সুমন্ত গুপ্ত
সময় বাঁচানোর জন্য সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড চলে এলাম। এসেই পাওয়া গেল বাস। উঠে পড়লাম তাতে। আমাদের আজকের ভ্রমণ গন্তব্য তাহিরপুরের শিমুল বন।
আমাদের বাস ছুটে চলছে গন্তব্যে। জানালা দিয়ে দৃষ্টিসীমানায় যতটুকু দেখা যায় প্রকৃতির খেলা, দেখতে থাকলাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসে পৌঁছালাম সুনামগঞ্জ শহরে। নতুন ব্রিজের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া করে ছুটলাম গন্তব্যের দিকে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার ভালো মাধ্যম হলো মোটরবাইক। তবে হিউম্যান হলারেও যেতে পারবেন তাহিরপুরের শিমুল বনে।
গ্রামের ধূলিময় রাস্তা, দম বন্ধ হয়ে আসে। তবু চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আমরা নির্বাক। আমাদের পাইলট দ্রুতগতিতে ছোটালেন বাইক। লাউরের গড় বিজিবি ক্যাম্পের কাছে আসতেই দূরে দেখা গেল লাল টকটকে শিমুল বন, সঙ্গে অপরূপ জাদুকাটা নদী। যেন আগুন লেগেছে সেই বনে! তবে তখনো পথ বেশ দূর। আমাদের পাড়ি দিতে হবে জাদুকাটা নদী। নদীতে পানি কম, যত দূর চোখ যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদ। আমরা মোটরসাইকেল থেকে নেমে জাদুকাটা নদীর শীতল পরশ বুলিয়ে নিলাম।
নদীর ওপাশেই সবুজ বারিক টিলা। তারপর কুয়াশায় মোড়ানো মেঘালয় পাহাড়। বর্ষার দিনে সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে এই নীল নদী বয়ে যায়। জাদুময় জাদুকাটা নদী দেখতে পর্যটকেরা তখন ভিড় করেন। তবে এখন পানি কম বলে নদী ধরে প্রায় এক মাইল হেঁটে আমরা পৌঁছালাম শিমুল বনে। টকটকে লাল শিমুল ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান! এক ডাল থেকে অন্য ডালে খুনসুটিতে ব্যস্ত পাখিরা। বাসন্তী হাওয়ায় প্রকৃতিতে নতুন প্রাণের স্পন্দন।
২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে এই শিমুলবাগান গড়ে তুলেছিলেন জয়নাল আবেদিন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সপরিবারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভৈরব থেকে সুনামগঞ্জ জেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। কিশোর বয়স থেকে উদ্যমী এই মানুষ অল্প বয়সেই ইতি টানেন পড়ালেখার। নানা পেশা বদলে একসময় জড়িয়ে পড়েন মাছ ব্যবসায়। নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইনল্যান্ড ফিশারিজের মাধ্যমে ইজারা নেন টাঙ্গুয়ার হাওর। আবার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। কিন্তু শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে মন ভরেনি; মানুষের কল্যাণে আরও কিছু করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। গাছপালার প্রতি অপরিসীম মমতা ছিল জয়নাল আবেদিনের। তাঁর এই পছন্দের সঙ্গে একাত্ম হলো তাহিরপুরের সাধারণ মানুষের ভাবনা।
বর্ষা এলেই আমূল বদলে যায় হাওরের দৃশ্যপট। ঢেউয়ের তোড়ে প্রতিনিয়ত ভাঙতে থাকে পাড়। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের বাড়িঘর। এমন গুরুতর সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? অনেক ভেবে পাওয়া গেল, শক্ত শিকড়-বাকড়ের জলসহিষ্ণু গাছপালাই পরিত্রাণের উপায়। সংখ্যায় কম হলেও এমন দু-একটি প্রজাতি সেখানে আগে থেকেই ছিল। যার অন্যতম হিজল ও করচগাছ। গলাসমান পানিতেও এদের দিব্যি বেঁচে থাকা সম্ভব। শুধু হিজল ও করচগাছই একসঙ্গে অনেকগুলো সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু এই বিশাল কর্মযজ্ঞের শুরুটা কীভাবে হবে। স্থানীয় মানুষ যখন এসব নিয়ে ভাবছিলেন, তখন অনেকটা পরিত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন। তিনি ১৯৮৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় ৯০ হাজার করচগাছ লাগিয়েছেন! পাশাপাশি হিজলগাছও লাগিয়েছিলেন বেশ কিছু।
চারাগুলো সংগ্রহ করেছিলেন স্থানীয়ভাবেই। শুধু গাছ লাগিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি। গাছের পুরো যত্নআত্তির দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন। শুকনো মৌসুমে নিজেই গাছে পানি দিতেন। একটানা ১৩ বছর তিনি সত্যিকার অর্থেই অসাধ্য সাধন করেছেন।
জয়নাল আবেদিন আজ আর নেই। পৃথিবীর মোহমায়া ছেড়ে অনেক আগে চলে গেছেন। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর অনন্য কীর্তি। সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ টাঙ্গুয়ার হাওরজুড়ে তাঁর সন্তানসম বৃক্ষগুলো এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের যেমন তৃষ্ণা মেটাচ্ছে, অন্যদিকে বাড়িয়েছে হাওরের সৌন্দর্য। আবার হাওরের মাটি সুরক্ষায়ও রাখছে বিরাট ভূমিকা।
তাহিরপুরের শিমুল বন দেখতে এসে এগুলো জানা গেল ওই এলাকার প্রবীণ শেখর দাসের কাছ থেকে। আমরা পুরো এলাকা ঘুরে বেড়ালাম হেঁটে। এ যেন কল্পনার রঙে সাজানো এক শিমুলের প্রান্তর! ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে জাদুকাটা নদী আর এ পাড়ে শিমুল বন।
যেভাবে যেতে পারেন
ঢাকা থেকে বাসে সুনামগঞ্জ। অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট। সেখান থেকে বাস অথবা গাড়ি ভাড়া করে সুনামগঞ্জ শহর। সুনামগঞ্জের নতুন ব্রিজের গোড়া থেকে বাইক অথবা লেগুনায় সরাসরি লাউরের গড়। বাইকে জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা এবং লেগুনায় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, রিজার্ভ। চাইলে নিজেদের যানবাহন নিয়েও যাওয়া যায় লাউরের গড়। তারপর বালুচর দিয়ে হেঁটে শিমুল বন।
সময় বাঁচানোর জন্য সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড চলে এলাম। এসেই পাওয়া গেল বাস। উঠে পড়লাম তাতে। আমাদের আজকের ভ্রমণ গন্তব্য তাহিরপুরের শিমুল বন।
আমাদের বাস ছুটে চলছে গন্তব্যে। জানালা দিয়ে দৃষ্টিসীমানায় যতটুকু দেখা যায় প্রকৃতির খেলা, দেখতে থাকলাম। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এসে পৌঁছালাম সুনামগঞ্জ শহরে। নতুন ব্রিজের কাছ থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া করে ছুটলাম গন্তব্যের দিকে। সুনামগঞ্জ শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাওয়ার ভালো মাধ্যম হলো মোটরবাইক। তবে হিউম্যান হলারেও যেতে পারবেন তাহিরপুরের শিমুল বনে।
গ্রামের ধূলিময় রাস্তা, দম বন্ধ হয়ে আসে। তবু চারপাশের সৌন্দর্য দেখে আমরা নির্বাক। আমাদের পাইলট দ্রুতগতিতে ছোটালেন বাইক। লাউরের গড় বিজিবি ক্যাম্পের কাছে আসতেই দূরে দেখা গেল লাল টকটকে শিমুল বন, সঙ্গে অপরূপ জাদুকাটা নদী। যেন আগুন লেগেছে সেই বনে! তবে তখনো পথ বেশ দূর। আমাদের পাড়ি দিতে হবে জাদুকাটা নদী। নদীতে পানি কম, যত দূর চোখ যায় ধু ধু বালুচর। প্রখর রোদ। আমরা মোটরসাইকেল থেকে নেমে জাদুকাটা নদীর শীতল পরশ বুলিয়ে নিলাম।
নদীর ওপাশেই সবুজ বারিক টিলা। তারপর কুয়াশায় মোড়ানো মেঘালয় পাহাড়। বর্ষার দিনে সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে এই নীল নদী বয়ে যায়। জাদুময় জাদুকাটা নদী দেখতে পর্যটকেরা তখন ভিড় করেন। তবে এখন পানি কম বলে নদী ধরে প্রায় এক মাইল হেঁটে আমরা পৌঁছালাম শিমুল বনে। টকটকে লাল শিমুল ফুলে ছেয়ে গেছে পুরো বাগান! এক ডাল থেকে অন্য ডালে খুনসুটিতে ব্যস্ত পাখিরা। বাসন্তী হাওয়ায় প্রকৃতিতে নতুন প্রাণের স্পন্দন।
২ হাজার ৪০০ শতক জমিতে এই শিমুলবাগান গড়ে তুলেছিলেন জয়নাল আবেদিন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সপরিবারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ভৈরব থেকে সুনামগঞ্জ জেলার বিচ্ছিন্ন জনপদ বাদাঘাট ইউনিয়নের সোহালা গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। কিশোর বয়স থেকে উদ্যমী এই মানুষ অল্প বয়সেই ইতি টানেন পড়ালেখার। নানা পেশা বদলে একসময় জড়িয়ে পড়েন মাছ ব্যবসায়। নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইনল্যান্ড ফিশারিজের মাধ্যমে ইজারা নেন টাঙ্গুয়ার হাওর। আবার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। কিন্তু শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যে মন ভরেনি; মানুষের কল্যাণে আরও কিছু করার ইচ্ছে ছিল তাঁর। গাছপালার প্রতি অপরিসীম মমতা ছিল জয়নাল আবেদিনের। তাঁর এই পছন্দের সঙ্গে একাত্ম হলো তাহিরপুরের সাধারণ মানুষের ভাবনা।
বর্ষা এলেই আমূল বদলে যায় হাওরের দৃশ্যপট। ঢেউয়ের তোড়ে প্রতিনিয়ত ভাঙতে থাকে পাড়। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের বাড়িঘর। এমন গুরুতর সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? অনেক ভেবে পাওয়া গেল, শক্ত শিকড়-বাকড়ের জলসহিষ্ণু গাছপালাই পরিত্রাণের উপায়। সংখ্যায় কম হলেও এমন দু-একটি প্রজাতি সেখানে আগে থেকেই ছিল। যার অন্যতম হিজল ও করচগাছ। গলাসমান পানিতেও এদের দিব্যি বেঁচে থাকা সম্ভব। শুধু হিজল ও করচগাছই একসঙ্গে অনেকগুলো সমস্যার সমাধান করতে পারে। কিন্তু এই বিশাল কর্মযজ্ঞের শুরুটা কীভাবে হবে। স্থানীয় মানুষ যখন এসব নিয়ে ভাবছিলেন, তখন অনেকটা পরিত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন। তিনি ১৯৮৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় ৯০ হাজার করচগাছ লাগিয়েছেন! পাশাপাশি হিজলগাছও লাগিয়েছিলেন বেশ কিছু।
চারাগুলো সংগ্রহ করেছিলেন স্থানীয়ভাবেই। শুধু গাছ লাগিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি। গাছের পুরো যত্নআত্তির দায়িত্বও কাঁধে তুলে নেন। শুকনো মৌসুমে নিজেই গাছে পানি দিতেন। একটানা ১৩ বছর তিনি সত্যিকার অর্থেই অসাধ্য সাধন করেছেন।
জয়নাল আবেদিন আজ আর নেই। পৃথিবীর মোহমায়া ছেড়ে অনেক আগে চলে গেছেন। কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর অনন্য কীর্তি। সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ টাঙ্গুয়ার হাওরজুড়ে তাঁর সন্তানসম বৃক্ষগুলো এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের যেমন তৃষ্ণা মেটাচ্ছে, অন্যদিকে বাড়িয়েছে হাওরের সৌন্দর্য। আবার হাওরের মাটি সুরক্ষায়ও রাখছে বিরাট ভূমিকা।
তাহিরপুরের শিমুল বন দেখতে এসে এগুলো জানা গেল ওই এলাকার প্রবীণ শেখর দাসের কাছ থেকে। আমরা পুরো এলাকা ঘুরে বেড়ালাম হেঁটে। এ যেন কল্পনার রঙে সাজানো এক শিমুলের প্রান্তর! ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়, মাঝে জাদুকাটা নদী আর এ পাড়ে শিমুল বন।
যেভাবে যেতে পারেন
ঢাকা থেকে বাসে সুনামগঞ্জ। অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে সিলেট। সেখান থেকে বাস অথবা গাড়ি ভাড়া করে সুনামগঞ্জ শহর। সুনামগঞ্জের নতুন ব্রিজের গোড়া থেকে বাইক অথবা লেগুনায় সরাসরি লাউরের গড়। বাইকে জনপ্রতি ভাড়া ২০০ টাকা এবং লেগুনায় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, রিজার্ভ। চাইলে নিজেদের যানবাহন নিয়েও যাওয়া যায় লাউরের গড়। তারপর বালুচর দিয়ে হেঁটে শিমুল বন।
১৯৫১ সাল। ইরানের রাজা রেজা শাহ পাহলভি এলেন পৃথিমপাশা জমিদারবাড়িতে। সে এক হুলুস্থুল ব্যাপার! এ বাড়ির পূর্বপুরুষেরা ইরান থেকে এসেছিলেন বলে জানা যায়।
২ দিন আগেশীতে কাপড় ভালো রাখতে সেগুলোকে যেমন রোদে মেলে দিতে হয়, সম্পর্ক উন্নয়নে মাঝেমধ্যে তেমনি ভ্রমণেও যেতে হয়। শীত চলে এসেছে। ভ্রমণপ্রেমীরা হয়ে উঠেছেন সরব।
২ দিন আগেপর্যটন বন্ধে কারফিউ! হ্যাঁ, তেমনটিই ঘটেছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। গ্রামের নাম বুকচন হ্যানোক। দক্ষিণ কোরিয়ার জংনো জেলায় এর অবস্থান। বুকচন হ্যানোক দেশটির ‘মাস্ট ভিজিট’ পর্যটন গন্তব্য।
২ দিন আগেভ্রমণের স্বাদ একবার রক্তে ঢুকলে, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। এক অদৃশ্য তাড়না কাজ করতে থাকে ভেতরে-ভেতরে।
২ দিন আগে