রুবাইয়া হক, ঢাকা
প্রেরণার মন খারাপ। সহকর্মী একগাদা কথা শুনিয়ে গেলেন। জানলেন না কী হয়েছে, নিজের মতো করে খোঁচা–উপদেশ সবটাই দিলেন। ভালো লাগল না প্রেরণার, মনে হলো তির্যক কিছু উত্তর দেন। কিন্তু উপেক্ষা করলেন, অফিসের পরিবেশ নষ্ট হবে ভেবে।
শুধু সহকর্মী নয়, বন্ধুবান্ধব থেকে আত্মীয়স্বজন সবার কাছ থেকেই এমন অযাচিত উপদেশবাণী, খোঁচা শুনতে হয় প্রায়ই। অথচ এটা তাঁর বলার কথা নয়, অথবা এই অনধিকার চর্চা না করলেও পারতেন। শুধু অনুমান থেকে মন্তব্য করে বসেন এমন মানুষ। পরিচিতদের মধ্য থেকেই এমন কথার তির বেশি ছোড়া হয়। অপরপক্ষ কোন অবস্থায় বা কোন মুডে আছে, তার থোড়াই কেয়ার করেন তাঁরা, যেন দুটো উপদেশ দিতে পারলেই দিলখুশ!
এদের কি সত্যটা বোঝানো উচিত?
এই ধরনের মানুষ আপনার কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়, শুধু শোনাতেই আগ্রহ। বুঝে না বুঝে, স্থান কাল কোনোটাই বাধা হয় না তাদের। হয়তো কেউ তাকে বোঝানোর চেষ্টাও করেন, কিন্তু অভ্যাসটা কখন যে বদভ্যাসে পরিণত হয় সেটা হয়তো খেয়ালই নেই।
এটা কি কোনো রোগ?
মনোচিকিৎসক ও লেখক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘এটাকে সরাসরি রোগ বলা যাবে না। তবে যে বিষয়ে আমরা জানি না সে বিষয়ে কথা বলা ভয়ংকর। যা জানি না, যে বিষয়ে দক্ষ না তা নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না। না জেনে মন্তব্য করে জ্ঞানপাপীরা!’
নিজেকে জাহিরের চেষ্টা
উদাহরণ হিসেবে ‘মনোসমস্যা মনোবিশ্লেষণ’ বইয়ের লেখক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘দেখা গেল আড্ডায় কোনো লেখককে নিয়ে কথা উঠল। কেউ বললেন, ওনার লেখা খারাপ। আরেকজন একই সুরে কথা বলতে গিয়ে বললেন, ওনার কোনো লেখাই হয় না। অথচ উনি হয়তো ওই লেখকের কোনো বই পড়েননি। এমনও হতে পারে, উনি হয়তো অন্য আরেকজনের কাছে শুনেছেন যে উনি ভালো লেখেন না। ব্যস, ওনার মনে বদ্ধ ধারণা হয়ে গেছে ওই লেখক কোনো লেখাই পারেন না। অথচ উনি বলতে পারতেন, আমি ওনার কোনো লেখা পড়িনি, আমার ধারণা নেই ওনার সম্পর্কে। তাতে কিন্তু ওনার একবিন্দুও সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক ক্ষতি হতো না। এরপরও আমরা এভাবে নানা মিথ দাঁড় করানোর চেষ্টা করি।’
সামাজিক বিবাদ বাড়ে
ডা. মোহিত কামাল মনে করেন, এটা এক ধরনের কুৎসা রটানো, গিবত চর্চা। তিনি বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে গিবত করা মহাপাপ। অনেক সময় কারও পেছনে কাউকে নিয়ে আলোচনা করা হয়। অনুমান করে মনের মতো করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এটা ঠিক নয়।’ যাকে নিয়ে এমন ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে নিশ্চয়ই তিনি কখনো তা জানতে পারেন, হয়তো কেউ নীরবে সহ্য করেন, কেউ করেন প্রতিবাদ। কখনো সেটা বিবাদ পর্যন্ত গড়ায়।
আপনার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন
মন্তব্য করতে হলে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে, সে বিষয়ে দক্ষ হতে হবে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলার অধিকার কিংবা যোগ্যতা রাখেন কিনা সেটি বুঝতে হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে মন্তব্য করলেই মানুষের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। নিষ্প্রয়োজন মন্তব্য বেশির ভাগ সময় ‘অযাচিত’ হয়ে ওঠে।
প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব মেধা আছে, আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, সেটি নিজের আলোকে জেনে বুঝে মন্তব্য করা উচিত। সেটাই হবে সবচেয়ে প্রত্যাশিত মতামত।
কাদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি
আমাদের ব্যক্তিত্বের দুটি বৈশিষ্ট্য হলো আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা ইমোশনাল কোশেন্ট—ইকিউ) ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা (ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট বা আইকিউ)। এই দুই বুদ্ধি নিয়ে আমরা পরিচালিত হই। যার আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রিত তার বুদ্ধি যথাযথ ফল দেয়। আর যার আবেগীয় বুদ্ধি উন্মাতাল তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। অন্যের আবেগও বোঝেন না। ফলে বেসামাল কথা বলেন।
অনেক সময় এটিকে বলে ‘স্লিপ অব টাং’। অর্থাৎ যেটা ওই ব্যক্তির ভেতর ছিল, সে কথাটাই মুখ থেকে বেরিয়ে যায় আবেগের বশে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মানুষ এলোমেলো বা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে থাকে।
নিয়ন্ত্রণ সম্ভব
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা থাকলে ব্যক্তি নিজের অনুভূতি শনাক্ত করতে পারে। আত্মনিয়ন্ত্রণ বা আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। সেই অন্যের আবেগও বুঝতে পারে। এতে তার সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ে। বিষয়টি একদিনে হয় না, শিশুকাল থেকে নিয়ন্ত্রণ চর্চার মধ্যে থাকতে হয়। শিশুকাল থেকে নির্দিষ্ট সীমা বুঝিয়ে দিতে হয়, লাগামহীন ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়, কখন কাকে কোন কথা বলা যায়—এসব সঠিকভাবে বোঝাতে হয়। যদি মনে হয় নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, অন্যের আবেগও বুঝতে না পেরে যখন-তখন বেফাঁস কথা বলে ফেলছেন, তাহলে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। প্রয়োজনে মেডিটেশন করা যেতে পারে।
যারা সবকিছুকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন, তাঁদের ‘মানসিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন’ প্রয়োজন। অর্থহীন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাবনা বা বিষণ্নতা আছে কিনা, এসব জানতে হবে। এর কারণে অনেকে নেতিবাচক আচরণ করে।
কথায় আহত হলে
অযাচিত মন্তব্য নিশ্চয়ই অশোভন আচরণ। এমন মন্তব্যে শুনে আহত হওয়া যাবে না। নেতিবাচক কিছু শুনে অনেকেই কষ্ট, বিষাদ বা হতাশায় ভোগে। নিজেকে বোঝাতে হবে, এ ধরনের মানুষকে শুধু করুণা করা যায়! এক কথায় ওই বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করতে হবে। চট করে মূল্যায়নও করা যাবে না।
ডা. মোহিত কামাল একটা সত্য ঘটনার উদাহরণ টেনে বিষয়টি বোঝান—কেউ ফেসবুকে কোনো একজন চিকিৎসককে নিয়ে স্ট্যাটাস দিল যে, ওই চিকিৎসক বদমেজাজি। তাঁর সঙ্গে সহমত আরও কয়েকজন জুটে গেল। ওই চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলাম কী হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে জানি বলে ফেসবুকের কথা বিশ্বাস হলো না। তিনি বললেন, এক রোগীকে ধমক দিয়েছিলেন। কেন ধমক দিয়েছিলেন সেই উত্তর না খুঁজেই একদল লোক তা নিয়ে কুৎসা রটানো শুরু করল। রোগী ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, তাই শরীর খারাপ হওয়া শুরু করেছে। বিশেষ ক্ষেত্রে আদরে কাজ হয় না বলেই তিনি ধমক দিয়েছিলেন। যিনি ফেসবুকে কথাটি জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার সূত্রপাত জানতেন না। তাই চট জলদি একজনকে মূল্যায়ন করা যাবে না।
জলদি মূল্যায়ন থেকে গুজবের সৃষ্টি
যন্ত্রণার কথা কাউকে বলতে না পেরে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেন। যারা এ ধরনের মানুষকে নিয়ে অযথা চর্চা করেন, তাঁরা জানেন না যাকে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তাঁর জীবনে কী চলছে, কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, কিংবা তাঁর হঠাৎ পরিবর্তনের পেছনে কোনো অতীত আছে কিনা। এসব না জেনেই বিচারমূলক মন্তব্য উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। অযাচিত মন্তব্য অনেক সময় ‘গুজব’ হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
নিজেকে অন্যের স্থানে রাখুন
কারও সম্পর্কে না জেনে কথা বলার আগে একবার নিজেকে তাঁর জায়গায় রাখুন। অপরপক্ষ যদি না জেনে এ কথাগুলো আপনাকে বলত, আপনি কীভাবে নিতেন? মনে কি কষ্ট পেতেন? আপনার মন কি খারাপ হতো? যদি এসব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে তাহলে সে সব কথা বলা থেকে বিরত থাকাই উত্তম নয় কি?
কথা বলার আগে ভাবুন
কথা বলার ভঙ্গি, শব্দ চয়ন, বিষয় বাছাই, সর্বোপরি কথাবার্তায় পরিমিতিবোধের মধ্যেই একজনের আচরণ বোঝা যায়। এতে ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। সে জন্য স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনা করে কথা বলুন। আপনার কথা যেন কারও মর্মপীড়ার কারণ না হয়।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
প্রেরণার মন খারাপ। সহকর্মী একগাদা কথা শুনিয়ে গেলেন। জানলেন না কী হয়েছে, নিজের মতো করে খোঁচা–উপদেশ সবটাই দিলেন। ভালো লাগল না প্রেরণার, মনে হলো তির্যক কিছু উত্তর দেন। কিন্তু উপেক্ষা করলেন, অফিসের পরিবেশ নষ্ট হবে ভেবে।
শুধু সহকর্মী নয়, বন্ধুবান্ধব থেকে আত্মীয়স্বজন সবার কাছ থেকেই এমন অযাচিত উপদেশবাণী, খোঁচা শুনতে হয় প্রায়ই। অথচ এটা তাঁর বলার কথা নয়, অথবা এই অনধিকার চর্চা না করলেও পারতেন। শুধু অনুমান থেকে মন্তব্য করে বসেন এমন মানুষ। পরিচিতদের মধ্য থেকেই এমন কথার তির বেশি ছোড়া হয়। অপরপক্ষ কোন অবস্থায় বা কোন মুডে আছে, তার থোড়াই কেয়ার করেন তাঁরা, যেন দুটো উপদেশ দিতে পারলেই দিলখুশ!
এদের কি সত্যটা বোঝানো উচিত?
এই ধরনের মানুষ আপনার কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়, শুধু শোনাতেই আগ্রহ। বুঝে না বুঝে, স্থান কাল কোনোটাই বাধা হয় না তাদের। হয়তো কেউ তাকে বোঝানোর চেষ্টাও করেন, কিন্তু অভ্যাসটা কখন যে বদভ্যাসে পরিণত হয় সেটা হয়তো খেয়ালই নেই।
এটা কি কোনো রোগ?
মনোচিকিৎসক ও লেখক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘এটাকে সরাসরি রোগ বলা যাবে না। তবে যে বিষয়ে আমরা জানি না সে বিষয়ে কথা বলা ভয়ংকর। যা জানি না, যে বিষয়ে দক্ষ না তা নিয়ে মন্তব্য করা যাবে না। না জেনে মন্তব্য করে জ্ঞানপাপীরা!’
নিজেকে জাহিরের চেষ্টা
উদাহরণ হিসেবে ‘মনোসমস্যা মনোবিশ্লেষণ’ বইয়ের লেখক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘দেখা গেল আড্ডায় কোনো লেখককে নিয়ে কথা উঠল। কেউ বললেন, ওনার লেখা খারাপ। আরেকজন একই সুরে কথা বলতে গিয়ে বললেন, ওনার কোনো লেখাই হয় না। অথচ উনি হয়তো ওই লেখকের কোনো বই পড়েননি। এমনও হতে পারে, উনি হয়তো অন্য আরেকজনের কাছে শুনেছেন যে উনি ভালো লেখেন না। ব্যস, ওনার মনে বদ্ধ ধারণা হয়ে গেছে ওই লেখক কোনো লেখাই পারেন না। অথচ উনি বলতে পারতেন, আমি ওনার কোনো লেখা পড়িনি, আমার ধারণা নেই ওনার সম্পর্কে। তাতে কিন্তু ওনার একবিন্দুও সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক ক্ষতি হতো না। এরপরও আমরা এভাবে নানা মিথ দাঁড় করানোর চেষ্টা করি।’
সামাজিক বিবাদ বাড়ে
ডা. মোহিত কামাল মনে করেন, এটা এক ধরনের কুৎসা রটানো, গিবত চর্চা। তিনি বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে গিবত করা মহাপাপ। অনেক সময় কারও পেছনে কাউকে নিয়ে আলোচনা করা হয়। অনুমান করে মনের মতো করে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। এটা ঠিক নয়।’ যাকে নিয়ে এমন ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে নিশ্চয়ই তিনি কখনো তা জানতে পারেন, হয়তো কেউ নীরবে সহ্য করেন, কেউ করেন প্রতিবাদ। কখনো সেটা বিবাদ পর্যন্ত গড়ায়।
আপনার মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন
মন্তব্য করতে হলে বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে জেনে নিতে হবে, সে বিষয়ে দক্ষ হতে হবে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলার অধিকার কিংবা যোগ্যতা রাখেন কিনা সেটি বুঝতে হবে। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে মন্তব্য করলেই মানুষের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। নিষ্প্রয়োজন মন্তব্য বেশির ভাগ সময় ‘অযাচিত’ হয়ে ওঠে।
প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব মেধা আছে, আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, সেটি নিজের আলোকে জেনে বুঝে মন্তব্য করা উচিত। সেটাই হবে সবচেয়ে প্রত্যাশিত মতামত।
কাদের মধ্যে এমন প্রবণতা বেশি
আমাদের ব্যক্তিত্বের দুটি বৈশিষ্ট্য হলো আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা ইমোশনাল কোশেন্ট—ইকিউ) ও বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতা (ইন্টেলিজেন্স কোশেন্ট বা আইকিউ)। এই দুই বুদ্ধি নিয়ে আমরা পরিচালিত হই। যার আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা নিয়ন্ত্রিত তার বুদ্ধি যথাযথ ফল দেয়। আর যার আবেগীয় বুদ্ধি উন্মাতাল তারা আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। অন্যের আবেগও বোঝেন না। ফলে বেসামাল কথা বলেন।
অনেক সময় এটিকে বলে ‘স্লিপ অব টাং’। অর্থাৎ যেটা ওই ব্যক্তির ভেতর ছিল, সে কথাটাই মুখ থেকে বেরিয়ে যায় আবেগের বশে। আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মানুষ এলোমেলো বা অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে থাকে।
নিয়ন্ত্রণ সম্ভব
আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা থাকলে ব্যক্তি নিজের অনুভূতি শনাক্ত করতে পারে। আত্মনিয়ন্ত্রণ বা আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। সেই অন্যের আবেগও বুঝতে পারে। এতে তার সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা বাড়ে। বিষয়টি একদিনে হয় না, শিশুকাল থেকে নিয়ন্ত্রণ চর্চার মধ্যে থাকতে হয়। শিশুকাল থেকে নির্দিষ্ট সীমা বুঝিয়ে দিতে হয়, লাগামহীন ছেড়ে দেওয়া ঠিক নয়, কখন কাকে কোন কথা বলা যায়—এসব সঠিকভাবে বোঝাতে হয়। যদি মনে হয় নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, অন্যের আবেগও বুঝতে না পেরে যখন-তখন বেফাঁস কথা বলে ফেলছেন, তাহলে মনোচিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। প্রয়োজনে মেডিটেশন করা যেতে পারে।
যারা সবকিছুকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন, তাঁদের ‘মানসিক স্বাস্থ্যের মূল্যায়ন’ প্রয়োজন। অর্থহীন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভাবনা বা বিষণ্নতা আছে কিনা, এসব জানতে হবে। এর কারণে অনেকে নেতিবাচক আচরণ করে।
কথায় আহত হলে
অযাচিত মন্তব্য নিশ্চয়ই অশোভন আচরণ। এমন মন্তব্যে শুনে আহত হওয়া যাবে না। নেতিবাচক কিছু শুনে অনেকেই কষ্ট, বিষাদ বা হতাশায় ভোগে। নিজেকে বোঝাতে হবে, এ ধরনের মানুষকে শুধু করুণা করা যায়! এক কথায় ওই বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করতে হবে। চট করে মূল্যায়নও করা যাবে না।
ডা. মোহিত কামাল একটা সত্য ঘটনার উদাহরণ টেনে বিষয়টি বোঝান—কেউ ফেসবুকে কোনো একজন চিকিৎসককে নিয়ে স্ট্যাটাস দিল যে, ওই চিকিৎসক বদমেজাজি। তাঁর সঙ্গে সহমত আরও কয়েকজন জুটে গেল। ওই চিকিৎসকের কাছে জানতে চাইলাম কী হয়েছে, ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে জানি বলে ফেসবুকের কথা বিশ্বাস হলো না। তিনি বললেন, এক রোগীকে ধমক দিয়েছিলেন। কেন ধমক দিয়েছিলেন সেই উত্তর না খুঁজেই একদল লোক তা নিয়ে কুৎসা রটানো শুরু করল। রোগী ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন, তাই শরীর খারাপ হওয়া শুরু করেছে। বিশেষ ক্ষেত্রে আদরে কাজ হয় না বলেই তিনি ধমক দিয়েছিলেন। যিনি ফেসবুকে কথাটি জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার সূত্রপাত জানতেন না। তাই চট জলদি একজনকে মূল্যায়ন করা যাবে না।
জলদি মূল্যায়ন থেকে গুজবের সৃষ্টি
যন্ত্রণার কথা কাউকে বলতে না পেরে বহু মানুষ আত্মহত্যা করেন। যারা এ ধরনের মানুষকে নিয়ে অযথা চর্চা করেন, তাঁরা জানেন না যাকে নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, তাঁর জীবনে কী চলছে, কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, কিংবা তাঁর হঠাৎ পরিবর্তনের পেছনে কোনো অতীত আছে কিনা। এসব না জেনেই বিচারমূলক মন্তব্য উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে। অযাচিত মন্তব্য অনেক সময় ‘গুজব’ হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
নিজেকে অন্যের স্থানে রাখুন
কারও সম্পর্কে না জেনে কথা বলার আগে একবার নিজেকে তাঁর জায়গায় রাখুন। অপরপক্ষ যদি না জেনে এ কথাগুলো আপনাকে বলত, আপনি কীভাবে নিতেন? মনে কি কষ্ট পেতেন? আপনার মন কি খারাপ হতো? যদি এসব প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়ে থাকে তাহলে সে সব কথা বলা থেকে বিরত থাকাই উত্তম নয় কি?
কথা বলার আগে ভাবুন
কথা বলার ভঙ্গি, শব্দ চয়ন, বিষয় বাছাই, সর্বোপরি কথাবার্তায় পরিমিতিবোধের মধ্যেই একজনের আচরণ বোঝা যায়। এতে ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পায়। সে জন্য স্থান, কাল, পাত্র বিবেচনা করে কথা বলুন। আপনার কথা যেন কারও মর্মপীড়ার কারণ না হয়।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
খাবার মজাদার করতে আমরা সাধারণভাবে তেল-মসলার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলি। সেখান থেকে বাদ যায় না পেঁয়াজ কিংবা রসুন। পেঁয়াজকে কায়দা করে সরিয়ে রাখলেও খাবার মজাদার হতে পারে। তেমনই কিছু রেসিপি...
১১ ঘণ্টা আগেবাংলা অঞ্চলে মিষ্টিজাতীয় প্রাচীন খাবারগুলোর মধ্যে সন্দেশের নাম আছে একেবারে প্রথম দিকে। সব মিষ্টির কিছু না কিছু বদল হলেও, এর বদল হয়েছে খুবই কম। যশোরের নলেন গুড়ের সন্দেশ, মানিকগঞ্জ বা নাগরপুরের প্যারা সন্দেশ, পাবনার মাছের পেটি সন্দেশ ইত্যাদি কে না খেতে পছন্দ করে!
১১ ঘণ্টা আগেজীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে দারুচিনি দ্বীপের কথা, তার রহস্যময় শ্যামলিমার কথা, সেই সবুজের গহিনে দিকহারা নাবিকের আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষার কথা। এই দারুচিনি দ্বীপ কি আসলে কোনো সমুদ্রঘেরা ভূখণ্ড, নাকি বনলতা সেন নিজেই, তা নিয়ে কবিরা বিতর্ক করুক। আমরা বরং এই দ্বীপের তত্ত্বতালাশ করি।
১১ ঘণ্টা আগে‘প্রসেসেস’-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভাতের মাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি হজমযোগ্য স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে কাজ করে। এমনকি এটি ওজন কমাতে পারে।
১২ ঘণ্টা আগে