ইশতিয়াক হাসান
ফেলুদা আমার এত প্রিয় যে এটি নিয়ে লিখতে দিন-ক্ষণ লাগে না। তার পরও আজ বিশেষ একটি দিন। ১৯২১ সালের এই দিনে, মানে ২ মে জন্ম সত্যজিৎ রায়ের। চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালকসহ কত পরিচয় তাঁর। তবে সত্যজিতের নাম মাথায় এলে রহস্য কাহিনিপ্রেমীদের প্রথমেই যে কথাটি মনে পড়ে যায়, তা হলো তিনি না থাকলে ফেলুদার জন্মই হতো না। তাই সত্যজিতের জন্মদিনে আবারও লিখতে বসে গেলাম তাঁর অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’ নিয়ে।
ফেলুদা এবার ন্যাড়া জায়গাটার পাশে ঘাসের ওপর বসে পড়ে বলল, পাথরটা কীভাবে পড়েছিল জানিস? ‘কীভাবে?’...ফেলুদা ন্যাড়া অংশটার একটা জায়গায় আঙুল দিয়ে দেখাল।...সেখানে ছোট্ট একটা গর্ত রয়েছে। সাপের গর্ত নাকি?...ফেলুদা বলে চলল, ‘প্রায় পঁচাত্তর পার্সেন্ট শিওর হয়ে বলা চলে যে একটা লম্বা লোহার ডান্ডা বা ওই জাতীয় একটা কিছু মাটিতে ঢুকিয়ে চাড় দিয়ে পাথরটাকে ফেলা হয়েছিল।..অর্থাৎ...মিস্টার শিবকুমার শেলভাস্কারের অ্যাক্সিডেন্টটা প্রকৃতির নয়, মানুষের কীর্তি।...অর্থাৎ–এক কথায়–গণ্ডগোল, বিস্তর গণ্ডগোল...’
বুঝতেই পারছেন ফেলুদার একটি কাহিনির কিছুটা অংশ তুলে দিয়েছি।
আরেকটি কাহিনির কয়েকটি লাইন পড়ুন...ঘরের মধ্যে একটা অদ্ভুত থমথমে ভাব...অরুণবাবু উঠে দাঁড়িয়েছেন—তাঁর চোখ লাল, তাঁর কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
‘শুনুন মি: মিত্তির’, গর্জিয়ে উঠলেন অরুণবাবু, ‘আপনি নিজেকে যত বড় গোয়েন্দাই ভাবুন না কেন, আপনার কাছ থেকে এমন মিথ্যে, অমূলক, ভিত্তিহীন অভিযোগ আমি বরদাস্ত করব না।—জগৎ সিং!’...
...‘আর একটি পা এগোবে না তুমি?’ ফেলুদার হাতে রিভলবার, সেটার লক্ষ্য অরুণবাবুর পেছনে জগৎ সিংয়ের দিকে। ‘ওর মাথার একগাছা চুল কাল রাত্রে আমার হাতে উঠে এসেছিল। আমি জানি ও আপনারই আজ্ঞা পালন করতে এসেছিল আমার ঘরে।’...
এমনই আগাগোড়া রহস্য-রোমাঞ্চে ভরপুর ফেলুদার কাহিনিগুলো। শুরুর অংশ দুটি কোন বই থেকে নেওয়া, পাঠকেরা নিশ্চয় বুঝে গেছেন। যাঁরা বোঝেননি তাঁদের উত্তর পেতে হলে লেখাটা পড়া চালিয়ে যেতে হবে।
এবার ফেলুদার সঙ্গে আমার পরিচয়টা কীভাবে তা বরং সংক্ষেপে বলি। তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আব্বুর চাকরি সূত্রে থাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ডাক্তার দেখাতে কিংবা ছুটিছাঁটায় আসা হতো ঢাকায়। বেইলি রোডে খালার বাসায় ওঠা হতো বেশি। আমার থেকে বছর কয়েকের বড় খালাতো ভাই নাহিদ বইয়ের পোকা। তাঁর বইয়ের আলমারিতে হত্যাপুরী, বাক্স রহস্য, গোরস্থানে সাবধান, দার্জিলিং জমজমাট, গ্যাংটকে গণ্ডগোল বইগুলো দেখতাম। কৌতূহলও জাগত মনে। তবে তখনো রহস্য–রোমাঞ্চের দুনিয়া নিতান্ত অপরিচিত। আমার দৌড় তখন রূপকথা, বড়জোর কমিকস পর্যন্ত।
পরের বছর। ক্লাস ফোরে পড়ি। তিন গোয়েন্দা দিয়ে রহস্য-রোমাঞ্চ জগতের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে তত দিনে। ঢাকায় আসার পর একদিন নাহিদ ভাইয়ার আলমারি থেকে কী ভেবে সাহস করে হত্যাপুরী বইটা নিলাম। পড়তে পড়তে খুন-জখম-সাগরসৈকতময় এক কেসে ফেলুদার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। ব্যাস, পরের কয়েকটা দিন ফেলুদায় বুঁদ হয়ে রইলাম। তখন থেকেই আমার ‘খুব প্রিয়’র তালিকায় চলে এলো ফেলুদা, সেই সঙ্গে সত্যজিৎ রায়।
ফেলুদার বই মানেই দুই মলাটের মধ্যে একসঙ্গে অনেক কিছু। রহস্যকাহিনি, এক কথায় দুর্দান্ত। অ্যাডভেঞ্চার কিংবা ভ্রমণকাহিনি, অসাধারণ। এখানেই কি শেষ? ইতিহাস, মঞ্চ-সিনেমা, সার্কাস, শিকার কত্ত কিছুর সঙ্গে যে পরিচয় করিয়ে দিল ফেলুদা। তোপসে, লালমোহন গাঙ্গুলিও জায়গা করে নিল আমার বালক মনে। এদের বাস্তব অস্তিত্ব নেই এটা বিশ্বাস করতে মন চাইত না। এখনো মানতে পারি না। এরপর থেকে ফেলুদা পড়েই যাচ্ছি। একই বই কয়েকবারও কিনেছি, পড়েছি।
চেহারাটা ভাসছে লিখতে বসে। সাতাশ বছরের এক তরুণ, বয়স যাঁর আটকে আছে সেখানেই। উচ্চতা ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। ঠোঁটে চারমিনার। মার্শাল আর্টে দক্ষ, ভয়ানক সব অপরাধীদের সঙ্গে লড়াই বাড়তি ভরসা সঙ্গে ৩২ কোল্ট রিভলবার। তবে ফেলুদার মূল অস্ত্র ধারালো মগজটা। দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণক্ষমতা ব্যবহার করে জটিল সব রহস্য সমাধান করে অবলীলায়।
একটা বই পড়ি, নতুন একটা দুয়ার খুলে যায় আমার সামনে। রহস্য-রোমাঞ্চের পাশাপাশি ফেলুদা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মনটাকেও উন্মাতাল করে তুলল। ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’ পড়তে পড়তে বরফঢাকা শহরটিতে না গিয়েও যেন যাওয়া হয়ে গেল আমার। সিকিমের রাজধানীতে সশরীরে হাজিরা দিতে পারিনি এখনো, তবে ফেলুদা বা প্রদোষ চন্দ্র মিত্রর ট্রেইল অনুসরণ করে গিয়েছি অনেক জায়গায়ই।
‘রাজেনবাবুকে রোজ বিকেলে ম্যাল্-এ আসতে দেখি। মাথার চুল সব পাকা, গায়ের রং ফরসা, মুখের ভাব হাসিখুশি। পুরোনো নেপালি জিনিস-টিনিসের যে দোকানটা আছে, সেটায় কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাইরে এসে বেঞ্চিতে আধঘণ্টার মতো বসে সন্ধে হব-হব হলে জলাপাহাড়ে বাড়ি ফিরে যান।’
‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’র শুরুটা এভাবেই, দার্জিলিংয়ে। ওটাই ছিল ফেলুদার প্রথম গোয়েন্দাকাহিনি। তবে আমার দার্জিলিংকে চেনা শুরু ফেলুদার ‘দার্জিলিং জমজমাট’ বইটি দিয়ে। কারণ ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির আগে আমার পড়া হয়ে যায় দার্জিলিং জমজমাট। এখনো ফেলুদার বইয়ের মধ্যে সবার আগে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে এই বইয়ের মলাট।
তেমনি তোপসের মতো আমিও কিউরিও যে পুরোনো দুষ্প্রাপ্য জিনিস, সেটা শিখি ফেলুদার কাছ থেকেই। তাই ২০১৭ সালে প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, সিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলো বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নিই।
তবে ফেলুদাকে অনুসরণ শুরু আরও আগে। সালটা ২০১৪, জানুয়ারির ৭ তারিখ রাতে স্ত্রী পুনমসহ মধুচন্দ্রিমায় পৌঁছাই কাঠমাণ্ডু। নেপাল আমাকে টেনেছিল সেই ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। তখন ফেলুদার যত কাণ্ড কাঠমান্ডু পড়েই বলা চলে হিমালয়রাজ্যের শহরটা মনে গেঁথে যায়। একইভাবে ২০১৮তে ঋষিকেশের রামঝুলা-লছমন ঝুলা দেখতে যাওয়ার পেছনেও ওই ফেলুদাই। লছমন ঝুলার কথা প্রথম জানতে পারি যে ফেলুদার ‘বাদশাহী আংটি’ পড়ে। পাহাড়-অরণ্যময় জায়গা না হয়েও ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে ভারতের কলকাতার প্রতি আমার টানটা ফেলুদা এবং কলেজ স্ট্রিটের কল্যাণেই। তবে গতবার কলকাতায় গিয়ে গোরস্থানে সাবধানের সেই পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে একবার ঢুঁ মারতে না পারার যন্ত্রণাটা পোড়ায়। মোটের ওপর ভ্রমণ আমার প্রিয় হয়ে ওঠার পেছনেও ফেলুদা ও সত্যজিতের অবদান কম-বেশি আছেই।
প্রদোষ চন্দ্র মিত্র একা নয়। আরও কত আকর্ষণীয়, কখনো বিচিত্র চরিত্রের দেখা মেলে ফেলুদার বইগুলোতে। তোপসে, অর্থাৎ তপেশরঞ্জন মিত্রর কথা বলতে হবে সবার আগে। একেবারে শুরু থেকেই যে প্রিয় গোয়েন্দার সঙ্গে আছে তার খুড়তুতো ভাইটি। তার জবানীতেই ফেলুদার কাহিনিগুলো জানতে পারি। তা ছাড়া যখন ফেলুদা পড়া শুরু করি, তোপসের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেওয়াটা অনেক সহজ ছিল।
সোনার কেল্লায় ওই যে লালমোহন গাঙ্গুলির সঙ্গে পরিচয় হলো, তারপর থেকে ফেলুদার প্রতিটি বইয়ের আশ্চর্য এক চাটনি হয়ে উঠলেন রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যিক জটায়ু। টানটান উত্তেজনায় ভরা রহস্যকাহিনিগুলোয় জটায়ুর অদ্ভুত, হাস্য-রসাত্মক কাণ্ডকীর্তি যেন আনন্দময় রিলিফ।
তেমনি ফেলুদা পড়তে পড়তে আরও কত চরিত্র যে আপন হয়ে গেল আমার। দুর্ধর্ষ মগনলাল মেঘরাজ, জীবন্ত জ্ঞানকোষ সিধু জ্যাঠা, ছিন্নমস্তার অভিশাপের দুর্ধর্ষ কারাণ্ডিকার, ধাঁধাপাগল মহেশ চৌধুরী, বাদশাহী আংটির বনবিহারী বাবু, সোনার কেল্লার মুকুলসহ কত কত চরিত্র লিখতে বসে চোখের সামনে চলে আসছে।
সাধারণত কোনো বই পড়তে গেলে চরিত্রগুলোর চেহারা-ছবি নিজের মতো করে তৈরি করে নিই মনে মনে। সিনেমা দেখার থেকে আমি বই পড়াকে এগিয়ে রাখার এটাও একটা কারণ। তবে ফেলুদার বেলায় সত্যজিতের আঁকায় যে সাদাকালো চেহারাগুলো পেয়েছি, সেগুলো প্রভাব বিস্তার করেছে মনের ওপর বেশ।
আশ্চর্য ব্যাপার, এই আধবুড়ো বয়সেও ফেলুদা আমাকে টানে। এখনো অবসরে হাতের কাছে মনের মতো বই না পেলে বুকশেলফের নির্দিষ্ট একটি তাক চাবি দিয়ে খুলে বের করে আনি ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ কিংবা ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে প্রিয় ফেলুদার সঙ্গে হারিয়ে যাই রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা এক জগতে।
ফেলুদার জন্মটা যে শার্লক হোমসে অনুপ্রাণিত হয়ে, বুঝে নিতে কষ্ট হয় না। সত্যজিৎ ফেলুদার গুরু হিসেবে বারবারই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন হোমসকে। এমনকি ফেলুদাকে ঘুরিয়ে এনেছেন তার গুরু হোমসের বেকার স্ট্রিট থেকে। শুধু তাই নয়, সত্যজিৎ রায় ফেলুদার আস্তানা হিসেবে ২২১ বি বেকার স্ট্রিটের অদলেই হয়তো দেখিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার ২১ রজনী সেন রোডকে। মজার ঘটনা, ২২১ বি নামে বাড়ির কোনো অস্তিত্ব যেমন নেই, তেমনি রজনী সেন রোড থাকলেও ২১ নম্বর বাড়ির খোঁজ মেলেনি সেখানে।
ফেলুদা চরিত্রটির জন্ম যেন অনেকটা হঠাৎ করেই হয়ে গিয়েছিল। ক্ষুরধার গোয়েন্দাটির স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের একটা লাল খেরো খাতা ছিল। ওখানে নিজের গল্পগুলোর খসড়া লিখতেন। খসড়া লেখার জন্য আরও বেশ কয়েকটা খাতাও ছিল। কিন্তু কী আশ্চর্য! ১৯৬৫ সালের আগে কোথাও ফেলুদা চরিত্রটি সম্পর্কে কিছুই ছিল না। ১৯৬৫ সালে লাল খেরো খাতার তৃতীয় পাতায় হঠাৎ করেই এই গোয়েন্দার দেখা মেলে।
‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় আবির্ভাব ফেলুদার, ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ গল্পটির মাধ্যমে। পরপর তিনটি সংখ্যায় শেষ হয়েছিল গোটা গল্পটি। তবে ফেলুদার প্রথম উপন্যাস ‘বাদশাহী আংটি’, আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বই আকারে যেটি বের হয় ১৯৬৯-এ। সত্যজিৎ সম্ভবত নিজেও ভাবেননি এভাবে বাঙালি পাঠকের মন জয় করে নেবে ফেলুদা। সিরিজটির জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে বাদশাহী আংটির পর থেকে ফি বছরই বলা চলে গোয়েন্দাটিকে নিয়ে উপন্যাস না হয় গল্প কিছু না কিছু লিখেছেন।
১৯৯২ সালে সত্যজিৎ মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রবল জনপ্রিয় এই গোয়েন্দাকে নিয়ে লেখেন ৩৫টি সম্পূর্ণ গল্প-উপন্যাস। এ ছাড়া শেষ হয়নি এমন কয়েকটি পান্ডুলিপিও ছিল।
সত্যজিৎ রায় মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরের ঘটনা। চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছি। আবারও সেই নাহিদ ভাইয়াদের বাসা। ওর বাবা তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। নিউ মার্কেটে গেলাম সবাই মিলে। দুটো বই কিনলাম। এর একটা ‘রবার্টসনের রুবি’। স্পষ্ট মনে আছে, বইটি কেনার সময় বিষাদে ছেয়ে গিয়েছিল মনটা, কারণ সত্যজিৎ তত দিনে দুনিয়া ছেড়ে গিয়েছেন। জানামতে, ওটাই ফেলুদার পূর্ণাঙ্গ শেষ উপন্যাস।
‘রবার্টসনের রুবি’ কেনার সময় কিংবা পরে একটা চিন্তা বারবারই উদয় হয়েছে মনে—আহ! সত্যজিৎ যদি আরও কয়েকটি বছর বাঁচতেন! গোটা আটেক ফেলুদা, দুই-তিনটা শঙ্কু কিংবা একটা তারিণীখুড়োর বই পেয়ে যেতাম হয়তো। বড় স্বার্থপর চিন্তা! কী বলব বলুন! সত্যজিতের এই অমর সৃষ্টিগুলো যে এখনো মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।
ফেলুদাকে নিয়ে হয়েছে বেশ কিছু সিনেমা, হালফিল ওয়েব সিরিজও। এ ব্যাপারে বেশি কিছু লিখতে চাই না। তবে পর্দায় ফেলুদা হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ সব্যসাচী চক্রবর্তী। যদি চেহারাটা শুরুতে মোটেই ফেলুদাকে যেভাবে মনে মনে কল্পনা করেছি এর সঙ্গে যায়নি। তবে সব্যসাচীর অভিনয়ে মুগ্ধ হই।
প্রথম ফেলুদা হিসেবে দেখেছি কিন্তু সৌমিত্রকেই। ১৯৭৪ সালে, ‘সোনার কেল্লা’ দিয়ে তাঁর আবির্ভাব। চেহারার কথা বললে কল্পনার ফেলুদার সঙ্গে তাঁর মিলই পেয়েছি বেশি। হবে নাই বা কেন? আমার জানামতে, সত্যজিৎ ফেলুদাকে বইয়ে এঁকেছিলেন সৌমিত্রকে মাথায় রেখেই। ফেলুদা হিসেবে সৌমিত্রর অভিনয় ফেলুদার স্রষ্টার কাছে কিন্তু ছিল দশে দশই। ওপার বাংলার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠার শুরু সেই তোপসে দিয়েই।
শুরুতে যে বইটার কাহিনি দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেটার নামটা বলে দিচ্ছি, যারা জানেন না তাঁদের জন্য, ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’। আর এর পরের অংশটি ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’।
ফেলুদা আমার এত প্রিয় যে এটি নিয়ে লিখতে দিন-ক্ষণ লাগে না। তার পরও আজ বিশেষ একটি দিন। ১৯২১ সালের এই দিনে, মানে ২ মে জন্ম সত্যজিৎ রায়ের। চলচ্চিত্র নির্মাতা, লেখক, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালকসহ কত পরিচয় তাঁর। তবে সত্যজিতের নাম মাথায় এলে রহস্য কাহিনিপ্রেমীদের প্রথমেই যে কথাটি মনে পড়ে যায়, তা হলো তিনি না থাকলে ফেলুদার জন্মই হতো না। তাই সত্যজিতের জন্মদিনে আবারও লিখতে বসে গেলাম তাঁর অমর সৃষ্টি ‘ফেলুদা’ নিয়ে।
ফেলুদা এবার ন্যাড়া জায়গাটার পাশে ঘাসের ওপর বসে পড়ে বলল, পাথরটা কীভাবে পড়েছিল জানিস? ‘কীভাবে?’...ফেলুদা ন্যাড়া অংশটার একটা জায়গায় আঙুল দিয়ে দেখাল।...সেখানে ছোট্ট একটা গর্ত রয়েছে। সাপের গর্ত নাকি?...ফেলুদা বলে চলল, ‘প্রায় পঁচাত্তর পার্সেন্ট শিওর হয়ে বলা চলে যে একটা লম্বা লোহার ডান্ডা বা ওই জাতীয় একটা কিছু মাটিতে ঢুকিয়ে চাড় দিয়ে পাথরটাকে ফেলা হয়েছিল।..অর্থাৎ...মিস্টার শিবকুমার শেলভাস্কারের অ্যাক্সিডেন্টটা প্রকৃতির নয়, মানুষের কীর্তি।...অর্থাৎ–এক কথায়–গণ্ডগোল, বিস্তর গণ্ডগোল...’
বুঝতেই পারছেন ফেলুদার একটি কাহিনির কিছুটা অংশ তুলে দিয়েছি।
আরেকটি কাহিনির কয়েকটি লাইন পড়ুন...ঘরের মধ্যে একটা অদ্ভুত থমথমে ভাব...অরুণবাবু উঠে দাঁড়িয়েছেন—তাঁর চোখ লাল, তাঁর কপালের রগ ফুলে উঠেছে।
‘শুনুন মি: মিত্তির’, গর্জিয়ে উঠলেন অরুণবাবু, ‘আপনি নিজেকে যত বড় গোয়েন্দাই ভাবুন না কেন, আপনার কাছ থেকে এমন মিথ্যে, অমূলক, ভিত্তিহীন অভিযোগ আমি বরদাস্ত করব না।—জগৎ সিং!’...
...‘আর একটি পা এগোবে না তুমি?’ ফেলুদার হাতে রিভলবার, সেটার লক্ষ্য অরুণবাবুর পেছনে জগৎ সিংয়ের দিকে। ‘ওর মাথার একগাছা চুল কাল রাত্রে আমার হাতে উঠে এসেছিল। আমি জানি ও আপনারই আজ্ঞা পালন করতে এসেছিল আমার ঘরে।’...
এমনই আগাগোড়া রহস্য-রোমাঞ্চে ভরপুর ফেলুদার কাহিনিগুলো। শুরুর অংশ দুটি কোন বই থেকে নেওয়া, পাঠকেরা নিশ্চয় বুঝে গেছেন। যাঁরা বোঝেননি তাঁদের উত্তর পেতে হলে লেখাটা পড়া চালিয়ে যেতে হবে।
এবার ফেলুদার সঙ্গে আমার পরিচয়টা কীভাবে তা বরং সংক্ষেপে বলি। তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। আব্বুর চাকরি সূত্রে থাকি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ডাক্তার দেখাতে কিংবা ছুটিছাঁটায় আসা হতো ঢাকায়। বেইলি রোডে খালার বাসায় ওঠা হতো বেশি। আমার থেকে বছর কয়েকের বড় খালাতো ভাই নাহিদ বইয়ের পোকা। তাঁর বইয়ের আলমারিতে হত্যাপুরী, বাক্স রহস্য, গোরস্থানে সাবধান, দার্জিলিং জমজমাট, গ্যাংটকে গণ্ডগোল বইগুলো দেখতাম। কৌতূহলও জাগত মনে। তবে তখনো রহস্য–রোমাঞ্চের দুনিয়া নিতান্ত অপরিচিত। আমার দৌড় তখন রূপকথা, বড়জোর কমিকস পর্যন্ত।
পরের বছর। ক্লাস ফোরে পড়ি। তিন গোয়েন্দা দিয়ে রহস্য-রোমাঞ্চ জগতের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে তত দিনে। ঢাকায় আসার পর একদিন নাহিদ ভাইয়ার আলমারি থেকে কী ভেবে সাহস করে হত্যাপুরী বইটা নিলাম। পড়তে পড়তে খুন-জখম-সাগরসৈকতময় এক কেসে ফেলুদার সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। ব্যাস, পরের কয়েকটা দিন ফেলুদায় বুঁদ হয়ে রইলাম। তখন থেকেই আমার ‘খুব প্রিয়’র তালিকায় চলে এলো ফেলুদা, সেই সঙ্গে সত্যজিৎ রায়।
ফেলুদার বই মানেই দুই মলাটের মধ্যে একসঙ্গে অনেক কিছু। রহস্যকাহিনি, এক কথায় দুর্দান্ত। অ্যাডভেঞ্চার কিংবা ভ্রমণকাহিনি, অসাধারণ। এখানেই কি শেষ? ইতিহাস, মঞ্চ-সিনেমা, সার্কাস, শিকার কত্ত কিছুর সঙ্গে যে পরিচয় করিয়ে দিল ফেলুদা। তোপসে, লালমোহন গাঙ্গুলিও জায়গা করে নিল আমার বালক মনে। এদের বাস্তব অস্তিত্ব নেই এটা বিশ্বাস করতে মন চাইত না। এখনো মানতে পারি না। এরপর থেকে ফেলুদা পড়েই যাচ্ছি। একই বই কয়েকবারও কিনেছি, পড়েছি।
চেহারাটা ভাসছে লিখতে বসে। সাতাশ বছরের এক তরুণ, বয়স যাঁর আটকে আছে সেখানেই। উচ্চতা ছয় ফুট দুই ইঞ্চি। ঠোঁটে চারমিনার। মার্শাল আর্টে দক্ষ, ভয়ানক সব অপরাধীদের সঙ্গে লড়াই বাড়তি ভরসা সঙ্গে ৩২ কোল্ট রিভলবার। তবে ফেলুদার মূল অস্ত্র ধারালো মগজটা। দুর্দান্ত পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণক্ষমতা ব্যবহার করে জটিল সব রহস্য সমাধান করে অবলীলায়।
একটা বই পড়ি, নতুন একটা দুয়ার খুলে যায় আমার সামনে। রহস্য-রোমাঞ্চের পাশাপাশি ফেলুদা অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় মনটাকেও উন্মাতাল করে তুলল। ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’ পড়তে পড়তে বরফঢাকা শহরটিতে না গিয়েও যেন যাওয়া হয়ে গেল আমার। সিকিমের রাজধানীতে সশরীরে হাজিরা দিতে পারিনি এখনো, তবে ফেলুদা বা প্রদোষ চন্দ্র মিত্রর ট্রেইল অনুসরণ করে গিয়েছি অনেক জায়গায়ই।
‘রাজেনবাবুকে রোজ বিকেলে ম্যাল্-এ আসতে দেখি। মাথার চুল সব পাকা, গায়ের রং ফরসা, মুখের ভাব হাসিখুশি। পুরোনো নেপালি জিনিস-টিনিসের যে দোকানটা আছে, সেটায় কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাইরে এসে বেঞ্চিতে আধঘণ্টার মতো বসে সন্ধে হব-হব হলে জলাপাহাড়ে বাড়ি ফিরে যান।’
‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’র শুরুটা এভাবেই, দার্জিলিংয়ে। ওটাই ছিল ফেলুদার প্রথম গোয়েন্দাকাহিনি। তবে আমার দার্জিলিংকে চেনা শুরু ফেলুদার ‘দার্জিলিং জমজমাট’ বইটি দিয়ে। কারণ ফেলুদার গোয়েন্দাগিরির আগে আমার পড়া হয়ে যায় দার্জিলিং জমজমাট। এখনো ফেলুদার বইয়ের মধ্যে সবার আগে মনের পর্দায় ভেসে ওঠে এই বইয়ের মলাট।
তেমনি তোপসের মতো আমিও কিউরিও যে পুরোনো দুষ্প্রাপ্য জিনিস, সেটা শিখি ফেলুদার কাছ থেকেই। তাই ২০১৭ সালে প্রথমবার ভারত সফরে ওটি, সিমলা, মসুরির মতো লোভনীয় হিল স্টেশনগুলো বাদ দিয়ে দার্জিলিংকেই বেছে নিই।
তবে ফেলুদাকে অনুসরণ শুরু আরও আগে। সালটা ২০১৪, জানুয়ারির ৭ তারিখ রাতে স্ত্রী পুনমসহ মধুচন্দ্রিমায় পৌঁছাই কাঠমাণ্ডু। নেপাল আমাকে টেনেছিল সেই ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। তখন ফেলুদার যত কাণ্ড কাঠমান্ডু পড়েই বলা চলে হিমালয়রাজ্যের শহরটা মনে গেঁথে যায়। একইভাবে ২০১৮তে ঋষিকেশের রামঝুলা-লছমন ঝুলা দেখতে যাওয়ার পেছনেও ওই ফেলুদাই। লছমন ঝুলার কথা প্রথম জানতে পারি যে ফেলুদার ‘বাদশাহী আংটি’ পড়ে। পাহাড়-অরণ্যময় জায়গা না হয়েও ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে ভারতের কলকাতার প্রতি আমার টানটা ফেলুদা এবং কলেজ স্ট্রিটের কল্যাণেই। তবে গতবার কলকাতায় গিয়ে গোরস্থানে সাবধানের সেই পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিতে একবার ঢুঁ মারতে না পারার যন্ত্রণাটা পোড়ায়। মোটের ওপর ভ্রমণ আমার প্রিয় হয়ে ওঠার পেছনেও ফেলুদা ও সত্যজিতের অবদান কম-বেশি আছেই।
প্রদোষ চন্দ্র মিত্র একা নয়। আরও কত আকর্ষণীয়, কখনো বিচিত্র চরিত্রের দেখা মেলে ফেলুদার বইগুলোতে। তোপসে, অর্থাৎ তপেশরঞ্জন মিত্রর কথা বলতে হবে সবার আগে। একেবারে শুরু থেকেই যে প্রিয় গোয়েন্দার সঙ্গে আছে তার খুড়তুতো ভাইটি। তার জবানীতেই ফেলুদার কাহিনিগুলো জানতে পারি। তা ছাড়া যখন ফেলুদা পড়া শুরু করি, তোপসের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেওয়াটা অনেক সহজ ছিল।
সোনার কেল্লায় ওই যে লালমোহন গাঙ্গুলির সঙ্গে পরিচয় হলো, তারপর থেকে ফেলুদার প্রতিটি বইয়ের আশ্চর্য এক চাটনি হয়ে উঠলেন রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যিক জটায়ু। টানটান উত্তেজনায় ভরা রহস্যকাহিনিগুলোয় জটায়ুর অদ্ভুত, হাস্য-রসাত্মক কাণ্ডকীর্তি যেন আনন্দময় রিলিফ।
তেমনি ফেলুদা পড়তে পড়তে আরও কত চরিত্র যে আপন হয়ে গেল আমার। দুর্ধর্ষ মগনলাল মেঘরাজ, জীবন্ত জ্ঞানকোষ সিধু জ্যাঠা, ছিন্নমস্তার অভিশাপের দুর্ধর্ষ কারাণ্ডিকার, ধাঁধাপাগল মহেশ চৌধুরী, বাদশাহী আংটির বনবিহারী বাবু, সোনার কেল্লার মুকুলসহ কত কত চরিত্র লিখতে বসে চোখের সামনে চলে আসছে।
সাধারণত কোনো বই পড়তে গেলে চরিত্রগুলোর চেহারা-ছবি নিজের মতো করে তৈরি করে নিই মনে মনে। সিনেমা দেখার থেকে আমি বই পড়াকে এগিয়ে রাখার এটাও একটা কারণ। তবে ফেলুদার বেলায় সত্যজিতের আঁকায় যে সাদাকালো চেহারাগুলো পেয়েছি, সেগুলো প্রভাব বিস্তার করেছে মনের ওপর বেশ।
আশ্চর্য ব্যাপার, এই আধবুড়ো বয়সেও ফেলুদা আমাকে টানে। এখনো অবসরে হাতের কাছে মনের মতো বই না পেলে বুকশেলফের নির্দিষ্ট একটি তাক চাবি দিয়ে খুলে বের করে আনি ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ কিংবা ‘রয়েল বেঙ্গল রহস্য’। তারপর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে প্রিয় ফেলুদার সঙ্গে হারিয়ে যাই রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা এক জগতে।
ফেলুদার জন্মটা যে শার্লক হোমসে অনুপ্রাণিত হয়ে, বুঝে নিতে কষ্ট হয় না। সত্যজিৎ ফেলুদার গুরু হিসেবে বারবারই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন হোমসকে। এমনকি ফেলুদাকে ঘুরিয়ে এনেছেন তার গুরু হোমসের বেকার স্ট্রিট থেকে। শুধু তাই নয়, সত্যজিৎ রায় ফেলুদার আস্তানা হিসেবে ২২১ বি বেকার স্ট্রিটের অদলেই হয়তো দেখিয়েছেন দক্ষিণ কলকাতার ২১ রজনী সেন রোডকে। মজার ঘটনা, ২২১ বি নামে বাড়ির কোনো অস্তিত্ব যেমন নেই, তেমনি রজনী সেন রোড থাকলেও ২১ নম্বর বাড়ির খোঁজ মেলেনি সেখানে।
ফেলুদা চরিত্রটির জন্ম যেন অনেকটা হঠাৎ করেই হয়ে গিয়েছিল। ক্ষুরধার গোয়েন্দাটির স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের একটা লাল খেরো খাতা ছিল। ওখানে নিজের গল্পগুলোর খসড়া লিখতেন। খসড়া লেখার জন্য আরও বেশ কয়েকটা খাতাও ছিল। কিন্তু কী আশ্চর্য! ১৯৬৫ সালের আগে কোথাও ফেলুদা চরিত্রটি সম্পর্কে কিছুই ছিল না। ১৯৬৫ সালে লাল খেরো খাতার তৃতীয় পাতায় হঠাৎ করেই এই গোয়েন্দার দেখা মেলে।
‘সন্দেশ’ পত্রিকায় ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর সংখ্যায় আবির্ভাব ফেলুদার, ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ গল্পটির মাধ্যমে। পরপর তিনটি সংখ্যায় শেষ হয়েছিল গোটা গল্পটি। তবে ফেলুদার প্রথম উপন্যাস ‘বাদশাহী আংটি’, আনন্দ পাবলিশার্স থেকে বই আকারে যেটি বের হয় ১৯৬৯-এ। সত্যজিৎ সম্ভবত নিজেও ভাবেননি এভাবে বাঙালি পাঠকের মন জয় করে নেবে ফেলুদা। সিরিজটির জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে ছিল যে বাদশাহী আংটির পর থেকে ফি বছরই বলা চলে গোয়েন্দাটিকে নিয়ে উপন্যাস না হয় গল্প কিছু না কিছু লিখেছেন।
১৯৯২ সালে সত্যজিৎ মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত প্রবল জনপ্রিয় এই গোয়েন্দাকে নিয়ে লেখেন ৩৫টি সম্পূর্ণ গল্প-উপন্যাস। এ ছাড়া শেষ হয়নি এমন কয়েকটি পান্ডুলিপিও ছিল।
সত্যজিৎ রায় মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরের ঘটনা। চট্টগ্রামে বেড়াতে গিয়েছি। আবারও সেই নাহিদ ভাইয়াদের বাসা। ওর বাবা তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। নিউ মার্কেটে গেলাম সবাই মিলে। দুটো বই কিনলাম। এর একটা ‘রবার্টসনের রুবি’। স্পষ্ট মনে আছে, বইটি কেনার সময় বিষাদে ছেয়ে গিয়েছিল মনটা, কারণ সত্যজিৎ তত দিনে দুনিয়া ছেড়ে গিয়েছেন। জানামতে, ওটাই ফেলুদার পূর্ণাঙ্গ শেষ উপন্যাস।
‘রবার্টসনের রুবি’ কেনার সময় কিংবা পরে একটা চিন্তা বারবারই উদয় হয়েছে মনে—আহ! সত্যজিৎ যদি আরও কয়েকটি বছর বাঁচতেন! গোটা আটেক ফেলুদা, দুই-তিনটা শঙ্কু কিংবা একটা তারিণীখুড়োর বই পেয়ে যেতাম হয়তো। বড় স্বার্থপর চিন্তা! কী বলব বলুন! সত্যজিতের এই অমর সৃষ্টিগুলো যে এখনো মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।
ফেলুদাকে নিয়ে হয়েছে বেশ কিছু সিনেমা, হালফিল ওয়েব সিরিজও। এ ব্যাপারে বেশি কিছু লিখতে চাই না। তবে পর্দায় ফেলুদা হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ সব্যসাচী চক্রবর্তী। যদি চেহারাটা শুরুতে মোটেই ফেলুদাকে যেভাবে মনে মনে কল্পনা করেছি এর সঙ্গে যায়নি। তবে সব্যসাচীর অভিনয়ে মুগ্ধ হই।
প্রথম ফেলুদা হিসেবে দেখেছি কিন্তু সৌমিত্রকেই। ১৯৭৪ সালে, ‘সোনার কেল্লা’ দিয়ে তাঁর আবির্ভাব। চেহারার কথা বললে কল্পনার ফেলুদার সঙ্গে তাঁর মিলই পেয়েছি বেশি। হবে নাই বা কেন? আমার জানামতে, সত্যজিৎ ফেলুদাকে বইয়ে এঁকেছিলেন সৌমিত্রকে মাথায় রেখেই। ফেলুদা হিসেবে সৌমিত্রর অভিনয় ফেলুদার স্রষ্টার কাছে কিন্তু ছিল দশে দশই। ওপার বাংলার পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় অভিনেতা হয়ে ওঠার শুরু সেই তোপসে দিয়েই।
শুরুতে যে বইটার কাহিনি দিয়ে শুরু করেছিলাম, সেটার নামটা বলে দিচ্ছি, যারা জানেন না তাঁদের জন্য, ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’। আর এর পরের অংশটি ‘ছিন্নমস্তার অভিশাপ’।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে