ইন্টারনেট এখন আর বিনোদন কিংবা কথা বলার মাধ্যমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ইন্টারনেট স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার। তাই বাংলাদেশেও সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ও ডাটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত ‘সংবিধানে ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ও ডাটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

সভায় মূল নিবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবা জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) স্বীকৃত। আমাদের দেশে বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন সকল কাজকর্ম, অফিস আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ প্রকৃতি, বিনোদন সংস্কৃতি সকল মাধ্যম ইন্টারনেট নির্ভর।

করোনা মহামারিতে আমাদের দেশের অর্থনীতি রাষ্ট্রব্যবস্থা ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল হয়েছিল। ইন্টারনেট না থাকার ফলে আমরা কি পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারি তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময়। মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল প্রায় ১৩ দিন, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ ছিল আট দিন, আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ ছিল প্রায় ১৫ দিন। বিভিন্ন ব্যবসায়ী অর্থনীতিবিদদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছিল কেবলমাত্র ইন্টারনেট বন্ধের কারণে। ব্যাংক বীমা চিকিৎসা সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আলোচনায় বেসিসের (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস) সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ইন্টারনেট নির্ভর। বিশ্বের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগসহ দেশের প্রায় সব কাজই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা হয়। আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজই হয় এখানে। সুতরাং ইন্টারনেট এখনো সাধারণ কিছু না। এটি মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। তাই ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবির সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ও এনআইডি সার্ভারের তথ্য চুরির বিষয়টি উল্লেখ করে আইআইজিএবির (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের কথা জানি, ন্যাশনাল আইডি কার্ডের বিষয়ে জানি। ইন্টারনেটে যেন আমার ডাটাটা সুরক্ষিত থাকে, এটা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকারকে প্রস্তাব দিতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে।’

সভায় ইন্টারনেট ও ডিসের ব্যবসাকে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হাত থেকে মুক্ত করে কর্পোরেট কোম্পানিদের দেওয়ার পরামর্শ দেন বক্তারা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাজনৈতিক দলের পয়সা উৎপাদনের কিছু ক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারনেটের ব্যবসা ও ডিসের ব্যবসা। এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা দাবি করছি, এই ব্যবসাগুলোকে কর্পোরেট করে ফেলার। কারণ এখান থেকে রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা কোটি কোটি টাকা আয় করেন।

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদের (খ) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, চিঠিপত্রের ও যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ের গোপনীয়তা রক্ষার অধিকার থাকিবে। এখানে লক্ষণীয় যে, বর্তমানে প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতারক হ্যাকার ও স্ক্যামার চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে নাগরিকের তথ্য। বেসরকারি বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যে ব্যর্থ হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে চিঠি আদান-প্রদান এর মাধ্যম আর নেই, তাই ইমেইল হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা প্রযুক্তির অন্যান্য সকল মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে এমনকি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের প্রদেয় তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল বিন্যাসে নাগরিকের ডাটা সুরক্ষা অন্তর্ভুক্তি উল্লেখ থাকা অতি আবশ্যক।

আলোচনায় আরও অংশ নেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা, টেলিযোগাযোগ বিশ্লেষক মোস্তফা মাহমুদ হুসাইন ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির অর্থনৈতিক সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া প্রমুখ।