টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ, বিনা টিকিটে ভ্রমণকারীদের জরিমানাসহ ভাড়া আদায় সহজ করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই বাধ্যতামূলক করে তিনটি সেবা অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে সরকার। 

সেবা তিনটির মধ্যে থাকছে—জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে রেলওয়ের আন্তনগর ট্রেনের টিকিটিং ব্যবস্থা; টিকিট চেকিং ব্যবস্থায় পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনের প্রবর্তন এবং অনলাইনের মাধ্যমে কেনা টিকিট অনলাইনে ফেরতের (রিফান্ড) ব্যবস্থা করা।

আজ বুধবার রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। রেলমন্ত্রী জানান, এসব সেবা আগামী ১ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।

রেলমন্ত্রী বলেন, ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তাঁর’ নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কেনার আগে প্রত্যেক যাত্রীকে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্মনিবন্ধন সনদ যাচাই করে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক করেছে।

কাউন্টার, অনলাইন ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টিকিট ক্রয়কারী যাত্রীরা অনলাইন অথবা মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে যেকোনো সময় বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেমে খুব সহজে নিবন্ধন করতে পারবেন।

১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে। আগামী ১ মার্চ তিনটি সেবা কার্যকর হবে। অর্থাৎ আন্তনগর ট্রেনভ্রমণের সময় এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদ অবশ্যই সঙ্গে রাখতে হবে।

নিবন্ধনের ক্ষেত্রে কিছু শর্তের কথা জানিয়েছে রেলওয়ে। এগুলো হলো:

১. ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী যাত্রীরা মা বা বাবার নাম ও এনআইডি দিয়ে নিবন্ধনকৃত রেলওয়ে অ্যাকাউন্ট অথবা জন্মনিবন্ধন নম্বর দিয়ে ও জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পৃথক/এককভাবে টিকিট কিনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে টিকিটের ওপরে মুদ্রিত নামের সঙ্গে যাত্রীর সম্পর্ক যাচাইয়ের জন্য ভ্রমণকালে বাধ্যতামূলকভাবে জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি সঙ্গে রাখতে হবে।

২. বিদেশি নাগরিকেরা পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে ও পাসপোর্টের ছবি আপলোড করার মাধ্যমে নিবন্ধন করবেন।

৩. সফলভাবে এনআইডি/পাসপোর্ট/জন্মনিবন্ধন যাচাইয়ের মাধ্যমে নিবন্ধন ব্যতীত কোনো যাত্রী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট কিনতে পারবেন না।

৪. ভ্রমণকালে যাত্রীকে অবশ্যই নিজস্ব এনআইডি বা জন্মনিবন্ধন সনদের ফটোকপি অথবা পাসপোর্ট/ছবিসংবলিত আইডি কার্ড সঙ্গে রাখতে হবে।

৫. পরিচয়পত্রের সঙ্গে টিকিটের ওপর মুদ্রিত যাত্রীর তথ্য না মিললে যাত্রীকে বিনা টিকিটে ভ্রমণের দায়ে অভিযুক্ত করা হবে এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

৬. যাত্রীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্মনিবন্ধন/পাসপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়ের সিস্টেমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।

৭. দেশের বিভাগীয় শহরের রেলস্টেশন ও আন্তনগর ট্রেনের প্রারম্ভিক স্টেশনগুলোতে সর্বসাধারণের নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার জন্য একটি করে হেল্প ডেস্ক স্থাপন করা হবে।

রেল পিওএস মেশিনের ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিনা টিকিটে রেলভ্রমণ প্রতিরোধ, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও চেকিংকালে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে পেমেন্ট ও রিপোর্ট তৈরিসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধির লক্ষ্যে পিওএস মেশিন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

প্রাথমিকভাবে ১০০টি পিওএস মেশিনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হবে। এর মাধ্যমে একজন যাত্রীকে স্থানকাল ভেদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনলাইন বা অফলাইনে নগদ/ক্যাশ দেওয়ার মাধ্যমে টিকিট ইস্যু করা সম্ভব হবে।

অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট রিফান্ড বা ফেরতের সুবিধাও আনছে রেলওয়ে। আন্তনগর ট্রেনের টিকিট অনলাইনেই রিফান্ড করা যাবে। অর্থাৎ যাত্রী ঘরে বসেই টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিতে পারবেন। 

এ ক্ষেত্রে একজন যাত্রী রেলসেবা অ্যাপ বা রেলওয়ে টিকিটিং ওয়েব পোর্টালে ঢুকে নিজস্ব আইডিতে টিকিট রিফান্ড অপশনে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দেবেন। এরপর রেলওয়ে টিকিটিং সিস্টেম তথ্য যাচাই করে সঠিক পাওয়া গেলে অনলাইনে একজন যাত্রী যে পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করে টিকিট কিনেছিলেন সেই একই গেটওয়েতে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ন কবির, রেলওয়ের মহাপরিচালক কামরুল আহসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী প্রমুখ।

অনলাইনে নিবন্ধন করবেন যেভাবে

যাঁরা এরই মধ্যে নিবন্ধন করেছেন:

১. বর্তমান ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইট অথবা রেলসেবা অ্যাপে সাইনইন করতে হবে।

২. এনআইডি নম্বর এবং জন্মতারিখ লিখে verify–বাটনে ক্লিক করতে হবে।

এনআইডি নম্বর এবং জন্মতারিখ সঠিকভাবে প্রবেশ করালে যদি এনআইডি নম্বরটি আগে ব্যবহার করা না হয়ে থাকে তাহলে রেজিস্ট্রেশন সফলভাবে সম্পন্ন হবে।

নতুন নিবন্ধনকারীর ক্ষেত্রে:
ওয়েবসাইট অথবা রেলসেবা অ্যাপে সাইন আপ করতে হবে।

সঠিক এনআইডি নম্বর এবং জন্মতারিখ verify করে অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।

অফলাইন/এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন পদ্ধতি
মোবাইল ফোন থেকে মেসেজ অপশনে গিয়ে টাইপ করতে হবে BRNID নম্বর জন্মতারিখ (সাল/মাস/দিন)

এসএমএস পাঠাতে হবে ২৬৯৬৯ নম্বরে।

ফিরতি এসএমএসের মাধ্যমে নিবন্ধন সফল বা ব্যর্থ হয়েছে কি না, তা জানিয়ে দেওয়া হবে।