজকের অটোমোবাইল শিল্প যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, তার গোড়াপত্তনটি হয়েছিল এই বৈদ্যুতিক গাড়ি দিয়েই।
এক্স-রে মেশিন
বর্তমানে আমরা বেশিরভাগই এক্স-রে মেশিনের সঙ্গে পরিচিত। প্রথম সেন্ট লুইতে ১৯০৪ সালের এক্সপোতে মানুষ এর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। তার আগের এক দশকের শ্রম জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেম রন্টজেন ১৮৯৫ সালে হঠাৎ করে আবিষ্কার করে বসেন রঞ্জন রশ্মী বা বহুল পরিচিত এক্স–রে, যা তাঁকে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেলবিজয়ীর সম্মান এনে দেয়।
হ্যামবার্গার
সেন্ট লুইসে ১৯০৪ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে প্রথম হ্যামবার্গার প্রদর্শিত হয়। শিল্পবিপ্লবের ফল হিসেবে এই ফাস্টফুডের মঞ্চে আবির্ভাবের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। খাবারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল এই হ্যামবার্গার। আজকের এই ফাস্টফুড দুনিয়ার যে বাড়বাড়ন্তি তার শুরুটা এর হাত ধরেই হয়েছিল বললে, তেমন অত্যুক্তি হবে না।
টেলিভিশন সম্প্রচার
টেলিভিশন সম্প্রচার ১৯৩৯ সালে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের রেডিও করপোরেশন (আরসিএ) প্যাভিলিয়ন প্রথম এটি নিয়ে আসে। যদিও সে সময়ের টিভি সেটগুলোর মূল্য তখন বেশি ছিল। তা তো থাকবেই। কারণ, এই বঙ্গদেশেই তো এমনকি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত টেলিভিশনের লাইসেন্স নবায়নের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিল। খুব কম লোকই এই বাধ্যবাধকতা মেনে চললেও এমন বিধির অস্তিত্বই বলে দেয় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৩৯ সালে প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচারটি করেছিল এনবিসি, যা ধারণ করা হয়েছিল নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে। সে সময় পৃথিবীর রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্কে টিভিসেট ছিল ১০০টিরও কম।
ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি
আধুনিক আড়িপাতা যন্ত্রের উত্থানটি যে প্রযুক্তির হাত ধরে হয়েছিল, তা প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল ১৯৬২ সালের সিয়াটল ওয়ার্ল্ড’স ফেয়ারে। সেবারের মেলায় বিশ্বখ্যাত কোম্পানি আইবিএমের প্রকৌশলী উইলিয়াম ডার্শ জুতোর বাক্স আকৃতির একটি যন্ত্র নিয়ে আসেন। দেখতে নিরীহ এই যন্ত্র ১৬টি শব্দ চিনতে পারত এবং সেই শব্দের সূত্র ধরে সঠিক অঙ্ক কষে উত্তর দিতে পারত। সে সময়ই বিজ্ঞানীরা ভিবষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, একদিন হয়তো এ যন্ত্র আড়িপাতার কাজে ব্যবহৃত হবে। বিজ্ঞানীরা আদতেই আগেভাগে ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া লোক।
চাকাহীন ট্রেন
নাম লেভাট্রেন। ১৯৬২ সালের এক্সপোতে এই নামেরই এক চাকাহীন ট্রেন নিয়ে এল ফোর্ড কোম্পানি। চৌম্বকীয় শক্তি দিয়ে চালিত এই ট্রেনই আজকের গতির দুনিয়ার অন্যতম আশ্রয়স্থল।
ইউরি গ্যাগারিন, মহাকাশে প্রথম মানুষ
মহাশূন্যে প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন। মহাশূন্যের অভিজ্ঞতা নিতে যাত্রী হিসেবেই শুধু মহাশূন্যে গেলেও এটা এক বড় ঘটনার জন্ম দেয়। কারণ, এর মধ্য দিয়ে মহাশূন্যে মানুষের টিকে থাকার উপযোগী ক্যাপস্যুলের কার্যকারিতা এ থেকে প্রমাণিত হয়েছিল।
রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি
সিকোর রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি (আরসিসি) সিস্টেমটি জাপানের অভিনব একটি আবিষ্কার, যা ১৯৭০ সালের এক্সপোতে প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রতি হাজার বছরে এক সেকেন্ডের ত্রুটির হারের সঙ্গে একটি পারমাণবিক মাস্টার ক্লক জুড়ে দিয়ে প্রদর্শনস্থলের চারপাশে ১১০টি ঘড়িতে তারহীন রেডিও তরঙ্গ পাঠিয়ে সময় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে যে যেখানেই থাকুক না কেন, একই সময় দেখতে পেত। আজকের জিপিএস প্রযুক্তির যুগেও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সুনির্দিষ্ট ও সঠিক সময় পেতে নানা ডিভাইসের সঙ্গে এই আরসিসি বা রেডিও নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি সংযুক্ত রাখা হয়।
তারবিহীন ফোন
জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের এক্সপোর ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্যাভিলিয়নে গেলে যে কেউ প্লাস্টিকের ছোট ছোট দোলনায় বসে সেখানে সংযুক্ত তারহীন ফোনে জাপানের যেকোনো অঞ্চলে কথা বলতে পারত। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আজকের মোবাইল ফোনের আদিমাতার কথঅই বলা হচ্ছে। সে সময় বসে কে আর ভেবেছিল—একদিন মোবাইল ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধনের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।


এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে। ইতিহাসের নানা বাঁক ঘুরে একসময় মানুষ পা রাখল আধুনিক যুগে। এ এক বিরাট উত্তরণ। কিন্তু এই যুগের শুরুর সাথে এখনকার পার্থক্য বিস্তর। এই যুগেও এমন কিছু আবিষ্কার আছে, যা মানুষকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকটা। ওয়ার্ল্ড এক্সপোর গত ১৭০ বছরের ইতিহাসে বাঁকবদল এনে দেওয়া এমন বেশ কিছু আবিষ্কারের কথা তুলে এনেছে সিএনএন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড এক্সপোর ইতিহাসে আলোড়ন তোলা নানা আবিষ্কার ও পণ্য এবং পরে মানুষের ইতিহাস বদলে দেওয়ায় এসবের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। আজ থেকে ১৭০ বছর আগে ১৮৫১ সালে লন্ডনে আয়োজিত হয় লন্ডন’স গ্রেট এক্সিবিশন। তারপর থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর এমন আয়োজন হচ্ছে একেকবার একেক দেশে। এবার যেমন এমন মেলা বসেছে দুবাইয়ে, যা গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয়েছি। এই বিশ্বমেলাগুলোর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী পরিচিত হয়েছে এমন সব পণ্য ও ধারণার সঙ্গে, যা ছাড়া এখন একটি দিনও হয়তো কল্পনা করা সম্ভব নয়। অথচ সত্য হচ্ছে, এসব পণ্য ছাড়াও মানুষ একসময় চলেছে। যেমন ১৯৭০ সালের আগে আজকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা মোবাইল ফোন বস্তুটি ছিল না। আর ১৯০১ সালের আগে ছিল না কোনো এক্স–রে মেশিন।
লন্ডনে ১৮৫১ সালে যে গ্রেট এক্সিবিশনের আয়োজন হয়েছিল তা–ই ক্রমে ওয়াল্ড এক্সপোতে রূপ নিয়েছে। খাঁটি বাংলায় বিশ্বমেলা। এই মেলায় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। এর মধ্যে কিছু কিছু এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে, মানুষের জীবনধারাই বদলে দেয় এগুলো। ওয়ার্ল্ড এক্সপোয় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরিবহন থেকে শুরু করে চারুকলা কিংবা বাণিজ্যসহ সবকিছুতেই এক রকম বিপ্লব এনে দিয়েছে।
সর্বশেষ ওয়াল্ড এক্সপো আয়োজিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই), যা মধ্যপ্রাচ্যে হওয়া প্রথম এমন কোনো ইভেন্ট। সর্বশেষ এই এক্সপোয় কী এল, তার হিসাব নেওয়ার আগে দেখা যাক এই আয়োজনের ১৭০ বছরে বিশ্ব কী পেল।
ক্রিস্ট্রাল প্যালেস
ক্রিস্টাল প্যালেস ছিল ১৮৫১ সালের বৃহত্তম কাচের ভবন। এর প্রদর্শন ছিল ১৮৫১ সালে লন্ডনের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। ৬০ লাখেরও বেশি লোক লন্ডনের হাইড পার্কে এই সংরক্ষণাগারটিতে গিয়েছিলেন।
ক্রিস্টাল প্যালেস মডিউলার নির্মাণ ও আজকের কাচের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল।
সিঙ্গার সেলাই মেশিন
সাধারণ মানুষের ব্যবহারবান্ধব সেলাই মেশিন তৈরি হয় ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। এই আবিস্কারের পর টেক্সটাইল শিল্প অভাবিতভাবে এগিয়ে যায়। ঘটনাটি বেশ মজার। বর্তমান যে হাতে চালানো সেলাই মেশিন দেখা যায়, তার শুরুটা হয়েছিল আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। চেনা গেল? হ্যাঁ, সিঙ্গার মেশিন। এখন যা একটি ব্র্যান্ড, তার শুরুটা মূলত এই আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। ১৮৫১ সালে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে সিঙ্গারকে ডাকা হয় একটি সেলাই মেশিন মেরামতের জন্য। সেই মিশেনটির নকশাকার ছিলেন লিরো ও ব্লোজেট। পুরো বিষয়টি দেখেশুনে সিঙ্গার বুঝলেন নকশায় বড় ধরনের গলদ রয়েছে। নিজেই করে ফেললেন নতুন নকশা, যা বিশ্বের সেলাইয়ের ইতিহাসটিই বদলে দিল। তারপর পেটেন্ট নিয়ে ঝামেলা শেষে পরের প্যারিস এক্সপোয় তুললেন মেশিনটি। ব্যাস, হয়ে গেল। সেই থেকে চলছে হাতে চালিত সেলাই মেশিনের চাকা।
প্লাস্টিক
পরিবেশের কথা উঠলেই প্লাস্টিকের বদনাম। কিন্তু ভাবুন আজকের একটি প্লাস্টিকবিহীন দিন। ভাবুন এই পদার্থটি না থাকলে কত দামে কী কী কিনতে হতো আপনাকে। কৃত্রিম প্লাস্টিকের যাত্রা শুরু ১৮৬২ সালে। একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বলবার সুযোগ নেই অবশ্য। যেমন সুযোগ নেই সুনিশ্চিত করে এর আবিষ্কারকের নামটি বলার। মোটাদাগে ১৮৬০ ও ৭০–এর দশকে প্রথম কৃত্রিম প্লাস্টিক সেলুলয়েডের আবিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের জন ওয়েসলি হ্যাট বা ইংরেজ উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার পার্কসকে কৃত্রিম প্লাস্টিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ১৮৬২ সাল তবে কেন? হ্যাঁ ওই বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে পার্কস নিয়ে এলেন নিজের তৈরি পার্কেসাইন। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হলো বলা যায় আজকের গণ উৎপাদনের ধারণার। একই নামে পার্কস একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেও তা টেকেনি। কিন্তু বহাল তবিয়তে টিকে আছে তাঁর আনা প্লাস্টিকের ধারণা।
ওয়াশিং মেশিন
রিচার্ড ল্যানসডেল ১৮৬২ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে যখন তাঁর ওয়াশিং মেশিনটি উপস্থাপন করেছিলেন, তখন তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে উত্তরসূরীদের পারিবারিক জীবনে এ ঘূর্ণায়মান যন্ত্রটি কতটা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। ওই মেশিনটি অবশ্য হাতে মানুষকেই চালাতে হতো। কিন্তু ২০ শতকের ইলেকট্রিক ওয়াশিং মেশিনের ভিতটি গড়ে দিয়েছিলেন ল্যানসডেলই। তাই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটি হাতে তুলে নেওয়ার আগে অন্তত একবার ল্যানসডেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিন।
ইঞ্জিন
অন্তর্দহ ইঞ্জিন। ১৮৬০ সালে বেলজিয়ামের উদ্ভাবক এতিয়েঁ লেনোয়াঁ যখন বাস্প ইঞ্জিনের বদলে অন্য কোনো জ্বালানিতে চলতে সক্ষম এই ইঞ্জিনের খোঁজ দিলেন, তখন হয়তো তিনি নিজেও জানতেন না কতটা বদলের খোঁজ দিলেন তিনি। সে সময় যে দুই ধাপের (টু–স্ট্রোক) ইঞ্জিন তিনি নিয়ে এলেন, তার কর্মদক্ষতা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু এত কম দক্ষতাও এর জনপ্রিয়তার পথে বাধা হতে পারেনি। দু বছর পর আয়োজিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে তিনি তুললেন এটি। তারপর ইতিহাস।
টেলিফোন
ফিলাডেলফিয়ায় ১৮৭৬ সালে অনুষ্ঠিত মেলার বড় চমক ছিল টেলিফোন। স্কটিশ উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এক্সপোতে এই যন্ত্রের প্রদর্শন করেছিলেন। এর দুটি প্রান্ত ছিল—ট্রান্সমিটার ও রিসিভার। যখন কেউ ট্রান্সমিটারে কথা বলত, তখন শব্দটির কম্পনগুলি বৈদ্যুতিন প্রবাহে রূপান্তরিত হয়ে তারের মাধ্যমে রিসিভারে যেত। ফলে এক পাশে কথা বললে অন্য পাশে তা শোনা যেত। টেলিফোনের আবিষ্কার আমাদের জীবনের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দিয়েছে। কে জানত এই প্রদর্শনের প্রায় শত বছর পর এমনই আরেক যোগাযোগ যন্ত্র হাজির হবে অন্য দেশে আয়োজিত কোনো মেলায়, যা পুরো যোগাযোগের ধারণাটিকেই খোলনলচে বদলে দেবে।
বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ ছাড়া একটা দিনও কি এখন কল্পনা করা যায়। কিন্তু মানুষের ইতিহাসে বিদ্যুতের গল্প তো এই সেদিনের। থমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন, যার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল। এডিসন ও ওয়েস্টিংহাউস তাঁদের সিস্টেম এক্সপোতে ১৮৯৩ সালে সফলভাবে শিকাগোকে এর ব্যবহার শুরু করেন, যা আমাদের জীবন আমূল বদলে দিল।
আধুনিক গাড়ি
টয়োটা প্রাইসের প্রায় এক শতাব্দী আগে এবং টেসলা প্রতিষ্ঠার ১০৩ বছর আগে লুডভিগ লোহনার ও ফার্ডিনান্ড পোরশে তাঁদের বৈদ্যুতিক মোটরচালিত গাড়ি নিয়ে ১৯০০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে এসেছিলেন, যা পৃথিবীর গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আজকের অটোমোবাইল শিল্প যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, তার গোড়াপত্তনটি হয়েছিল এই বৈদ্যুতিক গাড়ি দিয়েই।
এক্স-রে মেশিন
বর্তমানে আমরা বেশিরভাগই এক্স-রে মেশিনের সঙ্গে পরিচিত। প্রথম সেন্ট লুইতে ১৯০৪ সালের এক্সপোতে মানুষ এর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। তার আগের এক দশকের শ্রম জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেম রন্টজেন ১৮৯৫ সালে হঠাৎ করে আবিষ্কার করে বসেন রঞ্জন রশ্মী বা বহুল পরিচিত এক্স–রে, যা তাঁকে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেলবিজয়ীর সম্মান এনে দেয়।
হ্যামবার্গার
সেন্ট লুইসে ১৯০৪ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে প্রথম হ্যামবার্গার প্রদর্শিত হয়। শিল্পবিপ্লবের ফল হিসেবে এই ফাস্টফুডের মঞ্চে আবির্ভাবের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। খাবারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল এই হ্যামবার্গার। আজকের এই ফাস্টফুড দুনিয়ার যে বাড়বাড়ন্তি তার শুরুটা এর হাত ধরেই হয়েছিল বললে, তেমন অত্যুক্তি হবে না।
টেলিভিশন সম্প্রচার
টেলিভিশন সম্প্রচার ১৯৩৯ সালে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের রেডিও করপোরেশন (আরসিএ) প্যাভিলিয়ন প্রথম এটি নিয়ে আসে। যদিও সে সময়ের টিভি সেটগুলোর মূল্য তখন বেশি ছিল। তা তো থাকবেই। কারণ, এই বঙ্গদেশেই তো এমনকি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত টেলিভিশনের লাইসেন্স নবায়নের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিল। খুব কম লোকই এই বাধ্যবাধকতা মেনে চললেও এমন বিধির অস্তিত্বই বলে দেয় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৩৯ সালে প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচারটি করেছিল এনবিসি, যা ধারণ করা হয়েছিল নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে। সে সময় পৃথিবীর রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্কে টিভিসেট ছিল ১০০টিরও কম।
ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি
আধুনিক আড়িপাতা যন্ত্রের উত্থানটি যে প্রযুক্তির হাত ধরে হয়েছিল, তা প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল ১৯৬২ সালের সিয়াটল ওয়ার্ল্ড’স ফেয়ারে। সেবারের মেলায় বিশ্বখ্যাত কোম্পানি আইবিএমের প্রকৌশলী উইলিয়াম ডার্শ জুতোর বাক্স আকৃতির একটি যন্ত্র নিয়ে আসেন। দেখতে নিরীহ এই যন্ত্র ১৬টি শব্দ চিনতে পারত এবং সেই শব্দের সূত্র ধরে সঠিক অঙ্ক কষে উত্তর দিতে পারত। সে সময়ই বিজ্ঞানীরা ভিবষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, একদিন হয়তো এ যন্ত্র আড়িপাতার কাজে ব্যবহৃত হবে। বিজ্ঞানীরা আদতেই আগেভাগে ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া লোক।
চাকাহীন ট্রেন
নাম লেভাট্রেন। ১৯৬২ সালের এক্সপোতে এই নামেরই এক চাকাহীন ট্রেন নিয়ে এল ফোর্ড কোম্পানি। চৌম্বকীয় শক্তি দিয়ে চালিত এই ট্রেনই আজকের গতির দুনিয়ার অন্যতম আশ্রয়স্থল।
ইউরি গ্যাগারিন, মহাকাশে প্রথম মানুষ
মহাশূন্যে প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন। মহাশূন্যের অভিজ্ঞতা নিতে যাত্রী হিসেবেই শুধু মহাশূন্যে গেলেও এটা এক বড় ঘটনার জন্ম দেয়। কারণ, এর মধ্য দিয়ে মহাশূন্যে মানুষের টিকে থাকার উপযোগী ক্যাপস্যুলের কার্যকারিতা এ থেকে প্রমাণিত হয়েছিল।
রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি
সিকোর রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি (আরসিসি) সিস্টেমটি জাপানের অভিনব একটি আবিষ্কার, যা ১৯৭০ সালের এক্সপোতে প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রতি হাজার বছরে এক সেকেন্ডের ত্রুটির হারের সঙ্গে একটি পারমাণবিক মাস্টার ক্লক জুড়ে দিয়ে প্রদর্শনস্থলের চারপাশে ১১০টি ঘড়িতে তারহীন রেডিও তরঙ্গ পাঠিয়ে সময় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে যে যেখানেই থাকুক না কেন, একই সময় দেখতে পেত। আজকের জিপিএস প্রযুক্তির যুগেও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সুনির্দিষ্ট ও সঠিক সময় পেতে নানা ডিভাইসের সঙ্গে এই আরসিসি বা রেডিও নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি সংযুক্ত রাখা হয়।
তারবিহীন ফোন
জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের এক্সপোর ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্যাভিলিয়নে গেলে যে কেউ প্লাস্টিকের ছোট ছোট দোলনায় বসে সেখানে সংযুক্ত তারহীন ফোনে জাপানের যেকোনো অঞ্চলে কথা বলতে পারত। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আজকের মোবাইল ফোনের আদিমাতার কথঅই বলা হচ্ছে। সে সময় বসে কে আর ভেবেছিল—একদিন মোবাইল ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধনের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।

মৃত্তিকা পণ্ডিত

এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে। ইতিহাসের নানা বাঁক ঘুরে একসময় মানুষ পা রাখল আধুনিক যুগে। এ এক বিরাট উত্তরণ। কিন্তু এই যুগের শুরুর সাথে এখনকার পার্থক্য বিস্তর। এই যুগেও এমন কিছু আবিষ্কার আছে, যা মানুষকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকটা। ওয়ার্ল্ড এক্সপোর গত ১৭০ বছরের ইতিহাসে বাঁকবদল এনে দেওয়া এমন বেশ কিছু আবিষ্কারের কথা তুলে এনেছে সিএনএন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড এক্সপোর ইতিহাসে আলোড়ন তোলা নানা আবিষ্কার ও পণ্য এবং পরে মানুষের ইতিহাস বদলে দেওয়ায় এসবের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। আজ থেকে ১৭০ বছর আগে ১৮৫১ সালে লন্ডনে আয়োজিত হয় লন্ডন’স গ্রেট এক্সিবিশন। তারপর থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর এমন আয়োজন হচ্ছে একেকবার একেক দেশে। এবার যেমন এমন মেলা বসেছে দুবাইয়ে, যা গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয়েছি। এই বিশ্বমেলাগুলোর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী পরিচিত হয়েছে এমন সব পণ্য ও ধারণার সঙ্গে, যা ছাড়া এখন একটি দিনও হয়তো কল্পনা করা সম্ভব নয়। অথচ সত্য হচ্ছে, এসব পণ্য ছাড়াও মানুষ একসময় চলেছে। যেমন ১৯৭০ সালের আগে আজকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা মোবাইল ফোন বস্তুটি ছিল না। আর ১৯০১ সালের আগে ছিল না কোনো এক্স–রে মেশিন।
লন্ডনে ১৮৫১ সালে যে গ্রেট এক্সিবিশনের আয়োজন হয়েছিল তা–ই ক্রমে ওয়াল্ড এক্সপোতে রূপ নিয়েছে। খাঁটি বাংলায় বিশ্বমেলা। এই মেলায় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। এর মধ্যে কিছু কিছু এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে, মানুষের জীবনধারাই বদলে দেয় এগুলো। ওয়ার্ল্ড এক্সপোয় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরিবহন থেকে শুরু করে চারুকলা কিংবা বাণিজ্যসহ সবকিছুতেই এক রকম বিপ্লব এনে দিয়েছে।
সর্বশেষ ওয়াল্ড এক্সপো আয়োজিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই), যা মধ্যপ্রাচ্যে হওয়া প্রথম এমন কোনো ইভেন্ট। সর্বশেষ এই এক্সপোয় কী এল, তার হিসাব নেওয়ার আগে দেখা যাক এই আয়োজনের ১৭০ বছরে বিশ্ব কী পেল।
ক্রিস্ট্রাল প্যালেস
ক্রিস্টাল প্যালেস ছিল ১৮৫১ সালের বৃহত্তম কাচের ভবন। এর প্রদর্শন ছিল ১৮৫১ সালে লন্ডনের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। ৬০ লাখেরও বেশি লোক লন্ডনের হাইড পার্কে এই সংরক্ষণাগারটিতে গিয়েছিলেন।
ক্রিস্টাল প্যালেস মডিউলার নির্মাণ ও আজকের কাচের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল।
সিঙ্গার সেলাই মেশিন
সাধারণ মানুষের ব্যবহারবান্ধব সেলাই মেশিন তৈরি হয় ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। এই আবিস্কারের পর টেক্সটাইল শিল্প অভাবিতভাবে এগিয়ে যায়। ঘটনাটি বেশ মজার। বর্তমান যে হাতে চালানো সেলাই মেশিন দেখা যায়, তার শুরুটা হয়েছিল আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। চেনা গেল? হ্যাঁ, সিঙ্গার মেশিন। এখন যা একটি ব্র্যান্ড, তার শুরুটা মূলত এই আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। ১৮৫১ সালে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে সিঙ্গারকে ডাকা হয় একটি সেলাই মেশিন মেরামতের জন্য। সেই মিশেনটির নকশাকার ছিলেন লিরো ও ব্লোজেট। পুরো বিষয়টি দেখেশুনে সিঙ্গার বুঝলেন নকশায় বড় ধরনের গলদ রয়েছে। নিজেই করে ফেললেন নতুন নকশা, যা বিশ্বের সেলাইয়ের ইতিহাসটিই বদলে দিল। তারপর পেটেন্ট নিয়ে ঝামেলা শেষে পরের প্যারিস এক্সপোয় তুললেন মেশিনটি। ব্যাস, হয়ে গেল। সেই থেকে চলছে হাতে চালিত সেলাই মেশিনের চাকা।
প্লাস্টিক
পরিবেশের কথা উঠলেই প্লাস্টিকের বদনাম। কিন্তু ভাবুন আজকের একটি প্লাস্টিকবিহীন দিন। ভাবুন এই পদার্থটি না থাকলে কত দামে কী কী কিনতে হতো আপনাকে। কৃত্রিম প্লাস্টিকের যাত্রা শুরু ১৮৬২ সালে। একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বলবার সুযোগ নেই অবশ্য। যেমন সুযোগ নেই সুনিশ্চিত করে এর আবিষ্কারকের নামটি বলার। মোটাদাগে ১৮৬০ ও ৭০–এর দশকে প্রথম কৃত্রিম প্লাস্টিক সেলুলয়েডের আবিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের জন ওয়েসলি হ্যাট বা ইংরেজ উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার পার্কসকে কৃত্রিম প্লাস্টিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ১৮৬২ সাল তবে কেন? হ্যাঁ ওই বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে পার্কস নিয়ে এলেন নিজের তৈরি পার্কেসাইন। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হলো বলা যায় আজকের গণ উৎপাদনের ধারণার। একই নামে পার্কস একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেও তা টেকেনি। কিন্তু বহাল তবিয়তে টিকে আছে তাঁর আনা প্লাস্টিকের ধারণা।
ওয়াশিং মেশিন
রিচার্ড ল্যানসডেল ১৮৬২ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে যখন তাঁর ওয়াশিং মেশিনটি উপস্থাপন করেছিলেন, তখন তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে উত্তরসূরীদের পারিবারিক জীবনে এ ঘূর্ণায়মান যন্ত্রটি কতটা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। ওই মেশিনটি অবশ্য হাতে মানুষকেই চালাতে হতো। কিন্তু ২০ শতকের ইলেকট্রিক ওয়াশিং মেশিনের ভিতটি গড়ে দিয়েছিলেন ল্যানসডেলই। তাই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটি হাতে তুলে নেওয়ার আগে অন্তত একবার ল্যানসডেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিন।
ইঞ্জিন
অন্তর্দহ ইঞ্জিন। ১৮৬০ সালে বেলজিয়ামের উদ্ভাবক এতিয়েঁ লেনোয়াঁ যখন বাস্প ইঞ্জিনের বদলে অন্য কোনো জ্বালানিতে চলতে সক্ষম এই ইঞ্জিনের খোঁজ দিলেন, তখন হয়তো তিনি নিজেও জানতেন না কতটা বদলের খোঁজ দিলেন তিনি। সে সময় যে দুই ধাপের (টু–স্ট্রোক) ইঞ্জিন তিনি নিয়ে এলেন, তার কর্মদক্ষতা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু এত কম দক্ষতাও এর জনপ্রিয়তার পথে বাধা হতে পারেনি। দু বছর পর আয়োজিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে তিনি তুললেন এটি। তারপর ইতিহাস।
টেলিফোন
ফিলাডেলফিয়ায় ১৮৭৬ সালে অনুষ্ঠিত মেলার বড় চমক ছিল টেলিফোন। স্কটিশ উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এক্সপোতে এই যন্ত্রের প্রদর্শন করেছিলেন। এর দুটি প্রান্ত ছিল—ট্রান্সমিটার ও রিসিভার। যখন কেউ ট্রান্সমিটারে কথা বলত, তখন শব্দটির কম্পনগুলি বৈদ্যুতিন প্রবাহে রূপান্তরিত হয়ে তারের মাধ্যমে রিসিভারে যেত। ফলে এক পাশে কথা বললে অন্য পাশে তা শোনা যেত। টেলিফোনের আবিষ্কার আমাদের জীবনের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দিয়েছে। কে জানত এই প্রদর্শনের প্রায় শত বছর পর এমনই আরেক যোগাযোগ যন্ত্র হাজির হবে অন্য দেশে আয়োজিত কোনো মেলায়, যা পুরো যোগাযোগের ধারণাটিকেই খোলনলচে বদলে দেবে।
বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ ছাড়া একটা দিনও কি এখন কল্পনা করা যায়। কিন্তু মানুষের ইতিহাসে বিদ্যুতের গল্প তো এই সেদিনের। থমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন, যার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল। এডিসন ও ওয়েস্টিংহাউস তাঁদের সিস্টেম এক্সপোতে ১৮৯৩ সালে সফলভাবে শিকাগোকে এর ব্যবহার শুরু করেন, যা আমাদের জীবন আমূল বদলে দিল।
আধুনিক গাড়ি
টয়োটা প্রাইসের প্রায় এক শতাব্দী আগে এবং টেসলা প্রতিষ্ঠার ১০৩ বছর আগে লুডভিগ লোহনার ও ফার্ডিনান্ড পোরশে তাঁদের বৈদ্যুতিক মোটরচালিত গাড়ি নিয়ে ১৯০০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে এসেছিলেন, যা পৃথিবীর গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আজকের অটোমোবাইল শিল্প যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, তার গোড়াপত্তনটি হয়েছিল এই বৈদ্যুতিক গাড়ি দিয়েই।
এক্স-রে মেশিন
বর্তমানে আমরা বেশিরভাগই এক্স-রে মেশিনের সঙ্গে পরিচিত। প্রথম সেন্ট লুইতে ১৯০৪ সালের এক্সপোতে মানুষ এর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। তার আগের এক দশকের শ্রম জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেম রন্টজেন ১৮৯৫ সালে হঠাৎ করে আবিষ্কার করে বসেন রঞ্জন রশ্মী বা বহুল পরিচিত এক্স–রে, যা তাঁকে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেলবিজয়ীর সম্মান এনে দেয়।
হ্যামবার্গার
সেন্ট লুইসে ১৯০৪ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে প্রথম হ্যামবার্গার প্রদর্শিত হয়। শিল্পবিপ্লবের ফল হিসেবে এই ফাস্টফুডের মঞ্চে আবির্ভাবের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। খাবারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল এই হ্যামবার্গার। আজকের এই ফাস্টফুড দুনিয়ার যে বাড়বাড়ন্তি তার শুরুটা এর হাত ধরেই হয়েছিল বললে, তেমন অত্যুক্তি হবে না।
টেলিভিশন সম্প্রচার
টেলিভিশন সম্প্রচার ১৯৩৯ সালে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের রেডিও করপোরেশন (আরসিএ) প্যাভিলিয়ন প্রথম এটি নিয়ে আসে। যদিও সে সময়ের টিভি সেটগুলোর মূল্য তখন বেশি ছিল। তা তো থাকবেই। কারণ, এই বঙ্গদেশেই তো এমনকি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত টেলিভিশনের লাইসেন্স নবায়নের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিল। খুব কম লোকই এই বাধ্যবাধকতা মেনে চললেও এমন বিধির অস্তিত্বই বলে দেয় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৩৯ সালে প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচারটি করেছিল এনবিসি, যা ধারণ করা হয়েছিল নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে। সে সময় পৃথিবীর রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্কে টিভিসেট ছিল ১০০টিরও কম।
ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি
আধুনিক আড়িপাতা যন্ত্রের উত্থানটি যে প্রযুক্তির হাত ধরে হয়েছিল, তা প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল ১৯৬২ সালের সিয়াটল ওয়ার্ল্ড’স ফেয়ারে। সেবারের মেলায় বিশ্বখ্যাত কোম্পানি আইবিএমের প্রকৌশলী উইলিয়াম ডার্শ জুতোর বাক্স আকৃতির একটি যন্ত্র নিয়ে আসেন। দেখতে নিরীহ এই যন্ত্র ১৬টি শব্দ চিনতে পারত এবং সেই শব্দের সূত্র ধরে সঠিক অঙ্ক কষে উত্তর দিতে পারত। সে সময়ই বিজ্ঞানীরা ভিবষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, একদিন হয়তো এ যন্ত্র আড়িপাতার কাজে ব্যবহৃত হবে। বিজ্ঞানীরা আদতেই আগেভাগে ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া লোক।
চাকাহীন ট্রেন
নাম লেভাট্রেন। ১৯৬২ সালের এক্সপোতে এই নামেরই এক চাকাহীন ট্রেন নিয়ে এল ফোর্ড কোম্পানি। চৌম্বকীয় শক্তি দিয়ে চালিত এই ট্রেনই আজকের গতির দুনিয়ার অন্যতম আশ্রয়স্থল।
ইউরি গ্যাগারিন, মহাকাশে প্রথম মানুষ
মহাশূন্যে প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন। মহাশূন্যের অভিজ্ঞতা নিতে যাত্রী হিসেবেই শুধু মহাশূন্যে গেলেও এটা এক বড় ঘটনার জন্ম দেয়। কারণ, এর মধ্য দিয়ে মহাশূন্যে মানুষের টিকে থাকার উপযোগী ক্যাপস্যুলের কার্যকারিতা এ থেকে প্রমাণিত হয়েছিল।
রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি
সিকোর রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি (আরসিসি) সিস্টেমটি জাপানের অভিনব একটি আবিষ্কার, যা ১৯৭০ সালের এক্সপোতে প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রতি হাজার বছরে এক সেকেন্ডের ত্রুটির হারের সঙ্গে একটি পারমাণবিক মাস্টার ক্লক জুড়ে দিয়ে প্রদর্শনস্থলের চারপাশে ১১০টি ঘড়িতে তারহীন রেডিও তরঙ্গ পাঠিয়ে সময় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে যে যেখানেই থাকুক না কেন, একই সময় দেখতে পেত। আজকের জিপিএস প্রযুক্তির যুগেও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সুনির্দিষ্ট ও সঠিক সময় পেতে নানা ডিভাইসের সঙ্গে এই আরসিসি বা রেডিও নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি সংযুক্ত রাখা হয়।
তারবিহীন ফোন
জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের এক্সপোর ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্যাভিলিয়নে গেলে যে কেউ প্লাস্টিকের ছোট ছোট দোলনায় বসে সেখানে সংযুক্ত তারহীন ফোনে জাপানের যেকোনো অঞ্চলে কথা বলতে পারত। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আজকের মোবাইল ফোনের আদিমাতার কথঅই বলা হচ্ছে। সে সময় বসে কে আর ভেবেছিল—একদিন মোবাইল ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধনের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।


এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে। ইতিহাসের নানা বাঁক ঘুরে একসময় মানুষ পা রাখল আধুনিক যুগে। এ এক বিরাট উত্তরণ। কিন্তু এই যুগের শুরুর সাথে এখনকার পার্থক্য বিস্তর। এই যুগেও এমন কিছু আবিষ্কার আছে, যা মানুষকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকটা। ওয়ার্ল্ড এক্সপোর গত ১৭০ বছরের ইতিহাসে বাঁকবদল এনে দেওয়া এমন বেশ কিছু আবিষ্কারের কথা তুলে এনেছে সিএনএন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ওয়ার্ল্ড এক্সপোর ইতিহাসে আলোড়ন তোলা নানা আবিষ্কার ও পণ্য এবং পরে মানুষের ইতিহাস বদলে দেওয়ায় এসবের প্রভাব তুলে ধরা হয়েছে। আজ থেকে ১৭০ বছর আগে ১৮৫১ সালে লন্ডনে আয়োজিত হয় লন্ডন’স গ্রেট এক্সিবিশন। তারপর থেকে প্রতি পাঁচ বছর পর এমন আয়োজন হচ্ছে একেকবার একেক দেশে। এবার যেমন এমন মেলা বসেছে দুবাইয়ে, যা গত বছরের অক্টোবরে শুরু হয়েছি। এই বিশ্বমেলাগুলোর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসী পরিচিত হয়েছে এমন সব পণ্য ও ধারণার সঙ্গে, যা ছাড়া এখন একটি দিনও হয়তো কল্পনা করা সম্ভব নয়। অথচ সত্য হচ্ছে, এসব পণ্য ছাড়াও মানুষ একসময় চলেছে। যেমন ১৯৭০ সালের আগে আজকের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠা মোবাইল ফোন বস্তুটি ছিল না। আর ১৯০১ সালের আগে ছিল না কোনো এক্স–রে মেশিন।
লন্ডনে ১৮৫১ সালে যে গ্রেট এক্সিবিশনের আয়োজন হয়েছিল তা–ই ক্রমে ওয়াল্ড এক্সপোতে রূপ নিয়েছে। খাঁটি বাংলায় বিশ্বমেলা। এই মেলায় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। এর মধ্যে কিছু কিছু এতটাই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে, মানুষের জীবনধারাই বদলে দেয় এগুলো। ওয়ার্ল্ড এক্সপোয় উঠে আসা নানা আবিষ্কার পরিবহন থেকে শুরু করে চারুকলা কিংবা বাণিজ্যসহ সবকিছুতেই এক রকম বিপ্লব এনে দিয়েছে।
সর্বশেষ ওয়াল্ড এক্সপো আয়োজিত হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই), যা মধ্যপ্রাচ্যে হওয়া প্রথম এমন কোনো ইভেন্ট। সর্বশেষ এই এক্সপোয় কী এল, তার হিসাব নেওয়ার আগে দেখা যাক এই আয়োজনের ১৭০ বছরে বিশ্ব কী পেল।
ক্রিস্ট্রাল প্যালেস
ক্রিস্টাল প্যালেস ছিল ১৮৫১ সালের বৃহত্তম কাচের ভবন। এর প্রদর্শন ছিল ১৮৫১ সালে লন্ডনের সবচেয়ে বড় প্রদর্শনী। ৬০ লাখেরও বেশি লোক লন্ডনের হাইড পার্কে এই সংরক্ষণাগারটিতে গিয়েছিলেন।
ক্রিস্টাল প্যালেস মডিউলার নির্মাণ ও আজকের কাচের ভবন তৈরির ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল।
সিঙ্গার সেলাই মেশিন
সাধারণ মানুষের ব্যবহারবান্ধব সেলাই মেশিন তৈরি হয় ১৯ শতকের গোড়ার দিকে। এই আবিস্কারের পর টেক্সটাইল শিল্প অভাবিতভাবে এগিয়ে যায়। ঘটনাটি বেশ মজার। বর্তমান যে হাতে চালানো সেলাই মেশিন দেখা যায়, তার শুরুটা হয়েছিল আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। চেনা গেল? হ্যাঁ, সিঙ্গার মেশিন। এখন যা একটি ব্র্যান্ড, তার শুরুটা মূলত এই আইজ্যাক মেরিট সিঙ্গারের হাতে। ১৮৫১ সালে ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে সিঙ্গারকে ডাকা হয় একটি সেলাই মেশিন মেরামতের জন্য। সেই মিশেনটির নকশাকার ছিলেন লিরো ও ব্লোজেট। পুরো বিষয়টি দেখেশুনে সিঙ্গার বুঝলেন নকশায় বড় ধরনের গলদ রয়েছে। নিজেই করে ফেললেন নতুন নকশা, যা বিশ্বের সেলাইয়ের ইতিহাসটিই বদলে দিল। তারপর পেটেন্ট নিয়ে ঝামেলা শেষে পরের প্যারিস এক্সপোয় তুললেন মেশিনটি। ব্যাস, হয়ে গেল। সেই থেকে চলছে হাতে চালিত সেলাই মেশিনের চাকা।
প্লাস্টিক
পরিবেশের কথা উঠলেই প্লাস্টিকের বদনাম। কিন্তু ভাবুন আজকের একটি প্লাস্টিকবিহীন দিন। ভাবুন এই পদার্থটি না থাকলে কত দামে কী কী কিনতে হতো আপনাকে। কৃত্রিম প্লাস্টিকের যাত্রা শুরু ১৮৬২ সালে। একেবারে সুনির্দিষ্ট করে বলবার সুযোগ নেই অবশ্য। যেমন সুযোগ নেই সুনিশ্চিত করে এর আবিষ্কারকের নামটি বলার। মোটাদাগে ১৮৬০ ও ৭০–এর দশকে প্রথম কৃত্রিম প্লাস্টিক সেলুলয়েডের আবিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্রের জন ওয়েসলি হ্যাট বা ইংরেজ উদ্ভাবক আলেক্সান্ডার পার্কসকে কৃত্রিম প্লাস্টিক আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ১৮৬২ সাল তবে কেন? হ্যাঁ ওই বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে পার্কস নিয়ে এলেন নিজের তৈরি পার্কেসাইন। আর এর মধ্য দিয়েই শুরু হলো বলা যায় আজকের গণ উৎপাদনের ধারণার। একই নামে পার্কস একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করলেও তা টেকেনি। কিন্তু বহাল তবিয়তে টিকে আছে তাঁর আনা প্লাস্টিকের ধারণা।
ওয়াশিং মেশিন
রিচার্ড ল্যানসডেল ১৮৬২ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে যখন তাঁর ওয়াশিং মেশিনটি উপস্থাপন করেছিলেন, তখন তিনি কল্পনাও করতে পারেননি যে উত্তরসূরীদের পারিবারিক জীবনে এ ঘূর্ণায়মান যন্ত্রটি কতটা অপরিহার্য হয়ে উঠবে। ওই মেশিনটি অবশ্য হাতে মানুষকেই চালাতে হতো। কিন্তু ২০ শতকের ইলেকট্রিক ওয়াশিং মেশিনের ভিতটি গড়ে দিয়েছিলেন ল্যানসডেলই। তাই ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে চা খেতে খেতে খবরের কাগজটি হাতে তুলে নেওয়ার আগে অন্তত একবার ল্যানসডেলকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিন।
ইঞ্জিন
অন্তর্দহ ইঞ্জিন। ১৮৬০ সালে বেলজিয়ামের উদ্ভাবক এতিয়েঁ লেনোয়াঁ যখন বাস্প ইঞ্জিনের বদলে অন্য কোনো জ্বালানিতে চলতে সক্ষম এই ইঞ্জিনের খোঁজ দিলেন, তখন হয়তো তিনি নিজেও জানতেন না কতটা বদলের খোঁজ দিলেন তিনি। সে সময় যে দুই ধাপের (টু–স্ট্রোক) ইঞ্জিন তিনি নিয়ে এলেন, তার কর্মদক্ষতা ছিল মাত্র ৪ শতাংশ। কিন্তু এত কম দক্ষতাও এর জনপ্রিয়তার পথে বাধা হতে পারেনি। দু বছর পর আয়োজিত ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে তিনি তুললেন এটি। তারপর ইতিহাস।
টেলিফোন
ফিলাডেলফিয়ায় ১৮৭৬ সালে অনুষ্ঠিত মেলার বড় চমক ছিল টেলিফোন। স্কটিশ উদ্ভাবক আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল এক্সপোতে এই যন্ত্রের প্রদর্শন করেছিলেন। এর দুটি প্রান্ত ছিল—ট্রান্সমিটার ও রিসিভার। যখন কেউ ট্রান্সমিটারে কথা বলত, তখন শব্দটির কম্পনগুলি বৈদ্যুতিন প্রবাহে রূপান্তরিত হয়ে তারের মাধ্যমে রিসিভারে যেত। ফলে এক পাশে কথা বললে অন্য পাশে তা শোনা যেত। টেলিফোনের আবিষ্কার আমাদের জীবনের দূরত্বকে ঘুচিয়ে দিয়েছে। কে জানত এই প্রদর্শনের প্রায় শত বছর পর এমনই আরেক যোগাযোগ যন্ত্র হাজির হবে অন্য দেশে আয়োজিত কোনো মেলায়, যা পুরো যোগাযোগের ধারণাটিকেই খোলনলচে বদলে দেবে।
বিদ্যুৎ
বিদ্যুৎ ছাড়া একটা দিনও কি এখন কল্পনা করা যায়। কিন্তু মানুষের ইতিহাসে বিদ্যুতের গল্প তো এই সেদিনের। থমাস আলভা এডিসন ১৮৭৯ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে বাল্ব আবিষ্কার করেছিলেন, যার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন ছিল। এডিসন ও ওয়েস্টিংহাউস তাঁদের সিস্টেম এক্সপোতে ১৮৯৩ সালে সফলভাবে শিকাগোকে এর ব্যবহার শুরু করেন, যা আমাদের জীবন আমূল বদলে দিল।
আধুনিক গাড়ি
টয়োটা প্রাইসের প্রায় এক শতাব্দী আগে এবং টেসলা প্রতিষ্ঠার ১০৩ বছর আগে লুডভিগ লোহনার ও ফার্ডিনান্ড পোরশে তাঁদের বৈদ্যুতিক মোটরচালিত গাড়ি নিয়ে ১৯০০ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে এসেছিলেন, যা পৃথিবীর গতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আজকের অটোমোবাইল শিল্প যে জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে, তার গোড়াপত্তনটি হয়েছিল এই বৈদ্যুতিক গাড়ি দিয়েই।
এক্স-রে মেশিন
বর্তমানে আমরা বেশিরভাগই এক্স-রে মেশিনের সঙ্গে পরিচিত। প্রথম সেন্ট লুইতে ১৯০৪ সালের এক্সপোতে মানুষ এর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিল। তার আগের এক দশকের শ্রম জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেম রন্টজেন ১৮৯৫ সালে হঠাৎ করে আবিষ্কার করে বসেন রঞ্জন রশ্মী বা বহুল পরিচিত এক্স–রে, যা তাঁকে ১৯০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম নোবেলবিজয়ীর সম্মান এনে দেয়।
হ্যামবার্গার
সেন্ট লুইসে ১৯০৪ সালের ওয়ার্ল্ড এক্সপোতে প্রথম হ্যামবার্গার প্রদর্শিত হয়। শিল্পবিপ্লবের ফল হিসেবে এই ফাস্টফুডের মঞ্চে আবির্ভাবের বিষয়টি সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। খাবারকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল এই হ্যামবার্গার। আজকের এই ফাস্টফুড দুনিয়ার যে বাড়বাড়ন্তি তার শুরুটা এর হাত ধরেই হয়েছিল বললে, তেমন অত্যুক্তি হবে না।
টেলিভিশন সম্প্রচার
টেলিভিশন সম্প্রচার ১৯৩৯ সালে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করে। যুক্তরাষ্ট্রের রেডিও করপোরেশন (আরসিএ) প্যাভিলিয়ন প্রথম এটি নিয়ে আসে। যদিও সে সময়ের টিভি সেটগুলোর মূল্য তখন বেশি ছিল। তা তো থাকবেই। কারণ, এই বঙ্গদেশেই তো এমনকি নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত টেলিভিশনের লাইসেন্স নবায়নের এক ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিল। খুব কম লোকই এই বাধ্যবাধকতা মেনে চললেও এমন বিধির অস্তিত্বই বলে দেয় মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে গণযোগাযোগের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রগতি হয়েছে। ১৯৩৯ সালে প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচারটি করেছিল এনবিসি, যা ধারণ করা হয়েছিল নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে। সে সময় পৃথিবীর রাজধানীখ্যাত নিউইয়র্কে টিভিসেট ছিল ১০০টিরও কম।
ভয়েস রিকগনিশন প্রযুক্তি
আধুনিক আড়িপাতা যন্ত্রের উত্থানটি যে প্রযুক্তির হাত ধরে হয়েছিল, তা প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল ১৯৬২ সালের সিয়াটল ওয়ার্ল্ড’স ফেয়ারে। সেবারের মেলায় বিশ্বখ্যাত কোম্পানি আইবিএমের প্রকৌশলী উইলিয়াম ডার্শ জুতোর বাক্স আকৃতির একটি যন্ত্র নিয়ে আসেন। দেখতে নিরীহ এই যন্ত্র ১৬টি শব্দ চিনতে পারত এবং সেই শব্দের সূত্র ধরে সঠিক অঙ্ক কষে উত্তর দিতে পারত। সে সময়ই বিজ্ঞানীরা ভিবষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, একদিন হয়তো এ যন্ত্র আড়িপাতার কাজে ব্যবহৃত হবে। বিজ্ঞানীরা আদতেই আগেভাগে ভবিষ্যৎ দেখতে পাওয়া লোক।
চাকাহীন ট্রেন
নাম লেভাট্রেন। ১৯৬২ সালের এক্সপোতে এই নামেরই এক চাকাহীন ট্রেন নিয়ে এল ফোর্ড কোম্পানি। চৌম্বকীয় শক্তি দিয়ে চালিত এই ট্রেনই আজকের গতির দুনিয়ার অন্যতম আশ্রয়স্থল।
ইউরি গ্যাগারিন, মহাকাশে প্রথম মানুষ
মহাশূন্যে প্রথম মানুষ ইউরি গ্যাগারিন। মহাশূন্যের অভিজ্ঞতা নিতে যাত্রী হিসেবেই শুধু মহাশূন্যে গেলেও এটা এক বড় ঘটনার জন্ম দেয়। কারণ, এর মধ্য দিয়ে মহাশূন্যে মানুষের টিকে থাকার উপযোগী ক্যাপস্যুলের কার্যকারিতা এ থেকে প্রমাণিত হয়েছিল।
রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি
সিকোর রেডিও-নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি (আরসিসি) সিস্টেমটি জাপানের অভিনব একটি আবিষ্কার, যা ১৯৭০ সালের এক্সপোতে প্রদর্শিত হয়েছিল। প্রতি হাজার বছরে এক সেকেন্ডের ত্রুটির হারের সঙ্গে একটি পারমাণবিক মাস্টার ক্লক জুড়ে দিয়ে প্রদর্শনস্থলের চারপাশে ১১০টি ঘড়িতে তারহীন রেডিও তরঙ্গ পাঠিয়ে সময় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ফলে যে যেখানেই থাকুক না কেন, একই সময় দেখতে পেত। আজকের জিপিএস প্রযুক্তির যুগেও এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। এখনো সুনির্দিষ্ট ও সঠিক সময় পেতে নানা ডিভাইসের সঙ্গে এই আরসিসি বা রেডিও নিয়ন্ত্রিত ঘড়ি সংযুক্ত রাখা হয়।
তারবিহীন ফোন
জাপানের ওসাকায় অনুষ্ঠিত ১৯৭০ সালের এক্সপোর ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশনস প্যাভিলিয়নে গেলে যে কেউ প্লাস্টিকের ছোট ছোট দোলনায় বসে সেখানে সংযুক্ত তারহীন ফোনে জাপানের যেকোনো অঞ্চলে কথা বলতে পারত। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন আজকের মোবাইল ফোনের আদিমাতার কথঅই বলা হচ্ছে। সে সময় বসে কে আর ভেবেছিল—একদিন মোবাইল ব্যবহারকারী হিসেবে নিবন্ধনের সংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে।


সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৩৭ মিনিট আগে
চুলে রং করতে ভালোবাসলেও সবাই পারলারে গিয়ে চুল রং করান না। রং কিনে এনে বাড়িতেই তাঁরা কাজটি সেরে ফেলেন। কিন্তু বাড়িতে রং করলে প্রতিবার চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিমাণ রংও ধুয়ে যায়।
১ ঘণ্টা আগে
কুষ্টিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা। অশ্রু আর্কাইভ ও স্টুডিও শব্দ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করে। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় অশ্রু আর্কাইভ এবং স্মরণ মৎস্য বীজ খামার প্রাঙ্গণে। রোববার ছিল তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন।
৯ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।
২০ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
মেকআপ রিমুভার হিসেবে
বাড়িতে মেকআপ রিমুভার না থাকলে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে দারুণভাবে মেকআপ তোলার কাজটি সেরে নিতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন। এরপর তুলা দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। চোখের মতো স্পর্শকাতর ত্বকের মেকআপ তুলতেও এটি ব্যবহার করা যায়।
নখের সুস্থতায়
নখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ভঙ্গুরতা কমাতে জাদুকরি সমাধান পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি ব্যবহারে নখ সুস্থ থাকে।
সুগন্ধি দীর্ঘস্থায়ী করতে
যেখানে সুগন্ধি দেবেন, সেই জায়গায় আগে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি মালিশ করে নিন। এরপর সেখানে সুগন্ধি স্প্রে করুন। এতে দীর্ঘ সময় ত্বকে ঘ্রাণ স্থায়ী হবে।
ভ্রু ঘন করতে
অনেকের ভ্রু ঝরে পড়ে। এর ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে পেট্রোলিয়াম জেলি। রাতে ঘুমানোর আগে একটা আইব্রো ব্রাশে কিছুটা জেলি নিয়ে ভ্রু যুগলে লাগিয়ে নিন। ধীরে ধীরে ভ্রু ঘন হবে।

হাইলাইটার হিসেবে
মেকআপের পূর্ণতায় এখন প্রায় সবাই হাইলাইটার ব্যবহার করেন। গালে এবং ভ্রুর নিচের ত্বকে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে সেটা হাইলাইটার হিসেবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে
ত্বকে আঘাত পেলে বা ঘা হলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটির ব্যবহারে ক্ষত দ্রুততম সময়ে শুকিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এটি তেলতেলে হওয়ায় ত্বক আর্দ্র থাকে। তাই ক্ষত শুকিয়ে ফেটে যায় না।
সূত্র: ফেমিনা ও অন্যান্য

সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
মেকআপ রিমুভার হিসেবে
বাড়িতে মেকআপ রিমুভার না থাকলে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে দারুণভাবে মেকআপ তোলার কাজটি সেরে নিতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলি নিয়ে পুরো মুখে ম্যাসাজ করুন। এরপর তুলা দিয়ে আলতো করে মুছে নিন। চোখের মতো স্পর্শকাতর ত্বকের মেকআপ তুলতেও এটি ব্যবহার করা যায়।
নখের সুস্থতায়
নখের উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং ভঙ্গুরতা কমাতে জাদুকরি সমাধান পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি ব্যবহারে নখ সুস্থ থাকে।
সুগন্ধি দীর্ঘস্থায়ী করতে
যেখানে সুগন্ধি দেবেন, সেই জায়গায় আগে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি মালিশ করে নিন। এরপর সেখানে সুগন্ধি স্প্রে করুন। এতে দীর্ঘ সময় ত্বকে ঘ্রাণ স্থায়ী হবে।
ভ্রু ঘন করতে
অনেকের ভ্রু ঝরে পড়ে। এর ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে পেট্রোলিয়াম জেলি। রাতে ঘুমানোর আগে একটা আইব্রো ব্রাশে কিছুটা জেলি নিয়ে ভ্রু যুগলে লাগিয়ে নিন। ধীরে ধীরে ভ্রু ঘন হবে।

হাইলাইটার হিসেবে
মেকআপের পূর্ণতায় এখন প্রায় সবাই হাইলাইটার ব্যবহার করেন। গালে এবং ভ্রুর নিচের ত্বকে কিছুটা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে সেটা হাইলাইটার হিসেবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে
ত্বকে আঘাত পেলে বা ঘা হলে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটির ব্যবহারে ক্ষত দ্রুততম সময়ে শুকিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এটি তেলতেলে হওয়ায় ত্বক আর্দ্র থাকে। তাই ক্ষত শুকিয়ে ফেটে যায় না।
সূত্র: ফেমিনা ও অন্যান্য

এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে।
১০ এপ্রিল ২০২১
চুলে রং করতে ভালোবাসলেও সবাই পারলারে গিয়ে চুল রং করান না। রং কিনে এনে বাড়িতেই তাঁরা কাজটি সেরে ফেলেন। কিন্তু বাড়িতে রং করলে প্রতিবার চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিমাণ রংও ধুয়ে যায়।
১ ঘণ্টা আগে
কুষ্টিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা। অশ্রু আর্কাইভ ও স্টুডিও শব্দ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করে। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় অশ্রু আর্কাইভ এবং স্মরণ মৎস্য বীজ খামার প্রাঙ্গণে। রোববার ছিল তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন।
৯ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।
২০ ঘণ্টা আগেফিচার ডেস্ক

চুলে রং করতে ভালোবাসলেও সবাই পারলারে গিয়ে চুল রং করান না। রং কিনে এনে বাড়িতেই তাঁরা কাজটি সেরে ফেলেন। কিন্তু বাড়িতে রং করলে প্রতিবার চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিমাণ রংও ধুয়ে যায়। ফলে রং করা চুল অনেকটাই ফ্যাকাশে হয়ে যায়। যাঁরা বাড়িতেই চুল রাঙান তাঁদের রং করার পর চুল ধোয়া থেকে শুরু করে শুকানোর পদ্ধতিতেও কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি।
সঠিক শ্যাম্পু বাছাই
চুলে রং করার পর প্রথমে কালার প্রোটেকটিভ শ্যাম্পু বাছাই করুন। এই শ্যাম্পুগুলো দীর্ঘদিন চুলে রং বজায় রাখতে সহায়তা করে।
চুলে ঘন ঘন শ্যাম্পু নয়
চুলে রং করার পর সপ্তাহে দু-তিনবার শ্যাম্পু করুন। তবে রোজ বাইরে গেলে প্রয়োজনে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত তেল ব্যবহার
রং করার পর; বিশেষ করে চুলের ডগা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সপ্তাহে অন্তত দুদিন চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত তেল ম্যাসাজ করে নিন।
স্টাইলিং কম করুন
রং করা চুলে স্ট্রেটনার কিংবা কার্লার যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। কারণ, এর ফলে চুল আরও বেশি রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
নিয়ম করে প্যাক মাখুন
পাকা কলা ও মধু পেস্ট করে সপ্তাহে দুদিন চুলে মেখে রাখুন ২০ মিনিট করে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল হবে মসৃণ।
সূত্র: ল’রিয়েল প্যারিস ইউকে ও অন্যান্য

চুলে রং করতে ভালোবাসলেও সবাই পারলারে গিয়ে চুল রং করান না। রং কিনে এনে বাড়িতেই তাঁরা কাজটি সেরে ফেলেন। কিন্তু বাড়িতে রং করলে প্রতিবার চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিমাণ রংও ধুয়ে যায়। ফলে রং করা চুল অনেকটাই ফ্যাকাশে হয়ে যায়। যাঁরা বাড়িতেই চুল রাঙান তাঁদের রং করার পর চুল ধোয়া থেকে শুরু করে শুকানোর পদ্ধতিতেও কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি।
সঠিক শ্যাম্পু বাছাই
চুলে রং করার পর প্রথমে কালার প্রোটেকটিভ শ্যাম্পু বাছাই করুন। এই শ্যাম্পুগুলো দীর্ঘদিন চুলে রং বজায় রাখতে সহায়তা করে।
চুলে ঘন ঘন শ্যাম্পু নয়
চুলে রং করার পর সপ্তাহে দু-তিনবার শ্যাম্পু করুন। তবে রোজ বাইরে গেলে প্রয়োজনে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত তেল ব্যবহার
রং করার পর; বিশেষ করে চুলের ডগা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সপ্তাহে অন্তত দুদিন চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত তেল ম্যাসাজ করে নিন।
স্টাইলিং কম করুন
রং করা চুলে স্ট্রেটনার কিংবা কার্লার যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। কারণ, এর ফলে চুল আরও বেশি রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।
নিয়ম করে প্যাক মাখুন
পাকা কলা ও মধু পেস্ট করে সপ্তাহে দুদিন চুলে মেখে রাখুন ২০ মিনিট করে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল হবে মসৃণ।
সূত্র: ল’রিয়েল প্যারিস ইউকে ও অন্যান্য

এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে।
১০ এপ্রিল ২০২১
সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৩৭ মিনিট আগে
কুষ্টিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা। অশ্রু আর্কাইভ ও স্টুডিও শব্দ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করে। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় অশ্রু আর্কাইভ এবং স্মরণ মৎস্য বীজ খামার প্রাঙ্গণে। রোববার ছিল তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন।
৯ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।
২০ ঘণ্টা আগেকুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা।
অশ্রু আর্কাইভ ও স্টুডিও শব্দ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করে। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় অশ্রু আর্কাইভ এবং স্মরণ মৎস্য বীজ খামার প্রাঙ্গণে। রোববার ছিল তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন।
অশ্রু আর্কাইভের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল কুষ্টিয়ার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সাইনোটাইপ মাধ্যমে নতুনভাবে উপস্থাপন করা এবং স্থানীয় শিল্পচর্চাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা। কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা থেকে আসা বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থীসহ দেশবরেণ্য গুণী শিল্পীরা অংশ নেন।
তিন দিনব্যাপী এই নিবিড় কর্মশালায় মেন্টর ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন স্টুডিও শব্দর কর্ণধার শিল্পী নাজমুল হোসেন নয়ন। অশ্রু আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ কর্মশালা কিউরেট করেন।
কর্মশালার প্রথম দিনে সাইনোটাইপ শিল্পের ইতিহাস ও তাত্ত্বিক দিক তুলে ধরা হয়। পরবর্তী দিনগুলোতে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই সাইনোটাইপ প্রিন্ট তৈরি করার সুযোগ পান। আলো, কেমিক্যাল ও নকশার সঠিক ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
শিল্পী নাজমুল হোসেন নয়ন বলেন, ‘সাইনোটাইপ শুধু একটি বিকল্প ফটোগ্রাফিক প্রক্রিয়া নয়; এটি সময়, স্মৃতি ও স্থানকে ধারণ করার একধরনের নীরব ভাষা।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিল্পী তানজুম নাহার পর্ণা বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী কর্মশালাটি আমাদের জন্য শুধু একটি কারিগরি প্রশিক্ষণই ছিল না; বরং এটি ছিল সময়, স্মৃতি এবং স্থানের সঙ্গে এক গভীর শিল্পভাষার সংযোগ। সাইনোটাইপের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ইতিহাস, লোকজ সংস্কৃতি ও সামাজিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পেয়েছি; বিশেষ করে রাসায়নিকের অনুপাত নির্ধারণ, কোটিং, এক্সপোজার, ওয়াশিং, টোনিং ও ড্রয়িং—প্রতিটি ধাপ হাতেকলমে শেখার অভিজ্ঞতা আমাদের অ্যানালগ ফটোগ্রাফির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও গভীর করেছে।’
কিউরেটর শাওন আকন্দ বলেন, কুষ্টিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি এ ধরনের সৃজনশীল এবং ঐতিহ্যবাহী ফটোগ্রাফিক কার্যক্রম নিয়ে ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে কর্মশালা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
১৮৪২ সালে স্যার জন হার্শেল আবিষ্কৃত সাইনোটাইপ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও ক্যামেরাবিহীন ফটোগ্রাফিক মুদ্রণ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় অতিবেগুনি রশ্মি বা সূর্যালোকের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কাগজ বা কাপড়ে গাঢ় নীল রঙের (প্রুশিয়ান ব্লু) নান্দনিক ছাপ তৈরি করা হয়

কুষ্টিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা।
অশ্রু আর্কাইভ ও স্টুডিও শব্দ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করে। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় অশ্রু আর্কাইভ এবং স্মরণ মৎস্য বীজ খামার প্রাঙ্গণে। রোববার ছিল তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন।
অশ্রু আর্কাইভের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল কুষ্টিয়ার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সাইনোটাইপ মাধ্যমে নতুনভাবে উপস্থাপন করা এবং স্থানীয় শিল্পচর্চাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা। কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা থেকে আসা বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থীসহ দেশবরেণ্য গুণী শিল্পীরা অংশ নেন।
তিন দিনব্যাপী এই নিবিড় কর্মশালায় মেন্টর ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন স্টুডিও শব্দর কর্ণধার শিল্পী নাজমুল হোসেন নয়ন। অশ্রু আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ কর্মশালা কিউরেট করেন।
কর্মশালার প্রথম দিনে সাইনোটাইপ শিল্পের ইতিহাস ও তাত্ত্বিক দিক তুলে ধরা হয়। পরবর্তী দিনগুলোতে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই সাইনোটাইপ প্রিন্ট তৈরি করার সুযোগ পান। আলো, কেমিক্যাল ও নকশার সঠিক ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।
শিল্পী নাজমুল হোসেন নয়ন বলেন, ‘সাইনোটাইপ শুধু একটি বিকল্প ফটোগ্রাফিক প্রক্রিয়া নয়; এটি সময়, স্মৃতি ও স্থানকে ধারণ করার একধরনের নীরব ভাষা।
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিল্পী তানজুম নাহার পর্ণা বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী কর্মশালাটি আমাদের জন্য শুধু একটি কারিগরি প্রশিক্ষণই ছিল না; বরং এটি ছিল সময়, স্মৃতি এবং স্থানের সঙ্গে এক গভীর শিল্পভাষার সংযোগ। সাইনোটাইপের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ইতিহাস, লোকজ সংস্কৃতি ও সামাজিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পেয়েছি; বিশেষ করে রাসায়নিকের অনুপাত নির্ধারণ, কোটিং, এক্সপোজার, ওয়াশিং, টোনিং ও ড্রয়িং—প্রতিটি ধাপ হাতেকলমে শেখার অভিজ্ঞতা আমাদের অ্যানালগ ফটোগ্রাফির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও গভীর করেছে।’
কিউরেটর শাওন আকন্দ বলেন, কুষ্টিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি এ ধরনের সৃজনশীল এবং ঐতিহ্যবাহী ফটোগ্রাফিক কার্যক্রম নিয়ে ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে কর্মশালা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
১৮৪২ সালে স্যার জন হার্শেল আবিষ্কৃত সাইনোটাইপ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও ক্যামেরাবিহীন ফটোগ্রাফিক মুদ্রণ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় অতিবেগুনি রশ্মি বা সূর্যালোকের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কাগজ বা কাপড়ে গাঢ় নীল রঙের (প্রুশিয়ান ব্লু) নান্দনিক ছাপ তৈরি করা হয়

এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে।
১০ এপ্রিল ২০২১
সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৩৭ মিনিট আগে
চুলে রং করতে ভালোবাসলেও সবাই পারলারে গিয়ে চুল রং করান না। রং কিনে এনে বাড়িতেই তাঁরা কাজটি সেরে ফেলেন। কিন্তু বাড়িতে রং করলে প্রতিবার চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিমাণ রংও ধুয়ে যায়।
১ ঘণ্টা আগে
ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।
২০ ঘণ্টা আগেফারিয়া রহমান খান

ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।
নতুন বছরে আপনি কী কী করতে চান, তা এখনই ভেবে ফেলুন। একটু স্থির হয়ে বসে খাতা-কলমে লিখে আপনার নতুন বছরের উদ্দেশ্য স্থির করে নিন। লিখে রাখলে তা বিভিন্নভাবে উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করবে।
পুরোনো বছরকে সুন্দর করে বিদায় দিতেই হোক বা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে—ঘর সাজান সুন্দর করে। কিছু ওয়ার্ম লাইট ও জানালা বা টেবিলে কিছু গাছ রেখে ঘরে দিন একটু উষ্ণতার ছোঁয়া। সঙ্গে পুরোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্য কাউকে দিয়ে দিন। দেখবেন বাসায় একটা শান্ত ও পরিচ্ছন্ন ভাব আসবে।
পিঠা সংস্কৃতির অংশ। তাই ঐতিহ্য ধরে রাখাতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় করে একদিন বিভিন্ন রকম পিঠা বানাতে পারেন। বড় আয়োজন নয়, বরং চা-বিস্কুট আর পিঠা নিয়ে একটি ঘরোয়া আড্ডা জমান। পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করুন। দেখবেন, মন থেকে অনেকখানি ভার নেমে গেছে।
ডিসেম্বরের আবহাওয়া বই পড়ার জন্য উপযুক্ত। ছুটির দিনে দুপুরগুলো কাজে লাগান। গায়ে হালকা কাঁথা জড়িয়ে একটা অলস দুপুর বই পড়ে দেখুন। অথবা একটা ভালো উপন্যাস নিয়ে শীতের মিষ্টি রোদে বসে পড়ুন। সঙ্গে রাখুন এক কাপ চা। দেখবেন, খুব ভালো লাগবে।
বছরের এই শেষ সময় এসেও নিজের জন্য সময় বের করুন। নিজের যত্ন নিন, নিজেকে নিজেই কিছু উপহার দিন। দেখবেন নিজেকে মূল্যবান ও যোগ্য মনে হবে। তা ছাড়া কাউকে কিছু উপহার দিতে চাইলেও দিতে পারেন। সেটাও কিন্তু নিজেকে সময় দেওয়ার কাজ করবে।

শীতকালে অনেক জায়গায় পিঠা মেলা বা হস্তশিল্প মেলা বসে। এই মেলাগুলোতে ঘুরে বেড়ান। উৎসবের কেনাকাটায় বড় শপিং মল এড়িয়ে স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে কিছু কিনুন এবং শীতের খাবার চেখে দেখুন। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। মনে রাখবেন, উদ্যোক্তাদের সহায়তা না করলে তারা বড় হতে পারবে না। তাদের বড় করতে সহায়তা করাও একটা উদ্যোগ বটে।
শীতকালে অসহায় মানুষদের কষ্ট কমাতে গরম কাপড় ও কম্বল দান করুন। ছোট ছোট কাজ করে অন্যের মুখে হাসি ফোটান; যেমন কাউকে চা বা কফি খাওয়ান, বাসে বয়স্ক কারও জন্য আসন ছেড়ে দিন, কাউকে রাস্তা পার করিয়ে দিন। ছোট একটি মানবিক কাজ আপনার জীবনকে অর্থবহ করে তুলবে।

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসে অথবা একা বসে এই বছর কী কী ভালো ও খারাপ হয়েছে, তা নিয়ে ভাবুন। কী কী ভুল করেছেন, সেগুলো ভেবে দেখুন। সামনের বছরগুলোতে এসব ভুল যেন না হয়, সে জন্য সতর্ক হোন। এই বছর যা কিছু ইতিবাচক হয়েছে, সেগুলো একটি ডায়েরিতে লিখে সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানান। কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে থাকলে তা মিটিয়ে নিন। অযথা মনে রাগ পুষে রেখে নিজেকে কষ্ট দেবেন না।
পুরোনো বন্ধুরা আসলে মানুষের ব্রিদিং স্পেস বা নিশ্বাস ফেলার জায়গা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সবার সঙ্গে সম্ভব না হলেও যাঁদের বা যাঁর সঙ্গে সম্ভব, তাঁদের বা তাঁর সঙ্গে দেখা করে কিছু সময় কাটিয়ে আসুন। মন খুলে হাসুন। স্মৃতিচারণা করুন। অন্তত এক বেলা একসঙ্গে বসে খেয়ে ফেলুন মনের মতো কোনো খাবার। দেখবেন নতুন বছর অন্য রকমভাবে শুরু হবে।
সূত্র: ক্যামিলিস্টাইল ও অন্যান্য

ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।
নতুন বছরে আপনি কী কী করতে চান, তা এখনই ভেবে ফেলুন। একটু স্থির হয়ে বসে খাতা-কলমে লিখে আপনার নতুন বছরের উদ্দেশ্য স্থির করে নিন। লিখে রাখলে তা বিভিন্নভাবে উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করবে।
পুরোনো বছরকে সুন্দর করে বিদায় দিতেই হোক বা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে—ঘর সাজান সুন্দর করে। কিছু ওয়ার্ম লাইট ও জানালা বা টেবিলে কিছু গাছ রেখে ঘরে দিন একটু উষ্ণতার ছোঁয়া। সঙ্গে পুরোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্য কাউকে দিয়ে দিন। দেখবেন বাসায় একটা শান্ত ও পরিচ্ছন্ন ভাব আসবে।
পিঠা সংস্কৃতির অংশ। তাই ঐতিহ্য ধরে রাখাতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় করে একদিন বিভিন্ন রকম পিঠা বানাতে পারেন। বড় আয়োজন নয়, বরং চা-বিস্কুট আর পিঠা নিয়ে একটি ঘরোয়া আড্ডা জমান। পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করুন। দেখবেন, মন থেকে অনেকখানি ভার নেমে গেছে।
ডিসেম্বরের আবহাওয়া বই পড়ার জন্য উপযুক্ত। ছুটির দিনে দুপুরগুলো কাজে লাগান। গায়ে হালকা কাঁথা জড়িয়ে একটা অলস দুপুর বই পড়ে দেখুন। অথবা একটা ভালো উপন্যাস নিয়ে শীতের মিষ্টি রোদে বসে পড়ুন। সঙ্গে রাখুন এক কাপ চা। দেখবেন, খুব ভালো লাগবে।
বছরের এই শেষ সময় এসেও নিজের জন্য সময় বের করুন। নিজের যত্ন নিন, নিজেকে নিজেই কিছু উপহার দিন। দেখবেন নিজেকে মূল্যবান ও যোগ্য মনে হবে। তা ছাড়া কাউকে কিছু উপহার দিতে চাইলেও দিতে পারেন। সেটাও কিন্তু নিজেকে সময় দেওয়ার কাজ করবে।

শীতকালে অনেক জায়গায় পিঠা মেলা বা হস্তশিল্প মেলা বসে। এই মেলাগুলোতে ঘুরে বেড়ান। উৎসবের কেনাকাটায় বড় শপিং মল এড়িয়ে স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে কিছু কিনুন এবং শীতের খাবার চেখে দেখুন। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। মনে রাখবেন, উদ্যোক্তাদের সহায়তা না করলে তারা বড় হতে পারবে না। তাদের বড় করতে সহায়তা করাও একটা উদ্যোগ বটে।
শীতকালে অসহায় মানুষদের কষ্ট কমাতে গরম কাপড় ও কম্বল দান করুন। ছোট ছোট কাজ করে অন্যের মুখে হাসি ফোটান; যেমন কাউকে চা বা কফি খাওয়ান, বাসে বয়স্ক কারও জন্য আসন ছেড়ে দিন, কাউকে রাস্তা পার করিয়ে দিন। ছোট একটি মানবিক কাজ আপনার জীবনকে অর্থবহ করে তুলবে।

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসে অথবা একা বসে এই বছর কী কী ভালো ও খারাপ হয়েছে, তা নিয়ে ভাবুন। কী কী ভুল করেছেন, সেগুলো ভেবে দেখুন। সামনের বছরগুলোতে এসব ভুল যেন না হয়, সে জন্য সতর্ক হোন। এই বছর যা কিছু ইতিবাচক হয়েছে, সেগুলো একটি ডায়েরিতে লিখে সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানান। কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে থাকলে তা মিটিয়ে নিন। অযথা মনে রাগ পুষে রেখে নিজেকে কষ্ট দেবেন না।
পুরোনো বন্ধুরা আসলে মানুষের ব্রিদিং স্পেস বা নিশ্বাস ফেলার জায়গা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সবার সঙ্গে সম্ভব না হলেও যাঁদের বা যাঁর সঙ্গে সম্ভব, তাঁদের বা তাঁর সঙ্গে দেখা করে কিছু সময় কাটিয়ে আসুন। মন খুলে হাসুন। স্মৃতিচারণা করুন। অন্তত এক বেলা একসঙ্গে বসে খেয়ে ফেলুন মনের মতো কোনো খাবার। দেখবেন নতুন বছর অন্য রকমভাবে শুরু হবে।
সূত্র: ক্যামিলিস্টাইল ও অন্যান্য

এ পৃথিবীতে মানুষের বয়স তো কম হলো না। সেই অনিশ্চিত যাযাবর জীবন থেকে আজকের ব্যক্তিসর্বস্ব জীবনে নিজের রূপান্তর একদিনে হয়নি। মানুষের জীবনের এই রূপান্তরে চাকা বা আগুনের গল্প তো ঢের হলো। ইতিহাসের পাথর খুড়ে বের হয়েছে এমন হাজারটা আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের কথা, যা মানুষের গল্পে নতুন নতুন বাঁক এনে দিয়েছে।
১০ এপ্রিল ২০২১
সারা বছর সবার ঘরে, ভ্যানিটি ব্যাগে এমনকি অফিসের ডেস্কে যে প্রসাধনী থাকে, তা হলো পেট্রোলিয়াম জেলি। এটি শুধু ঠোঁটের রুক্ষতা দূর করে, তা-ই নয়, রূপচর্চায় আরও নানাভাবে ব্যবহার করা যায়।
৩৭ মিনিট আগে
চুলে রং করতে ভালোবাসলেও সবাই পারলারে গিয়ে চুল রং করান না। রং কিনে এনে বাড়িতেই তাঁরা কাজটি সেরে ফেলেন। কিন্তু বাড়িতে রং করলে প্রতিবার চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিমাণ রংও ধুয়ে যায়।
১ ঘণ্টা আগে
কুষ্টিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা। অশ্রু আর্কাইভ ও স্টুডিও শব্দ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করে। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় অশ্রু আর্কাইভ এবং স্মরণ মৎস্য বীজ খামার প্রাঙ্গণে। রোববার ছিল তিন দিনব্যাপী আয়োজনের শেষ দিন।
৯ ঘণ্টা আগে