বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
হুমায়ূন আহমেদের শোয়ার ঘরটি ছিল দেখার মতো। ইয়া লম্বা একটা ঘর। ভেতরে কিং সাইজের বিছানা আর ঢাউস একটি টিভি ছাড়া আর কিছু নেই। ১৮০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের ৫০০ বর্গফুটজুড়ে শুধু একটি শোয়ার ঘর।
আর কোনো ঘর নেই, পুরো বাড়ি ফাঁকা। এক পাশের দেয়ালে কাপড় রাখার একটি কেবিনেট। এ ছাড়া ভেতরের কোথাও কোনো ফার্নিচার নেই। রান্নাঘর আছে, কিন্তু সেখানে বসে খাওয়ার টেবিল পর্যন্ত নেই। মিসির আলি কিংবা হিমুর মতোই তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরটাও ছিল অদ্ভুতুড়ে।
সেই বাড়িতে ভুতুড়ে কাণ্ডটা ঘটল ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে, সম্ভবত ২৫ আগস্টে। সেদিন ছিল শুক্রবার। অফিসে কাজের চাপ খুব কম। হাতেও তেমন কিছু নেই। কী একটা কারণে সন্ধ্যার দিকে ফোন দিলাম রমনা বিভাগের উপকমিশনার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে। তিনি তখন ধানমন্ডিতে। বললেন, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ধানমন্ডির বাসায় একটি অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। চাইলে দেখে যেতে পারেন। আমি না যাওয়া পর্যন্ত তিনি থাকবেন সেখানে।
আমাকে আর পায় কে, দিলাম দৌড়। এ ঘটনার কয়েক মাস আগে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর আগের স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদকে তালাক দিয়ে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেছেন। বাজারে তা নিয়ে নানা আলোচনা। লোকে বলাবলি করছে, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করেছেন। সেই বউকে নিয়ে থাকছেন ধানমন্ডির ৩/এ সড়কের এই বাড়িতে। বাড়িটির নাম ‘দখিন হাওয়া’।
বাড়ির গেটে পৌঁছে দেখি ব্যাপক কড়াকড়ি। কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে পুলিশের রেফারেন্স দিয়ে লাভ হলো। সহজেই ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মিলল। উঠে গেলাম হুমায়ূন আহমেদের ফ্ল্যাটে।
দখিন হাওয়ার উত্তর দিকে ছয়তলায় মুখোমুখি দুটি ফ্ল্যাট, একটিতে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ, আরেকটিতে থাকেন তাঁর বেশির ভাগ বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্যপ্রকাশের’ মালিক মাজহারুল ইসলাম। দেখি, গেটের সামনে মাজহারুল ইসলাম দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন। হুমায়ূন আহমেদ তখন বাড়িতে নেই। তাঁর স্ত্রী শাওন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন।
আমি ভেতরে ঢুকে পরিচয় দিতেই শাওন আমাকে নিয়ে গেলেন যা ঘটেছে, তা দেখাতে। ঢুকে দেখি শোয়ার ঘরের সবকিছু তছনছ করা। শতাধিক জামাকাপড় মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিছানাপত্র উল্টোপাল্টা। কিছু কাপড় শোয়ার ঘরের বাথরুমের ভেতরে ফেলে রাখা। ভাঙা কাচের চুড়ির টুকরো আর ৫০০ টাকার অনেকগুলো নোটের টুকরো মেঝের সর্বত্র ছড়ানো। আর আছে এখানে-ওখানে অসংখ্য সোনার গয়নার টুকরো।
শাওন আমাকে বলেছিলেন, ওই ঘরে ৪০ ভরির মতো সোনার গয়না ছিল। সব গয়না কেবিনেটের তালা ভেঙে বের করে দুমড়ে-মুচড়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। যেদিকে তাকাই দেখি সোনার গয়নার টুকরো পড়ে আছে। যেন পুরো ঘরটাই সোনার খনি। বাড়ির একটি গয়নাও আর আস্ত নেই। গয়নাগুলো রাখা ছিল দেয়ালের সঙ্গে লাগানো কাঠের কেবিনেটে। তবে শোয়ার ঘরের টিভি, কম্পিউটার ও সাউন্ড সিস্টেম ঠিক আছে। তাতে কেউ হাত দেয়নি।
আমি যাওয়ার একটু পরে সিআইডির একটি টিম এল। টিমের সদস্যরা ঘর থেকে অপরাধচিহ্ন জোগাড়ের কাজে নেমে পড়লেন। শাওন আমাকে বললেন, এই অ্যাপার্টমেন্টের দুটি চাবির একটি ছিল তাঁর কাছে, অন্যটি মাজহারুল ইসলামের বাসায়। ঘটনার সময় তাঁরা কেউ বাসায় ছিলেন না। নাটকের শুটিংয়ের কাজে হুমায়ূন আহমেদ প্রায় এক মাস ধরে নুহাশ পল্লিতে থাকছিলেন। এ সময় তিনি ছিলেন গুলশানে মায়ের বাড়িতে। তবে মাঝে দুবার তিনি এ বাড়িতে আসেন। সর্বশেষ আসেন এ ঘটনার ১০ দিন আগে, ১৫ আগস্ট। জরুরি একটা কাজে এসে আবার গুলশানে চলে যান। নুহাশ পল্লির কাজ শেষ হওয়ার পর ওই দিনই তাঁরা সবাই বাসায় ফেরেন।
সেদিন ছিল শুক্রবার। বিকেলে হুমায়ূন আহমেদের কর্মচারী মোস্তফা প্রথম বাসায় আসেন। মোস্তফা এসে দরজা খুলে সবকিছু তছনছ দেখে সবাইকে ডাকেন। খবর পেয়ে শাওন আসেন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে।
শাওনের কাছে জানতে চাইলাম, বাসা থেকে কী কী জিনিস খোয়া গেছে? তিনি বেশ দ্রুততার সঙ্গে বললেন, সবকিছু ওলটপালট হয়েছে, তবে কোনো কিছু কেউ নেয়নি। কাউকে সন্দেহ করেন বা কোনো হুমকি ছিল কিনা?
বললেন, ‘না ভাই, সে রকম সন্দেহ করার মতো কেউ নেই।’ শাওনের কথা শুনে আমার সবকিছু বড় অদ্ভুত লাগছিল। মনে হচ্ছিল তিনি অনেক কিছু জানেন।
ধানমন্ডি থানায় সে সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন মাহবুবুর রহমান। পরদিন তাঁর কাছে এলাম সেই ঘটনার ফলোআপ করতে। তিনি বললেন, ঘর তছনছের ঘটনায় শাওন একটি মামলা করেছেন। কিন্তু তিনি কাউকে সন্দেহ করেননি। পুলিশকে শাওন বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। তবে ওসি আমাকে বললেন, তাঁর কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়েছে। তিনি মনে করেন, বাইরের কেউ অ্যাপার্টমেন্টের নকল চাবি তৈরি করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সবকিছু তছনছ করেছে। অবশ্য তিনি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দখিন হাওয়ায় ৩০টি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা ও তাঁদের লোকজন ছাড়া বাইরের কেউ সেখানে আসেনি। পুলিশ এ নিয়ে বেশ কিছুদিন দৌড়ঝাঁপ করল। তাঁরা হুমায়ূন আহমেদের কর্মচারী মোস্তফা, ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও লিফটচালককে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। তারপর সব চুপ হয়ে গেল।
এই লেখাটা শুরুর আগে গত বৃহস্পতিবার মেহের আফরোজ শাওনকে ফোন দিয়ে সেই ঘটনার শেষ কী হলো জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘পুলিশ কোনো কিছুই বের করতে পারেনি। মামলাটাও শেষ হয়ে গেছে।’ ফোন দিলাম অন্য প্রকাশের মালিক মাজহারুল ইসলামকে। তিনিও একই কথা বললেন। তবে শাওন বললেন, হুমায়ূন আহমেদের সেই ফ্ল্যাট এখন আর সে রকম নেই। ২০১০ সালে সেটা ভেঙে নতুন করে তৈরি করেছেন। সেই টিভিটি এখন নুহাশ পল্লিতে।
এত বছর পরে মনে পড়ে গেল ধানমন্ডির ওসি মাহবুবুর রহমানের কথা। ফলোআপ করার সময় একদিন তিনি আমাকে বলেছিলেন, শাওনকে বিয়ে করার পর আগের স্ত্রীর সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ঝামেলা চলছিল। হুমায়ূন আহমেদ নিজেও এ মামলার তদন্ত হোক, তা চাইছিলেন না।
তছনছের কয়েক দিন পর ডিএমপির এক পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে গেলাম হুমায়ূন আহমেদের বাসায়। তিনি আমার পরিচয় পেয়ে খুব অবাক হয়ে বললেন, জীবনে প্রথম তিনি ক্রাইম রিপোর্টার দেখছেন। এরপর সেই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি উল্টো আমাকে প্রশ্ন করে বললেন, ‘আপনিই বলেন, আপনার কী ধারণা?’ আমি বললাম, স্যার, আমার মনে হয় আপনার সাবেক ও বর্তমান স্ত্রীদের যেকোনো একজন এ কাজ করেছেন। তিনি শুনে কিছু বললেন না। অনেকক্ষণ কথা বলে উঠে আসার সময় বললেন, ‘সাংবাদিক, সাহেব আমারও সেটাই মনে হয়। তবে এটা যেন পাঁচ কান না হয়।’
আমি বললাম, ‘জি স্যার।’
আরও পড়ুন:
হুমায়ূন আহমেদের শোয়ার ঘরটি ছিল দেখার মতো। ইয়া লম্বা একটা ঘর। ভেতরে কিং সাইজের বিছানা আর ঢাউস একটি টিভি ছাড়া আর কিছু নেই। ১৮০০ বর্গফুটের অ্যাপার্টমেন্টের ৫০০ বর্গফুটজুড়ে শুধু একটি শোয়ার ঘর।
আর কোনো ঘর নেই, পুরো বাড়ি ফাঁকা। এক পাশের দেয়ালে কাপড় রাখার একটি কেবিনেট। এ ছাড়া ভেতরের কোথাও কোনো ফার্নিচার নেই। রান্নাঘর আছে, কিন্তু সেখানে বসে খাওয়ার টেবিল পর্যন্ত নেই। মিসির আলি কিংবা হিমুর মতোই তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরটাও ছিল অদ্ভুতুড়ে।
সেই বাড়িতে ভুতুড়ে কাণ্ডটা ঘটল ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে, সম্ভবত ২৫ আগস্টে। সেদিন ছিল শুক্রবার। অফিসে কাজের চাপ খুব কম। হাতেও তেমন কিছু নেই। কী একটা কারণে সন্ধ্যার দিকে ফোন দিলাম রমনা বিভাগের উপকমিশনার সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে। তিনি তখন ধানমন্ডিতে। বললেন, কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ধানমন্ডির বাসায় একটি অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে। চাইলে দেখে যেতে পারেন। আমি না যাওয়া পর্যন্ত তিনি থাকবেন সেখানে।
আমাকে আর পায় কে, দিলাম দৌড়। এ ঘটনার কয়েক মাস আগে হুমায়ূন আহমেদ তাঁর আগের স্ত্রী গুলতেকিন আহমেদকে তালাক দিয়ে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেছেন। বাজারে তা নিয়ে নানা আলোচনা। লোকে বলাবলি করছে, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করেছেন। সেই বউকে নিয়ে থাকছেন ধানমন্ডির ৩/এ সড়কের এই বাড়িতে। বাড়িটির নাম ‘দখিন হাওয়া’।
বাড়ির গেটে পৌঁছে দেখি ব্যাপক কড়াকড়ি। কাউকে ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে পুলিশের রেফারেন্স দিয়ে লাভ হলো। সহজেই ভেতরে যাওয়ার অনুমতি মিলল। উঠে গেলাম হুমায়ূন আহমেদের ফ্ল্যাটে।
দখিন হাওয়ার উত্তর দিকে ছয়তলায় মুখোমুখি দুটি ফ্ল্যাট, একটিতে থাকেন হুমায়ূন আহমেদ, আরেকটিতে থাকেন তাঁর বেশির ভাগ বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা ‘অন্যপ্রকাশের’ মালিক মাজহারুল ইসলাম। দেখি, গেটের সামনে মাজহারুল ইসলাম দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন। হুমায়ূন আহমেদ তখন বাড়িতে নেই। তাঁর স্ত্রী শাওন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন।
আমি ভেতরে ঢুকে পরিচয় দিতেই শাওন আমাকে নিয়ে গেলেন যা ঘটেছে, তা দেখাতে। ঢুকে দেখি শোয়ার ঘরের সবকিছু তছনছ করা। শতাধিক জামাকাপড় মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিছানাপত্র উল্টোপাল্টা। কিছু কাপড় শোয়ার ঘরের বাথরুমের ভেতরে ফেলে রাখা। ভাঙা কাচের চুড়ির টুকরো আর ৫০০ টাকার অনেকগুলো নোটের টুকরো মেঝের সর্বত্র ছড়ানো। আর আছে এখানে-ওখানে অসংখ্য সোনার গয়নার টুকরো।
শাওন আমাকে বলেছিলেন, ওই ঘরে ৪০ ভরির মতো সোনার গয়না ছিল। সব গয়না কেবিনেটের তালা ভেঙে বের করে দুমড়ে-মুচড়ে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়েছে। যেদিকে তাকাই দেখি সোনার গয়নার টুকরো পড়ে আছে। যেন পুরো ঘরটাই সোনার খনি। বাড়ির একটি গয়নাও আর আস্ত নেই। গয়নাগুলো রাখা ছিল দেয়ালের সঙ্গে লাগানো কাঠের কেবিনেটে। তবে শোয়ার ঘরের টিভি, কম্পিউটার ও সাউন্ড সিস্টেম ঠিক আছে। তাতে কেউ হাত দেয়নি।
আমি যাওয়ার একটু পরে সিআইডির একটি টিম এল। টিমের সদস্যরা ঘর থেকে অপরাধচিহ্ন জোগাড়ের কাজে নেমে পড়লেন। শাওন আমাকে বললেন, এই অ্যাপার্টমেন্টের দুটি চাবির একটি ছিল তাঁর কাছে, অন্যটি মাজহারুল ইসলামের বাসায়। ঘটনার সময় তাঁরা কেউ বাসায় ছিলেন না। নাটকের শুটিংয়ের কাজে হুমায়ূন আহমেদ প্রায় এক মাস ধরে নুহাশ পল্লিতে থাকছিলেন। এ সময় তিনি ছিলেন গুলশানে মায়ের বাড়িতে। তবে মাঝে দুবার তিনি এ বাড়িতে আসেন। সর্বশেষ আসেন এ ঘটনার ১০ দিন আগে, ১৫ আগস্ট। জরুরি একটা কাজে এসে আবার গুলশানে চলে যান। নুহাশ পল্লির কাজ শেষ হওয়ার পর ওই দিনই তাঁরা সবাই বাসায় ফেরেন।
সেদিন ছিল শুক্রবার। বিকেলে হুমায়ূন আহমেদের কর্মচারী মোস্তফা প্রথম বাসায় আসেন। মোস্তফা এসে দরজা খুলে সবকিছু তছনছ দেখে সবাইকে ডাকেন। খবর পেয়ে শাওন আসেন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে।
শাওনের কাছে জানতে চাইলাম, বাসা থেকে কী কী জিনিস খোয়া গেছে? তিনি বেশ দ্রুততার সঙ্গে বললেন, সবকিছু ওলটপালট হয়েছে, তবে কোনো কিছু কেউ নেয়নি। কাউকে সন্দেহ করেন বা কোনো হুমকি ছিল কিনা?
বললেন, ‘না ভাই, সে রকম সন্দেহ করার মতো কেউ নেই।’ শাওনের কথা শুনে আমার সবকিছু বড় অদ্ভুত লাগছিল। মনে হচ্ছিল তিনি অনেক কিছু জানেন।
ধানমন্ডি থানায় সে সময় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন মাহবুবুর রহমান। পরদিন তাঁর কাছে এলাম সেই ঘটনার ফলোআপ করতে। তিনি বললেন, ঘর তছনছের ঘটনায় শাওন একটি মামলা করেছেন। কিন্তু তিনি কাউকে সন্দেহ করেননি। পুলিশকে শাওন বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। তবে ওসি আমাকে বললেন, তাঁর কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়েছে। তিনি মনে করেন, বাইরের কেউ অ্যাপার্টমেন্টের নকল চাবি তৈরি করে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে সবকিছু তছনছ করেছে। অবশ্য তিনি বাড়ির নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, দখিন হাওয়ায় ৩০টি অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা ও তাঁদের লোকজন ছাড়া বাইরের কেউ সেখানে আসেনি। পুলিশ এ নিয়ে বেশ কিছুদিন দৌড়ঝাঁপ করল। তাঁরা হুমায়ূন আহমেদের কর্মচারী মোস্তফা, ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ও লিফটচালককে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। তারপর সব চুপ হয়ে গেল।
এই লেখাটা শুরুর আগে গত বৃহস্পতিবার মেহের আফরোজ শাওনকে ফোন দিয়ে সেই ঘটনার শেষ কী হলো জানতে চাইলাম। তিনি বললেন, ‘পুলিশ কোনো কিছুই বের করতে পারেনি। মামলাটাও শেষ হয়ে গেছে।’ ফোন দিলাম অন্য প্রকাশের মালিক মাজহারুল ইসলামকে। তিনিও একই কথা বললেন। তবে শাওন বললেন, হুমায়ূন আহমেদের সেই ফ্ল্যাট এখন আর সে রকম নেই। ২০১০ সালে সেটা ভেঙে নতুন করে তৈরি করেছেন। সেই টিভিটি এখন নুহাশ পল্লিতে।
এত বছর পরে মনে পড়ে গেল ধানমন্ডির ওসি মাহবুবুর রহমানের কথা। ফলোআপ করার সময় একদিন তিনি আমাকে বলেছিলেন, শাওনকে বিয়ে করার পর আগের স্ত্রীর সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের ঝামেলা চলছিল। হুমায়ূন আহমেদ নিজেও এ মামলার তদন্ত হোক, তা চাইছিলেন না।
তছনছের কয়েক দিন পর ডিএমপির এক পদস্থ কর্মকর্তার সঙ্গে গেলাম হুমায়ূন আহমেদের বাসায়। তিনি আমার পরিচয় পেয়ে খুব অবাক হয়ে বললেন, জীবনে প্রথম তিনি ক্রাইম রিপোর্টার দেখছেন। এরপর সেই ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি উল্টো আমাকে প্রশ্ন করে বললেন, ‘আপনিই বলেন, আপনার কী ধারণা?’ আমি বললাম, স্যার, আমার মনে হয় আপনার সাবেক ও বর্তমান স্ত্রীদের যেকোনো একজন এ কাজ করেছেন। তিনি শুনে কিছু বললেন না। অনেকক্ষণ কথা বলে উঠে আসার সময় বললেন, ‘সাংবাদিক, সাহেব আমারও সেটাই মনে হয়। তবে এটা যেন পাঁচ কান না হয়।’
আমি বললাম, ‘জি স্যার।’
আরও পড়ুন:
অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশের চলমান অর্থনৈতিক ভঙ্গুর অবস্থা ও সংকটের মূলে আছে স্বেচ্ছাচারী রাজনীতি ও অনাচারী অর্থনীতি। বিগত সরকারের সময়ে অনাচারী অর্থনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার
৫ মিনিট আগেসারা দেশের বিভিন্ন জেলায় শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের নামে থাকা ৬টি মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যক্তির নাম বাদ দিয়ে মেডিকেল কলেজগুলোর নামকরণ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নামে
১ ঘণ্টা আগেনির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি করেছে সরকার। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে সভাপতি করে আজ বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
৩ ঘণ্টা আগেরাষ্ট্র সংস্কারে অগ্রাধিকার দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়ছে। বিএনপি শুরুতে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইছে।
৩ ঘণ্টা আগে