পর্যটকের জন্য সাজিয়ে রাখা গ্রাম

মাহিদুল ইসলাম, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার)
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭: ৫০

পরিপাটি সাজানো ঘর। ঘরের ওপরে গাছ। বাগানের ভেতর বাড়ি নাকি বাড়ির জন্য সাজানো বাগান, তা বোঝা মুশকিল। এই সব বাড়ির সেই সব ঘরে চাইলেই থাকতে পারবেন যে-কেউ। ধর্ম কিংবা বর্ণের কোনো বালাই নেই। এখানে যাঁরাই আসেন, তাঁরাই অতিথি।

বলছি কমলগঞ্জের আদমপুর ইউনিয়নের ভানুবিল মাঝেরগাঁও গ্রামের কথা। এটি মণিপুরি সম্প্রদায়ের গ্রাম। কিন্তু পর্যটকপ্রিয় জায়গা হিসেবে বিখ্যাত কমলগঞ্জের এ গ্রামটি এখন কমিউনিটিভিত্তিক পর্যটনের আদর্শ উদাহরণ আমাদের দেশে। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের পর্যটনকে অনেকটাই সমৃদ্ধ করেছে মাঝেরগাঁও গ্রাম। প্রায় পাঁচ বছর আগে ক্ষুদ্র পরিসরে এই উদ্যোগের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এর বিস্তার কয়েকটি গ্রামজুড়ে।

মেইতৈই মণিপুরি সম্প্রদায়ের নিরঞ্জন সিনহা মণিপুরি নারীদের কর্মসংস্থানের কথা চিন্তা করে নিজ বাড়িতে ২০১৮ সালে এই উদ্যোগের সূচনা করেন। ধীরে ধীরে গত পাঁচ বছরে কয়েকটি গ্রাম মিলে প্রায় ৮০টি বাড়িতে গড়ে উঠেছে এ পর্যটন উদ্যোগ। প্রথম দিকে পর্যটক খুব একটা না এলেও দুই বছর ধরে প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটক নিয়মিত আসছেন মাঝেরগাঁওসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে। ঘরোয়া পরিবেশে থেকে মণিপুরি খাবার, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জীবনযাত্রা দেখার সুযোগ আছে এখানে। তা ছাড়া এখানে থেকে ঘুরে বেড়ানো যাবে কমলগঞ্জসহ মৌলভীবাজারের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে কাজ করছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের এ পর্যটন উদ্যোগ।

এখানে দুটি ডাবল বেডের রুমের জন্য প্রতি রাত ভাড়া দিতে হবে ২ হাজার টাকা। থাকা যাবে একসঙ্গে চারজন। তিনবেলা খাবার ও সকাল-বিকেলের নাশতার জন্য জনপ্রতি ১ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এখানে পরিবেশন করা হয় মণিপুরি খাবার। চাইলে কেনা যাবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের তৈরি করা শাড়ি, গামছা, চাদরসহ বিভিন্ন হস্তশিল্পজাত দ্রব্য। এ ছাড়া উপভোগ করা যাবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুরো এলাকার নিরাপত্তায় রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

মাঙাল ময়ুম নামের এখানকার একটি কটেজের স্বত্বাধিকারী পরিমোহন সিং। তিনি জানিয়েছেন, যেকোনো সময় পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুত তাঁরা। তাঁর বাড়ির একটি কক্ষ পর্যটকদের জন্য রাখা আছে। সেখানে মাত্র ২ হাজার টাকায় চারজন পর্যটকের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের দেখাশোনা করেন বাড়ির নারীরা।

মণিপুরি কমিউনিটি বেজড ট্যিরিজমের নেত্রী সুনিতি দেবী। পর্যটকদের পেয়ে তাঁরা যে বেশ খুশি সেটা অকপটে জানালেন তিনি। বললেন, ‘পর্যটকেরা আমাদের এখানে এলে পরিবারের সদস্যদের মতো হয়ে যান।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত