Ajker Patrika

বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি কতটা

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঝুঁকি কতটা

ঢাকা: করোনার মহামারি দ্বিতীয় ঢেউয়ে লন্ডভন্ড ভারত। কোভিড থেকে অনেকে সেরে উঠলেও দেশটিতে নতুন করে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামের একটি ছত্রাক। যাতে ইতিমধ্যে কয়েক হাজার ভারতীয় প্রাণ হারিয়েছেন। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে জরুরি অবস্থা। যার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশেও। যেকোনো সময় এটি দেশে প্রবেশের শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তবে ভারতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী এই ছত্রাক বাংলাদেশের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ? যদি প্রবেশ করেই ফেলে সে ক্ষেত্রে এটি প্রতিরোধে কতটা সক্ষম দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা? এসব প্রশ্ন উঠছে সবদিক থেকে।

প্রতিবেশী ভারতে ছড়িয়ে পড়া নতুন এই মরণব্যাধি যাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য প্রতিটি জেলায় ইতিমধ্যে সতর্কতামূলক নির্দেশনা পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ভারত থেকে যারা দেশে ফিরছেন তাদের মাধ্যমেই এই ছত্রাক ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভারতের চিকিৎসকেরা বলছেন, দেশটি যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে পড়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষের প্রাণ হারাচ্ছেন, তছনছ হচ্ছে জনজীবন, তখন নতুন করে বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামের এই মরণব্যাধি। যারা কোভিড থেকে সেরে উঠছেন তারাও এটির শিকার হচ্ছেন।

বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস, ক্যানসার বা এইচআইভি/এইডস আছে কিংবা কোনো রোগের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের এই এই রোগে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আক্রান্তদের সাইনাস, মস্তিষ্ক এবং ফুসফুসকে আক্রান্ত করার পাশাপাশি অন্ধও করে দিচ্ছে। ছত্রাকটিতে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ বলে জানিয়েছে ভারতের চিকিৎসকেরা। করোনায় গুরুতরভাবে আক্রান্তদের চিকিৎসায় যারা স্টেরয়েড ব্যবহার করেছেন বা করছেন তাদের অধিকাংশই এই ছত্রাকের শিকার হচ্ছেন বলে মত তাঁদের।

তবে বাংলাদেশের জন্য ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ততটা ঝুঁকিপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। সীমান্ত চলাচল বন্ধ রাখার পাশাপাশি ভারত ফেরত করোনাক্রান্তদের সঠিক চিকিৎসা ও সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনা নিতে পারলে এটির ক্ষয়ক্ষতি থেকে দেশের নাগরদিকদের বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে সরকারের করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভারত থেকে যারা দেশে ফিরছেন তাদের অনেকেরই করোনা শনাক্ত হয়েছে। এমনকি নতুন ভ্যারিয়েন্টের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এতে করে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামের এই প্রাণঘাতী ছত্রাকও প্রবেশ করতে পারে। এ জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে আমাদের।

তিনি বলেন, যারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের উচিত হবে স্টেরয়েড ব্যবহার না করা। বিকল্প ওষুধগুলো ব্যবহার করতে হবে। এখনো আমাদের হাতে সময় আছে, তাই কার্যকরি ব্যবস্থা নিতে পারলে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব বলে মনে করেন এই জনস্বাস্থ্যবিদ।

এদিকে, সীমিত পরিসরে সীমান্ত চলাচল চালু থাকায় ঝুঁকি এড়াতে শিগগিরই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক গাইডলাইন দেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ রোববার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই এই তথ্য জানান অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ভারতের মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দিল্লি এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও এই ছত্রাকে বিপুল সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। কোথাও কোথাও এটিকে মহামারি ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশে যাতে এটি প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নাজমুল ইসলাম বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নিয়ে কোভিড–১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি, জনস্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ জাতীয় কমিটি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিস্তারিত আলোচনা করছেন। শিগগিরই জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সুপারিশ দেবে। অন্যান্য সবার সুপারিশ নিয়ে দ্রুত একটি গাইডলাইন দেওয়া হবে।

এদিকে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের পাশাপাশি ভারতে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে হোয়াইট ফাঙ্গাস নামের আরও একটি ছত্রাক। দেশটির চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়েও অনেক বেশি বিপজ্জনক এটি।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুটোই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। কোনটি কী পরিমাণ ক্ষতিকর সেটির জন্য গবেষণার প্রয়োজন। তবে যেকোনো ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয় অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে। তাই আপাতত করোনা রোগীদের বিশেষ করে আইসিইউ রোগীদের এটির ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত