জাফর মুহাম্মদ
বগুড়া শহরের অদূরেই গাবতলী উপজেলা। এই উপজেলারই সুন্দর একটি ইউনিয়নের নাম নেপালতলী। সেই গ্রামে আছে চোখজুড়ানো বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। হেমন্ত শেষে ঋতুতে এখন শীতের আমেজ। পৌষের প্রথম সপ্তাহ চলছে। মৃদু হিমেল হাওয়ায় এখনো মাঠে ফসল তুলতে ব্যস্ত কৃষক।
এত বিশাল-বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠকে বলা হয় পাথার। পাথারের সমার্থক হলো সমুদ্র। এই ফসলের সমুদ্রের মাঝখানে একটা বিল। নাম বুরুঙ্গি বিল। সারা বছর কচুরিপানায় ছেয়ে থাকে।
বর্ষায় চারপাশের ফসলের খেত আর বিল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়! শীতে বিলের মাঝখানে অনেকখানি জুড়ে থাকে পানি, টলটলে স্বচ্ছ। সেই পানির চারপাশে কচুরিপানার দেয়াল। কচুরিপানার চারপাশে জলা জায়গা। কোথাও হাঁটু পর্যন্ত আর কোথাও পানি একটু বেশি।
এই জায়গা জলাভূমির পাখিদের জন্য আদর্শ বটে! বিশেষ করে পাতিসরালির মতো পাখিদের জন্য। পাতিসরালিকে অনেকেই পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি বলে ভুল করে। এই পাখি আমাদের দেশের। শীত মৌসুম বাদে অন্য মৌসুমে এরা জোড়ায় জোড়ায় ছোট ছোট জলাশয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। কিন্তু শীত এলে সব একসঙ্গে ঝাঁক বেঁধে বড় কোনো জলাশয়ে চলে যায়।
বলছিলাম বুরুঙ্গি বিলের কথা। শীতের শুরুতে বুরুঙ্গি বিল মুখর হয়ে উঠেছে পাতিসরালির ডাকে। বিলের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাজুড়ে পাতিসরালিদের অস্থায়ী আবাস। খুব খেয়াল না করলে তাদের খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল।
তবে বুরুঙ্গি বিলে গেলেই চোখে পড়বে শামুকখোলদের। একটি-দুটি নয়, শয়ে শয়ে শামুকখোল একসঙ্গে দেখার কী যে অসাধারণ অনুভূতি, তা বলে বোঝানোর মতো নয়। এরা বিলের স্বচ্ছ পানির বাইরের অংশে কচুরিপানার মধ্যে খাবার খুঁজে খায়। খাবার খোঁজার পাশাপাশি খুনসুটিও চলতে থাকে তাদের। বিশাল আকৃতির এই শামুকখোল দেখতে দেখতেই হয়তো চোখে পড়বে বিশাল মেটে মাথা হট্টিটির ঝাঁক। এক একটি ঝাঁকে থাকে কয়েক শ মেটে মাথার হট্টিটি। উড়তে উড়তে তাদের তীক্ষ্ণ শব্দে পুরো বিল মুখর হয়ে ওঠে।
হাঁটুপানি পেরিয়ে একটু উঁচুমতো জলা জায়গাগুলোর কাদার মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে খাবার খুঁজতে দেখা যায় গেওয়া বাটান পাখিদের। খুব খেয়াল না করলে চোখেই পড়ে না। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চমকে দিয়ে উড়ে চলে যায়। গেওয়া বাটানের পাশাপাশি চোখে পড়ে সদা চঞ্চল সিট্রিন খঞ্জন। এই পাখি গ্রীষ্মকালে তুন্দ্রার স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমিতে, হিমবাহ বা পার্বত্য জলাশয়ে থাকে। শীতকালে এদের দেখা মেলে হাওর-বাঁওড় ও বিলের মতো জলাশয়ে। মে থেকে আগস্ট মাসে এরা তিব্বতে ঘাসের গোছা কিংবা ঝোপের তলায় অথবা পাথরের পেছনে বাটির মতো বাসা তৈরি করে। সেই বাসাতেই বাচ্চা ফোটায়।
বুরুঙ্গি বিল জুড়ে দেখা মিলবে বড় বগা ও কানি বকের। ভাগ্য খুব ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে লালচে বকের। লম্বা গলার এই বককে স্থানীয়ভাবে সাপ পাখিও বলা হয়। তবে দেখা মেলে খুবই কম। খঞ্জনের মতোই ছোট্ট আরেক পাখিও দেখা যাবে বিলের চারপাশজুড়ে। এর নাম পাতি শিলাফিদ্দা। আকারে প্রায় টুনটুনির কাছাকাছি ছোট্ট এই পাখি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। এ ছাড়া বিলের রোদে পাখা মেলে বসে থাকতে দেখা যাবে অসংখ্য ছোট পানকৌড়ি। শীতের হিমশীতল জলে মাছ ধরে কিছুক্ষণ পরপর রোদে ডানা ছড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাদের। বিলজুড়ে দেখা যায় পাতি মাছরাঙা আর ধলাবুক মাছরাঙাদের।
বিলের আরেক লাজুক পাখি হলো নেউপিপি বা জলময়ূর। ঘাস-লতাপাতার ভেতর এরা এমন চুপটি করে থাকে যে আলাদা করাই মুশকিল। বিল ছাড়িয়ে পাড়ের দিক এগোলে চোখে পড়বে কতগুলো সবুজ বাঁশপাতি বা সুঁইচোরা পাখির। দেখতে বাঁশের পাতার মতোই লম্বা-সবুজ আর লেজটা সুচের মতো বলে এদের নাম সুঁইচোরা। উড়ন্ত পোকা ধরে আবার ফিরে বসে থাকে নিজ জায়গায়। বিল ছাড়িয়ে গ্রামের ভেতর দিকে উঠে এলে দেখা মেলে বড় তিতের।
এসব পাখি ছাড়াও তিলা ঘুঘু, ইউরেশিয়ান কণ্ঠি ঘুঘু, শালিক, গো-শালিক, চড়ুইয়ের মতো পাখি বুরুঙ্গি বিলকে কখনো নিশ্চুপ হতে দেয় না। আপনিও ছুটির কোনো অলস দিনে চুপি চুপি ঘুরে আসতে পারেন এই পাখির রাজ্য থেকে। তবে তাদের বিরক্ত করা যাবে না। তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দিয়ে আপনি আপনার মতো ঘুরে দেখুন বুরুঙ্গি বিলের শীতের জাদু।
লেখক: প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও আলোকচিত্রী
বগুড়া শহরের অদূরেই গাবতলী উপজেলা। এই উপজেলারই সুন্দর একটি ইউনিয়নের নাম নেপালতলী। সেই গ্রামে আছে চোখজুড়ানো বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। হেমন্ত শেষে ঋতুতে এখন শীতের আমেজ। পৌষের প্রথম সপ্তাহ চলছে। মৃদু হিমেল হাওয়ায় এখনো মাঠে ফসল তুলতে ব্যস্ত কৃষক।
এত বিশাল-বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠকে বলা হয় পাথার। পাথারের সমার্থক হলো সমুদ্র। এই ফসলের সমুদ্রের মাঝখানে একটা বিল। নাম বুরুঙ্গি বিল। সারা বছর কচুরিপানায় ছেয়ে থাকে।
বর্ষায় চারপাশের ফসলের খেত আর বিল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়! শীতে বিলের মাঝখানে অনেকখানি জুড়ে থাকে পানি, টলটলে স্বচ্ছ। সেই পানির চারপাশে কচুরিপানার দেয়াল। কচুরিপানার চারপাশে জলা জায়গা। কোথাও হাঁটু পর্যন্ত আর কোথাও পানি একটু বেশি।
এই জায়গা জলাভূমির পাখিদের জন্য আদর্শ বটে! বিশেষ করে পাতিসরালির মতো পাখিদের জন্য। পাতিসরালিকে অনেকেই পরিযায়ী পাখি বা অতিথি পাখি বলে ভুল করে। এই পাখি আমাদের দেশের। শীত মৌসুম বাদে অন্য মৌসুমে এরা জোড়ায় জোড়ায় ছোট ছোট জলাশয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। কিন্তু শীত এলে সব একসঙ্গে ঝাঁক বেঁধে বড় কোনো জলাশয়ে চলে যায়।
বলছিলাম বুরুঙ্গি বিলের কথা। শীতের শুরুতে বুরুঙ্গি বিল মুখর হয়ে উঠেছে পাতিসরালির ডাকে। বিলের সবচেয়ে সুরক্ষিত এলাকাজুড়ে পাতিসরালিদের অস্থায়ী আবাস। খুব খেয়াল না করলে তাদের খুঁজে পাওয়া বেশ মুশকিল।
তবে বুরুঙ্গি বিলে গেলেই চোখে পড়বে শামুকখোলদের। একটি-দুটি নয়, শয়ে শয়ে শামুকখোল একসঙ্গে দেখার কী যে অসাধারণ অনুভূতি, তা বলে বোঝানোর মতো নয়। এরা বিলের স্বচ্ছ পানির বাইরের অংশে কচুরিপানার মধ্যে খাবার খুঁজে খায়। খাবার খোঁজার পাশাপাশি খুনসুটিও চলতে থাকে তাদের। বিশাল আকৃতির এই শামুকখোল দেখতে দেখতেই হয়তো চোখে পড়বে বিশাল মেটে মাথা হট্টিটির ঝাঁক। এক একটি ঝাঁকে থাকে কয়েক শ মেটে মাথার হট্টিটি। উড়তে উড়তে তাদের তীক্ষ্ণ শব্দে পুরো বিল মুখর হয়ে ওঠে।
হাঁটুপানি পেরিয়ে একটু উঁচুমতো জলা জায়গাগুলোর কাদার মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে খাবার খুঁজতে দেখা যায় গেওয়া বাটান পাখিদের। খুব খেয়াল না করলে চোখেই পড়ে না। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চমকে দিয়ে উড়ে চলে যায়। গেওয়া বাটানের পাশাপাশি চোখে পড়ে সদা চঞ্চল সিট্রিন খঞ্জন। এই পাখি গ্রীষ্মকালে তুন্দ্রার স্যাঁতসেঁতে তৃণভূমিতে, হিমবাহ বা পার্বত্য জলাশয়ে থাকে। শীতকালে এদের দেখা মেলে হাওর-বাঁওড় ও বিলের মতো জলাশয়ে। মে থেকে আগস্ট মাসে এরা তিব্বতে ঘাসের গোছা কিংবা ঝোপের তলায় অথবা পাথরের পেছনে বাটির মতো বাসা তৈরি করে। সেই বাসাতেই বাচ্চা ফোটায়।
বুরুঙ্গি বিল জুড়ে দেখা মিলবে বড় বগা ও কানি বকের। ভাগ্য খুব ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে লালচে বকের। লম্বা গলার এই বককে স্থানীয়ভাবে সাপ পাখিও বলা হয়। তবে দেখা মেলে খুবই কম। খঞ্জনের মতোই ছোট্ট আরেক পাখিও দেখা যাবে বিলের চারপাশজুড়ে। এর নাম পাতি শিলাফিদ্দা। আকারে প্রায় টুনটুনির কাছাকাছি ছোট্ট এই পাখি দেখতে অসম্ভব সুন্দর। এ ছাড়া বিলের রোদে পাখা মেলে বসে থাকতে দেখা যাবে অসংখ্য ছোট পানকৌড়ি। শীতের হিমশীতল জলে মাছ ধরে কিছুক্ষণ পরপর রোদে ডানা ছড়িয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাদের। বিলজুড়ে দেখা যায় পাতি মাছরাঙা আর ধলাবুক মাছরাঙাদের।
বিলের আরেক লাজুক পাখি হলো নেউপিপি বা জলময়ূর। ঘাস-লতাপাতার ভেতর এরা এমন চুপটি করে থাকে যে আলাদা করাই মুশকিল। বিল ছাড়িয়ে পাড়ের দিক এগোলে চোখে পড়বে কতগুলো সবুজ বাঁশপাতি বা সুঁইচোরা পাখির। দেখতে বাঁশের পাতার মতোই লম্বা-সবুজ আর লেজটা সুচের মতো বলে এদের নাম সুঁইচোরা। উড়ন্ত পোকা ধরে আবার ফিরে বসে থাকে নিজ জায়গায়। বিল ছাড়িয়ে গ্রামের ভেতর দিকে উঠে এলে দেখা মেলে বড় তিতের।
এসব পাখি ছাড়াও তিলা ঘুঘু, ইউরেশিয়ান কণ্ঠি ঘুঘু, শালিক, গো-শালিক, চড়ুইয়ের মতো পাখি বুরুঙ্গি বিলকে কখনো নিশ্চুপ হতে দেয় না। আপনিও ছুটির কোনো অলস দিনে চুপি চুপি ঘুরে আসতে পারেন এই পাখির রাজ্য থেকে। তবে তাদের বিরক্ত করা যাবে না। তাদেরকে তাদের মতো থাকতে দিয়ে আপনি আপনার মতো ঘুরে দেখুন বুরুঙ্গি বিলের শীতের জাদু।
লেখক: প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা ও আলোকচিত্রী
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
১ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
১ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
১ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
১ দিন আগে