ভোটের পথে আরও এক ধাপ

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৫৯
Thumbnail image
(ওপরে বাঁ থেকে) এ এম এম নাসির উদ্দীন, আনোয়ারুল ইসলাম (নিচে বাঁ থেকে) আবদুর রহমানেল মাসুদ , তহমিদা আহমদ ও সানাউল্লাহ

নির্বাচন কমিশনে আড়াই মাসের শূন্যতা কাটল অবশেষে। গতকাল বৃহস্পতিবার অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব তহমিদা আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সার্চ কমিটির প্রস্তাব করা নামের তালিকা থেকে রাষ্ট্রপতি এই পাঁচজনকে নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এই কমিশনের অধীনে হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী রোববার কমিশনের সদস্যরা শপথ নেবেন।

চতুর্দশ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ পাওয়া নাসির উদ্দীন এই পদে বিএনপির প্রস্তাব করা দুজনের একজন। শুধু তা-ই নয়, বিএনপির মিত্র একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবেও সিইসি পদে নাসির উদ্দীনের নাম ছিল বলে জানা গেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে পড়াশোনা করে একই বিভাগে প্রভাষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেন নাসির উদ্দীন। পরে ১৯৭৯ সালে বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিজীবনে তিনি তথ্যসচিব, জ্বালানিসচিব, স্বাস্থ্যসচিব এবং পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যের দায়িত্বে ছিলেন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়া নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। তিনি স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্যের দায়িত্বেও আছেন।

নিয়োগ পাওয়ার পর গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন নবনিযুক্ত সিইসি। তিনি বলেন,

‘বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অবাধ ও নির্ভয়ে ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ করে দেওয়া। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে অবাধ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাই। ভোটের অধিকারের জন্য এত লোকের আত্মত্যাগ, প্রাণ দিল, আহত হলো, নিহত হলো, রক্ত দিল, শহীদ হলো। জুলাই-আগস্টে কত লোক প্রাণ দিল। এত মানুষের রক্ত যেন বৃথা না যায়, সে জন্য কাজ করব।’

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশা করেন জানিয়ে নতুন সিইসি বলেন, ‘সব বড় বড় দল সুষ্ঠু ভোট চাচ্ছে। আশা করি, তারা তাদের কথা রাখবে। কারণ গায়ের জোরে নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে একজন দেশে থাকতে পারছে না। এটি সবাই দেখেছে। আশা করি দলগুলো এ থেকে শিক্ষা নেবে।’

আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না-করার বিষয়ে নজর আনলে নাসির উদ্দীন বলেন, ‘যাদের বিষয়ে বিতর্ক হচ্ছে, সেটি হতে দিন। একটি সমাধানে আসবে তো। তাই এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।’

কত দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে পারবেন? জানতে চাইলে নতুন সিইসি বলেন, ‘এটি এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে কমিশন থেকে আমরা নির্বাচন আয়োজনের জন্য যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তুত থাকব।’

কতটা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন—এমন প্রশ্নে নতুন সিইসি বলেন, ‘স্বাধীন ও ষোলো আনা নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করব।’

সাংবাদিকেরা এ সময় নতুন সিইসির কাছে জানতে চান, তাঁরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নাকি জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে করবেন? উত্তরে সিইসি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো চাচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগে হোক। জনগণের ভোটের নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হবে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এ দায়িত্বটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। এটিকে আমি সুযোগ হিসেবে দেখি। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের যে আত্মত্যাগ, গত তিনটা নির্বাচনে ২০১৪, ’১৮ ও ’২৪ সালে মানুষ ভোট দিতে পারে নাই। বিগত তিন কমিশন যেসব ভুল করেছে, সেসব ভুল থেকে শিক্ষা নেব, যাতে নতুন করে আর ভুল না হয়। সবার সহযোগিতায় মানুষের সেই ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এর পর থেকে প্রায় আড়াই মাস সাংবিধানিক এসব পদ শূন্য ছিল। নির্বাচন কমিশন গঠনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনী যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে—এমনটাই বলে আসছেন সরকারের উপদেষ্টারা। এই কমিশন ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন অনুযায়ী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে গত ৩১ অক্টোবর সার্চ কমিটি করে সরকার। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পদে বা পেশায় কমপক্ষে ২০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সিইসি ও ইসি পদে নিয়োগের জন্য প্রতিটি পদের বিপরীতে দুজন করে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছিল সার্চ কমিটি। সেখান থেকে পাঁচজনকে নিয়ে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

বাংলাদেশে এর আগে ১৩ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ৩১ জন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা। এবার নিয়ে টানা পঞ্চমবার সিইসি পদে সাবেক সচিব নিয়োগ পেলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত