তাসনিম মহসিন, ঢাকা
পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে রয়েছে। ঘাটতি বাজেট পুষিয়ে নেওয়া বা ঋণ ও অনুদানের জন্য তাদের ওপর বাংলাদেশের বড় ধরনের নির্ভরশীলতা ছিল। এতে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবাধিকার, বাক্স্বাধীনতা, শ্রম পরিবেশ ও মানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশগুলোর তরফ থেকে এক ধরনের চাপ ছিল। এখন এই নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই কমেছে। এই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বহুমুখী ও কৌশলী কূটনীতির পথে এগোচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার, যাতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমাদের চাপ কমানো যায়।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে এক এক করে সম্পর্কের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন, শ্রম অধিকার, বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রমমান বা নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো এত দিন পশ্চিমাদের কাছে প্রধান ছিল। এখন এ বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গৌণ বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। সম্পর্কের ব্যাপ্তি বাড়ায় বিষয়গুলো অনেক আলোচনার ইস্যুর একটি ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে।
এভাবে যদি আমরা সম্পর্ক বাড়াতে পারি, তাহলে মানবাধিকার, শ্রম আইন, এই শর্ত-সেই শর্ত নিয়ে কথা বলবে না। তখন হয়তো পুরো কথার ধরনই পাল্টে যাবে।
—পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করার বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া ও এর ব্যাপ্তি বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শুধু বাণিজ্য নিয়ে কথা বলি, তখন তারা সুযোগটি পেয়ে যাবে। “তোমার শ্রমমান ভালো না বা তোমার কমপ্লায়েন্স ভালো না”—এ ইস্যুগুলোতে খালি কথা হবে। আরও বিভিন্ন ইস্যুতে যখন সম্পর্ক বাড়াতে পারব, তখন আলোচনা ছড়িয়ে যাবে। তখন বাণিজ্য শুধু ১০টি ইস্যুর একটি ইস্যু হবে। তখন আরও বড় ইস্যু সামনে চলে আসবে।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সম্পর্কের বিষয়টি যদি একপক্ষীয় হয়, আর আপনি গ্রহীতার দিকে থাকেন, তাহলে অবশ্যই অনেক কথা বেশি শুনতে হবে। আর নিজের অবস্থানটি যদি শক্ত থাকে, তাহলে বিনিয়োগ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের বাংলাদেশকে দরকার রয়েছে। এভাবে যদি আমরা সম্পর্ক বাড়াতে পারি, তাহলে মানবাধিকার, শ্রম আইন, এই শর্ত-সেই শর্ত নিয়ে কথা বলবে না। তখন হয়তো পুরো কথার ধরনই পাল্টে যাবে।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরে তলাবিহীন ঝুড়ির ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ। ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এখন চীনের বিস্তার ও সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্য অক্ষুণ্ন রাখা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বিস্তারের যে সমীকরণ, তাতে বাংলাদেশ ঢুকে পড়েছে। বিশেষত ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের গুরুত্ব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। এটি একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে সুযোগ। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন আনছে বাংলাদেশ।
খুব বেশি দিন আগে নয়, বাংলাদেশের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বড় অঙ্ক আসত বৈদেশিক অনুদান থেকে। আর এ কারণে বাংলাদেশকে নানাভাবে চাপে রাখার সুযোগ পেত পশ্চিমারা। কিন্তু বাজেটের তুলনায় বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ এখন একেবারে নগণ্য পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। একটু পরিসংখ্যানে চোখ বোলানো যাক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১-৭২ সালে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই অর্থবছরে অনুদান ছিল বাজেটের ৮৬ শতাংশ, আর ঋণ ছিল ৬ থেকে ৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঘাটতি বাজেটের ৭০ শতাংশই এসেছিল বৈদেশিক ঋণ থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ এসেছিল অনুদান থেকে। বর্তমানে এ বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ঘাটতি বাজেটের ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস হয়। এর মধ্যে বৈদেশিক অনুদান ধরা হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। পশ্চিমাদের ওপর ক্রমাগত নির্ভরশীলতা কমে আসাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ককে এরই মধ্যে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ায় বাংলাদেশকে এখন নিয়মিত বাণিজ্যের পাশাপাশি সমরাস্ত্রের সম্ভাব্য বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এতে ঢুকে গেছে বাণিজ্য, ভূরাজনীতির মতো বহু বিষয়। এখন বাংলাদেশ ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান স্বার্থের সমীকরণটি অনেকাংশেই বদলে গেছে। নতুন এই সমীকরণে দাঁড়িয়ে পশ্চিমারা এমন অনেক কিছুতেই এখন চোখ বুজে থাকছে, যা আগে ভাবা যেত না। বর্তমানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা, কার্যকর ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন গঠন, বিরোধী মতের প্রতি সহনশীলতাসহ সার্বিক মানবাধিকার ইস্যুতে আগের মতো সমালোচনা করছে না পশ্চিমারা। বাংলাদেশকে না খেপিয়ে ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব বাড়িয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে চীন ঠেকাতে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশগুলোর অভিন্ন কৌশল তো রয়েছেই।
ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ পুরো অঞ্চলে চীনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কৌশলী পশ্চিমারা। জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে গিয়েছে। আর ইতালির সঙ্গে সম্পর্ক সেই স্তরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কাজ চলছে। আর এ দেশগুলোই ইউরোপের হর্তাকর্তা। ফলে সম্পর্কের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে এদের হাতে রাখা গেলে বাকি দেশগুলো ও সংশ্লিষ্ট সংগঠন সব বিষয়ে খুব একটা সোচ্চার হতে পারবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, তা শিগগিরই কমে আসবে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আহুত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের ডাক না পাওয়ার বিষয়টি জুড়ে নিলে, এই নিষেধাজ্ঞা বেশ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি সমাধানে আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলমান। এ অবস্থায় এ সংকট বেশি দূর গড়াবে না বলেই আশাবাদী ঢাকা।
কৌশলগত সম্পর্ক ও সম্পর্কের বহুমুখীকরণের কারণে অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যুতে পশ্চিমা চাপ আগের তুলনায় কমার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেননি বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন ইইউয়ের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। তাদের প্রভাব ইইউতে রয়েছে। তবে তাদের ভোট কিন্তু একটা করে। ফলে বাকিদের গুরুত্বও কম নয়।’
তবে এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতার ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন কূটনীতিকেরা। পশ্চিমা মিশনের এক রাজনৈতিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘এক সময় ওডিএর (উন্নয়ন সহযোগিতা) পরিমাণ বেশি ছিল। ফলে বাংলাদেশে যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের ওপর পশ্চিমাদের খবরদারি বেশি ছিল। কিন্তু ওডিএ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমাদের সেই শক্তিও কমে গেছে। এখন তারা সমরাস্ত্র ও ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেখানে সুশাসন, মানবাধিকার এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছিল মূল ভিত্তি। এত দিন সুশাসন ও মানবাধিকারকে সামনে রেখে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় আসত। কিন্তু সেই পট পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রাধান্য পাচ্ছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। সম্পর্কে গৌণ হয়ে গিয়েছে সুশাসন ও মানবাধিকার।
এ ক্ষেত্রে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আলাদা কৌশলকে একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, আগে একক দেশ ভিত্তিক নীতি নিলেও বর্তমানে ব্লকভিত্তিক নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আগে একক দেশ থেকে তা সামাল দেওয়া সহজ হতো। আর এখন যেহেতু ব্লকভিত্তিক নীতি, সেহেতু তা সামাল দেওয়া কষ্টকর বিষয় হবে। কূটনীতিতে বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার ওপরই গুরুত্বারোপ করেন এ সাবেক কূটনীতিক।
পশ্চিমা দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে রয়েছে। ঘাটতি বাজেট পুষিয়ে নেওয়া বা ঋণ ও অনুদানের জন্য তাদের ওপর বাংলাদেশের বড় ধরনের নির্ভরশীলতা ছিল। এতে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, মানবাধিকার, বাক্স্বাধীনতা, শ্রম পরিবেশ ও মানসহ বিভিন্ন বিষয়ে দেশগুলোর তরফ থেকে এক ধরনের চাপ ছিল। এখন এই নির্ভরশীলতা অনেকাংশেই কমেছে। এই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বহুমুখী ও কৌশলী কূটনীতির পথে এগোচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার, যাতে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পশ্চিমাদের চাপ কমানো যায়।
পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে এক এক করে সম্পর্কের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন, শ্রম অধিকার, বাক্স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শ্রমমান বা নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো এত দিন পশ্চিমাদের কাছে প্রধান ছিল। এখন এ বিষয়গুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় গৌণ বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। সম্পর্কের ব্যাপ্তি বাড়ায় বিষয়গুলো অনেক আলোচনার ইস্যুর একটি ইস্যুতে পরিণত হচ্ছে।
এভাবে যদি আমরা সম্পর্ক বাড়াতে পারি, তাহলে মানবাধিকার, শ্রম আইন, এই শর্ত-সেই শর্ত নিয়ে কথা বলবে না। তখন হয়তো পুরো কথার ধরনই পাল্টে যাবে।
—পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করার বিষয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া ও এর ব্যাপ্তি বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি শুধু বাণিজ্য নিয়ে কথা বলি, তখন তারা সুযোগটি পেয়ে যাবে। “তোমার শ্রমমান ভালো না বা তোমার কমপ্লায়েন্স ভালো না”—এ ইস্যুগুলোতে খালি কথা হবে। আরও বিভিন্ন ইস্যুতে যখন সম্পর্ক বাড়াতে পারব, তখন আলোচনা ছড়িয়ে যাবে। তখন বাণিজ্য শুধু ১০টি ইস্যুর একটি ইস্যু হবে। তখন আরও বড় ইস্যু সামনে চলে আসবে।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সম্পর্কের বিষয়টি যদি একপক্ষীয় হয়, আর আপনি গ্রহীতার দিকে থাকেন, তাহলে অবশ্যই অনেক কথা বেশি শুনতে হবে। আর নিজের অবস্থানটি যদি শক্ত থাকে, তাহলে বিনিয়োগ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে তাদের বাংলাদেশকে দরকার রয়েছে। এভাবে যদি আমরা সম্পর্ক বাড়াতে পারি, তাহলে মানবাধিকার, শ্রম আইন, এই শর্ত-সেই শর্ত নিয়ে কথা বলবে না। তখন হয়তো পুরো কথার ধরনই পাল্টে যাবে।’
স্বাধীনতার ৫০ বছরে তলাবিহীন ঝুড়ির ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ। ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে আগে থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এখন চীনের বিস্তার ও সেই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর আধিপত্য অক্ষুণ্ন রাখা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা বিস্তারের যে সমীকরণ, তাতে বাংলাদেশ ঢুকে পড়েছে। বিশেষত ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের গুরুত্ব এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। এটি একদিকে চ্যালেঞ্জ, অন্যদিকে সুযোগ। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে পরিবর্তন আনছে বাংলাদেশ।
খুব বেশি দিন আগে নয়, বাংলাদেশের বাজেটের ঘাটতি মেটাতে বড় অঙ্ক আসত বৈদেশিক অনুদান থেকে। আর এ কারণে বাংলাদেশকে নানাভাবে চাপে রাখার সুযোগ পেত পশ্চিমারা। কিন্তু বাজেটের তুলনায় বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ এখন একেবারে নগণ্য পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। একটু পরিসংখ্যানে চোখ বোলানো যাক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১-৭২ সালে বৈদেশিক সহায়তার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে ওই অর্থবছরে অনুদান ছিল বাজেটের ৮৬ শতাংশ, আর ঋণ ছিল ৬ থেকে ৮ শতাংশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ঘাটতি বাজেটের ৭০ শতাংশই এসেছিল বৈদেশিক ঋণ থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ এসেছিল অনুদান থেকে। বর্তমানে এ বৈদেশিক অনুদানের পরিমাণ ঘাটতি বাজেটের ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পাস হয়। এর মধ্যে বৈদেশিক অনুদান ধরা হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। পশ্চিমাদের ওপর ক্রমাগত নির্ভরশীলতা কমে আসাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পর্ককে এরই মধ্যে কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ায় বাংলাদেশকে এখন নিয়মিত বাণিজ্যের পাশাপাশি সমরাস্ত্রের সম্ভাব্য বাজার হিসেবে বিবেচনা করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এতে ঢুকে গেছে বাণিজ্য, ভূরাজনীতির মতো বহু বিষয়। এখন বাংলাদেশ ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান স্বার্থের সমীকরণটি অনেকাংশেই বদলে গেছে। নতুন এই সমীকরণে দাঁড়িয়ে পশ্চিমারা এমন অনেক কিছুতেই এখন চোখ বুজে থাকছে, যা আগে ভাবা যেত না। বর্তমানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা, কার্যকর ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন গঠন, বিরোধী মতের প্রতি সহনশীলতাসহ সার্বিক মানবাধিকার ইস্যুতে আগের মতো সমালোচনা করছে না পশ্চিমারা। বাংলাদেশকে না খেপিয়ে ব্যবসায়িক অংশীদারত্ব বাড়িয়ে নেওয়ার কৌশল নিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে চীন ঠেকাতে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশগুলোর অভিন্ন কৌশল তো রয়েছেই।
ইউরোপের কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, দক্ষিণ এশিয়াসহ পুরো অঞ্চলে চীনের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেশ কৌশলী পশ্চিমারা। জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে গিয়েছে। আর ইতালির সঙ্গে সম্পর্ক সেই স্তরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে কাজ চলছে। আর এ দেশগুলোই ইউরোপের হর্তাকর্তা। ফলে সম্পর্কের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে এদের হাতে রাখা গেলে বাকি দেশগুলো ও সংশ্লিষ্ট সংগঠন সব বিষয়ে খুব একটা সোচ্চার হতে পারবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি যে সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে, তা শিগগিরই কমে আসবে।
প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আহুত গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের ডাক না পাওয়ার বিষয়টি জুড়ে নিলে, এই নিষেধাজ্ঞা বেশ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। বিষয়টি সমাধানে আইনজীবী নিয়োগের প্রক্রিয়াও চলমান। এ অবস্থায় এ সংকট বেশি দূর গড়াবে না বলেই আশাবাদী ঢাকা।
কৌশলগত সম্পর্ক ও সম্পর্কের বহুমুখীকরণের কারণে অভ্যন্তরীণ নানা ইস্যুতে পশ্চিমা চাপ আগের তুলনায় কমার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেননি বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেন ইইউয়ের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। তাদের প্রভাব ইইউতে রয়েছে। তবে তাদের ভোট কিন্তু একটা করে। ফলে বাকিদের গুরুত্বও কম নয়।’
তবে এ ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগিতার ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাকে বড় কারণ হিসেবে দেখছেন কূটনীতিকেরা। পশ্চিমা মিশনের এক রাজনৈতিক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ‘এক সময় ওডিএর (উন্নয়ন সহযোগিতা) পরিমাণ বেশি ছিল। ফলে বাংলাদেশে যে সরকারই থাকুক না কেন, তাদের ওপর পশ্চিমাদের খবরদারি বেশি ছিল। কিন্তু ওডিএ কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমাদের সেই শক্তিও কমে গেছে। এখন তারা সমরাস্ত্র ও ব্যবসায় মনোযোগ দিয়েছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যে চুক্তি হয়েছিল সেখানে সুশাসন, মানবাধিকার এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ছিল মূল ভিত্তি। এত দিন সুশাসন ও মানবাধিকারকে সামনে রেখে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়টি আলোচনায় আসত। কিন্তু সেই পট পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রাধান্য পাচ্ছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ। সম্পর্কে গৌণ হয়ে গিয়েছে সুশাসন ও মানবাধিকার।
এ ক্ষেত্রে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউরোপের যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আলাদা কৌশলকে একটা বড় কারণ হিসেবে দেখছেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, আগে একক দেশ ভিত্তিক নীতি নিলেও বর্তমানে ব্লকভিত্তিক নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। আগে একক দেশ থেকে তা সামাল দেওয়া সহজ হতো। আর এখন যেহেতু ব্লকভিত্তিক নীতি, সেহেতু তা সামাল দেওয়া কষ্টকর বিষয় হবে। কূটনীতিতে বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার ওপরই গুরুত্বারোপ করেন এ সাবেক কূটনীতিক।
মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা চলছিল, তা সংশোধিত আইনেও চলবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম। আজ সোমবার প্রসিকিউশন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ -এর সংশোধনী তুলে ধরতেই সংবাদ সম্মেলনের আ
১৩ ঘণ্টা আগেজুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সারজিস আলমসহ আরও ৪৫ জনকে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে
১৩ ঘণ্টা আগেঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ চেয়ে করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর বেঞ্চ রিটটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেওয়া হয়
১৭ ঘণ্টা আগেসংস্কারের অংশ হিসেবে গণমাধ্যমে সাংবাদিকদের ক্ষমতায়ন ও গণতন্ত্রায়ণের পথ খোঁজা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ।
১৭ ঘণ্টা আগে