Ajker Patrika

সীমার মাঝে অসীম

ডা. সানজিদা শাহ্‌রিয়া
সীমার মাঝে অসীম

প্রেম একটি মাধুর্যপূর্ণ সম্পর্ক। এই সম্পর্ক যখন একজন ব্যক্তির সঙ্গে থাকে তখন তা মধুর। কিন্তু বারবার উদ্দেশ্যহীনভাবে যদি একাধিক মানুষের সঙ্গে প্রেম হয়, তখন সেটা আর মধুর থাকে না। ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা একটি জরিপ করেছিল। বিষয় ছিল, করোনার আগে ও পরে একাধিক সম্পর্কে জড়ানোর হার কেমন। দেখা গেছে, করোনা মহামারির আগে প্রতি পাঁচজনের একজন উদ্দেশ্যহীনভাবে এই সম্পর্কে জড়াতেন। কিন্তু গত দেড় বা দুই বছর লকডাউন-পরবর্তী পৃথিবীতে এই সংখ্যা এক লাফে দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে।

প্রতিশ্রুতিহীন সম্পর্ক কেন
এই প্রেক্ষাপটে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, বারবার উদ্দেশ্যহীন বা প্রতিশ্রুতিহীন প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো কেন? উদ্দেশ্যহীনভাবে বারবার প্রেমে পড়ার এই ব্যাপারটাকে দুভাবে দেখা যায়—মানসিক দিক থেকে এবং অন্যটি নিউরোসায়েন্সের প্রেক্ষাপটে। মানসিক দিক থেকে যদি বলি, তাহলে বারবার এই প্রেম-প্রেম ব্যাপারটা কোনো বাস্তবজ্ঞানসম্পন্ন দিক থেকে আসে না। এটা বেশ জটিল বিষয়। নির্দিষ্ট কারও জন্য প্রেম বিষয়টি অনুভূত হয়। আবার পরবর্তী সময়ে অন্য আরও অনেকের জন্য অনুভূত হতে পারে। বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে বললে বুঝতে সহজ হবে।

ধরা যাক, কোনো অনুষ্ঠানে একটি ছেলের সঙ্গে একটি মেয়ের পরিচয় হলো। মুচকি হাসি দিয়ে কাছাকাছি বসে গল্প হলো। আর এই গল্পের ধরনটাও সাধারণ পরিচয়পর্ব নয়; বরং অন্যরকম। এটাকে অ্যাবসলিউট ফ্ল্যার্ট বলা হয়। প্রথম ধাপে এটা চলে। পরের ধাপে ফোন ও সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকল। এরপর একে অপরের সঙ্গে কোথাও দেখা করার এবং সময় কাটানোর ইচ্ছে জাগল। বলে রাখা ভালো, এই ভালো লাগা বা একে অপরের প্রতি আকাঙ্ক্ষা মনের সীমা অতিক্রম করে শরীর পর্যন্ত পৌঁছে যায় কখনো কখনো। তখন থেকেই ফলাফল শুরু হয়।

প্রতিশ্রুতিহীন সম্পর্কের ফলাফল
প্রতিশ্রুতিহীন সম্পর্কে জড়ানো দুজনের একজন দেখলেন বিপরীত দিকের মানুষটি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলেন, ঘনিষ্ঠ হন। তখন একধরনের দ্বন্দ্ব ও যুক্তিতর্ক চলে। এটা দ্বিতীয় ধাপ। এরপর দ্বন্দ্ব-ঝগড়া চলতে থাকে। এর মধ্যে দুজনের একজনের জীবনসঙ্গী হয়তো ব্যাপারটা জেনে গেলেন বা আঁচ করলেন। অথবা দুজনের একজন বলে বসলেন, আমাকে বিয়ে করে ফেলো। কিন্তু অপর জন রাজি হচ্ছেন না। এখান থেকে তৃতীয় ধাপের শুরু। দুজনের একজন যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন, তবে তাঁদের বিচ্ছেদ হতে পারে, সংসারে অশান্তি হতে পারে। ক্রমেই সেটা শারীরিক নির্যাতনের দিকে গড়াতে পারে।

যা হতে পারে
উদ্দেশ্যহীনভাবে প্রেমে জড়ানোর ফলে সম্পর্কের সীমা না থাকার কারণে সেটি ভেঙে গেলে কেউ কেউ নিজেকে দোষী ভাবতে পারেন অথবা প্রচণ্ড হতাশা বোধ করতে পারেন। সম্পর্ক নিয়ে এ পর্যায়ে যাওয়ার আগে এটা ভাবা দরকার, সম্পর্কটি নিয়ে কত দূর যাবেন, কোথায় গিয়ে থামতে হবে ও কোথা থেকে ফেরত আসতে হবে।

এবার আসা যাক নিউরোসায়েন্সের প্রেক্ষাপটে। কিছুদিন আগেও তর্কের বিষয় ছিল, মানুষ প্রাকৃতিকভাবে একগামী না বহুগামী? এখন সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিচার করলে দেখা যায়, একগামী মানুষের পাল্লাটা ভারী। এখানে বলে রাখা ভালো, একগামী ও বহুগামীদের মস্তিষ্কের গঠন আলাদা। তাঁদের যৌন আচরণে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু রোমান্টিক সম্পর্কে যখন কোনো উদ্দীপনা আসে, তখন পার্থক্য দেখা যায়।

মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন এলাকা রয়েছে। লিমবিক সিস্টেম ও রিওয়ার্ড এরিয়া এই এলাকার অন্তর্ভুক্ত। একগামীদের লিমবিক সিস্টেম ও রিওয়ার্ড এরিয়া- দুই জায়গাতেই রোমান্টিক উদ্দীপনা বেশি হয় বহুগামী মানুষের চেয়ে। একগামীদের মস্তিষ্কের যৌন অনুভূতি ও রোমান্টিক উদ্দীপনার এলাকা কাছাকাছি থাকে। বহুগামীদের ক্ষেত্রে তা আলাদা ও বেশ দূরে।

বহুগামীদের কর্টেক্সও রোমান্টিক উদ্দীপনায় ফুটতে থাকে। ফলে তাঁরা যে সবার সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তা নয়। কিন্তু তাঁরা এই উদ্দীপনা পাওয়ার জন্য বারবার জড়াতে থাকেন প্রেমে।

সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, তাঁরা যদি বিবাহিত হন বা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে থাকেন, তাহলে প্রতিশ্রুতিহীন সম্পর্ক সঙ্গীর জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। এ ছাড়া বহুগামী পুরুষের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস এলাকাটা বড়। ফলে তাঁরা এই সুখানুভূতির কথা বারবার মনে করতে পারেন এবং বারবার প্রেমে জড়ান।

উদ্দেশ্যহীনভাবে প্রেম-প্রেম খেলা অস্বাস্থ্যকর। সেটা শুধু নিজের জন্য নয়; বরং যাঁর সঙ্গে হচ্ছে তাঁর জন্য এবং নিজের সঙ্গীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও বিষয়টি অস্বাস্থ্যকর।

লেখক:  বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বাংলাদেশ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রঙিন চুলের বিশেষ যত্ন

ফিচার ডেস্ক
রঙিন চুলের বিশেষ যত্ন

চুলে রং করতে ভালোবাসলেও সবাই পারলারে গিয়ে চুল রং করান না। রং কিনে এনে বাড়িতেই তাঁরা কাজটি সেরে ফেলেন। কিন্তু বাড়িতে রং করলে প্রতিবার চুল ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু পরিমাণ রংও ধুয়ে যায়। ফলে রং করা চুল অনেকটাই ফ্যাকাশে হয়ে যায়। যাঁরা বাড়িতেই চুল রাঙান তাঁদের রং করার পর চুল ধোয়া থেকে শুরু করে শুকানোর পদ্ধতিতেও কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি।

সঠিক শ্যাম্পু বাছাই

চুলে রং করার পর প্রথমে কালার প্রোটেকটিভ শ্যাম্পু বাছাই করুন। এই শ্যাম্পুগুলো দীর্ঘদিন চুলে রং বজায় রাখতে সহায়তা করে।

চুলে ঘন ঘন শ্যাম্পু নয়

চুলে রং করার পর সপ্তাহে দু-তিনবার শ্যাম্পু করুন। তবে রোজ বাইরে গেলে প্রয়োজনে ড্রাই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

নিয়মিত তেল ব্যবহার

রং করার পর; বিশেষ করে চুলের ডগা ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সপ্তাহে অন্তত দুদিন চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত তেল ম্যাসাজ করে নিন।

স্টাইলিং কম করুন

রং করা চুলে স্ট্রেটনার কিংবা কার্লার যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো। কারণ, এর ফলে চুল আরও বেশি রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।

নিয়ম করে প্যাক মাখু

পাকা কলা ও মধু পেস্ট করে সপ্তাহে দুদিন চুলে মেখে রাখুন ২০ মিনিট করে। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল হবে মসৃণ।

সূত্র: ল’রিয়েল প্যারিস ইউকে ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় শেষ হলো তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা

কু‌ষ্টিয়া প্রতি‌নি‌ধি
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ায় সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিন দিনব্যাপী সাইনোটাইপ কর্মশালা।

অশ্রু আর্কাইভ ও স্টুডিও শব্দ যৌথ উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন ক‌রে। গত শুক্রবার শুরু হওয়া এই সৃজনশীল কর্মযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় অশ্রু আর্কাইভ এবং স্মরণ মৎস্য বীজ খামার প্রাঙ্গণে। রোববার ছিল‌ তিন দিনব‌্যাপী আয়োজ‌নের শেষ দিন।

অশ্রু আর্কাইভের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল কুষ্টিয়ার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সাইনোটাইপ মাধ্যমে নতুনভাবে উপস্থাপন করা এবং স্থানীয় শিল্পচর্চাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা। কর্মশালায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা থেকে আসা বর্তমান, সাবেক শিক্ষার্থীসহ দেশবরেণ্য গুণী শিল্পীরা অংশ নেন।

তিন দিনব্যাপী এই নিবিড় কর্মশালায় মেন্টর ও প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন স্টুডিও শব্দর কর্ণধার শিল্পী নাজমুল হোসেন নয়ন। অশ্রু আর্কাইভের প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট শিল্পী ও গবেষক শাওন আকন্দ কর্মশালা কিউরেট করেন।

কর্মশালার প্রথম দিনে সাইনোটাইপ শিল্পের ইতিহাস ও তাত্ত্বিক দিক তুলে ধরা হয়। পরবর্তী দিনগুলোতে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা নিজেরাই সাইনোটাইপ প্রিন্ট তৈরি করার সুযোগ পান। আলো, কেমিক্যাল ও নকশার সঠিক ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

শিল্পী নাজমুল হোসেন নয়ন বলেন, ‘সাইনোটাইপ শুধু একটি বিকল্প ফটোগ্রাফিক প্রক্রিয়া নয়; এটি সময়, স্মৃতি ও স্থানকে ধারণ করার একধরনের নীরব ভাষা।

কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী শিল্পী তানজুম নাহার পর্ণা বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী কর্মশালাটি আমাদের জন্য শুধু একটি কারিগরি প্রশিক্ষণই ছিল না; বরং এটি ছিল সময়, স্মৃতি এবং স্থানের সঙ্গে এক গভীর শিল্পভাষার সংযোগ। সাইনোটাইপের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কুষ্টিয়ার ইতিহাস, লোকজ সংস্কৃতি ও সামাজিক বাস্তবতাকে নতুনভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পেয়েছি; বিশেষ করে রাসায়নিকের অনুপাত নির্ধারণ, কোটিং, এক্সপোজার, ওয়াশিং, টোনিং ও ড্রয়িং—প্রতিটি ধাপ হাতেকলমে শেখার অভিজ্ঞতা আমাদের অ্যানালগ ফটোগ্রাফির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও গভীর করেছে।’

কিউরেটর শাওন আকন্দ ব‌লেন, কুষ্টিয়ার ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি এ ধরনের সৃজনশীল এবং ঐতিহ্যবাহী ফটোগ্রাফিক কার্যক্রম নিয়ে ভবিষ্যতেও নিয়মিতভাবে কর্মশালা আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

১৮৪২ সালে স্যার জন হার্শেল আবিষ্কৃত সাইনোটাইপ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ও ক্যামেরাবিহীন ফটোগ্রাফিক মুদ্রণ পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায় অতিবেগুনি রশ্মি বা সূর্যালোকের সাহায্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কাগজ বা কাপড়ে গাঢ় নীল রঙের (প্রুশিয়ান ব্লু) নান্দনিক ছাপ তৈরি করা হয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এই ডিসেম্বরে যা কিছু করতে পারেন

ফারিয়া রহমান খান 
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ২৯
ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

ডিসেম্বর মানেই অন্য রকম অনুভূতি। একদিকে বছর শেষের সব হিসাবনিকাশ, নতুন বছরের আগমনী বার্তা; অন্যদিকে বিজয়ের আনন্দ আর পিঠা-পার্বণের আমেজ। সব মিলিয়ে এই মাসটি যেন সত্যিই বিশেষ। ডিসেম্বরে, বছরের শেষ সময়গুলো কীভাবে একটু অর্থবহ করা যায়, তা জেনে নিন।

উদ্দেশ্য স্থির করুন

নতুন বছরে আপনি কী কী করতে চান, তা এখনই ভেবে ফেলুন। একটু স্থির হয়ে বসে খাতা-কলমে লিখে আপনার নতুন বছরের উদ্দেশ্য স্থির করে নিন। লিখে রাখলে তা বিভিন্নভাবে উদ্দেশ্য পূরণে সহায়তা করবে।

ঘর সাজান

পুরোনো বছরকে সুন্দর করে বিদায় দিতেই হোক বা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে—ঘর সাজান সুন্দর করে। কিছু ওয়ার্ম লাইট ও জানালা বা টেবিলে কিছু গাছ রেখে ঘরে দিন একটু উষ্ণতার ছোঁয়া। সঙ্গে পুরোনো অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্য কাউকে দিয়ে দিন। দেখবেন বাসায় একটা শান্ত ও পরিচ্ছন্ন ভাব আসবে।

পিঠা-পার্বণের আমেজ ও আড্ডা

পিঠা সংস্কৃতির অংশ। তাই ঐতিহ্য ধরে রাখাতে পরিবার ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে সময় করে একদিন বিভিন্ন রকম পিঠা বানাতে পারেন। বড় আয়োজন নয়, বরং চা-বিস্কুট আর পিঠা নিয়ে একটি ঘরোয়া আড্ডা জমান। পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করুন। দেখবেন, মন থেকে অনেকখানি ভার নেমে গেছে।

বই পড়ুন

ডিসেম্বরের আবহাওয়া বই পড়ার জন্য উপযুক্ত। ছুটির দিনে দুপুরগুলো কাজে লাগান। গায়ে হালকা কাঁথা জড়িয়ে একটা অলস দুপুর বই পড়ে দেখুন। অথবা একটা ভালো উপন্যাস নিয়ে শীতের মিষ্টি রোদে বসে পড়ুন। সঙ্গে রাখুন এক কাপ চা। দেখবেন, খুব ভালো লাগবে।

নিজেকে সময় দিন

বছরের এই শেষ সময় এসেও নিজের জন্য সময় বের করুন। নিজের যত্ন নিন, নিজেকে নিজেই কিছু উপহার দিন। দেখবেন নিজেকে মূল্যবান ও যোগ্য মনে হবে। তা ছাড়া কাউকে কিছু উপহার দিতে চাইলেও দিতে পারেন। সেটাও কিন্তু নিজেকে সময় দেওয়ার কাজ করবে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সহায়তা করুন

শীতকালে অনেক জায়গায় পিঠা মেলা বা হস্তশিল্প মেলা বসে। এই মেলাগুলোতে ঘুরে বেড়ান। উৎসবের কেনাকাটায় বড় শপিং মল এড়িয়ে স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে কিছু কিনুন এবং শীতের খাবার চেখে দেখুন। এতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উপকৃত হবেন। মনে রাখবেন, উদ্যোক্তাদের সহায়তা না করলে তারা বড় হতে পারবে না। তাদের বড় করতে সহায়তা করাও একটা উদ্যোগ বটে।

সহায়তার হাত বাড়ান

শীতকালে অসহায় মানুষদের কষ্ট কমাতে গরম কাপড় ও কম্বল দান করুন। ছোট ছোট কাজ করে অন্যের মুখে হাসি ফোটান; যেমন কাউকে চা বা কফি খাওয়ান, বাসে বয়স্ক কারও জন্য আসন ছেড়ে দিন, কাউকে রাস্তা পার করিয়ে দিন। ছোট একটি মানবিক কাজ আপনার জীবনকে অর্থবহ করে তুলবে।

ছবি: পেক্সেলস
ছবি: পেক্সেলস

বছরের প্রতিফলন

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসে অথবা একা বসে এই বছর কী কী ভালো ও খারাপ হয়েছে, তা নিয়ে ভাবুন। কী কী ভুল করেছেন, সেগুলো ভেবে দেখুন। সামনের বছরগুলোতে এসব ভুল যেন না হয়, সে জন্য সতর্ক হোন। এই বছর যা কিছু ইতিবাচক হয়েছে, সেগুলো একটি ডায়েরিতে লিখে সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানান। কারও সঙ্গে মনোমালিন্য হয়ে থাকলে তা মিটিয়ে নিন। অযথা মনে রাগ পুষে রেখে নিজেকে কষ্ট দেবেন না।

পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করুন

পুরোনো বন্ধুরা আসলে মানুষের ব্রিদিং স্পেস বা নিশ্বাস ফেলার জায়গা। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সবার সঙ্গে সম্ভব না হলেও যাঁদের বা যাঁর সঙ্গে সম্ভব, তাঁদের বা তাঁর সঙ্গে দেখা করে কিছু সময় কাটিয়ে আসুন। মন খুলে হাসুন। স্মৃতিচারণা করুন। অন্তত এক বেলা একসঙ্গে বসে খেয়ে ফেলুন মনের মতো কোনো খাবার। দেখবেন নতুন বছর অন্য রকমভাবে শুরু হবে।

সূত্র: ক্যামিলিস্টাইল ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শীতের রোদে ত্বক পুড়েছে? গোসলের সময় এই প্যাকগুলো ব্যবহারে মিলবে উপকার

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
দীর্ঘক্ষণ রোদে বসে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে পাতলা ত্বকের মানুষদের ত্বক দ্রুত পুড়ে যায়। ফলে গায়ের রং তামাটে হয়ে যায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস
দীর্ঘক্ষণ রোদে বসে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে পাতলা ত্বকের মানুষদের ত্বক দ্রুত পুড়ে যায়। ফলে গায়ের রং তামাটে হয়ে যায়। প্রতীকী ছবি: পেক্সেলস

বলতে দ্বিধা নেই, গরমের দিনে রোদ গায়ে লাগিয়ে ভিটামিন ডি নেওয়ার কথা ভুলে গেলেও শীতে যেন তা বেশি বেশি মনে পড়ে। হিম সকালে রোদ গায়ে মাখতে কারো মন্দ লাগে না। ফলে এই মৌসুমে গায়ে রোদ লাগানোও হয় বেশি। আর এতে অতিরিক্ত পাতলা ত্বকের মানুষেরা একটু ঝামেলায় পড়েন। দীর্ঘক্ষণ রোদে বসে থাকলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে পাতলা ত্বকের মানুষদের ত্বক দ্রুত পুড়ে যায়। ফলে গায়ের রং তামাটে হয়ে যায়। তাই এ সময় নিয়মিত যাঁরা রোদ পোহাচ্ছেন, তাঁদের ত্বক যদি এ রকম রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে যায়, তাঁরা গোসলের সময় কিছু ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। তাতে সুবিধা পাবেন।

লেবুর রস, মধু ও গোলাপজলের ফেসপ্যাক

লেবুর রস প্রাকৃতিক ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। অন্যদিকে মধু ত্বক আর্দ্র রাখে, যা শীতকালের রুক্ষ আবহাওয়ায় জরুরি। ১ চা-চামচ করে লেবুর রস, শসার রস, মধুর সঙ্গে আধা চা-চামচ গোলাপজল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ১০ থেকে ১৫ মিনিট। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। তবে এই প্যাক ব্যবহার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি রোদে না বের হওয়াই ভালো। বের হলেও ছাতা ব্যবহার করুন।

দই, বেসন ও হলুদের ফেসপ্যাক

এই প্যাক একই সঙ্গে ট্যান দূর করতে, মৃত কোষ ঝরাতে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতে খুব ভালো কাজ করে। ২ চা-চামচ টক দই, ১ চা-চামচ বেসন, এক চিমটি হলুদবাটা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে ও গলায় ভালো করে লাগিয়ে নিন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে এই প্যাক শরীরের অন্য অংশের রোদে পোড়া দাগের জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।

লেবুর রস ও চিনির মিশ্রণ

ঘরে বসে ট্যান অপসারণের জন্য ফেসপ্যাকে যোগ করতে পারেন লেবুর রস। প্রাকৃতিক ব্লিচিং ক্ষমতার কারণে এটি ত্বকের যেকোনো দাগ দূর করতে খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়া এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য ত্বকের দূষণ দূরে সহায়ক। সানট্যান দূর করতে লেবুর রস মধু বা চিনির সঙ্গে মিশিয়ে আক্রান্ত জায়গাগুলোয় স্ক্র‍্যাব করুন। ১৫ মিনিট আলতো করে ঘষে ধুয়ে নিন। তবে লেবু মিশ্রিত প্যাক বা স্ক্র‍্যাব ত্বকে ব্যবহার করলে ধোয়ার পর অবশ্যই ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। নয়তো ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে।

আলুর রস ও মুলতানি মাটির ফেসপ্যাক

আলুর রসে মৃদু ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সানট্যান হালকা করতে পারে। অন্যদিকে মুলতানি মাটি ত্বক পরিষ্কার করে। ২ চা-চামচ আলুর রস, ১ চা-চামচ মুলতানি মাটি, অল্প পরিমাণে গোলাপজল বা পানি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই প্যাক মুখে লাগান এবং ২০ মিনিট বা পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি ও স্ক্র‍্যাবার দিয়ে ম্যাসাজ করে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।

নারকেলের দুধেও মিলবে উপকার

ট্যান দূর করার পাশাপাশি নারকেল দুধ ত্বকের অন্যান্য উপকারও করে। মুখ ও হাতে ট্যান পড়ে থাকলে নারকেলের দুধকেই সমাধান হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। রোদে পোড়া ত্বকে তাজা নারকেল দুধ লাগিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। এরপর ধুয়ে নিন। ত্বক ধীরে ধীরে উজ্জ্বলতা ছড়াবে।

শসা ও লেবুর রসের মিশ্রণ

শসা ত্বক আর্দ্র রাখে এবং পোড়া ত্বকে আরাম দেয়। অন্যদিকে লেবুর রস ত্বকের রং হালকা করতে সহায়ক। শসা দিয়ে মুখ, ঘাড় ও হাতের ট্যান দূর করার ভালো উপায় হলো, খোসা ছাড়িয়ে থেঁতো করে রস বের করে নিয়ে তাতে সমপরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে তুলার বল দিয়ে সেই রস আক্রান্ত জায়গায় লাগানো। এরপর সেই রস ত্বকে পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

সূত্র: ফেমিনা ও অন্যান্য

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত