অনলাইন ডেস্ক
সেদিন ১৯ জুলাই, শুক্রবার। রাজধানীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মৌচাকে সকাল থেকেই কোটা আন্দোলনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। রাস্তায় নেমে আসে হাজারো আন্দোলনকারী। যোগ দেয় সাধারণ মানুষও। আগের দিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও নির্মম ঘটনাগুলো বিক্ষোভকারীদের উত্তেজনার পারদ আরও উসকে দেয়। আন্দোলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বাইরেও।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের তখনো কয়েক ঘণ্টা বাকি। চারদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থাকলেও হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়ে অশান্তির আগুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশ। আন্দোলনের একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের দমনে পুলিশ দিশেহারা হয়ে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। তারপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ।
এ সময় একদল রিকশাচালক আটকে যান সংঘর্ষের ঠিক কেন্দ্রে। পুলিশ তাঁদের উদ্দেশ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে তাঁরা মালিবাগ মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। এ সময় সবাই সমস্বরে বলতে থাকেন, ‘আমাদের কিছু হলে, আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেব।’
সেই রিকশাচালকদের একজন হলেন কুমিল্লার বাসিন্দা শাহিন। একটু আগে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে বারবার শিউরে উঠছিলেন তিনি। বলছিলেন, যা ঘটেছে সেই স্মৃতি এখনো জীবন্ত। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল আর ইট-পাটকেল ছুড়ে তারা (আন্দোলনকারীরা) পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। আমি জীবন বাঁচাতে দ্রুত রিকশা চালিয়ে পালিয়ে আসি।’
তবে ঘটনাস্থল থেকে পালালেও শাহিনের মতো রিকশাচালকেরা সেদিন অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ে নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন। কারণ এই আন্দোলন বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল সেদিন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রথমে এটি ছাত্র আন্দোলন থাকলেও আস্তে আস্তে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে যায়। সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের হতাশা থাকায় সহিংসতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ১৬-২০ জুলাই, মাত্র পাঁচ দিনে দেশজুড়ে ব্যাপক অরাজকতা হয়। বিক্ষোভ রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর দমন-পীড়নের ফলে অন্তত ১৯৭ জন নিহত হন।
১৮ জুলাই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রায় অর্ধশত বিক্ষোভকারীর মৃত্যুতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকারও কঠোর পদক্ষেপের দিকে পা বাড়ায়। ডেটা সেন্টার ও আইএসপি কেব্লগুলোকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ এনে সরকার দেশজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। জারি করা হয় কারফিউ। অবশ্য ২৪ জুলাইয়ের পর কারফিউ শিথিল হতে শুরু করেছে। ১৯ জুলাইয়ের সংঘর্ষে অন্তত আরও ৫৬ জন নিহত হন। এত কিছুর পরও ঢাকার রিকশাচালকেরা ঘরে বসে থাকেননি, নেমে এসেছিলেন রাস্তায়।
আনুমানিক ৪ থেকে ৬ লাখ রিকশা চলাচল করে ঢাকার রাস্তায়। আন্দোলনে ব্যবসা-বাণিজ্য এমনিতেই বন্ধ তার ওপর কারফিউ তাঁদের দৈনন্দিন উপার্জনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শাহিনের দৈনিক আয় কমে ১৫০ টাকায় নেমে আসে, যা স্বাভাবিক আয়ের (৮০০-১০০০) তুলনায় অনেক কম। প্রতিদিন রিকশার ভাড়া বাবদ ১২০ টাকা মালিককে দেওয়ার পর এক বেলা খাবারের টাকাও জুটছিল না তাঁদের।
শাহিনের মতোই আরেক রিকশাচালক শাহাবুদ্দিন। তিনি বাবার মৃত্যুর পর মা ও ভাইবোনের পাশে দাঁড়ানোর দায়ে রিকশার প্যাডেল আপন করতে বাধ্য হয়েছেন। এই তরুণ রিকশাচালক বলেন, ‘আমরা যদি ক্ষুধায় মরে যাই তাহলে ভয় করে কী লাভ? সংঘর্ষের মধ্যে বের না হয়ে বাঁচার উপায় ছিল না। তাই সংঘর্ষের মধ্যেও আমরা সাহসী, কারণ আমরা ক্ষুধার্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুধার কারণে যদি মায়ের চোখে পানি দেখতে হয়, তবে বেঁচে থেকেই বা কী লাভ?’
তবে নিজের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অন্যের জীবন বাঁচানোর তাড়নাও ছিল ঢাকার রিকশাচালকদের মধ্যে। ১৯ জুলাই অনেক রিকশাচালকই আন্দোলনে হতাহতদের চিকিৎসার জন্য ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে গিয়েছেন হাসপাতালে। নেননি কোনো ভাড়া। তাঁদেরই একজন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে আসা স্বপন। সেদিন দক্ষিণ ঢাকার বনশ্রী এলাকায় গুলির আঘাতে রক্তাক্ত এক ব্যক্তিকে তিনি বহন করেন।
সেদিনের স্মৃতিচারণা করে স্বপন বলেন, ‘আমি তাঁকে গোড়ান টেম্পো স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলাম, প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রিকশা ধীরগতির হওয়ায় আমি তাঁর সঙ্গীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অটোরিকশা নিয়ে যেতে বলি। আমি এর জন্য কোনো ভাড়া নিইনি।’
মোহাম্মদপুরের রিকশাচালক কাশেম বলেন, ‘১৯ তারিখ শিক্ষার্থী ও অন্যান্য আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আশপাশের হাসপাতালে অন্তত পাঁচবার গিয়েছিলাম। আন্দোলনকারীরা লাঠি ও ইট ছুড়লেও পুলিশ গুলি চালায়, যার ফলে অসংখ্য মানুষ আহত হয়। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমি নিজেও নিয়েছিলাম।’ শাহাবুদ্দিনের মতো কাশেমও বলেন, সহিংসতায় জীবন হারানোর ঝুঁকি থাকলেও তিনি ঘরে বসে থাকতে পারেননি। কারণ পুরো পরিবার তাঁর ওপর নির্ভরশীল।
সোমবার অর্থাৎ ২২ জুলাই দুপুরেও ঢাকা শহরে উত্তেজনা বিরাজ করায় শাহাবুদ্দিন মাত্র ৭০ টাকা আয় করতে সক্ষম হন। সেদিন বনশ্রীতে ঘটে যাওয়া তাঁর জীবনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞার কথা শোনালেন তিনি। সহকর্মী রিকশাচালকদের সহায়তায় জীবন ফিরে পাওয়ার সেই স্মৃতি মনে করে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এক পাশ থেকে গুলি চালাচ্ছিল আর অন্য পাশ থেকে আন্দোলনকারীরা ইট ছুড়েছিল। আমি দুই পক্ষের মাঝখানে পড়ে যাই। আমি আমার রিকশা ছেড়ে পালাতে পারিনি। কারণ মালিককে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হতো। এমন সময় কয়েকজন রিকশাচালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে নিরাপদে নিয়ে যান।’
কিন্তু ঘটনাপ্রবাহের ভয় ও ক্লান্তির কারণে অনেকেই আহত হয়েছেন। তাঁদেরই একজন জাহাঙ্গীর। তিনি উত্তাল এই সময়েও টানা তিন দিন রাস্তায় থেকে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিকশা চালানো, কাঁদানে গ্যাসের প্রভাব ও সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে গিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়াসহ নানা কারণ তাঁকেও ক্লান্ত ও হতাশ করে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল আমার মুখে যেন আগুন জ্বলছিল। চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছিল।’
রিকশাচালক শাহিন বলেন, ‘এই অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এটা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবন অচল হয়ে পড়েছে। আমরা শান্তি চাই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ
সেদিন ১৯ জুলাই, শুক্রবার। রাজধানীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র মৌচাকে সকাল থেকেই কোটা আন্দোলনের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। রাস্তায় নেমে আসে হাজারো আন্দোলনকারী। যোগ দেয় সাধারণ মানুষও। আগের দিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও নির্মম ঘটনাগুলো বিক্ষোভকারীদের উত্তেজনার পারদ আরও উসকে দেয়। আন্দোলনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাণ হারায়। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর বাইরেও।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের তখনো কয়েক ঘণ্টা বাকি। চারদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থাকলেও হঠাৎ করে ছড়িয়ে পড়ে অশান্তির আগুন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মরিয়া হয়ে ওঠে পুলিশ। আন্দোলনের একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের দমনে পুলিশ দিশেহারা হয়ে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। তারপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় পিছু হটতে বাধ্য হয় পুলিশ।
এ সময় একদল রিকশাচালক আটকে যান সংঘর্ষের ঠিক কেন্দ্রে। পুলিশ তাঁদের উদ্দেশ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করলে তাঁরা মালিবাগ মোড়ের দিকে যেতে থাকেন। এ সময় সবাই সমস্বরে বলতে থাকেন, ‘আমাদের কিছু হলে, আমরা প্রতিটি ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়ে দেব।’
সেই রিকশাচালকদের একজন হলেন কুমিল্লার বাসিন্দা শাহিন। একটু আগে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ভয়ংকর দৃশ্যের কথা বলতে গিয়ে বারবার শিউরে উঠছিলেন তিনি। বলছিলেন, যা ঘটেছে সেই স্মৃতি এখনো জীবন্ত। তিনি বলেন, ‘পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালাচ্ছিল আর ইট-পাটকেল ছুড়ে তারা (আন্দোলনকারীরা) পাল্টা জবাব দিচ্ছিল। আমি জীবন বাঁচাতে দ্রুত রিকশা চালিয়ে পালিয়ে আসি।’
তবে ঘটনাস্থল থেকে পালালেও শাহিনের মতো রিকশাচালকেরা সেদিন অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ে নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন। কারণ এই আন্দোলন বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল সেদিন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রথমে এটি ছাত্র আন্দোলন থাকলেও আস্তে আস্তে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে যায়। সরকারের ওপর সাধারণ মানুষের হতাশা থাকায় সহিংসতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ১৬-২০ জুলাই, মাত্র পাঁচ দিনে দেশজুড়ে ব্যাপক অরাজকতা হয়। বিক্ষোভ রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর দমন-পীড়নের ফলে অন্তত ১৯৭ জন নিহত হন।
১৮ জুলাই অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রায় অর্ধশত বিক্ষোভকারীর মৃত্যুতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকারও কঠোর পদক্ষেপের দিকে পা বাড়ায়। ডেটা সেন্টার ও আইএসপি কেব্লগুলোকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ এনে সরকার দেশজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়। জারি করা হয় কারফিউ। অবশ্য ২৪ জুলাইয়ের পর কারফিউ শিথিল হতে শুরু করেছে। ১৯ জুলাইয়ের সংঘর্ষে অন্তত আরও ৫৬ জন নিহত হন। এত কিছুর পরও ঢাকার রিকশাচালকেরা ঘরে বসে থাকেননি, নেমে এসেছিলেন রাস্তায়।
আনুমানিক ৪ থেকে ৬ লাখ রিকশা চলাচল করে ঢাকার রাস্তায়। আন্দোলনে ব্যবসা-বাণিজ্য এমনিতেই বন্ধ তার ওপর কারফিউ তাঁদের দৈনন্দিন উপার্জনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। শাহিনের দৈনিক আয় কমে ১৫০ টাকায় নেমে আসে, যা স্বাভাবিক আয়ের (৮০০-১০০০) তুলনায় অনেক কম। প্রতিদিন রিকশার ভাড়া বাবদ ১২০ টাকা মালিককে দেওয়ার পর এক বেলা খাবারের টাকাও জুটছিল না তাঁদের।
শাহিনের মতোই আরেক রিকশাচালক শাহাবুদ্দিন। তিনি বাবার মৃত্যুর পর মা ও ভাইবোনের পাশে দাঁড়ানোর দায়ে রিকশার প্যাডেল আপন করতে বাধ্য হয়েছেন। এই তরুণ রিকশাচালক বলেন, ‘আমরা যদি ক্ষুধায় মরে যাই তাহলে ভয় করে কী লাভ? সংঘর্ষের মধ্যে বের না হয়ে বাঁচার উপায় ছিল না। তাই সংঘর্ষের মধ্যেও আমরা সাহসী, কারণ আমরা ক্ষুধার্ত।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুধার কারণে যদি মায়ের চোখে পানি দেখতে হয়, তবে বেঁচে থেকেই বা কী লাভ?’
তবে নিজের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অন্যের জীবন বাঁচানোর তাড়নাও ছিল ঢাকার রিকশাচালকদের মধ্যে। ১৯ জুলাই অনেক রিকশাচালকই আন্দোলনে হতাহতদের চিকিৎসার জন্য ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে গিয়েছেন হাসপাতালে। নেননি কোনো ভাড়া। তাঁদেরই একজন বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে আসা স্বপন। সেদিন দক্ষিণ ঢাকার বনশ্রী এলাকায় গুলির আঘাতে রক্তাক্ত এক ব্যক্তিকে তিনি বহন করেন।
সেদিনের স্মৃতিচারণা করে স্বপন বলেন, ‘আমি তাঁকে গোড়ান টেম্পো স্টেশন পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলাম, প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। রিকশা ধীরগতির হওয়ায় আমি তাঁর সঙ্গীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অটোরিকশা নিয়ে যেতে বলি। আমি এর জন্য কোনো ভাড়া নিইনি।’
মোহাম্মদপুরের রিকশাচালক কাশেম বলেন, ‘১৯ তারিখ শিক্ষার্থী ও অন্যান্য আহত ব্যক্তিদের নিয়ে আশপাশের হাসপাতালে অন্তত পাঁচবার গিয়েছিলাম। আন্দোলনকারীরা লাঠি ও ইট ছুড়লেও পুলিশ গুলি চালায়, যার ফলে অসংখ্য মানুষ আহত হয়। তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমি নিজেও নিয়েছিলাম।’ শাহাবুদ্দিনের মতো কাশেমও বলেন, সহিংসতায় জীবন হারানোর ঝুঁকি থাকলেও তিনি ঘরে বসে থাকতে পারেননি। কারণ পুরো পরিবার তাঁর ওপর নির্ভরশীল।
সোমবার অর্থাৎ ২২ জুলাই দুপুরেও ঢাকা শহরে উত্তেজনা বিরাজ করায় শাহাবুদ্দিন মাত্র ৭০ টাকা আয় করতে সক্ষম হন। সেদিন বনশ্রীতে ঘটে যাওয়া তাঁর জীবনের এক ভয়াবহ অভিজ্ঞার কথা শোনালেন তিনি। সহকর্মী রিকশাচালকদের সহায়তায় জীবন ফিরে পাওয়ার সেই স্মৃতি মনে করে শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এক পাশ থেকে গুলি চালাচ্ছিল আর অন্য পাশ থেকে আন্দোলনকারীরা ইট ছুড়েছিল। আমি দুই পক্ষের মাঝখানে পড়ে যাই। আমি আমার রিকশা ছেড়ে পালাতে পারিনি। কারণ মালিককে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হতো। এমন সময় কয়েকজন রিকশাচালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে নিরাপদে নিয়ে যান।’
কিন্তু ঘটনাপ্রবাহের ভয় ও ক্লান্তির কারণে অনেকেই আহত হয়েছেন। তাঁদেরই একজন জাহাঙ্গীর। তিনি উত্তাল এই সময়েও টানা তিন দিন রাস্তায় থেকে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিকশা চালানো, কাঁদানে গ্যাসের প্রভাব ও সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে গিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়াসহ নানা কারণ তাঁকেও ক্লান্ত ও হতাশ করে ফেলেছে। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছিল আমার মুখে যেন আগুন জ্বলছিল। চোখ থেকে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছিল।’
রিকশাচালক শাহিন বলেন, ‘এই অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে হবে। এটা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জীবন অচল হয়ে পড়েছে। আমরা শান্তি চাই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আসিফ মাহমুদ
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন (জেআরসি) বিচার বিভাগের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে অংশীজনদের মতামত গ্রহণের জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে। ২৩ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে সাধারণ জনগণসহ বিচারক, আইনজীবী ও আদালত সংশ্লিষ্ট সহায়ক কর্মচারীদের কাছে মতামত চেয়েছে কমি
২ ঘণ্টা আগেফৌজদারি মামলায় কোনো আসামি আদালত থেকে অব্যাহতি পেলেও তিনি পুরোপুরি বিপদমুক্ত হন না। তার বিপদ কিছুটা থেকেই যায়। তবে ফৌজদারি মামলায় চার্জ গঠনের পর খালাস পেলে আসামি বিপদমুক্ত হন। একটি ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কিংবা ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা আদালত।
৩ ঘণ্টা আগেঢাকা-দিল্লি পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক রাজনীতি ও মানবাধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে।
৪ ঘণ্টা আগেনবনিযুক্ত মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম বলেছেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দায়ের করা মামলাগুলো যথাযথভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা যাবে না। নিরীহ কারও নামে মামলা হলেও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪ ঘণ্টা আগে