বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
নানা ধরনের খবর আসছিল চারদিক থেকে, সঙ্গে গুজবের ডালপালা। গণমাধ্যম অফিসগুলোতে প্রতিদিনের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল ঢাকা সেনানিবাসে কী হচ্ছে। খবর যা আসছিল সবই আধাখেচড়া, খোলাসা করে কেউ কিছু বলতে পারছিলেন না। তবে সবকিছু পরিষ্কার হলো কিছুদিন পর, ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারির বিকেলে, সেনাসদরের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে।
আমরা সংবাদকর্মীরা দলেবলে হাজির হলাম সেনা অফিসার্স ক্লাবের খোলা চত্বরে। শীতের বিকেল। মাঠের ভেতরে মঞ্চ করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন। প্রথমে এলেন সেনাবাহিনীর পার্সোনাল সার্ভিসেস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রাজ্জাক, সঙ্গে সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল লে. কর্নেল মুহাম্মদ সাজ্জাদ সিদ্দিক। সবশেষে এলেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম।
সেনা কর্মকর্তারা জানালেন এক ভয়ংকর খবর, যা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁরা বললেন, সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কিছু সদস্য মিলে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের এবং সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সেই পরিকল্পনা তাঁরা জানতে পারেন। এরপর ওই চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়। যাঁরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির কয়েকজন কর্মকর্তা। সংখ্যায় ১৪ থেকে ১৬ জনের বেশি নয়। এদের তিনজনকে শনাক্ত করা হয় আর চাকরিরত একজন কর্মকর্তা সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যান। পালানো ওই কর্মকর্তা হলেন সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি এই অভ্যুত্থানচেষ্টায় ইশরাক নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে হাত মেলান।
পাঠক, এবার নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন জিয়া নামের এই লোকটিকে, যাকে ধরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। টাকার হিসাবে এই পুরস্কারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পুরস্কারের কথায় পরে আসি, তার আগে বলি, সেই অভ্যুত্থানচেষ্টার পর আর কী কী হয়েছিল।
অভ্যুত্থানচেষ্টার পর একটি সামরিক তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। সেই আদালত ১৫ কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করে। আটজন ফৌজদারি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রায়ে বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু জিয়া থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এ ঘটনার পর সৌদি দূতাবাসের একটি কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস। তাতে সৌদি দূতাবাস রিয়াদে তাদের মন্ত্রণালয়কে ওই ঘটনার পর যে বিবরণ পাঠায় তাতে বলা হয়েছিল, অভ্যুত্থানকারীরা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধানসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল।
ওই অভ্যুত্থানচেষ্টার পরিকল্পনা তিনটি দেশে বসে ঘটেছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রথম আমাকে জানিয়েছিলেন, পলাতক জিয়ার সঙ্গে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। অভ্যুত্থানচেষ্টার কিছুদিন আগে সেনানিবাসে হিযবুত তাহরীরের একটি লিফলেট বিতরণে জড়িত ছিলেন জিয়া।
সেনানিবাস থেকে পালানোর পর জিয়া আর থেমে থাকেননি। আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামকে সংগঠিত করেছেন। এই সংস্থার সামরিক শাখার প্রধানও তিনি। তাঁর নির্দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জিয়া আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে নয়জন মুক্তমনা ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, অধিকারকর্মী ও নাট্যকর্মী খুন হয়েছেন। পুলিশ এসব মামলা তদন্ত করে আদালতকে বলেছে, নয়টি হত্যাকাণ্ডের আটটিতেই জড়িত ছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। ছয়টি খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক। জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের রায়েও আদালত বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল মাথা হলেন চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া। এই খুনসহ ছয়টি খুনের মামলায় আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, জিয়া একাই এত কিছু করে বেড়ালেও প্রথম দিকে পুলিশ তার কোনো কিনারা করতে পারেনি। জিয়ার সংশ্লিষ্টতার কথা প্রথম জানতে পারে আনসার আল ইসলামের তাত্ত্বিক গুরু জসীমউদ্দীন রাহমানী গ্রেপ্তারের পর। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তারের পর তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, জিয়াউল হকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। জিয়া মোহাম্মদপুরের বছিলায় মসজিদে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁকে মাঝেমধ্যে ই-মেইলও করতেন। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সাতারকুলে অভিযানের পর পুলিশ নিশ্চিত হয় জিয়াই হলেন আনসার আল ইসলামের সামরিক প্রধান। তিনি দীর্ঘ সময় বাড্ডার সাতারকুলে আত্মগোপন করে ছিলেন। কিন্তু কেউই বুঝতে পারেননি।
অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, জিয়াকে ধরতে তাঁরা সব সময় তৎপর ছিলেন। কিন্তু কখনো নাগালে পাননি। পুলিশ সদর দপ্তর ২০১৬ সালের ২ আগস্ট জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে। যদিও পুরস্কার ঘোষণার পর আসামি গ্রেপ্তারের নজির দেশে নেই বললেই চলে।
পুলিশের অনেক কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, জিয়াকে ধরতে তাঁরা কমপক্ষে চার দফা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই ফসকে গেছেন তিনি। একবার খুব নাগালে থেকেই ধরতে পারেননি তাঁকে। জিয়া বিভিন্ন সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহে থেকেছেন। ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের আগে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকায় আসার টিকিট কাটতে গিয়েছিলেন তিনি। টিকিট না পেয়ে স্টেশনেই হট্টগোল করেন। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সায়মনের ময়মনসিংহের বাসায়ও ছিলেন জিয়া। টঙ্গীতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে পুলিশি তল্লাশি শুরুর আগেই তিনি কেটে পড়েন সেখান থেকে।
মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সৈয়দ জিলুল হকের ছেলে জিয়া। পড়াশোনা করেন সিলেট ক্যাডেটে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ৪১তম দীর্ঘ কোর্সের মাধ্যমে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর কিছুদিন পরই দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে দুটি সন্তান আছে। শ্বশুর একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। পুলিশ বিভিন্ন সময়ে সেখানেও খোঁজ নিয়েছে জিয়ার। কিন্তু ফল শূন্য।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম সেদিন বললেন, জিয়াকে ধরা এখন সত্যিই কঠিন। কারণ, যে পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ আসামি ধরে, তার সবই জিয়ার নখদর্পণে। তিনি এখন আর কোনো ডিভাইস ব্যবহার করেন না। এতে করে তাঁকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে আন্ডারগ্রাউন্ডে তাঁর তৎপরতা বোঝা যাচ্ছে।
পুলিশ কমিশনারের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে হয়তো জিয়া সব সময়ই থাকবেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, সবার আতঙ্ক হয়ে।
আরও পড়ুন:
নানা ধরনের খবর আসছিল চারদিক থেকে, সঙ্গে গুজবের ডালপালা। গণমাধ্যম অফিসগুলোতে প্রতিদিনের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছিল ঢাকা সেনানিবাসে কী হচ্ছে। খবর যা আসছিল সবই আধাখেচড়া, খোলাসা করে কেউ কিছু বলতে পারছিলেন না। তবে সবকিছু পরিষ্কার হলো কিছুদিন পর, ২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারির বিকেলে, সেনাসদরের ডাকা সংবাদ সম্মেলনে।
আমরা সংবাদকর্মীরা দলেবলে হাজির হলাম সেনা অফিসার্স ক্লাবের খোলা চত্বরে। শীতের বিকেল। মাঠের ভেতরে মঞ্চ করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন। প্রথমে এলেন সেনাবাহিনীর পার্সোনাল সার্ভিসেস পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রাজ্জাক, সঙ্গে সেনাবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত জজ অ্যাডভোকেট জেনারেল লে. কর্নেল মুহাম্মদ সাজ্জাদ সিদ্দিক। সবশেষে এলেন চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লে. জেনারেল মইনুল ইসলাম।
সেনা কর্মকর্তারা জানালেন এক ভয়ংকর খবর, যা শোনার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁরা বললেন, সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কিছু সদস্য মিলে গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাতের এবং সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছে। ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সেই পরিকল্পনা তাঁরা জানতে পারেন। এরপর ওই চেষ্টা ব্যর্থ করা হয়। যাঁরা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা ছিলেন সেনাবাহিনীর মধ্যম সারির কয়েকজন কর্মকর্তা। সংখ্যায় ১৪ থেকে ১৬ জনের বেশি নয়। এদের তিনজনকে শনাক্ত করা হয় আর চাকরিরত একজন কর্মকর্তা সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে যান। পালানো ওই কর্মকর্তা হলেন সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক। তিনি এই অভ্যুত্থানচেষ্টায় ইশরাক নামে এক প্রবাসীর সঙ্গে হাত মেলান।
পাঠক, এবার নিশ্চয়ই চিনতে পেরেছেন জিয়া নামের এই লোকটিকে, যাকে ধরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্র ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। টাকার হিসাবে এই পুরস্কারের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পুরস্কারের কথায় পরে আসি, তার আগে বলি, সেই অভ্যুত্থানচেষ্টার পর আর কী কী হয়েছিল।
অভ্যুত্থানচেষ্টার পর একটি সামরিক তদন্ত আদালত গঠন করা হয়। সেই আদালত ১৫ কর্মকর্তাকে বিচারের মুখোমুখি করে। আটজন ফৌজদারি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রায়ে বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। কিন্তু জিয়া থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এ ঘটনার পর সৌদি দূতাবাসের একটি কূটনৈতিক বার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস। তাতে সৌদি দূতাবাস রিয়াদে তাদের মন্ত্রণালয়কে ওই ঘটনার পর যে বিবরণ পাঠায় তাতে বলা হয়েছিল, অভ্যুত্থানকারীরা তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধানসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল।
ওই অভ্যুত্থানচেষ্টার পরিকল্পনা তিনটি দেশে বসে ঘটেছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা প্রথম আমাকে জানিয়েছিলেন, পলাতক জিয়ার সঙ্গে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। অভ্যুত্থানচেষ্টার কিছুদিন আগে সেনানিবাসে হিযবুত তাহরীরের একটি লিফলেট বিতরণে জড়িত ছিলেন জিয়া।
সেনানিবাস থেকে পালানোর পর জিয়া আর থেমে থাকেননি। আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে আল-কায়েদাপন্থী জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামকে সংগঠিত করেছেন। এই সংস্থার সামরিক শাখার প্রধানও তিনি। তাঁর নির্দেশে একের পর এক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। জিয়া আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার পর ২০১৩ সাল থেকে নয়জন মুক্তমনা ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, অধিকারকর্মী ও নাট্যকর্মী খুন হয়েছেন। পুলিশ এসব মামলা তদন্ত করে আদালতকে বলেছে, নয়টি হত্যাকাণ্ডের আটটিতেই জড়িত ছিলেন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম বা আনসার আল ইসলামের সদস্যরা। ছয়টি খুনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক। জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকাণ্ডের রায়েও আদালত বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডের মূল মাথা হলেন চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া। এই খুনসহ ছয়টি খুনের মামলায় আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন।
পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, জিয়া একাই এত কিছু করে বেড়ালেও প্রথম দিকে পুলিশ তার কোনো কিনারা করতে পারেনি। জিয়ার সংশ্লিষ্টতার কথা প্রথম জানতে পারে আনসার আল ইসলামের তাত্ত্বিক গুরু জসীমউদ্দীন রাহমানী গ্রেপ্তারের পর। ২০১৩ সালে গ্রেপ্তারের পর তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, জিয়াউল হকের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। জিয়া মোহাম্মদপুরের বছিলায় মসজিদে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁকে মাঝেমধ্যে ই-মেইলও করতেন। ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সাতারকুলে অভিযানের পর পুলিশ নিশ্চিত হয় জিয়াই হলেন আনসার আল ইসলামের সামরিক প্রধান। তিনি দীর্ঘ সময় বাড্ডার সাতারকুলে আত্মগোপন করে ছিলেন। কিন্তু কেউই বুঝতে পারেননি।
অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, জিয়াকে ধরতে তাঁরা সব সময় তৎপর ছিলেন। কিন্তু কখনো নাগালে পাননি। পুলিশ সদর দপ্তর ২০১৬ সালের ২ আগস্ট জিয়াকে ধরিয়ে দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করে। যদিও পুরস্কার ঘোষণার পর আসামি গ্রেপ্তারের নজির দেশে নেই বললেই চলে।
পুলিশের অনেক কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন, জিয়াকে ধরতে তাঁরা কমপক্ষে চার দফা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রতিবারই ফসকে গেছেন তিনি। একবার খুব নাগালে থেকেই ধরতে পারেননি তাঁকে। জিয়া বিভিন্ন সময় ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহে থেকেছেন। ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের আগে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকায় আসার টিকিট কাটতে গিয়েছিলেন তিনি। টিকিট না পেয়ে স্টেশনেই হট্টগোল করেন। অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সায়মনের ময়মনসিংহের বাসায়ও ছিলেন জিয়া। টঙ্গীতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে পুলিশি তল্লাশি শুরুর আগেই তিনি কেটে পড়েন সেখান থেকে।
মৌলভীবাজারের মোস্তফাপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সৈয়দ জিলুল হকের ছেলে জিয়া। পড়াশোনা করেন সিলেট ক্যাডেটে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ৪১তম দীর্ঘ কোর্সের মাধ্যমে। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর কিছুদিন পরই দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই ঘরে দুটি সন্তান আছে। শ্বশুর একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। পুলিশ বিভিন্ন সময়ে সেখানেও খোঁজ নিয়েছে জিয়ার। কিন্তু ফল শূন্য।
ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম সেদিন বললেন, জিয়াকে ধরা এখন সত্যিই কঠিন। কারণ, যে পদ্ধতি ব্যবহার করে পুলিশ আসামি ধরে, তার সবই জিয়ার নখদর্পণে। তিনি এখন আর কোনো ডিভাইস ব্যবহার করেন না। এতে করে তাঁকে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। তবে আন্ডারগ্রাউন্ডে তাঁর তৎপরতা বোঝা যাচ্ছে।
পুলিশ কমিশনারের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে হয়তো জিয়া সব সময়ই থাকবেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, সবার আতঙ্ক হয়ে।
আরও পড়ুন:
বিচার বিভাগের অর্থবহ স্বাধীনতা নিশ্চিতকল্পে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
৩২ মিনিট আগেকোরআন এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে লক্ষ্য করে অপ্রয়োজনীয়, বিবেক বর্জিত, ধৃষ্টতামূলক ও উসকানিমূলক আশালীন বক্তব্য ও আচরণের জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো শাস্তির বিধান থাকা বাঞ্ছনীয়, যা সংসদ বিবেচনা
১ ঘণ্টা আগেরাজধানীর পাঁচ থানার পৃথক মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনিসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান আহমেদ পৃথক পৃথক আদেশে গ্রেপ্তার দেখানোর এই নির্দেশ দেন।
১ ঘণ্টা আগেআন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধনের খসড়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের শাস্তির বিধান যুক্ত করলেও শেষ মুহূর্তে পিছু হটল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
১ ঘণ্টা আগে