হাইকোর্টের আদেশ অমান্য, অগ্রণী ব্যাংকের ৫ কর্মকর্তার কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ০৭
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ৩৯

হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করায় অগ্রণী ব্যাংকের পাঁচ কর্মকর্তাকে তিন মাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের করা আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের একক বেঞ্চ মঙ্গলবার এ সাজা দেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন অগ্রণী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোরশেদুল কবির, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক-১ ওয়াহিদা বেগম, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক-২ শ্যামল কৃষ্ণ সাহা, জেনারেল ম্যানেজার ফজলুল করিম এবং প্রিন্সিপাল শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক একেএম ফজলুল হক।

আবেদনকারীপক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুরুল আমীন। অগ্রণী ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শামীম খালেদ আহমেদ। আইনজীবী নুরুল আমীন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাজার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাইকোর্ট ৫ জনকে তিন মাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাদেরকে রায় পাওয়ার এক মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ জনের নিজস্ব সম্পত্তি ক্রোক করতেও আদালত নির্দেশ দিয়েছেন বলে।

জানা যায়, রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশায় ২২ তলা মুন টাওয়ার নামে একটি ভবন নির্মাণ করা হয় অগ্রণী ব্যাংক থেকে ২৩১ কোট ৪৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে। পরবর্তীতে ওই ভবনের ৯৮ হাজার ২৩৫ বর্গফুট (১২,১৩ ও ১৪ তলা এবং ৬ষ্ট তলার ৫ হাজার বর্গফুট) কিনে নেয় অগ্রণী ব্যাংক। আর ঋণের বিপরীতে এই টাকা সমন্বয় করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে প্রধান কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদলি হলে নতুন কর্মকর্তা এসেই মুন টাওয়ারের মালিকের কাছে ঋণের বিপরীতে ১৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা দাবি করেন।

টাকা পরিশোধ করতে ২০২১ সালে মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়। পরে ওই চিঠির বৈধতা নিয়ে ঢাকার জেলা আদালতে মামলা করেন মুন ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান। আবেদনে অগ্রণী ব্যাংকের চিঠির ওপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। আদালত ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজ করে দেন।

নিষেধাজ্ঞার আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন মিজানুর রহমান। হাইকোর্ট ওই চিঠির বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছে ব্যাখ্যা জানতে চান। এক পর্যায়ে ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট চিঠি কেন বাতিল করা হবে না এবং এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। আর রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চিঠির কার্যকারিতার ওপর স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের আদেশের পরও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ টাকার জন্য মিজানুর রহমানকে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে তাঁর কাছে দাবি করা টাকাকে খেলাপি ঋণ হিসেবে দেখানো হয়। এরপর মিজানুর রহমান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আবেদনে আগের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিতে আরজি জানানো হয়।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বরগুনা-২ আসনে প্রার্থী হন মিজানুর রহমান। তবে অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরগুনার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়ে তাকে ঋণ খেলাপি হিসেবে উল্লেখ করেন। এতে মিজানুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। অগ্রণী ব্যাংকের ওই চিঠির বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আবেদন করেন মিজানুর রহমান। পৃথক তিন আবেদনের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায়ে দেন হাইকোর্ট।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত