বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘের অনুসন্ধান শুরু 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০: ৩৯

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় গত ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন ঘটনার বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্তের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এ সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার তথ্য-প্রমাণ জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। 

জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার পাঠানো এই দলটি তথ্যানুসন্ধানের ক্ষেত্রে কীভাবে এগোতে চায়, সে বিষয়ে আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলেছেন। বৈঠকের পর উপদেষ্টা সাংবাদিকদের জানান, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল খুব শিগগিরই কাজ শুরু করবে। আপাতত সপ্তাহখানেক কাজ করবে। 

প্রতিনিধি দলটি প্রচার এড়িয়ে চলতে চায়—এমনটা জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘কাজ শেষ করার আগে দলটি কিছু বলতে চায় না। দলের সদস্যরা মনে করেন, এতে কাজে অসুবিধা হতে পারে।’ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সরকারও বিষয়টি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চায় না। কারণ আমরা চাচ্ছি সম্পূর্ণ একটি তদন্ত হোক।’ 

জাতিসংঘের দলটির যদি নিরাপত্তাসহ কোনো সাহায্য লাগে, সেটা সরকার দিতে রাজি আছে, এমনটা জানিয়ে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তাঁরা এখনো এমন কোনো অনুরোধ করেনি।’ উল্লেখ্য, আট সদস্যের প্রতিনিধিদলের পাঁচজন আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকা পৌঁছেছেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে সংগ্রামের দ্বিতীয় পর্যায় আরম্ভ হয় গত জুলাইয়ের শুরুতে। জুলাইয়ের মাঝামাঝি তা শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে পরিণত হয়। 

আন্দোলন মোকাবিলায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও দমন–পীড়নের অভিযোগ ওঠে। সরকারি হিসেবে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশা ও বয়সের প্রায় ৬৫০ ব্যক্তি আন্দোলনের সময় নিহত হন। আহত হন প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। পঙ্গুত্ব বরণ করেন কয়েকশ নারী–পুরুষ। একপর্যায়ে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। 

ঢাকায় জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধির দপ্তর জুলাই ও আগস্টে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কিত প্রাথমিক তথ্য প্রদানের জন্য সব ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। 
গত সোমবার ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বিক্ষোভের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করছে। 

জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলটিকে সত্য উদ্ঘাটন, দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল কারণ বিশ্লেষণ এবং অতীতের মানবাধিকার লঙ্ঘনসমূহ ও সেগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধে বাংলাদেশের জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। 

দলটি ই-মেইলে সেই সব তথ্যের জন্য অনুরোধ করছে, যা বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যাবে না এবং প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়নি। তদন্ত দল ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিগণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা, চিকিৎসা পেশাজীবী এবং ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণেরও পরিকল্পনা করেছে। 

জাতিসংঘ আবাসিক প্রতিনিধির কার্যালয় জানায়, তথ্যানুসন্ধান দলের তদন্ত কোনো অপরাধ অনুসন্ধান বা আইনি তদন্ত নয়। এটি যেকোনো জাতীয় ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত। এই তথ্য অনুসন্ধান প্রক্রিয়াটি কঠোরভাবে গোপনীয়। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে পরিচালিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উপাত্ত বিশ্লেষণের পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় তদন্তের প্রধান ফলাফল, উপসংহার ও সুপারিশসহ একটি বিস্তারিত মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত