কামরুল হাসান, ঢাকা
ঢাকাই ফিল্মের একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা পপি নাকি অনেক দিন ধরেই উধাও। ‘নাকি’ শব্দটি ব্যবহারের কারণ, আমি নিজে তাঁর কোনো খোঁজ করিনি। যত কথা সব সিনেসাংবাদিকদের কাছ থেকে শোনা। তাঁরা বলছেন, পপি এখন পরিবারের সঙ্গে থাকছেন না, আত্মীয়স্বজনও তাঁর খোঁজ জানেন না। ব্যক্তিগত নম্বরটি অনেক দিন ধরে বন্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি নিষ্ক্রিয়। ‘উধাও’ শব্দটি হয়তো সে কারণেই বেশ জোরালো হয়েছে। সিনেপাড়ায় আরও গুঞ্জন আছে, তিনি বিয়ে করে সন্তানের মা হয়েছেন। সে কারণেই আড়ালে-আবডালে থাকছেন।
ফিল্মপাড়ায় একসময় চল ছিল নায়ক-নায়িকাদের বিয়ের খবর গোপন রাখা। নির্মাতারা আশঙ্কা করতেন, নায়িকা বিবাহিত হলে তাঁর ছবি আর চলবে না। কারণ, বাংলাদেশের দর্শক নাকি পছন্দ করেন অবিবাহিত নায়িকা। নায়িকা বিবাহিত হলেই তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নেন। সে কারণে কেউ বিয়ে করলেও তা কোনোভাবেই প্রকাশ করা হতো না। আবার কোনোভাবে যদি প্রকাশিত হয়েই যায়, সেটাও ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানা চেষ্টা-তদবির চলত। সেই অবস্থা এখনো যে একেবারে নেই, সেটা বলা যাবে না। কারণ, শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসের বিয়ের কথাও অনেক বছর মানুষের অজানা ছিল। সেই বিয়ের কথা জানাজানি হয় তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হওয়ার পর। পপির ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টি অন্য রকম। কেন অন্য রকম, সেটা এবার বলি।
আমার মনে হয়েছে, পপির মধ্যে একধরনের বিয়েভীতি আছে। কারণ, একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা পপির আজকের যে ‘খসে পড়া তারার’ অবস্থা, তার পেছনের কারণ সেই বিয়ে নিয়ে কলহ। সেটা অবশ্য ২২ বছর আগে, ২০০০ সালে। সেই ঘটনার পর পপির ক্যারিয়ারে ভাটা পড়তে শুরু করে। একের পর এক ছবি ছেড়ে দিতে হয়। ওই সময় তাঁর পেছনে প্রযোজকদের ৫০ কোটি টাকার বেশি লগ্নি ছিল। এভাবে চলতে চলতে একপর্যায়ে প্রায় বেকার হয়ে যান একসময়ের হার্টথ্রব নায়িকা, যার রেশ এখনো রয়েই গেছে। এটা অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমার সেই সংলাপের মতো। একবার ঘূর্ণিপাকে পড়ে গেলে আর ওঠা যায় না।
সিনেমার নায়িকাদের সবারই একটি করে পোষা নাম থাকে। পপি হলো সেই পোষা নাম, প্রকৃত নাম সাদিকা পারভিন। ১৯৭৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর খুলনায় জন্ম। শৈশব কাটে খুলনায়, দাদাবাড়িতে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে পপি বড়। খুলনার মন্নুজান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৬ সালে ঢাকায় আসেন লাক্স-আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর সিনেমায় ডাক আসে। ১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের কুলি সিনেমায় অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। সেই ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন ওমর সানী। ছবিটি সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করে। এরপর তাঁকে কে আটকায়। একের পর ছবি আসতে থাকে পপির হাতে। খুব অল্প সময়ে তরুণদের কাছে পপি হয়ে ওঠেন, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’।
কিন্তু সেই যে ঘূর্ণিপাকের কথা বললাম, একসময় পপিও পড়ে গেলেন সেই ঘূর্ণিপাকে। ১৯৯৭ সালে ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ নামে একটি সিনেমা শুরু করেন চট্টগ্রাম থেকে আসা সুদর্শন যুবক শাকিল আহসান ওরফে শাকিল খানের সঙ্গে। সেই ছবি করতে গিয়েই তাঁদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। বছরতিনেক পর শাকিল দাবি করেন, তাঁদের বিয়ে হয়ে গেছে। সেই বিয়ের কথা রটে যায় সিনেমা প্রযোজকদের কানে। পপির হাতে তখন ৩০টি ছবি। প্রযোজকদের মাথায় বাজ। তাঁরা চান, বিয়ের খবর কেউ যেন না জানে। কিন্তু শাকিল নাছোড়, তিনি সব জায়গায় বিয়ের কথা বলে বেড়াতে শুরু করেন। এ নিয়ে একাধিক জিডিও হয়।
২০০০ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে একদিন সাংবাদিক পারভেজ খান আমাকে নিয়ে যান মগবাজারে নায়ক শাকিল খানের বাসায়। সেই বাসায় শাকিল একাই থাকতেন। শাকিল আমাদের বলেন, ওই বছরের এপ্রিল মাসে তিনি আর পপি সিনেমা শুটিংয়ের জন্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের সেন্ট মার্টিন হোটেলে তাঁরা রাত কাটান। এরপর কুমিল্লায় এসে শাকিলের এক বন্ধুর বাসায় দুজনে বিয়ে করেন। বিয়ের দিন রাত দুটোয় ঢাকায় এসে গুলিস্তানের গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে বাসর করেন। তিনি আমাদের কাবিননামা ও হোটেলের বিলের কপিও দেখিয়েছিলেন। শাকিল আমাদের বারবার বলছিলেন, তিনি চান, পপি এ বাসায় এসে তাঁর সঙ্গে সংসার করুক। কিন্তু পপির মা সেটা চান না। সে কারণে পপি আসতে পারছেন না। তাঁর এসব কথা নিয়ে আমি যেন নিউজ করি, সে জন্য অনুরোধ করেন তিনি। আমি সব শুনে বললাম, আমি সিনেমাবিষয়ক রিপোর্টার নই, এটা আমার কাজ নয়। তবে আমি এটা অফিসে জানাতে পারি। শাকিল বললেন, তার দরকার নেই। পুলিশি ঝামেলা হোক, নাহয় তখনই লিখবেন।
শাকিলের কথাই সত্যি হলো। ২ আগস্ট শুটিং স্পট থেকে পপিকে গাড়িতে তুলে মগবাজারের বাসায় নিয়ে আসেন শাকিল। পপির মা মরিয়ম মেরি সে খবর জানতে পেরে পপির মামাতো ভাই আমানতকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। তাঁরা শাকিলকে মারধর করেন এবং পপিকে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে যান। শাকিল এ ঘটনায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করে পপির মা ও তাঁর মামাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। রমনার তখনকার ওসি ছিলেন এ বি এম সুলতান। তিনি কাউকে গ্রেপ্তার না করে চুপচাপ মজা দেখতে থাকেন।
পপির এ ঘটনা প্রযোজকদের কানে যায়। তাঁরা পপিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন। সে সময়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তাও পপির পক্ষে দাঁড়ান। এবার শাকিলের বিরুদ্ধে মেয়েকে মারধর, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন পপির বাবা আমির আলী। সেই মামলায় ২০০০ সালের ৫ আগস্ট শাকিল খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হইচই পড়ে যায়। চলতে থাকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।
৭ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন পপি। সেখানে তিনি বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। সংবাদ সম্মেলনে পপি বলেছিলেন, শাকিল তাঁকে বাসার একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর ও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সাংবাদিকেরা জানতে চান, এতে কি আপনি আহত হয়েছিলেন? পপির জবাব ছিল, কিছু কিছু ক্ষত থাকে, যা প্রকাশ্যে দেখানো যায় না। তবে পপির সেই সংবাদ সম্মেলনের পরও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। পুলিশ এবার বাধ্য হয়ে পপির মা ও মামাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করে। তবে পপিকে পুলিশ কখনো গ্রেপ্তার করেনি। একদিন জনকণ্ঠ ভবন থেকে শংকর কুমার দে আর আমি পপিদের ইস্কাটনের বাসায় গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এভাবে দুই সপ্তাহ চলে যায়, শাকিল জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতারা তাঁদের নিয়ে এফডিসিতে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দুজনেই নিজের খরচে মামলা তুলে নেবেন। তাঁরা কখনো একসঙ্গে অভিনয় ও চলাফেরা করতে পারবেন না। তখন শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন মাহমুদ কলি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, এতে হয়তো পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু মেয়েটির ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। সত্যিই এ ঘটনার পর পপির হাতের ছবির সংখ্যা একেবারে কমে আসে। শাকিলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়েছে। তিনিও বেকার হয়ে পড়েন।
শেষ করার আগে আবারও সত্যজিৎ রায়ের সেই নায়ক সিনেমার নায়ক অরিন্দমের কথা বলি। তিনি স্বপ্নে দেখছেন, শুধু টাকার মাঝে হেঁটে চলেছেন প্রচণ্ড উৎফুল্ল হয়ে। এরপর হঠাৎ করেই টাকার চোরাবালিতে ডুবতে থাকেন। বাঁচতে একজনের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো সাহায্য করেন না। নায়ক ডুবে যান খ্যাতি আর অর্থের মোহের চোরাবালিতে। রুপালি পর্দার জগৎটাই মনে হয় সে রকম। একবার ডুবে গেলে ফেরার পথটাই যেন চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
ঢাকাই ফিল্মের একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা পপি নাকি অনেক দিন ধরেই উধাও। ‘নাকি’ শব্দটি ব্যবহারের কারণ, আমি নিজে তাঁর কোনো খোঁজ করিনি। যত কথা সব সিনেসাংবাদিকদের কাছ থেকে শোনা। তাঁরা বলছেন, পপি এখন পরিবারের সঙ্গে থাকছেন না, আত্মীয়স্বজনও তাঁর খোঁজ জানেন না। ব্যক্তিগত নম্বরটি অনেক দিন ধরে বন্ধ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি নিষ্ক্রিয়। ‘উধাও’ শব্দটি হয়তো সে কারণেই বেশ জোরালো হয়েছে। সিনেপাড়ায় আরও গুঞ্জন আছে, তিনি বিয়ে করে সন্তানের মা হয়েছেন। সে কারণেই আড়ালে-আবডালে থাকছেন।
ফিল্মপাড়ায় একসময় চল ছিল নায়ক-নায়িকাদের বিয়ের খবর গোপন রাখা। নির্মাতারা আশঙ্কা করতেন, নায়িকা বিবাহিত হলে তাঁর ছবি আর চলবে না। কারণ, বাংলাদেশের দর্শক নাকি পছন্দ করেন অবিবাহিত নায়িকা। নায়িকা বিবাহিত হলেই তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নেন। সে কারণে কেউ বিয়ে করলেও তা কোনোভাবেই প্রকাশ করা হতো না। আবার কোনোভাবে যদি প্রকাশিত হয়েই যায়, সেটাও ধামাচাপা দেওয়ার জন্য নানা চেষ্টা-তদবির চলত। সেই অবস্থা এখনো যে একেবারে নেই, সেটা বলা যাবে না। কারণ, শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসের বিয়ের কথাও অনেক বছর মানুষের অজানা ছিল। সেই বিয়ের কথা জানাজানি হয় তাঁদের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হওয়ার পর। পপির ক্ষেত্রে অবশ্য বিষয়টি অন্য রকম। কেন অন্য রকম, সেটা এবার বলি।
আমার মনে হয়েছে, পপির মধ্যে একধরনের বিয়েভীতি আছে। কারণ, একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা পপির আজকের যে ‘খসে পড়া তারার’ অবস্থা, তার পেছনের কারণ সেই বিয়ে নিয়ে কলহ। সেটা অবশ্য ২২ বছর আগে, ২০০০ সালে। সেই ঘটনার পর পপির ক্যারিয়ারে ভাটা পড়তে শুরু করে। একের পর এক ছবি ছেড়ে দিতে হয়। ওই সময় তাঁর পেছনে প্রযোজকদের ৫০ কোটি টাকার বেশি লগ্নি ছিল। এভাবে চলতে চলতে একপর্যায়ে প্রায় বেকার হয়ে যান একসময়ের হার্টথ্রব নায়িকা, যার রেশ এখনো রয়েই গেছে। এটা অনেকটা সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ সিনেমার সেই সংলাপের মতো। একবার ঘূর্ণিপাকে পড়ে গেলে আর ওঠা যায় না।
সিনেমার নায়িকাদের সবারই একটি করে পোষা নাম থাকে। পপি হলো সেই পোষা নাম, প্রকৃত নাম সাদিকা পারভিন। ১৯৭৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর খুলনায় জন্ম। শৈশব কাটে খুলনায়, দাদাবাড়িতে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে পপি বড়। খুলনার মন্নুজান বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৬ সালে ঢাকায় আসেন লাক্স-আনন্দ বিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। সেই প্রতিযোগিতায় তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। এরপর সিনেমায় ডাক আসে। ১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের কুলি সিনেমায় অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। সেই ছবিতে তাঁর বিপরীতে ছিলেন ওমর সানী। ছবিটি সেই সময়ে ৭ কোটি টাকা ব্যবসা করে। এরপর তাঁকে কে আটকায়। একের পর ছবি আসতে থাকে পপির হাতে। খুব অল্প সময়ে তরুণদের কাছে পপি হয়ে ওঠেন, ‘ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে’।
কিন্তু সেই যে ঘূর্ণিপাকের কথা বললাম, একসময় পপিও পড়ে গেলেন সেই ঘূর্ণিপাকে। ১৯৯৭ সালে ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ নামে একটি সিনেমা শুরু করেন চট্টগ্রাম থেকে আসা সুদর্শন যুবক শাকিল আহসান ওরফে শাকিল খানের সঙ্গে। সেই ছবি করতে গিয়েই তাঁদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। বছরতিনেক পর শাকিল দাবি করেন, তাঁদের বিয়ে হয়ে গেছে। সেই বিয়ের কথা রটে যায় সিনেমা প্রযোজকদের কানে। পপির হাতে তখন ৩০টি ছবি। প্রযোজকদের মাথায় বাজ। তাঁরা চান, বিয়ের খবর কেউ যেন না জানে। কিন্তু শাকিল নাছোড়, তিনি সব জায়গায় বিয়ের কথা বলে বেড়াতে শুরু করেন। এ নিয়ে একাধিক জিডিও হয়।
২০০০ সালের জুলাইয়ের শেষ দিকে একদিন সাংবাদিক পারভেজ খান আমাকে নিয়ে যান মগবাজারে নায়ক শাকিল খানের বাসায়। সেই বাসায় শাকিল একাই থাকতেন। শাকিল আমাদের বলেন, ওই বছরের এপ্রিল মাসে তিনি আর পপি সিনেমা শুটিংয়ের জন্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রামের সেন্ট মার্টিন হোটেলে তাঁরা রাত কাটান। এরপর কুমিল্লায় এসে শাকিলের এক বন্ধুর বাসায় দুজনে বিয়ে করেন। বিয়ের দিন রাত দুটোয় ঢাকায় এসে গুলিস্তানের গ্র্যান্ড প্যালেস হোটেলে বাসর করেন। তিনি আমাদের কাবিননামা ও হোটেলের বিলের কপিও দেখিয়েছিলেন। শাকিল আমাদের বারবার বলছিলেন, তিনি চান, পপি এ বাসায় এসে তাঁর সঙ্গে সংসার করুক। কিন্তু পপির মা সেটা চান না। সে কারণে পপি আসতে পারছেন না। তাঁর এসব কথা নিয়ে আমি যেন নিউজ করি, সে জন্য অনুরোধ করেন তিনি। আমি সব শুনে বললাম, আমি সিনেমাবিষয়ক রিপোর্টার নই, এটা আমার কাজ নয়। তবে আমি এটা অফিসে জানাতে পারি। শাকিল বললেন, তার দরকার নেই। পুলিশি ঝামেলা হোক, নাহয় তখনই লিখবেন।
শাকিলের কথাই সত্যি হলো। ২ আগস্ট শুটিং স্পট থেকে পপিকে গাড়িতে তুলে মগবাজারের বাসায় নিয়ে আসেন শাকিল। পপির মা মরিয়ম মেরি সে খবর জানতে পেরে পপির মামাতো ভাই আমানতকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। তাঁরা শাকিলকে মারধর করেন এবং পপিকে টানতে টানতে বাসায় নিয়ে যান। শাকিল এ ঘটনায় হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ করে পপির মা ও তাঁর মামাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করেন। রমনার তখনকার ওসি ছিলেন এ বি এম সুলতান। তিনি কাউকে গ্রেপ্তার না করে চুপচাপ মজা দেখতে থাকেন।
পপির এ ঘটনা প্রযোজকদের কানে যায়। তাঁরা পপিকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন। সে সময়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তাও পপির পক্ষে দাঁড়ান। এবার শাকিলের বিরুদ্ধে মেয়েকে মারধর, অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন পপির বাবা আমির আলী। সেই মামলায় ২০০০ সালের ৫ আগস্ট শাকিল খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হইচই পড়ে যায়। চলতে থাকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ।
৭ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন পপি। সেখানে তিনি বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। সংবাদ সম্মেলনে পপি বলেছিলেন, শাকিল তাঁকে বাসার একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর ও হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সাংবাদিকেরা জানতে চান, এতে কি আপনি আহত হয়েছিলেন? পপির জবাব ছিল, কিছু কিছু ক্ষত থাকে, যা প্রকাশ্যে দেখানো যায় না। তবে পপির সেই সংবাদ সম্মেলনের পরও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। পুলিশ এবার বাধ্য হয়ে পপির মা ও মামাতো ভাইকে গ্রেপ্তার করে। তবে পপিকে পুলিশ কখনো গ্রেপ্তার করেনি। একদিন জনকণ্ঠ ভবন থেকে শংকর কুমার দে আর আমি পপিদের ইস্কাটনের বাসায় গেলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এভাবে দুই সপ্তাহ চলে যায়, শাকিল জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতারা তাঁদের নিয়ে এফডিসিতে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দুজনেই নিজের খরচে মামলা তুলে নেবেন। তাঁরা কখনো একসঙ্গে অভিনয় ও চলাফেরা করতে পারবেন না। তখন শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন মাহমুদ কলি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, এতে হয়তো পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু মেয়েটির ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। সত্যিই এ ঘটনার পর পপির হাতের ছবির সংখ্যা একেবারে কমে আসে। শাকিলের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা হয়েছে। তিনিও বেকার হয়ে পড়েন।
শেষ করার আগে আবারও সত্যজিৎ রায়ের সেই নায়ক সিনেমার নায়ক অরিন্দমের কথা বলি। তিনি স্বপ্নে দেখছেন, শুধু টাকার মাঝে হেঁটে চলেছেন প্রচণ্ড উৎফুল্ল হয়ে। এরপর হঠাৎ করেই টাকার চোরাবালিতে ডুবতে থাকেন। বাঁচতে একজনের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো সাহায্য করেন না। নায়ক ডুবে যান খ্যাতি আর অর্থের মোহের চোরাবালিতে। রুপালি পর্দার জগৎটাই মনে হয় সে রকম। একবার ডুবে গেলে ফেরার পথটাই যেন চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ দিতে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি করেছে সরকার। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরীকে সভাপতি করে আজ বৃহস্পতিবার সার্চ কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
১৪ মিনিট আগেরাষ্ট্র সংস্কারে অগ্রাধিকার দেওয়া অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নির্বাচনের জন্য চাপ বাড়ছে। বিএনপি শুরুতে সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বললেও এখন দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইছে।
১ ঘণ্টা আগেগত এক সপ্তাহে দেশের ১১টি জেলার বিভিন্ন আদালতে ৭৫২ জন আইনজীবীকে সরকারি কৌঁসুলি (জিপি), অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি, সহকারী সরকারি কৌঁসুলি, পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি), অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ও সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
১ ঘণ্টা আগেআরও ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৩৯ জন ভোটার বেড়েছে। তাঁদের মধ্যে দেশে ৪ লাখ ৫১ হাজার ২২৯ জন এবং প্রবাসে থাকা ১২ হাজার ২১০ জন নতুন ভোটার হয়েছেন। গত আট মাসে তাঁরা নিজ উদ্যোগে ভোটার হন।
৩ ঘণ্টা আগে